নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তোমার পল্লবে বসে আমাকে প্রসারিত করতে চাই।

নারী নির্যাতন বন্ধ করুন। যৌতুককে না বলুন। বাল্যবিবাহ থেকে সমাজকে রক্ষা করুন।

ভিটামিন সি

ঘোলা জল আর ঝরা পাতা মূল্যহীন। ঘোলা হওয়ার আগে বা ঝরে পড়ার আগেই কিছু একটা করা উচিত।

ভিটামিন সি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রেমে পড়ার গল্প; পর্ব-৪ (খ)।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩

বন্ধুরা, গত পর্বে আমি লাবনীকে নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিলো বিমানবন্দর রেল-ওয়ে স্টেশন থেকে। অতীব লোকাল ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস এর যাত্রী আমি আর লাবনী।



ট্রেন চলছে ঝক-ঝকা-ঝক, ঝক-ঝকা-ঝক, ঝক-ঝকা-ঝক করে। চমৎকার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড। একটু জোরে শুরু হয় তারপর আস্তে আস্তে কমে যেতে যেতে হারিয়ে যায়; আবার শুরু হয়। এই শব্দটা মেট্রোরেলেও হয় (সিংগাপুরের এমআরটিতেও হতে শুনেছি)। এই শব্দটার উৎপত্তি খোজার অনেক চেষ্টা করেছি। সহজে বের করতে পারি নি। পরে যা খুজে পেয়েছি তা হলো ট্রেনের লাইনের দুটো পাতকে যেখানে জোড়া দেয়া হয় সেখানে দুইপাশে আরো দুটা পাত দিয়ে নাট বল্টু লাগানো থাকে; ট্রেনের চাকা যখন সেই জোড়া অতিক্রম করে তখনই শব্দটা হয়। অনেকটা যুদ্ধ করে ট্রেনের ভিতরে পা রেখে একটু দাড়িঁয়েছি। সিট ছাড়া টিকিট তো, তাই অন্য কোন গতান্তর নেই। একটা সিটে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছি। অনেক লোকজন এক কামরায়। দরজা -জানলা হাট করে খোলা; কতগুলো বস্তা মালামালে বোঝাই। কিছু দরিদ্র ফ্যামিলি তাদের পুরো সংসার পেতে বসেছে, কেউ বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে, কেউ বিড়ি টানছে এই ভিড়ের মধ্যেই।



ট্রেন স্টেশন পেরিয়ে এসে সামনে ছুটে চলল। একটু পর শুরু হল বস্তি এলাকা, একেবারে লাইন ঘেঁষে। তারপর আরো কিছু পথ গিয়ে গাজীপুরে পৌঁছল। কিছু যাত্রী নামল, কিছু উঠল। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেল হকারের উপদ্রব। কেউ জটিল জটিল রোগের চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন, কেউ বরই, আমড়া, চানাচুর; কেউবা কলম, মলম, বাচ্চাদের বই। আমার স্টেশন প্রেম লাবনী তো উঠেছে সেই সামনের কামরায়। আমি এবার ধীরে ধীরে লাবনী যে কামরায় বসেছে সেই কামরার দিকে এগুতে লাগলাম। ২টা কামরা পেরুতেই আচম্বিতই ট্রেনটা থেমে যেতে লাগল এবং গেলও। দুইপাশে শালবন, গাছে গাছে কচি শালপাতার টিয়ে রং আর শালফুলের গন্ধ। সেইরাম পুরাই সেইরাম একটা পরিবেশ। কিন্তু গাড়ির ভিতরে প্রচন্ড গরম। গাড়ি চলা অবস্থায় গরমটা কম বোঝা যায় কিন্তু থেমে গেলে শুরু হয় গা ঘামান্তি গরম, বিভিন্ন লোকের শরীরের বিভিন্ন ঘামের গন্ধ, আর ট্রেনের নিজস্ব একটা গন্ধ তো আছেই। তো নেমে গেলাম আমি। নেমে সামনের দিকে তাকালাম। রেলওয়ে সার্ভিসের সাদা শার্ট গায়ে একজনকে দেখলাম। তার কাছে জানতে চাইলাম কেন থামল আর কতক্ষন এখানে থেমে থাকবে। তিনি জানালেন একটা আন্তঃনগরকে যাবার জন্য ট্রেন একানে দাড়িয়েছে, আন্তঃনগর চলে গেলেই আমরা ছাড়া পাব। আসলে গরীবের ট্রেন তো তাই এমন ব্যবস্থা। আর একটু সামনে গেলাম দেখি আমার আকাশী পরী ও ট্রেন থেকে নেমে একাকী শালবনের কাছে দাড়িঁয়ে আছে। আমিই তার কাছে গেলাম।

গিয়েই বললাম, আপনি সিট পেয়েছেন?

হ্যাঁ, একটা সিট চারজনে শেয়ার করেছি।

চারজনে শেয়ার করেছেন মানে?

একসাথে তিনজন বসার সিট আছে না; সেখানে আমাকে একটা সিট দিয়া বাকি দুইটা অন্য তিনজন লোক শেয়ার করেছে। আপনি কি পেয়েছেন?

নাহ। সিট তো সিট? দাঁড়ানোর জায়গাটা যে পেয়েছি সেটাই আমার জন্য ভাগ্য।

আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম আমার সাথে আসেন। আসলেন না তো।

নাহ, আমি তো ভেবেছিলাম যে সিট না পেলেও অন্তত দাড়িঁয়ে যেতে পারবো। তাই আপনার সাথে আসিনি। (মনে মনে বলছি আরে চান্দু তুমি যে সিট পেয়েছো তাকে কি সিট পাওয়া বলে? চারজন লোকে তিনটা সিট শেয়ার করে বসেছো)।

কথা ঘুরানোর জন্য বললাম, জায়গাটা সুন্দর না? গাছে গাছে সবুজ কচি পাতা, মন মাতানো ফুলের সৌরভ?

হ্যাঁ সুন্দর, তবে কবিদের জন্য, আর অন্য একটা শ্রেনীর জন্য।

অন্য একটা শ্রেণীর জন্য? সেই শ্রেনীটা কি?

আছে না একটা শ্রেনী, যারা কাছা-কাছি থাকলে সবকিছু দেখেই মুগ্ধ হয়।

হুমম। একটি বিশেষ শ্রেনী বটে। আপনার নামটা কিন্তু জানা হল না।

(আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে) লাবনী। আপনি?

আহসান হাবীব।

আপনি কি করেন?

ওই যে বললাম কামলা দেবার জন্য জায়গা খুজতেছি। চা খাবেন? চলুন চা খাই।

চা!! এই দুপুর বেলায়!! জঙগলে!!

ওহ তাইতো, এটাতো জঙ্গল। এটাতো চা খাওয়ার জায়গা নয়। আমি ভেবেছিলাম এতো লোকজন এটা মনে হয় কোন স্টেশন হবে। আচ্ছা, আমার কাছে আপনার একটা চা পাওনা রইল। পরে দেখা হলে সেটা পাবেন।

এমন সময় সেই ভিআইপি ট্রেনটা হুস করে বেরিয়ে গেল আর পিছনে রেখে গেল ঝক-ঝকা-ঝক ঝক-ঝকা-ঝক শব্দ।

আমরাও মৃদু বাতাসে কম্পমান গাছ-পাতার জগত থেকে আবার ট্রেনে ফিরে এলাম। ট্রেন চলতে শুরু করল। দুজন দু জায়গায়। এবার আমি ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করতে থাকলাম। উদ্দেশ্য ২য় কামরায় অবস্থানরত আকাশী লাবনী। চলে গেলাম তার কাছে; গিয়ে দেখি ২য় কামরায় ২য় সিটেই সে আরও তিনজনের সাথে বসেছে। তার যাত্রা সংগীরা বেশিরভাগই ব্যবসায়ী (সাথে ব্যাগ, মালপত্তর দেখে বোঝলাম) আমি তাকে দেখেও একেবারে ট্রেনের সামনে চলে গেলাম। তারপর আবার ফিরে আসার সময় তার কাছে দাড়াঁলাম।

আপনার সিটটা ভালো হয়েছে।

আপনি সিট পাননি?

না? কপালে যদি থাকে হাড়, কি করবে ......

সবকিছুই কপালে থাকে না। কিছু কিছু জিনিস রাস্তা ঘুরিয়ে কপালে নিয়ে আসতে হয়।

তাই নাকি? তাহলে আমি যদি কোন কিছুকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে চাই আমার দিকে, আসবে কি?

চেষ্টা করেন, বিফল হলেও চেষ্টা ছাড়বেন না। একসময় না একসময় আসবেই।

তাই তাহলে তো চেষ্টা করতেই হয়। আমার মোবাইল নাম্বারটা রাখুন। ০১৭১৫৩২....

সে তার মোবাইলে নাম্বারটিপে আমার নামটা সেভ করলো।

এবার আমাকে একটা মিসকল দিন, দেখি নাম্বারটা ঠিকভাবে সেভ করেছেন কিনা?

একটা মিসকল দিল। আমার নোকিয়া ১১০০ গুঞ্জন করে উঠল। তবে সে ফ্যাকাসে চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি চোখে অভয় দিলাম, নাম্বার কাউকে দেব না, আর খুব ডিষ্টার্ব করবো না। তার পাশের ব্যবসায়ীরা আমাদের নিয়ে ব্যস্ত না। তারা আলু পটলের দাম হিসেব করছে। আজকে বেশি গেল না কম গেল, কার কত লাভ হলো এইসব আরকি।

একটু পর ছোট একটা স্টেশনে ট্রেন থামল। কিছু লোক নেমে গেল। ৩য় কামরায় শেষ লাইনের একটা সিট খালি হলো। আমি বসলাম। এবার আমাদের অবস্থান হলো দুই কামরায় দুজন মুখো-মুখি। দুজন দুজনকেই দেখছি। তারপর দেখা-দেখি, চোখা-চোখি চলতে থাকল। একটা এসএমএস করলাম। আমি ফোন দিলে বিরক্ত হবেন না তো?

রিপ্লাই আসলো, এখন বলতে পারছি না।

তারমানে আমি বুঝে নিলাম, সে এখন বলতে পারছে না; আমি ফোন দিলে তখন বোঝা যাবে। সে তো বলেই দিয়েছে কোন চেষ্টা করে যেতে। আমি চেষ্টা করে যেতে থাকবো। তারপর একসময় আমার নামার সময় হলো। আমি নেমে গেলাম। বলে গেলাম আগামী কাল আমি ময়মনসিংহ আসবো। ২/৩ দিন থাকবো। আশা করি দেখা হবে।

সে বললো বলতে পারছি না। আপা যদি আসতে দেয়।

আপা যদি আসতে দেয় মানে? এখানে আপা আসলো কোথ্থেকে?

আমি আমার বড় আপার বাসায় থাকি। দুলাভাই ময়মনসিংহে জব করে। বাকৃবির খুব কাছেই আপার বাসা।

আচ্ছা ঠিকাছে। তাহলে আগে আপাকে ম্যানেজ করতে হবে এই তো?

হ্যাঁ। আপনি ম্যানেজ করেন। আমি কিন্তু আসবো। এই বলে চলে আসলাম বিদায় নিয়ে।

Click This Link প্রথম পর্বের লিংক।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

প্রেমের গল্প ভালই লাগছে।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৭

ভিটামিন সি বলেছেন: আরো কি লিখতে হবে? এই গল্পের বিষয়ে?

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩১

শায়মা বলেছেন: বাহ! তারপর ভাইয়া!:)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৭

ভিটামিন সি বলেছেন: শায়মা আপু হের পর তো পুরাই বাংলা ছবি। এরপর আসবে পর্ব-৫.

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৬

রাসেলহাসান বলেছেন: ভালোই, আগের পার্ট গুলো পড়ার দরকার।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬

ভিটামিন সি বলেছেন: আছে তো। লিংক দিয়েছিলাম মনে হয়। না পেলে একটু কষ্ট করে ব্লগটা দেখুন। আছে সবই।

৪| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:১০

পাখা বলেছেন: হুম আবারো .... :(

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:১৬

ভিটামিন সি বলেছেন: ওখে। চইলে আইসপে।

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৫

এন ইউ এমিল বলেছেন:
জীবনে বড় একটা আফসোস রয়ে গেল ট্রেনে উঠা হলনা,

ট্রেনে যাওয়া যায় এমন কোন যায়গায় কোন আত্মিয়ও নাই

আবেগে কাইন্দালচি

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৪১

ভিটামিন সি বলেছেন: আমার বাড়ি ও তো ভাই বাসের রাস্তায়। তাই শখের বশে চার পাঁচ দিন ট্রেনে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.