নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অতি সাধারন। অনিন্দ্য কিছু নই।

উম্মে সায়মা

সখী ভালোবাসা কারে কয়...

উম্মে সায়মা › বিস্তারিত পোস্টঃ

(অ)গল্প: "জীবনের কত্থক"

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৩১



টিউব লাইটের তীব্র আলো পড়তেই চোখ জ্বালাপোড়া শুরু হল সীমার। ঘর মোছার বুয়া চলে এসেছে। চোখ মেলে সীমা দেখল বাইরে এখনো দিনের আলো ফোটেনি। জানালার কাঁচে এখনো রাতের অন্ধকার লেগে রয়েছে। জমিলা খালা তাদের বাসায় তিন বছর ধরে ঘর মোছার কাজ করে। ঘর মুছেই আবার বাড়িওয়ালার বাসায় গিয়ে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে কাপড় কাচা সব কাজ করতে হয়। তারপর বাড়ি ফিরে নিজেদের রান্না করতে করতে বিকেল হয়ে যায়। তার বিনিময়ে বাড়িওয়ালা বুয়ার ৬ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে শাবানাকে স্কুলে পড়ার সব খরচ দেয়। সে কোন বেতন নেয়না। তার একটাই ইচ্ছা তার মেয়েটা যেন সুন্দর একটা জীবন পায়।

জমিলা খালা মেয়েকে সরকারী স্কুলে দেয়নি। সেখানে ভালো পড়াশোনা হয়না বলে। এলাকার একটি কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। পরিবার নিয়ে একটা বস্তিতে থাকে। স্বামী রিকশা চালায়। সেই আয়ে তাদের সংসার মোটামুটি চলে যায়। সে কাজ করে শুধুমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য। সীমা অবাক হয় এই ভেবে কাজের বুয়ার মেয়ে এতো বেতন দিয়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ে। অথচ তাদের মত নিম্নবিত্ত ঘরের অন্য বাচ্চারা হয়তো পড়েইনা নয়তো কোনমতে সরকারী স্কুলে যাওয়া আসা করে। কিন্তু জমিলা খালার মনে যে অনেক স্বপ্ন তার একমাত্র কলিজার ধনকে নিয়ে!

সেদিন সকালে সীমাদের বাসায় কাজ করতে এসেই কাচুমাচু করে বলল,
'আফা, কাইল আইতে ফারুম না। একটু ম্যানেজ কইরা নিয়েন।'
সীমা তো অবাক। এতো বছরে খুব বড় অসুখ বিসুখ ছাড়া খালা একদিনও কাজ কামাই দেয়নি। তাই জিজ্ঞেস করল,
'কি হয়েছে খালা? কোন সমস্যা?'
খালা লজ্জাবনত মুখে বলল,
'কাইল আমার মাইয়ার স্কুলে অনুষ্ঠান। শাবানা নাইচব।'
সীমার চোখ তো কপালে। 'তোমার মেয়ে নাচতে পারে খালা?'
খালা উদ্ভাসিত হাসিতে উত্তর দেয়,
'হ আফা। আফনাগো এইহানে কাম কইরা যেই ট্যাকা ফাই হেই ট্যাকা দিয়া অরে নাচ শিখাই। আফা আফনে আইবেন আমার মাইয়ার অনুষ্ঠানে? আইলে আমি অনেক খুশি হমু।'
জমিলা খালা বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে যায়। সীমা বলে,
'আমার তো ক্লাস থাকে খালা। তবুও চেষ্টা করব….। আর আপনার কাল আসতে হবেনা।'
খালা তৃপ্তির হাসি দিয়ে ঘর মোছা শুরু করে।

সীমা জমিলা খালার মেয়ের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনা। কাজের বুয়ার মেয়ের নাচ দেখতে যাওয়া যায়না। যাবার নিয়ম নেই। সীমা কল্পনার চোখে দেখতে পায় স্কুলের বিশাল বড় মঞ্চে শাবানা পরীর মত উড়ে উড়ে নৃত্য পরিবেশন করছে। জমিলা খালা আর তার স্বামী সাজগোজ করে দর্শকের কাতারে বসে আছে। চারপাশে হাততালি পড়ছে। তারা নিজেরাও তাতে যোগ দিয়েছে। খুশিতে তাদের দু'জোড়া চোখ চকচক করছে। চোখের কোনে কি একটু আনন্দাশ্রুও জমা হয়নি? সমাজের এই নিচুস্তরের মানুষের বড় মন দেখে সীমার মন শ্রদ্ধায় ভরে যায়। তাদের সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা দেখে ভেতরটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়। যারা সমাজের উঁচুস্তরের বলে দাবী করে তাদেরই কজন মনের এত উদারতা দেখাতে পারে, এমন গভীর ভালোবাসার নিদর্শন রাখতে পারে!

১০.০১.২০১৭

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: উম্মে সায়মা ,




গল্প ছোট হলেও মূল বক্তব্যটি সুন্দর ।
সব মানুষের এমন স্বপ্নগুলো সত্যিকারের হয়ে উঠুক ..........................

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:২৫

উম্মে সায়মা বলেছেন: পাঠে এবং মন্তব্যে অসংখ্য ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই।
গল্প তেমন লিখতে পারিনা। তাই চারপাশের সমাজ নিয়ে একটু লেখার চেষ্টা। পাশে থাকায় কৃতজ্ঞতা।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:০২

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: স্বপ্নই জীবনকে বাচিঁয়ে রাখে ।
গল্পে ভাললাগা জানাই ।

ভাল থাকুন সতত ।

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:২২

উম্মে সায়মা বলেছেন: হ্যাঁ আপু, এসব খেটে খাওয়া মানুষদের স্বপ্নই একমাত্র সম্বল। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আপনিও অনেক ভালো থাকুন।

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৪১

পাপের বোঝা বলেছেন: ভালো লিখেছেন। ভালো লাগলো । সুন্দর সপ্ন, বড় সপ্ন সবার ভেতর গড়ে উঠুক। আপনার লেখার প্রতি শুভকামনা রইল।

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০০

উম্মে সায়মা বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ব্লগে স্বাগতম।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের একটি উক্তি। উনি সবসময় বলেন, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়,

এই স্বপ্ন ছাড়া মানুষ নেই ! আর স্বপ্ন মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র অনুপ্রেরণা...।

গল্প খুব সুন্দর হয়েছে ।
শুভ কামনা রইলো ।

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০২

উম্মে সায়মা বলেছেন: হুম। স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। পূরণ হোক আর না হোক।
ধন্যবাদ শাহরিয়ার কবীর ভাই। ভালো থাকুন।

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:২৯

রক বেনন বলেছেন: ছোট অথচ কিছু সাধারণ মানুষের সাধারণ কিছু চাওয়া আপনার গল্পে উঠে এসেছে। ভালো লাগলো পড়ে। ভালো থাকবেন।

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬

উম্মে সায়মা বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। আপনিও অনেক ভালো থাকুন। আমার ব্লগে স্বাগতম।

৬| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:২৫

ঋতো আহমেদ বলেছেন: সহজ সাবলীল সুন্দর বাস্তব জীবনের গল্প। ভাল লাগল।

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

উম্মে সায়মা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ঋতো ভাই। আপনাকে আমার পোস্টে পেয়ে ভালো লাগল। ভালো থাকুন।

৭| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

আজীব ০০৭ বলেছেন: +++

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৫২

উম্মে সায়মা বলেছেন: সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে প্লাস দিয়ে যাওয়ায় ধন্যবাদ। আমার ব্লগে স্বাগতম।

৮| ০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৪৬

সুমন কর বলেছেন: গল্পের বক্তব্যটি বেশ ভালো। ভালো হয়েছে।
+।

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ২:১৩

উম্মে সায়মা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ সুমনদা। প্লাসে কৃতজ্ঞতা।

৯| ০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার গল্পের নায়িকা সতেজ করার চেস্টা করেন, ঘুম থেকে সময় মতো উঠানোর ব্যবস্হা করুন, সন্মান পাক; এরা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ২:১৬

উম্মে সায়মা বলেছেন: হাহাহা চাঁদগাজী ভাই। মজা পেলাম আপনার মন্তব্যে। গল্পের নায়িকা সময়মতই ঘুম থেকে ওঠে। বুয়াই আগে আগে চলে এসেছিল। তখনো ভোরের আলো ফোটেনিতো।
পাঠে এবং মন্তব্যে ধন্যবাদ।

১০| ০৬ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২

নাগরিক কবি বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে আমি আনন্দিত B-)

০৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৯

উম্মে সায়মা বলেছেন: আপনার আনন্দে আমিও আনন্দিত B-)

১১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১৪

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: দুঃখিত আপু দেরি হয়ে গেল এত সুন্দর একটা পোষ্ট পড়তে।

অনেক ভালো একটা গল্প উপহার দিয়েছেন আপু। কাজের বোঁয়া আর মালিকের তফাৎটা সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন, যদিও মালিকটি ভালো মনেই হল, অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছে মাসির একদিনের ছুটি মঞ্জুর করে। আবার ক্লাসের জন্য অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি তবুও বসে বসে কল্পনা করেছেন তিনি। সেটাই আশীর্বাদ বোঁয়ার মেয়ের জন্য।

সবমিলিয়ে খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন আপু। কাজের মেয়েদের সাথে এমন ব্যবহার করাই কাম্যতা। গরীবের স্বপ্ন গুলো সত্যিই খুব কাঙ্ক্ষিত হয়।

শুভকামনা জানবেন আপু সবসময়।

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:২৬

উম্মে সায়মা বলেছেন: ইট্স ওকে নয়ন ভাই। দুঃখিত হবার কিছু নেই। দেরীতে হলেও যে পড়েছেন এবং সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্য রেখে গেছেন সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন। সবসময় পাশে থাকায় কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন অনেক।

১২| ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: কাজের বুয়ার মেয়ের নাচ দেখতে যাওয়া যায়না। যাবার নিয়ম নেই।

বাস্তবার এক অনন্য উদাহরণ। সুন্দরভাবে আমাদের চোখে বিঁধিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা।

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৩৬

উম্মে সায়মা বলেছেন: হ্যাঁ হাতুড়ে ভাই, এটাই নির্মম বাস্তবতা। পাঠে এবং মন্তব্যে ধন্যবাদ।

১৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যা বলব বলে ভাবছিলাম হাতুড়ে ভাযা বলে দিসে ;)

গল্পে ভাললাগা +++

০৮ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:২২

উম্মে সায়মা বলেছেন: আচ্ছা ঠিক আছে। :)
ভালো লাগা এবং প্লাসে অনুপ্রাণিত হলাম। ভালো থাকুন সবসময়।

১৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:০৯

মুশি-১৯৯৪ বলেছেন:
অসাধারন লিখেছ।
গল্পটা পড়ে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ছে। মফস্বল শহরের এক স্কুলে পরতাম আমি। পরম স্নেহে নুরু চাচা আমাকে স্কুল থেকে গৃহের দ্বার পর্যন্ত পৌঁছে দিত। কিন্তু তার জন্য সে কৃতজ্ঞতা কই পেল।

তবে আজও প্রতিদিন আমার হার হয়। আমি কাপুরুষ। সমাজতত্ত্বঘটিত গভীর যুক্তি গুলি আমার কানে পৌঁছল না।

০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:৩৭

উম্মে সায়মা বলেছেন: হুম এমন মানুষগুলো কৃতজ্ঞতা, সম্মান পায়না।চিরজীবন অবহেলিতই থেকে যায়।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

১৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:২৬

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: সায়মা আপু, তুমি কবিতার মতো গল্পও অনেক ভালো লেখো। খুব সহজাত, সাবলীল লেখনী তোমার। আর যে ম্যাসেজটি দিলে সেটা তো অসাধারণ! ভালো লাগা রইল তাই।

ভালো থেকো।

০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৪৫

উম্মে সায়মা বলেছেন: ধন্যবাদ পাগলী। গল্পের প্লট তেমন মাথায় আসেনা। তাই সমাজের সাধারণ চিত্র নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। তোমার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। তুমিও অনেক ভালো থেকো।

১৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: এটা কি কোন সত্য ঘটনা নিয়ে রচিত? সত্য হলে তো ভালই, জমিলা খালাকে স্যালুট! আর সত্য না হলেও, এরকম একটি গল্পের কথা যে আপনি ভাবতে পেরেছেন, সেজন্য আপনাকেও সাধুবাদ!
সামু পাগলা০০৭ বলেছেনঃ "তুমি কবিতার মতো গল্পও অনেক ভালো লেখো"। আমি দেখেছি, কবিদের লেখা গল্প প্রায়শঃ কোমল এবং সুখপাঠ্য হয়। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়।
গল্পে ষষ্ঠ ভাল লাগা + +।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৬

উম্মে সায়মা বলেছেন: গল্প তো সবসময়ই খানিক জীবন থেকে নেয়া, খানিক কল্পনার রং মেশানো হয়। এটাও তার ব্যতিক্রম নয় খায়রুল আহসান ভাই।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য রেখে যাবার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.