নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি তোমার পল্লবে বসে আমাকে প্রসারিত করতে চাই।

নারী নির্যাতন বন্ধ করুন। যৌতুককে না বলুন। বাল্যবিবাহ থেকে সমাজকে রক্ষা করুন।

ভিটামিন সি

ঘোলা জল আর ঝরা পাতা মূল্যহীন। ঘোলা হওয়ার আগে বা ঝরে পড়ার আগেই কিছু একটা করা উচিত।

ভিটামিন সি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন প্রবাসী, তার পরিবার ও একটি ঈদ। আনন্দ-বেদনার কাব্য।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:০৮

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশের ৮২ লাখ লোক প্রবাসী। একমাত্র ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের সব দেশেই বাংলাদেশীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি আছে মধ্য প্রাচ্যে। যখন ছোট ছিলাম, জ্বর হলে মা কোলে তুলে নিতো (সময়টা ১৯৮৯ হবে), তখনকার কোন কিছুই আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে আমার এক কাকা তখন পাড়ি জমায় সৌদি আরবে। যা আমাদের এলাকায় প্রথম বিদেশে যাওয়া। তারপর অনেক সময় পেরিয়েছে, অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে দেশ আজ একটা স্বনির্ভর অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। দেশের ২য় বৃহত্তম যে বৈদেশিক মুদ্রার উৎস তা এই প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনদের লোহিত রক্তকনিকা বিক্রির টাকা। আমি এই প্রবাসী পরিবারের একজন গর্বিত সৈনিক। আমার পাঠানো ডলার ও কাউন্ট হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে, জমা হয় ট্রেজারীতে। সেই ডলার নেয় ব্যবসায়ীরা আমদানী করে শিল্প কারখানার কল-কব্জা, কাঁচামাল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিদেশ থেকে।

অনেকেই আছেন যারা প্রবাসী শুনলেই নাক সিটকান। ভাই এমনটি কার সাথে করেন? যারা প্রবাসী তারা তো আপনার বাপ-ভাই, মামা, কাকা, খালু। তাদের সম্মান করতে শিখুন। মায়ের প্রতি ভালোবাসা বোঝা যায় মাকে ছেড়ে দুরে থাকলেই। যে মা আপনার জন্য প্লেটে ভাত নিয়ে রাত জেগে থাকেন, যখন আপনার সব অকাজের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরে আসেন, তখন মা আপনার জন্য সেই ভাত খেতে ডেকে নিয়ে যান। তবুও মায়ের চোখে, মুখে নেই কোন ক্লান্তি। দেশটাও তেমনি আমাদের ২য় মা। যদি দেশের ভালোবাসা বোঝতে চান, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য দেশের বাইরে যান, বোঝে যাবেন কি জিনিস ফেলে এসেছেন। আমরা প্রবাসীরা আমাদের সেই সোনার দেশটাকে দুরে ফেলে রেখে পরে থাকি বছরের পর বছর। দিন যায়, মাস যায় আমাদের স্বপ্নও ডাল পালা মেলে।

ঈদ তো প্রতিবছরই আসে। সেই একই রকম, সে একই আনন্দ। আমাদের মতো প্রবাসীর জীবনেও ঈদ আসে। তবে তা আসে এক বুক কষ্ট নিয়ে। কষ্টের মাঝেই পেরিয়ে যায় ঈদের দিনটা। পরের দিনেই শুরু হয় আবার হিমোগ্লোবিন বিক্রি। অনেককে আবার কাজ আর্জেণ্ট থাকলে ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। আমাদের কোম্পানীর ওয়ার্কারদের ই করতে হয়। কি করব; কিছুই করার নেই তাদের জন্য। আমি তো আর কোম্পানীর প্রশাসনিক দায়িত্বে নেই যে তাদের ঈদের দিন তাদের ছুটি দেবো।

ঈদের সময় আমাদের একটু আনন্দ যেটা সেটা হলো কে বাড়িতে কতো টাকা পাঠিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে বাবা লুঙ্গি-পাঞ্জাবি কিনেছে, মা পরার জন্য একটা আটপৌড়ে শাড়ি কিনেছে; ছোট ভাই/বোন নতুন জামা কিনেছে; বোন-দুলাভাই নতুন একটা কিছু পেয়েছে। এটাই আমার আনন্দ। এতেই আমি খুশি। ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মোট ঈদ হচ্ছে ১২ টি। আমি ২০১০ এ রোজার এবং ২০১২ তে কোরবানী ঈদে বাবা মার সাথে করতে পেরেছিলাম। বাকি ১০টি ঈদ দেশের বাইরেই করলাম। ঈদের আগের দিন রুমের সব মেম্বার মিলে বাজার করা, কাটা-বাছা করা, রাত ১২.০০-১.০০ টা পর্যন্ত রান্না করা, ভোরে গোসল সেরে সেমাই খেয়ে ৭.৩০ এ নামাজ পড়া। তারপর রুমে ফিরে বা বন্ধু-সহকর্মীদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে দুপুরে দেশের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলা। তারপর দুরের বন্ধুদের সাথে দেখা করা বা ঘুমানো; বিকেলে পার্কে ঘুরতে যাওয়া এইতো আমাদের ঈদের দিন। তারপরদিন আবার শুরু হয় কর্ম তৎপরতা। ভুলে যাই গতকাল যে আমার একটা আনন্দের দিন গেছে। আবার কম্পিউটারে, এম এস এক্সেলে হিসাব করি ঘন্টার; আজকে কত ঘন্টা ডিউটি করলাম। প্রতি ঘন্টা ২৩০টাকা হলে সারাদিনে আমার ইনকাম কতো হলো। এভাবেই দিনটা শেষ। মাসটা যায়। বছরটাও পার হয়। চলে আসে পরবর্তী ঈদ।

এবার আসি পরিবারের কথায়। দেশে প্রবাসীদের পরিবারেও আসে ঈদ -একরাশ আনন্দের ছোঁয়া নিয়ে। ঈদের আগে টাকা পাঠাতে পারলে আনন্দটা থাকে বেশি। না পারলে আনন্দটা হয়ে যায় ম্লান। প্রতিদিনের মতো ঈদের দিনটাও চলে আসে। সবাই সকালে গোসল সারতে যায় কলপাড়ে। বাবা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করে এই ভেবে, গতকাল যে নতুন সাবানটা কিনে আনলাম সেটা নিয়ে ছেলে কেন এখনো কলপাড়ে আসছে না??? তারপরই যখন মনে হয় ছেলে তো বাড়িতে/দেশে নেই। তখন কি বাবার দুচোখ থেকে দু ফোটা জল গড়ায় না আমার জন্য? আমি জানি গড়ায়, কিন্তু কেউ দেখে না সে জল। তারপর যখন নাস্তা খেতে বসে তখন কি মা আমার প্লেটটা ও ধুয়ে উঠোনে রাখেন না এই ভেবে যে ছেলে পাশের বাড়ি গেছে, এখনি ফিরে এসে বসবে!!! তারপর যখন মনে হয় ছেলে আসবে না, তখন কি মা আচলে মুখ চেপে ছুটে যায় রান্না ঘরে; মুখ লুকিয়ে দু-দন্ড কেঁদে নেয় সেখানে বসে?? আমি জানি মা কাঁদে। তারপর বাবা জামা-কাপড় পড়ে নামাজ পড়তে যাবার আগে একটু অপেক্ষা করে না যে ছেলে কেন আসছে না এখনো জায়নামাজ নিয়ে? নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে? আমি জানি বাবা বরই গাছটার নিচে একটু থমকে দাড়াঁয় আমার জন্য। হয়তো একটু বিরক্তও হয় আসতে দেরি হচ্ছে দেখে। মা ওই দুরের মেঠো রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে ওই রাস্তা দিয়ে যারা ঈদগাহে যাচেছ নামাজ পড়তে তাদের পানে। তাঁর লম্বা ছেলেটাও ওই দলটায় থাকত একমসয়, তার হাঁটা দেখেই চেনা যেত। মা আবারও ডুকরে কেঁদে উঠেন এই ঈদ আনন্দের দিনে। আমার বোনটাও মনে হয় তার সংসার খরচের টাকা থেকে বাচিয়ে ১০০ টাকা আলাদা করে রেখেছে এই ভেবে যে বিকেলে ভাইটা আসবে, তার হাতে দিতে হবে।

আর যারা নতুন বউ রেখে এসেছেন, বউটাই বা কি ভাবে? প্রতিটা সময়, মুহুর্ত্ব যেন তার কাছে লাগে একেটা অনন্ত প্রহর। হয়তো তার ইচ্ছা হয় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই গোসল সেরে স্বামীকে সালাম করে ঘরের কাজে হাত লাগাবেন। তারপর স্বামীর সাথে একটু দুষ্টুমি করে তাকে ঘুম থেকে তুলে দিবেন। স্বামী যদি এসময় একটু বাড়াবাড়ি করে, তবুও কিছুই বলবেন না। তারপর রান্না সেরে সদ্য কেনা নতুন শাড়িটি, ম্যাচিং করা অন্যান্য অনুসঙ্গ, হাতভর্তি চুরি পরে লাল রঙ্গা মেহেদী হাতে মাঠে যাওয়ার আগে স্বামীকে সালাম করা, বিনিময়ে স্বামীর বুকে দুই মিনিট নির্লিপ্ততায় দুই মিনিট মিনি বিড়ালের মতো চুপ করে থাকা। তার সব ইচ্ছা গুলো চাপা দেয় প্রবাস, ডলার নামক শব্দের স্তুপের নিচে।



জানি সবাই কষ্ট করে যার যার অবস্থান থেকে। তবুও চাই ঈদের আনন্দ সবাই ভাগা-ভাগি করে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠুক। বয়ে যাক শান্তির সু বাতাস বাংলার প্রতিটি ঘরে। আপনার পাশের বাড়ির প্রবাসীর বাড়িতে ঈদের দিন অন্তত আপনার মুল্যবান দশটা মিনিট কাটান। প্রবাসীর বাবা-মায়ের কষ্টটা অন্তত একটু হলেও লাঘব করার অনুরোধ করে আমি সবাইকে অগ্রীম ঈদ মোবারক জানিয়ে বিদায় নিলাম।



সিঙ্গাপুর থেকে---



মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬

মামুন রশিদ বলেছেন: প্রবাসীদের জন্য খারাপ লাগে, ঈদের সময়টা পরিবারের সাথে না থাকতে পারা খুবই বেদনাদায়ক ।

তবু ঈদ হোক আনন্দের । শুভ কামনা ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৬

ভিটামিন সি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সমবেদনা জানানোর জন্য।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



ঈদের শুভেচ্ছা রইলো

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮

ভিটামিন সি বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ঈদ মোবারক (অগ্রীম)।

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৫০

কালোপরী বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮

ভিটামিন সি বলেছেন: নিলাম এবং আপনাকে দিলাম। ভালো থাকবেন।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৫২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আপনার লিখাটা পড়ে আবেগাপ্লুত হলাম, সত্যিই চোখের কোনে এক টুকরো শিশির বিন্দু চিক করছে।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৯

ভিটামিন সি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ঈদের আনন্দটা / বিষন্নতা বা দুঃখটা নিজ পরিবার ছেড়ে বাইরে ঈদ করলেই বোঝা যায়।

৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮

এন ইউ এমিল বলেছেন: আমার দাদা এবং ওনার চার ছেলের মধ্যে চারজনই বিদেশে থেকেছে দীর্ঘ নি কেউ কেউ এখনো আছে, আমি ছাত্রজিবন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম টাকা কামানোর জন্য কখনো বিদেশে যাবোনা, এবং যাইনি,

বিদেশে গিয়ে আপনারা টাকার হিসাবটা হয় লাখে, আর দেশে থেকে আমার টাকার হিসাব টা হয় শত এ,

কিন্তু মা,বাবা,ভাই(নাই)বোন, দাদা, দাদি, কাকা, কাকি বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশি এমন কি শত্রু (যদিও নাই) প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের মুখ দেখি এটাকি আপনার লাখটাকারচেয়ে বেশি দামিনয়? এই কুরবানী ঈদে কাকা আর কাকাতো ভাইদের সাথে গরু কেটেছি এটাকি লাখ টাকার চাইতে দামি নয়।

তার পরও আনাদের সেলুট দেশ/মাকে ছেড়ে অনেক দুরে আছেন এই দেশ/মায়ের জন্যইতো, আপনারা অনেক অনেক ভাল থাকেন

২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৩৪

ভিটামিন সি বলেছেন: সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। আমারও প্রথম ইচ্ছা ছিল আমি জীবনেও বিদেশে যাব না। যদি দেশে কোন জন না পাই তাহলে যে টাকা বিদেশে যাওয়ার জন্য খরচ করবো সেই টাকা দিয়ে দেশেই ছোট খাট একটা কিছু শুরু করবো। কিন্তু সমস্যা বাধাইল তো "সারা"। তা কথা ছিলো এরকম "আমি আগামী বছর ইন্টার পাশ করবো। তারপর কিন্তু বাবা মা আমাকে বসিয়ে রাখবে না। তোমার যা কিছু করার তাড়াতাড়ি করো। নিজের পায়ে দাঁড়াও।" আর সেই জন্যে প্রবাসে আসা। এখন তো ভাই ছাড়তে পারছি না। মনে হয় টাকার লোভে পড়ে গেছি। সারাও নেই, ঘরে ফেরার তাড়াও নেই।

৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

এন ইউ এমিল বলেছেন: সারা না থাক, পুতুল পুতুল বউটা আছেনা?

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭

ভিটামিন সি বলেছেন: হ্যাঁ ভাই। সে তো আছেই। এই জন্যই তো মাসে ৮০-৯০ ডলার মোবাইল বিল দিতে হয়। আবার ভয় ও হয়, যে বয়স তার, কখন না আবার পল্টি খায়।

৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:১০

মরু বালক বলেছেন:

:(( :(( :((

২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৫৮

ভিটামিন সি বলেছেন: ঠেংকু।

৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৪

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
খুব টাচি করে লিখেছেন!
আপনার জন্য শুভকামনা...

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫৯

ভিটামিন সি বলেছেন: ভাল্লাগছে???? তাইলে আরো লিখুম। আপনার জন্য শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.