নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শরীরে শরীর নয়, ঠোঁটে ঠোঁট রাখাও নয়, মূহুর্তের ছোঁয়াও নয়, একটু দেখাতেই লিটার খানেক অগ্নিজলের ঘোর।

ত্রিশোনকু

না প্রেমিক না বিপ্লবী [email protected]

ত্রিশোনকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বংগবন্ধু, বংগবন্ধু, ফুল নাও,ফুল নাও

১৭ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪



৭২এর শেষ দ বা '৭৩ এর প্রথমে। বাসায় এক আপদ মোকাবেলা করতে হিমসিম খাচ্ছি। আমার সবচেয়ে ছোট বোন (তখন ৪/৫ বছরের) নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ও বংগবন্ধুকে ফুল দেবে। বাড়ির সকলে মিলে যতই সাধ্য সাধনা করি না কেন, সে ফুল না দিয়ে কিচ্ছু মুখে দেবেনা। সারাদিন কেটে গেল। বাবা ফিরলেন গভীর রাতে। শ্রমিক নেতাদের দাবী দাওয়া নিয়ে সমঝোতায় অনেক সময় পার করে। বাবার সাথে বাড়ির শুধু আমিই তখন যোগাযোগ করতে পারি। তার মেজাজ সে সময়ে সর্বক্ষণ তিরিক্ষি থাকতো। বাড়ির কাজের লোকগুলো ছাড়া আর কারো সাথেই মোলায়েম সুরে কথা বলতেন না। আমরা সবাই জেগে। আমিই কথাটা বল্লাম যে ছোট বোন বংগবন্ধুকে ফুল দেবার জন্যে অনশন করেছে। বাবা হেসে বল্লেন "এটা কোন একটা ব্যাপার? কাল ওকে নিয়ে ৩২ নম্বরে চলে যাও। বিকেলের দিকে যাবে।"

পরদিন বিকেলে একটা রিক্সা নিয়ে বংগবন্ধুর বাসায় গেলাম। বোনের হাতে একটা ফুল। অতি উত্তেজিত। আমার ভয়ে বুক দুরুদুরু করছে, কি জানি কি হয়। এমনিতে দূর্নাম আছে পাগল পরিবারের সদস্য হিসেবে। সবচে' ধেড়ে পাগল বাবা। তার পাগলামী প্রসুত নির্দেশে আমার এ পর্যন্ত আসা ঠিক হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে ততক্ষণে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান। গেটের কাছে এসে উল্টো হাঁটা দিলাম। বোন বসলো বেঁকে। ৩২এর গেটের ঠিক সামনে, রাস্তার ওপর পা ছড়িয়ে বসে সে দিল ভ্যা করে কেঁদে। গেটের প্রহরীরা কৌতুকের চোখে তাকাতে লাগলো। উপায়ান্তর না দেখে আমি ঢুকে পড়লাম বাসার ভেতর। কেউই আমাকে আটকালোনা, কেউই কিছু জিজ্ঞেসও করলোনা। ঢুকেই হাতের ডানে লন। আমি অতি ভীত, সন্ত্রস্ত ও আতংকিত হয়ে পাথরের মত দাড়িঁয়ে থাকলাম। সম্বিৎ ফিরে এল একটা ডাক শুনে "কি ভাইয়া?" অত্যন্ত নরোম স্বরের সেই ডাক। বাঁ দিকে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি কৃশ, দীর্ঘাংগ, গোঁফ ওয়ালা একজন তরুন তাকিয়ে আছেন আমার দিকে স্নেহ ভরা দৃষ্টি দিয়ে। চিনে ফেল্লাম-শেখ কামাল। কোন মতে বল্লাম বোনের জেদের কথা, অনশনের কথা। মিষ্টি হেসে উনি বোনটাকে কোলে নিতে চাইলেন। বোনের সোজা উত্তর "তুমি তো বংগবন্ধু না। তোমার কোলে যাব না"। শেখ কামাল তখন বল্লেন তোমরা একটু অপেক্ষা কর, ভেতরে এসে বস। আব্বা একটু পরই নীচে নামবেন। বলে চলে গেলেন তিনি। আমর সাহসে কুলালোনা ভেতরে ঢোকার।

সেটা আমার শেখ কামলের সাথে প্রথম ও শেষ দেখা। পরে ভুলে যাব বলে এখ্নই বলছি। লোকমুখে শুনি এবং বইতেও পড়েছি যে শেখ কামাল নাকি সুলতানাকে জোর করে তুলে এনে বিয়ে করেছিল যখন সুলতানার অন্যখানে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এটা সর্বৈব মিথ্যাচার। সুলতানার সাথে শেখ কামালের সখ্যতা হয়। সুলতানার বাড়ির গুরুজনেরা কেউ সেটা মেনে নিতে পারেননি। তারা অন্যত্র তাঁর বিয়ে ঠিক করেন। সুলতানা কামাল ধনুক ভাংগা পণ করে বসে থাকেন-শেখ কামাল ছাড়া আর কাউকেই তিনি বিয়ে করবেন না। বাধ্য হয়ে তাঁর অভিভাবকদের শেখ কামালের কাছে তাঁকে বিয়ে দিতে হয়। সুলতানা কামালের আপন বড় ভাই রফিক মামা এখনো জীবিত এবং একজন নাম করা শিকারী(পরিবেশবাদীরা আমাকে মাফ করবেন)। ক'দিন আগেই তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। এ ব্যাপারে যদি কারো যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহ'লে তাকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করছি।। ওঁর সেল নম্বর অনুমতি সাপেক্ষে দিয়ে দেব। ওঁ একটু নিভৃতচারী, সম্ভবত: এখনো শাহজাহান পুরে থাকেন।

একটু পরই নেমে এলেন বংগ বন্ধু। লিখতে গিয়ে আমার সর্ব শরীর এখনই কাঁটা দিচ্ছে। আমি শিহরিত, আবেগে বাকরুদ্ধ । তাঁকে আমি কি বলেছিলাম তা এখন কেন ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বেরুবার পর পরও মনে করতে পারিনি। একটু পরই দেখি আমার বোন তাঁর কোলে। গাল টিপে, গালে গাল ঘষে, আকাশে লোফালুফি করে একশেষ। এরই মধ্যে আমার বোন তার হাতের ফুলটি বংগবন্ধুর হাতে গুঁজে দেবার চেষ্টা করতে লাগলো আর বলতে লাগলও "বংগবন্ধু, বংগবন্ধু, ফুল নাও, ফুল নাও।"

ছেলেদের চোখের জল অপ্রস্তুতের কিন্তু তা সামলাতে না পেরে অনেক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার লেখা শুরু করলাম।

বংগবন্ধুর দুটো হাতই তখন ব্যস্ত। একটু পর লোফালুফি, চুমো আর ঘষাঘষি শেষ হলে তিনি ফুলটি নিলেন। তারপর হাঁটা দিলেন। এখন যারা ঐ ৩২ নম্বরে যান , তারা যত বড় ৩২ নম্বর দেখেন তখন ছিল তার অর্ধেক। ৯৬এর পর পাশের বাসাটিকে এর সাথে মেলানো হয়েছে। সেই পাশের বাসা আর তাঁর বাসার মাঝখানের দেয়ালটায় ছোট্ট একটা খোলা ফোঁকড় ছিল। ওটা দিয়ে গলে, পাশের বাড়ির মধ্য দিয়ে আমার বোনকে কোলে করে হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। দু'জনের মধ্যে কত কথাই না হ'ল।

আমি পেছন পেছন নিশিতে পাওয়া লোকের মত অনুসরন করতে লাগলাম-১৫-২০ মিনিট।

পরের মাস খানেক আমি স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারিনি।

অনেক দিন ঘুরে প্রথম প্রেমিকার প্রেমে সম্মতি পাবার পরও এর শতভাগের একভাগও প্রতিক্রিয়া হয়নি আমার। পরিচিত মেয়েদের অনেকেই আমাকে আনরোমান্টিক বলেই জানে।

- ঊনসত্তর থেকে পঁচাত্তর, ত্রিশোনকু, পৃষ্ঠা-২২৮

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




বঙ্গবন্ধু আপনাদের ভাত খেতে বলেন নি?

২| ১৭ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অমর স্মৃতি!

আপনার বোনকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। জিদ করেছিল বলেইনা পেলেন সেই মাহেন্দ্র ক্ষন আর অনুভূতি :)

++++

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি ভালো লাগলো।

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৩৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




ভাই ত্রিশোনকু,
৭২-৭৩ এ আপনার বয়ষ কতো ছিলো আর বঙ্গবন্ধু কি আপনাদের ভাত খেতে বলেছিলেন ?

৫| ১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৪৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শ্রদ্ধাসহকারে ভালোবাসা নিবেদন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.