নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য প্রিয় মানুষ আমি, বাংলা ভাষা চর্চার চেষ্টা করি। মূলত একজন একনিষ্ঠ পাঠিকা।

উজ্জয়নী

পেশায় গবেষক, নেশায় পাঠক

উজ্জয়নী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কনে দেখা

০১ লা মে, ২০১৮ সকাল ৭:৫৬

কাঁটায় কাঁটায় তিনটেতে হাওড়া থেকে ছাড়লো গিরিডি  ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার। তিন বন্ধু এসি টু টায়ারের একটা খোপে গুছিয়ে বসেছে ততক্ষনে। শান্তনু আর রবি নিচের বার্থে, অভ্র উপরের বার্থে, উল্টো দিকের বার্থটা খালি। পর্দা টেনে দিতেই বেশ নিজেদের মত এক প্রাইভেট জায়গা তৈরি হয়ে গেল। অভ্র উপরে উঠে সটান লম্বা হল, অফিসের কাজ সামলে, অর্ধেক কাজ সনাতনের ঘাড়ে চাপিয়ে, অনুনয়, বিনয় করে, কোন ভাবে শেষ মুহূর্তে ট্রেন ধরেছে সে। এখন ট্রেনের দুলুনিতে আর আরামদায়ক ঠান্ডায়, এক অবসাদ ও আলস্যে চোখ  বুজে আসছে। ২- এসির সিদ্ধান্ত তিন জনেরই।  শুভ কাজে কিপটেমো নয়,ব্যস।।এক বিশেষ উদ্দেশ্যে গিরিডি যাত্রা, অভ্রের জন্য কনে দেখা ও হয়ত রেজিস্ট্রি  বিয়ে। শান্তনু আর রবির পারিবারিক ব্যবসা, অভ্রর কাজের চাপ হয়ত তারা পুরোটা বোঝেও না। দুজনেই খোশ মেজাজে, তাসের সাথে সাথে বোতল ও গ্লাস সাজিয়ে বসে পড়েছে। একটুও সময় নষ্ট না করে। যদি বরফ পাওয়া যেত ইয়ার তাহলে জমে যেত, রবির আক্ষেপ। সেই খেদকে অগ্রাহ্য করে, নীট গলায় ঢেলে, নতুন পেগ বানাচ্ছে শান্তনু। কিরে ঘুমিয়ে গেলি নাকি? অভ্রকে ডাকছে দুজনে, কিন্তু গভীর ঘুম সেই ডাক অতিক্রম করে অভ্রকে জাপটে ধরেছে। ধুর শালা, ট্রেনে উঠেই কচি খোকার মত ঘুমাচ্ছে কেমন দেখ, রবির উষ্মা প্রকাশ অবশ্য বৃথাই গেল। মোটা কাঁচের জানালার ওপাড়ে দ্রুতগতিতে উল্টো দিকে ছুটে চলেছে, মাঠ, ঘাট, পুকুর, বাড়ি। সূর্য অস্ত যাবার আগেই যেন তাদের গন্তব্যে ফিরতে হবে। ফিকে হয়ে আসা আলোর দিকে তাকিয়ে, কেমন গা ছম ছম করে উঠলো শান্তনুর। পর্দাটা একটু নড়ে উঠলো ঠিক এই সময়, চমকে বিষম খেল শান্তনু, রবি তাস বাঁটতে বাঁটতে মুখ তুলে তাকালো, কিরে হয়ে গেল? জল খা, নিদান দিয়ে আবার হাতের তাসে ডুবে গেল রবি। এবার পর্দা ফাঁক হল আর আবির্ভুত হলেন টিটি, টিকিট চাওয়ার আগে একবার চোখ বোলালেন চারপাশে। ট্রেনে মদ্যপান নিষেধ, জানেন না? কড়া গলা। শান্তনু আরো দমে গেলেও রবি হাল ধরল, আরে দাদা রাগ করছেন কেন? মদ্যপান কোথায়, সারাদিন পরে একটু ওষুধের মত আর কি; হবে নাকি এক পেগ, আপনারও তো সারাদিন পরে হেঁ হেঁ। আরে সরকারী চাকরি করেন বলে কি সখ আহ্লাদ থাকতে নেই। বসুন বসুন; সরে গিয়ে একরকম হাত ধরে টেনেই টিটিকে পাশে বসাল রবি, এক পেগ বানিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়ে, নেম প্লেট থেকে নামটা দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করল এটা কি আপনার রেগুলার রুট নাকি সমরবাবু? মাথা নেড়ে সায় দিয়ে এক চুমুকে গ্লাস খালি করে, নামিয়ে রেখে সমর বাবু বললেন, আমি মাঝরাত পর্যন্ত, তার মধ্যে সব গুটিয়ে ফেলবেন প্লীজ, আজকাল খুব কড়াকড়ি, দেখি টিকিটগুলো; ঝটপট কাজ সেরে এগুলেন তিনি। শান্তনুর এদিকে খিদে পেয়ে গেছে, সাথে স্টেশনের প্যাক করা ডিনার আছে। অভ্রকে ডাক রবি এইবেলা খেয়ে নি, শালা উঠে থেকে নাক ডাকাচ্ছে, কোন টেনশান নেই। আমার তো তোর বৌদিকে দেখতে যাবার দিন হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে ছিল। রবি হাসল, তুইও যেমন, একি প্রথম দেখা, ফোনে কতবার ভিডিও চ্যাট হয়েছে দেখ, এসব ভয়টয় এখন সেকেলে ব্যপার, চিল কর, ডাকছি বেটাকে। আরো ঘন্টাখানেক পরে রাতের খাবার পর্ব শেষ, তিনজনেই নিজেদের বার্থে লম্বা হয়েছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করে রবির ঠোঁটে সিগারেট, সাদা ধুঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে অভ্রের বার্থে পৌঁছচ্ছে। শান্তনুর মৃদু নাক ডাকছে, কামরায় শুধু এক নীল রাতের আলো।
অভ্র জেগে,আর ঘুম আসছে না, তার বদলে মাথায় একরাশ চিন্তা ও কল্পনা, রেখাকে ঘিরে। মামার বাড়ি থেকে যখন প্রথম সম্বন্ধটা এল, মোটেও আমল দেয়নি অভ্র। নিজের মধ্যবিত্ত জীবনে জীবনসঙ্গিনী কে নিয়ে আসার সাহস হচ্ছিল না। ছোটবেলায় মা, বাবা কে হারিয়ে, মামার অন্নেই প্রতিপালিত সে। অনেক কষ্টে, লোয়ার ডিভিশান ক্লার্কের চাকরি জুটেছে, অল্পতেই খুশি অভ্র - 'ঘরেতে এল না সে তো, স্বপ্নে তার নিত্য আসা যাওয়া' এই বেশ। কিন্তু মামার বয়েস হয়েছে, তাঁর অনুরোধ পুরো ঠেলতে পারলো না সে। মাস দেড়েক আগে মামার রেখে যাওয়া খাম খুলতেই এক বিস্তারিত চিঠি, রেখা যেন সামনে এসে দাঁড়ালো, সুন্দরী, শিক্ষিতা, রেখার কি সে যোগ্য স্বামী হতে পারবে? এরপর দুদিন দ্বিধায় কাটিয়ে, তৃতীয় দিন খামের চিঠিতে লেখা নম্বর ডায়াল করে বসল অভ্র। ওপাশে পুরুষ কন্ঠ - কে বলছেন? কাকে চাই? মুহূর্তে সব সাহস উধাও, আমতা আমতা করে লাইন কেটে দিল অভ্র। ঘামে গেঞ্জি ভিজে গেছে। কয়েক মিনিট পরেই হাতের মুঠোর ফোন বেজে উঠলো, সেই এক কণ্ঠস্বর, এক জিজ্ঞাসা, এবার অভ্র সাহস করে নিজের পরিচয় দিয়ে রেখার নাম উচ্চারণ করতে, রেখার বাবা সহজ ভাবেই রেখাকে ডেকে দিলেন। দূরাভাষ বেয়ে যেন ভেসে এল বৃষ্টি ভেজা স্নিগ্ধ বাতাস, সোঁদা মাটির গন্ধ মাখা, যেন চিরকালীন পরিচয়। আপনার ফেসবুক নেই বা ওয়াটসাআপ? বলে ফেলল অভ্র, ভিডিও চ্যাটের কৌতূহল  দমন করা কষ্টকর। কেন এই তো বেশ, আমাকে আর কি দেখবেন, বাবা একটা ছবি তো পাঠিয়েছিলেন, স্টুডিওতে গিয়ে তোলা বিয়ের ছবি, রেখার লজ্জা মেশা উত্তর। এরপরে আর ভিডিও চ্যাটের কথা ওঠাতে পারেনি অভ্র। আনমনে মাঝে মাঝে চিঠির সাথে আসা ছবির উপর বুলিয়েছে আদরের স্পর্শ। আর ফোনের আলাপে গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে নৈকট্য। শেষে এই পাকা দেখার পালা। সব ঠিক থাকলে রেজিস্ট্রি বিয়ে সেরেই ফিরবে অভ্র, রবি আর শান্তনু হবে বরপক্ষের সাক্ষী।

ট্রেন বোধহয় কোন স্টেশনে থামল। হাত ঘড়িতে রাত তিনটে। নীচের বার্থে রবিও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যতটা সম্ভব নিঃশব্দে নীচে নেমে টয়লেটে গেল অভ্র। টয়লেটে থাকাকালীন সময়ই, ট্রেন আবার চলতে শুরু করল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে নিজেদের খোপে এসে আবার উপরের বার্থে উঠে কম্বলটা গায়ে টেনে নিতে গিয়ে, জোর চমকালো সে। অপরদিকের ফাঁকা বার্থ আর ফাঁকা নয়। এক সুন্দরী তরুণী সেখানে বসে একদৃষ্টে তাঁকেই দেখছে। মুখটা খুব চেনা, কোথায় যেন দেখেছে, মনে পড়ছে না। হাল্কা নীল আলোয় এক মায়াবী জগত তৈরি হয়েছে, এ তরুণী যেন সেই মায়া জগতের বাসিন্দা। অত্যন্ত অস্বস্তিকর অবস্থায় অভ্র, তরুণী তাকিয়েই আছে, কিছু বলছে না, কেমন যেন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। অন্য দুই বন্ধুর কুম্ভকর্ণ দশা, টিটিবাবুরও দেখা নেই, মাঝরাতে মনে হয় তাঁর ডিউটি শেষ হয়েছে। এই মেয়েটি কখন ট্রেনে উঠলো, কখনই বা উঠে বসল উপরের বার্থে আর কেন তাঁর স্থির দৃষ্টি এত পরিচিত মনে হচ্ছে? একরাশ প্রশ্নে মন ভরে গেল অভ্রর। তরুণীর পরনে একটি জমকালো বেনারসি শাড়ি, কপালে টিপ, ঘারের উপর লোটাচ্ছে এক লম্বা সাপের মত বিনুনি। সিঁথিতে গাঢ় সিঁদুর যেন জমে থাকা রক্ত। এত রাতেও রাতের ফুলের মতই স্নিগ্ধ ও সতেজ চেহারা- আমায় চিনতে পারলেননা? এতক্ষণের মৌনতা ভেঙে তরুণী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। হঠাৎই যেন এক ঝলক শীতল হাওয়া কামরায় বয়ে গেল, মৃদু স্বরে অভ্র বলল, আপনার সাথে কি আগে আলাপ হয়েছে? তীক্ষ্ণ অথচ নিচু স্বরের হাসিতে কেঁপে উঠলো, কামরা, সেকি, এর মধ্যে ভুলে গেলেন? আমাদের কি আজকের আলাপ? কালকেও তো কত বেড়াতে যাবার প্ল্যান হল, আর আজ চিনতেই পারছেন না? আপনাকে নিয়ে কি যে করি! বিদ্যুৎ চমকে অভ্রর সব ধোঁয়াশা কেটে গেল। রেখা, হ্যাঁ রেখাই তো। যার সাথে দেখা করতে তারা সদলবলে চলেছে। এই নিশীথে, নির্জন কামরায়, তাঁর উল্টোদিকের বার্থে বসে তারই রেখা। রেখা তুমি এসময়, এখানে? বিয়ের সাজে এই ট্রেনে এত রাতে? কোথা থেকে উঠলে?একা?  সাথে কেউ আছেন?  একসাথে একঝাঁক প্রশ্ন বেরিয়ে এল অভ্রর মুখ থেকে। যাক চিনতে পেরেছেন তাহলে, হাসল রেখা, একা কোথায়, আপনি আছেন যে সাথে, মুখ টিপে হাসল রেখা। হ্যাঁ তা ঠিক তবে, আমায় তো কিছু বলনি, এইভাবে মাঝরাতে দারুণ চমকে দিয়েছ তুমি, একটু সহজ হল অভ্র। কি করি বলুন আসতেই হল, এরপরে তো আর সময় পাবো না, কাল সকালে সবার সামনে তো আপনাকে এভাবে পাব না, প্রগলভা রেখা। কথাটা কানে ঠেকলেও কিছু বললনা অভ্র, কয়েক মুহূর্তের নীরবতায় ছোট্ট কামরা ভারী হয়ে উঠলো।  রেখাই আবার কথা বলল। কেমন দেখছেন আমায়? পছন্দ হয়? করবেন বিয়ে? অভ্র বেশ অবাক, মাঝরাতে হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়ে, এ কি ধরনের কথা রেখার। দেড় মাসের ফোনালাপে তাকে এত চপল, কখনো লাগেনি। কি হল বলছেন না যে? করবেন বিয়ে? রেখার কন্ঠে যেন এক আকুতি মেশানো তাড়া। অভ্র হাঁসল, সেরকমই তো ইচ্ছা, যদি না তুমি রিজেক্ট কর। সত্যি বলছেন? গা ছুঁয়ে বলুন, অন্য কাউকে বিয়ে করে আমায় ভুলে যাবেন না? কি হয়েছে রেখা? এভাবে কেন বলছ? আমাদের সামনে সারা জীবন পরে, একসাথে পথ চলার এই তো শুরু, বিস্মিত অভ্র। না গিরিডি আসতে আর দশ মিনিট, বেশী সময় নেই। ভালোবাসেন আমায়? সত্যিকারের ভালোবাসা? প্রমাণ দিতে পারেন? মরিয়া রেখার কণ্ঠস্বর। কি প্রমাণ চাই রেখা? অভ্র ক্রমশ অবাক হচ্ছে। আমার সাথে যাবেন? রেখার সোজা জিজ্ঞাসা।
কোথায় যাব?  কোন প্রশ্ন না করে আমায় ভালোবেসে বিশ্বাস করে যাবেন আমার সাথে? রেখার কণ্ঠস্বর যেন অনেকদূর থেকে ভেসে আসছে। অভ্র বিস্ময় দমন করে বলল, চল। চলুন; মুহুর্তে রেখা যেন ভেসে নেমে এল নীচে। অভ্রকে আবার ডাকলো, আসুন তাড়াতাড়ি। এক ঘোরের মধ্যে রেখাকে অনুসরণ করে চলল অভ্র, করিডর পেরিয়ে চলন্ত ট্রেনের গেটের মুখে। বাইরে সবে পুব দিক ফিকে হচ্ছে। সময় নেই শিগগির আসুন, দরজা খুলে নেমে যেতে যেতে শেষ ডাক রেখার, অভ্রর ক্ষমতা নেই তা অগ্রাহ্য করার।
পিছন থেকে এক হেঁচকা টান। কি করছেন মশাই, সুইসাইড করার ইচ্ছা? নাকি নেশা বেশী হয়ে গেছে? গরীবের চাকরীটা কেন মারছেন? এই জন্য ট্রেনে নেশা ভাঙ করতে এত কড়া নিষেধাজ্ঞা, উফ অল্পের জন্য বেঁচেছেন, ইস আমার হাতে এত জোরে লাগলো, এখন এই হাতের ব্যথা ভোগাবে। কি করছিলেন কি মশাই। গিরিডি আরো পাঁচ মিনিট পরে, এভাবে ঝুঁকছিলেন কেন ট্রেনের বাইরে? বিরক্তি সহকারে সমর বাবুর একের পর এক প্রশ্ন বাণ। রেখা যে নেমে গেল - অভ্রর অঅসংলগ্ন জবাব। কে রেখা? এখানে আপনি আমি ছাড়া তো আর কেউ নেই। আরে ওই যে আমার উলটো দিকের আপার বার্থের তরুণী যাত্রী, মাঝরাতে উঠেছিল আর এখন নেমে গেল, আমার চেনা, অভ্র ব্যাখ্যা করল। কি বলছেন মশাই, কটা পেগ গিলেছেন? মাঝরাত, আপনার উল্টো বার্থে মহিলা, আবার এখন নেমে গেল? সমর বাবু সরু ও তীক্ষ্ণ চোখে দেখছেন অভ্রকে, মাথার দোষ আছে কিনা কে জানে, বিকেলে তো চাদর মুড়ি দিয়ে উপরের বার্থে শুয়ে ছিল, যখন উনি এর বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলেন। আজ এক্সট্রা শিফট করতে হচ্ছে, সারারাত জেগেই আছেন। মাঝরাতে কোন স্টেশনে তো ট্রেন থামেনি আর কোন মহিলা যাত্রী ওঠার প্রশ্নই উঠছে না, অভ্রবাবুর উল্টো দিকের বার্থ খালি যাচ্ছে। মশাই যান চোখে মুখে জল দিয়ে স্টেশনে নামার জন্য তৈরি হন। গিরিডিতে গাড়ি ঢুকছে, আর আমার কথা বিশ্বাস না হলে নেমে প্যাসেঞ্জার  লিষ্টটা দেখে যাবেন। অভ্র ঘুরে দাঁড়ালো। হইচই তে কখন যে রবি আর শান্তনু পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, সে খেয়ালও করেনি। তাদের চোখে বিস্ময় ও ভয়, হাতে তিনজনের মালপত্র।

গিরিডিতে ট্রেন থামে মিনিট খানেক। অভ্র ছুটে গেল প্যাসেঞ্জার লিষ্ট দেখতে, সমর বাবু আড়চোখে দেখে নিশ্চিত হলেন, ছেলেটা পাগল, ফিরে গেলেন নিজের কাজে, একটা ফাঁড়া কাটলো, কাটা পড়লে হাজার ঝক্কি ছিল। না এবার পলাটা ধারণ না করলেই নয়, সময় ভালো যাচ্ছে না, গুরুদেব বলেছেন, স্বগতোক্তি করলেন তিনি।

কি খুঁজছিস কি অভ্র, রবি তাড়া দেয়। লাল চোখে ক্লান্ত ভঙ্গীতে তাদের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অভ্র বলে রেখা, কিসের রেখা? শান্তনুর অবাক জিজ্ঞাসা, অভ্র সে কথার উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে, ফেরার ট্রেন কটায় রে?  অন্য দুজন আরো অবাক, নামতে না নামতেই ফেরার কথা কেন? আরে তোর হবু শ্বশুর বাড়ির আদর না খেয়েই ফিরে যাবি? চেষ্টা করে সহজ হল রবি। তার আর কোন প্রয়োজন নেই রে, অভ্রর গলায় বিষাদের সুর। সেসব পাত্তা না দিয়ে দুই বন্ধু অভ্রকে টেনে নিয়ে চলল বাইরের গেটের দিকে। কাকভোরে সদ্য ট্রেন থেকে নামা প্যাসেঞ্জারদের হাঁকাহাঁকিতে ষ্টেশন যেন আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠছে, চাওলা আর কাগজের হকাররা আরেকটি আনকোরা নতুন দিনের হদিশ দিচ্ছে। চারপাশের বাতাসে হালকা হিমের স্পর্শ, গরম এক কাপ চা পেলে মন্দ হত না, বলল শান্তনু, আরে আগে অভ্রর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের খোঁজ, চা ও টা র ব্যবস্থা তারাই করবে, এই বলে রবি উপস্থিত মানুষজনের মাঝে দৃষ্টি বিছিয়ে দেয়। আরে ঐ তো অভ্রর মামাবাবু দাঁড়িয়ে, কিন্তু উনি হঠাৎ এখানে! সবাই এগিয়ে গেল মামাবাবুর দিকে, মামাবাবুর সাথে আরেক প্রৌঢ়।  অভ্রকে দেখেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন তিনি, আশেপাশের লোকেরা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছে। প্রৌঢ় বসে যাওয়া গলায় বললেন সেই এলে, কিন্তু, তাঁকে থামিয়ে দিয়ে অভ্র বলে উঠলো - জানি, রেখা বলেছে; কি ভাবে হল এসব? এবার অন্যদের বিস্মিত হবার পালা, রেখা বলেছে? কখন, কিভাবে? কাল বিকেলে, বিয়ের জন্য কেনাকাটা করে ফেরার পথে এক ভয়াবহ পথ দূর্ঘটনাতে রেখাতো চিরকালের মত বিদায় নিয়েছে। রাস্তায় পড়ে থাকা তার মৃতদেহের হাতে বিয়ের শাড়ির প্যাকেট, মাথা এমন ভাবে ফেটেছে যেন সিঁথি ভরা লাল সিঁদুর।

আস্তে আস্তে সবার বিস্মিত দৃষ্টির থেকে দূরে গিয়ে এক বেঞ্চিতে বসল অভ্র, পূব দিকে লাল সিঁদুরের বিন্দুর মত সূর্যর দিকে অপলকে তাকিয়ে রইলো তার লাল দুই চোখ, বিড় বিড় করে বলে চলল
ভুলি নাই, ভুলি নাই, ভুলি নাই প্রিয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.