নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শরীরে শরীর নয়, ঠোঁটে ঠোঁট রাখাও নয়, মূহুর্তের ছোঁয়াও নয়, একটু দেখাতেই লিটার খানেক অগ্নিজলের ঘোর।

ত্রিশোনকু

না প্রেমিক না বিপ্লবী [email protected]

ত্রিশোনকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোক!

২৪ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

হিটস্ট্রোকের একটি বাস্তব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বয়ান করছি।

উন্নিশশো সাতাশির এক গ্রীষ্মের সকাল।
প্রচন্ড দাবাদহ।

আমি আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল, চিটাংএ কর্মরত। সেদিন আমাদের নয় মাইল দৌড়ের টেস্ট। আমি দৌড় শেষ করে দাঁড়িয়ে প্রচন্ড হাঁফাচ্ছি। একের পর এক, আবার কখনো বা দলবদ্ধভাবে সৈনিকেরা দৌড় শেষ করছে।

হঠাৎ দেখি সেন্টারের রেজিমেন্টাল হাবিলদার মেজর (RHM) টলতে টলতে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো স্যার ধরেন।

সেটাই ছিল তার জীবনের শেষ বাক্য।

তাকে ধরার আগেই সে মাটিতে আছড়ে পড়লো এবং তিরিশ সেকেণ্ড ধরফর করে স্থির হয়ে গেল। ততক্ষণে রেজিমেন্টাল মেডিক্যাল অফিসার চলে এসেছে। কিছুক্ষণ পরীক্ষা করে সে RHM কে মৃত ঘোষণা করলো।

প্রচন্ড তাপ এবং অত্যধিক আর্দ্রতা পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোকের সহায়ক।

গত কদিন ধরে আমাদের আবহাওয়া ঠিক তেমনই। আমাদের সচেতন হতে হবে এই দুটি রোগের ব্যাপারে।

পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোকের ভয়াবহতা।

পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোক দু'টি সাধারণ অসুখ যার চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পানিশূন্যতা কি?

পানিশূন্যতা একদিকে যেমন নিজেই একটি উচ্চতাপমাত্রা জনিত সংকটজনক অসুখ তামনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও প্রাণসংহারী হতে পারে, যেমন ডায়রিয়া, অনবরত বমি এবং প্রবল জ্বর। শিশু এবং ৬০ বছরের বেশী বয়স্ক মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হবা সম্ভাবনা অনেক বেশী।

পানিশূন্যতা কেন হয়?

আমরা প্রশ্বাস, ঘাম, অশ্রু, প্রস্রাব আর পূরিষের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় খনিজ হারাতে থাকে। সাধারণ অবস্থায় একজন মানুষ এগুলো প্রতিস্থাপন করে খাবার ও পানি খেয়ে। যখন মানুষ জ্বর, বমি বস ডায়রিয়ায় খুবই কাহিল হয়ে যায় বা যখন সে তীব্র রোদে বা গরমে অনেকক্ষণ পানি পান না করে থাকে তখন তার পানিশূন্যতা হতে পারে। এছাড়াও শরীর থেকে পানি বের করার অষুধ (diuretics) খেলেও এ অবস্থা হতে পারে।

পানিশূন্যতারর লক্ষণসমুহ:

নীচের একাধিক লক্ষণ পানিশূন্যতারর কারনে দেখা দিতে পারে:

প্রচন্ড পিপাসা
মুখের ভেতরটা শুকিয়ে যাওয়া।
শুকনো ত্বক
হিস্যু কম হওয়া
মাথা ঝিমঝিম করা
মাথা হালকা লাগা
মাথা ধরা
বমির ভাব
ভ্রম
পরিশ্রান্ত লাগা
নিশ্বাসপ্রশ্বাস ও হার্ট বিটদদ্রুত গতি হওয়া।

শিশুদের মধ্যে এ ছাড়াও নীচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

কান্নার সময় চোখে পানি না আসা।
তিন ঘন্টারও বেশী সময় ডায়পার শুকনো থাকা।
প্রচন্ড জ্বর।
চামড়াতে টিপ দিয়ে ছেড়ে চামড়া আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে না আসা
পেট ও গাল দেবে যাওয়া।
চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া।
মেজাজ খিঁচড়ে যাওয়া।
ঔদাস্য।

এই লক্ষণগুলো অন্যান্য অসুখেও থাকে তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা বাঞ্ছনীয়।

চিকিৎসা

কম বা মাঝারি পানিশূন্যতা হলে প্রচুর পরিমানে তরল খাবার খেতে হবে সাথে খাবার স্যালাইন যতক্ষণ না রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। মাঝারি পানিশূন্যতায় ইন্ট্রাভেনাস তরল লাগতে পারে যা ডাক্তারের পরামর্শে প্রয়োগ করতে হবে। তীব্র পানিশূন্যতাককে সব সময় আপদকালীন অবস্থা হিসেবে ধরে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ভর্তি হবার আগ পর্যন্ত তাকে ইনট্রাভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।

শিশুদের বেলায় যে কোন ধরনের পানিশূন্যতাতেই পথ্য এবং অষুধের জন্যে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

পানিশূন্যতা প্রতিরোধ

প্রচুর পরিমানে তরল খাওয়া বিশেষ করে রোদে বা প্রচন্ড গরমে কায়িক পরিশ্রম করার সময়।

দেহ থেকে যত তরল বের হয়ে যায় তারচেয়ে বেশী তরল গ্রহণ করা।

বাইরের পরিবেশে কায়িক পরিশ্রমের কাজ গুলো অপেক্ষাকৃত কম গরমের সময় করা, যেমন সন্ধ্যা, রাত বা অতি প্রত্যুষে।

শরীর থেকে পানি বের হয়ে গেলে খাবার স্যালাইন খাওয়া। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা সতর্কতার সাথে স্যালাইন খাবেন।
শিশুদের পারতপক্ষে বাড়িতে বানানো স্যালাইন দেবেন না।

স্যালাইন খাবার পদ্ধতি:

এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন দুইওটি বড় গ্লাসের পানিতে (মোট ৫০০ মিলিলিটার) গুলে খেয়ে নেবেন। গোলানো স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর আর কার্যকর থাকেনা।

হিট স্ট্রোক কি?

হিটস্ট্রোক হচ্ছে তাপজনিত সবচেয়ে মারাত্মক রোগ যাতে মৃত্যু ঝুকি খুবই বেশী এবং যে রোগে একজন মানুষ ঘামের সাহায্যে তার শরীরে উৎপন্ন অতিরিক্ত তাপ শরীর থেকে বের করে দিতে পারেনা। অতি দীর্ঘক্ষণ তীব্র রোদে বা প্রচন্ড বেশী তাপমাত্রায় অনেকক্ষণ ধরে কাজ করলে হিটস্ট্রোক হতে পারে।

কাদের হিটস্ট্রোক হবার সম্ভাবনা বেশী?

শিশু
৬০ বছরের বেশী বয়সের মানুষদের।
যারা বাইরে খোলা পরিবেশে কায়িক পরিশ্রম করে।
যারা বিশেষ ধরনের অষুধ খায় শরীর থেকে পানি বের করে দেয়ার জন্যে।
যারা অগ্নিজল পান করে।
যারা মটু।
যারা মানসিক রোগে ভোগে।

একটি প্রাণঘাতী রোগ, যাতে চিকিৎসার সময় অল্প।

এই রোগটি মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ যা রোগীর অবস্থার খুব দ্রুত অবনতি ঘটায়।

হিটস্ট্রোক কেন হয়?

আমাদের শরীর আভ্যন্তরিণ ভারে প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে। ঘাম এবং ত্বকের মাধ্যে বিকিরণ করে এই তাপ শরীর থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত গরম, বাতাসে অত্যধিক আর্দ্রতা, প্রখর সূর্যালোকে দীর্ঘক্ষণ ধরে কঠোর কায়িক পরিশ্রম শরীরের এই ঠান্ডা হবার প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়।
একজন মানুষ যখন পানি শূন্যতায় ভোগে এবং পর্যাপ্ত ঘেমে শরীর থেকে তাপ বের করে দিতে পারেনা তখন শরীরের তাপমাত্রা ভয়ংকরভাবে বেড়ে সে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণ

মাধা ধরা
মাথা ঘোরা
দিগভ্রান্তি
ক্রোধ
বিভ্রম
বিহ্বলতা
খিঁচুনি
গরম, লালচে, শুষ্ক ত্বক
শ্লথবেশ বা পরিশ্রান্তি
দেহের তাপের অত্যধিক বৃদ্ধি
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
অতি দ্রুত হার্টবিট
অলীক শব্দ শোনা বা দৃশ্য দেখা।

এই লক্ষণগুলো অন্যান্য অসুখেও থাকে তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা বাঞ্ছনীয়।

চিকিৎসা

এই রোগীকে যথা শীঘ্র সম্ভব হাসপাতালে নেয়া অতি জরুরী কারন এ থেকে শরীরের স্থায়ী। ক্ষতি বা মৃত্যু হতে পারে।
চিকিৎসক সাহায্য আসা পর্যন্ত নীচের প্রাথমিক চিকিৎসা রোগীর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে:

ছায়াযুক্ত স্থানে রোগীকে চিত করে শুইয়ে তার পা দুটো একটু উঁচুতে রাখতে হবে।

শরীরের সমস্ত জামাকাপড় খুলে ফেলে সারা শরীরে অনবরত ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে এবং বাতাস করতে হবে।

দু'পায়ের কুঁচকিতে এবং বগলে বরফের টুকরো দিতে হবে।

যে কোন উপায়ে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে।

ইন্ট্রাভেনাস তরল এই সময় প্রয়োজন হয় শরীরের পানিশূন্যতা কমাতে।

হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ

হালকা ওজনের ও রঙ এর ঠাস বুননের কাপড় পরা।

হালকা পানীয় যার মধ্যে ক্যাফেইন আছে যেমন কোলা, চা, কফি না পান করা।

অগ্নিজল পান না করা।

রোদ থেকে বাঁচতে হ্যাট, রোদ চশমা ও ছাতা ব্যবহার করা।

খুব বেশী গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় যত বেশী সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকুন।

শিশুদের ও পোষা পশু পাখিদের কখনই পার্ক করা গাড়ির ভেতর ভেতর রেখে যাবেন না।

প্রচুর পরিমানে তরল খাওয়া বিশেষ করে রোদে বা প্রচন্ড গরমে কায়িক পরিশ্রম করার সময়। সে সময়ে ত্বকে পানি স্প্রে করুন।

দেহ থেকে যত তরল বের হয়ে যায় তারচেয়ে বেশী তরল গ্রহণ করা।

বাইরের পরিবেশে কায়িক পরিশ্রমের কাজ গুলো অপেক্ষাকৃত কম গরমের সময় করা, যেমন সন্ধ্যা, রাত বা অতি প্রত্যুষে।

শরীর থেকে পানি বের হয়ে গেলে খাবার স্যালাইন খাওয়া। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা সতর্কতার সাথে স্যালাইন খাবেন।

সুত্র: Johns Hopkins University, Johns Hopkins Medicine Library.

অনুবাদ: ত্রিশোনকু মল্লিক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৫৫

স্বপ্নের_ফেরিওয়ালা বলেছেন:
দরকারি পোষ্ট ধন্যবাদ ।

২৬ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮

ত্রিশোনকু বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.