নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছুটা অসামাজিক

অনলাইনে করে খাই। লিখতে ভালোবাসি। আমার সেন্স অফ হিউমার ত্যারা।

কিছুটা অসামাজিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবহমান

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০৭

বিল্লাহ শাহ বড়ই পেরেশানে আছেন। তার পেরেশান বুঝতে হইলে তিনি কে সে সম্পর্কে আগে একটু ধারনা নিয়া রাখা দরকার। তার নাম নিয়েই অধিকাংশ মানুষ প্রথম পরিচয়ে বিভ্রান্ত হয়, তার কাছে অন্যদের জন্য একটা ঠোটস্থ গল্প আছে। শাহ নাসিরুদ্দিন নামে মুঘল আমলে এক উজিরের বংশধর তিনি। একটু ভেবে নিয়ে বলেন “ভাইসাহেব আমি একটু মিথ্যা বলেছি আপনারে, আসলে তিনি উজির ছিলেন না, আস্তাবলের দায়িত্ত্বে ছিলেন”
সত্যিকার অর্থে নাসিরুদ্দিন নামে কারো অস্তিত্ত্ব ই ছিলোনা। বিল্লাহ শাহ ছোট মিথ্যা দিয়ে বড় মিথ্যা টাকে ঢেকে ফেলে একটা বিশ্বাসযোগ্য গল্প তৈরী করেছেন। তিনি মিথ্যে বলার সময় ও গল্প বলার ঢং্যে গলার আওয়াজ উঠানামা করেন, এতে মিথ্যা আরো বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে। তার পেশায় মিথ্যা বলা একটা আর্ট এটা তিনি জানেন এবং গুরুর কথা অনুযায়ী মেনেও চলেন।
সেই নাসিরুদ্দিনের গল্পের পরের অংশ টা দুর্বল লাগে অন্যদের কাছে। একদিন নাকি নাসিরুদ্দিন বাদশাহ কে ঘোড়ার লাথি খাওয়ার হাত থেকে বাচান। লাথি পা দিয়ে মারা হয়, হাত থেকে বাচাবার কথা টা রুপক। রাজা খুশী হয়ে তাকে শাহ উপাধী দেন, সেই থেকে তাদের শাহ বংশ।
পেশায় বিল্লাহ শাহ একজন ক্যানভাসার, ট্রেইনে যে চরিত্রগুলোকে আমরা বিভিন্ন দ্রব্য বাজার থেকেও অর্ধেক দামে বিক্রি করতে দেখি, ইনি তাদের ই একজন। যদিও তিনি কোমরের কি বাতের ব্যাথার জাদুকরি অষুধ বিক্রি করেন না, তিনি বিক্রি করেন ইদুর মারা বিষ। এই বিষে চিকাও মারা পরে, আর তার বিক্রি করা বিষের সুনাম আছে, কাজ করে আইটেম টা।
বিল্লাহ শাহ এই বিষ নিজেই বানান, এজন্য তাকে নানা রকম কাচামাল যোগার করে সেগুলো পরিমান মত মেষাতে হয়। শুরুতেই গোল গোল ময়দা বা আটা দিয়ে পিচ্চি সাইজের বলের মত বানান, তাতে রঙ করতে হয়, রঙ গারো লাল না হইলে ইদুরের চোখ এরিয়ে যেতে পারে। আর মেষাতে হয় চিনির সিরাপ।
বছর তিনেক আগে এই চিনির সিরাপ টা যুক্ত করা শুরু করেন। তখন তার ব্যাবসা এত রমরমা ছিলো না। একদিন আজহার আলীর দোকানে একটা ঝগরা দেখে তার মাথায় এই বুদ্ধি আসে। মিষ্টি হইলে ইদুরে আগ্রহ করেই খাবে, বুঝে বাসায় ফিরে তার অষূধে চিনির সিরাপ মিষিয়ে দেন। তাতে ফল ও পাওয়া যায় মারাত্বক।
তার ব্যাবসাও বেড়ে যায় অনেক খানি। রোজ আগে যেখানে ৫০ প্যাকেট সারাদিনে বিক্রি করতে পারতেন না, কদিন পরে তাকে ২০০ প্যাকেট নিয়ে যেয়ে বসতে হয় বাজারের মোড়ে। দেশে ইদুরের বড় উতপাত।
একদিন বিল্লাহ শাহ এর মাথায় আজব খেয়াল চাপে, এইযে রোজ এগুলো বানান, খেতে কেমন হয় এগুলো ? তিনি বোকা নন, বিষ না মিষিয়েই একটা দানা মুখে দিয়ে দেখেন। খেয়ে তার মন খারাপ হয়ে যায়। ছোট ব্যালায় এরকম ই দানা পাবার জন্য অবলিলায় ধামা ভর্তি ধান দিয়ে দিতেন । খেতে অবিকল সেরকম। বিল্লাহ শাহ পকেট ভর্তি করে সেই দানা নিয়ে মিয়া সাহেবের পুকুরে যেয়ে বসেন। মুখে একটা করে দানা ফেলার সাথে সাথে তার চোখের নিচে জমা পানির পরিমান বাড়তে থাকে। রাত নাগাদ বাসায় ফিরে ঘোষনা দেন তিনি আর ইদুর মারা বিষ বিক্রি করবেন না।
বিল্লাহ সাহেবে এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে, মেয়ে তখনো স্কুলের যাবার বয়সী হয় নাই।
মেয়েটাকে আল্লাহ জন্ম থেকে বোবা করে জন্ম দিয়েছেন। বিল্লাহ শাহ যথেষ্ট ধার্মিক ব্যাক্তি।আল্লাহ পাকের দানে তিনি মুখ ব্যাকা করেন নাই। প্রান দিয়ে ভালোবাসেন উভয় সন্তান কেই। মেয়ে একদিন মারা গেলো পেটের অষুখে ভুগে। প্রচন্ড বমি করতে করতে। বিল্লাহ শাহ তখন তার জমিতে ধানের গোড়ায় মাছ চাষ করবেন তার তদারকি করতে গিয়েছিলেন। এসে দেখেন মেয়ের পেট ফুলে ঢোল। অবিকল ইদুরের মত।
পরদিন থেকে বিল্লাহ শাহ আবার ইদুরের বিষ বিক্রি করতে লাগলেন। এখনো করেন। সেই স্টেশনে গেলে এখনো দেখা পাওয়া যেতে পারে তার।



অনেক দিন পর বৃষ্টি আর বাশীর কড়া সুর লিখিয়ে নিলো একটা গল্প। মন্তব্যে খুশী হবো। ফেসবুকে আছি

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৫২

উম্মে সালমা কলি বলেছেন: খুব সুন্দর। ভালোলাগা রেখে গেলাম :)

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩০

কিছুটা অসামাজিক বলেছেন: ধন্যবাদ ধন্যবাদ ধন্যবাদ ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.