নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার শেষ নেই...

ভ্রমরের ডানা

ভালো থাকুক কবিতাগুলো ...

ভ্রমরের ডানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিলের পাখি

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:৩৬

দ্বিতীয় পর্ব
দেখতে দেখতে ছয়টি বছর কেটে গেল কিন্তু পুরনো সেই দীপ্তের সাথে আজকের দীপ্তের তেমন কোন পরিবর্তন নেই। আগেও ভীতু ও বোকা ছিলাম এখন ও রয়ে গেছি। কিভাবে যে বুয়েটে এলাম নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না। সুবীর ঢাকা ভার্সিটিতে আই ই আরে, সজল খুলনা মেডিকেলে, রাজিব আর রানা সাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার থেকে অনেক হাইপ্রোফাইলের খেলোয়ার অলি মার খেয়ে গেছে। বইয়ের সাথে আঠার মত লেগে থাকাটা কাজে এলো।দিনরাত এক করে পড়েছি।

শুনেছি পাশের বাসার অলি কোথাও চান্স না পেয়ে প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছে।শালা মনে হয় মদ গাঞ্জা খেয়ে চুর। এসএসসি তে দুজনেই এ প্লাস পেয়েছিলাম। এইচএসসি তে পড়ার সময় নাকি ও নিতুকে প্রেমের প্রস্তাব ও জানায়।অবাক করা বিষয় হল নিতুও নাকি রাজি ছিল। ওর সাথে নাকি প্রায়ই দেখা করত এখানে সেখানে। মেয়েটার নষ্টামি দেখেও কত যে না দেখার ভান করেছি। কলেজ পরুয়া মেয়ে গুলা সব ফড়িঙের মত। একটা বসার ডাল পাইলেই হয় ওদের তবে রঙিন বাহারি শহুরে বনসাই হইলেও ওটাই ওদের চাই। শহুরে বনসাই বলে কথা। ওদের মত চাকচিক্য গেয়ো বুনো সোনালুর ডালে নেই তো। অলি প্রায়ই পার্ট নিত নিতুর সাথে প্রেম করত বলে। প্রতিদিন কি কি কথা হত সে গুলো ও আমাকে প্রায়ই খ্যাপানোর জন্য বলত। শত্রু রা যে কিভাবে শত্রুর দুর্বলতা জেনে ফেলে সেই রহস্য অনেক সময় অজানা থেকে যায়। কি যে কষ্টের সময় কেটেছে আমার তখন বলে বুঝাতে পারব না।

জানি নিতু প্রেম করছে একটা ছেলের সাথে তবুও নিতুকে ভুলতে পারিনা। ওকে নিয়ে এখনো ভাবি প্রায় প্রতিদিনই, প্রতিটি মুহূর্তে। ও আমার জীবনের স্পন্দনের সাথে মিশে গেছে।সকালে উঠে আয়নায় মুখটা দেখার আগে ভোরের স্বপ্নে নিতুর থুতনি টা আমাকে ভেংচি কাটে বলে, '' আমাকে আর পাবে না।

আমি বলি, '' সুন্দরী তোমাকেই আমার চাই হু হা হা হা"। নিতুর থুতনি ভয়ে দৌড় দেয়। আমি পাগলের মত ঘুমের ঘোরে ওর থুতনি খুজতে থাকি, খুজতেই থাকি। দুপুরে ক্লাস থেকে এসে হল ডাইনিং রুমের ঢুকার পথে বাম দিকে একটা টেলিফোন বক্স আছে। মালটা নষ্ট। সরকারী জিনিসের এই এক অবস্থা যেখানেই থাক নষ্ট হয়েই থাকবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন কত বার যে ওই টেলিফোন থেকে মনে মনে নিতু কে ফোন করেছি।

বলেছি, নিতু আই লাভ ইউ।
নিতু বলেছে, আরেক বার বল?
আমি বলেছি, আই লাভ ইউ।
নিতু বলেছে, তুমি আবার বল?
আমি বলেছি, জান আই লাভ ইউ।
নিতু বলেছে, আরেকবার বল প্লিজ।

এভাবে নিতুর সাথে আমার কাল্পনিক সংলাপ চলত ঘণ্টা পর ঘণ্টা।বহুদিন নিঃসঙ্গ রাতে হল থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমের টেলিফোনের পাশে দাড়িয়ে থাকতাম। মাঝে মাঝে নিতুর ফোন আসত।

নিতু বলত, তুমি তো জান আমি অলিকে ভালবাসি তাও কেন আমাকেই তুমি ভালবাসতে চাও?
আমি বলতাম, কারন আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি।
নিতু বলত, আমি যে শুধুই অলিকে ভালবাসি। তাহলে কিভাবে হবে?
আমি বলতাম, নিতু তুমি কি বলত। আমার ভালবাসা প্রত্যাখ্যান কর তাহলে?

নিতু তখন চুপ হয়ে যেত। সেই সময় তার উত্তর পাওয়ার জন্য আমি টেলিফোনের বুকে আঘাতের পর আঘাত করতাম। উত্তর পেতাম না। বোকা আমি বোকাই রয়ে গেলাম। আমাকে উপহাস করে রাতের পোকা গুলো আরও জোরে চি চি করে উঠত। যন্ত্রণাময় প্রতিটি রাতে বন্ধু সুবীরকে ফোন দিতাম।

আমি,হ্যালো সুবীর দোস্ত। আমার ঘুম আসছে না।

এই কথা বলার সাথে সাথে সুবীর বুঝে যেত সকল ঘটনা।
সুবীরকে বলতাম মনের সব হাহাকারের কথা। আমাকে সুবীর শুধু সান্তনাই দিত।

ও বলত, দোস্ত তুই সব ভুলে যা। পড়ালেখা করে যা। দেখবি তোর জয় হবেই একদিন।

ওর কথায় কি ছিল জানি না অনেক আশা ফিরে পেতাম। নিতুকে পাবার আশা।

গত ছয় সেমিস্টারে ফাস্ট ক্লাস পেয়েই আসছি। আবার ও সামনে পরীক্ষা।

আমি বসে বসে রোবটিক্স পরছিলাম। হঠাৎ সে দিন দুপুরে আলুথালু বেশে সুবীর এল।
আমি, কিরে সুবীর ফোন না করেই চলে এলি যে, আয় আয় বস বস।
সুবীর বলল, দোস্ত আমার হলে আজকাল থাকা মুশকিল। ভীষণ মারামারি হচ্ছে। আমার ফ্লোরে একটা ছেলেকে মেরে ক্যাডাররা রক্তাক্ত করে দিয়েছে। যাকেই সামনে পাচ্ছে কোনকথা ছাড়াই মাইর দিচ্ছে। কোনমতে হলের পেছনের আমগাছটা দিয়ে বেয়ে নিচে নেমে এলাম।

আমি বললাম, তোদের বিশ্ববিদ্যালয়টার হয়েছে কি বলত? সারা বছর খালি মারামারি দেখলাম। এই আমাদেরটা দেখ। মারামারি হয় যে তা না তবে তোদের মত প্রতিদিন হয় না।

হলের মারামারি তখন আমাদের কাছে ডালভাত। সামান্য বিষয়ে কত যে মারামারি দেখেছি তার হিসাব নেই। ক্ষমতাসীন দলের ছেলের গায়ে ঘষা লাগলেই কোপাকুপি লেগে যেত।

আমি সুবীর কে বললাম, দোস্ত চল তাইলে নাটক দেখে আসি। দারুন একটা নাটক। সবাই খুব বলাবলি করছে সেইরকম সুন্দর নাকি নায়িকা। তুই অনেক মজা পাবি।

সুবীর বলল, চল দোস্ত। আমার কাছে টাকা নাই।
আমি বললাম, আমি ধার দিয়ে দেব সমস্যা নাই।

বিকেলে একটা রিক্সা ঠিক করে নাট্যকলা একাডেমীতে জলপরী নাটকটা দেখতে গেলাম।

নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে নিতু আমাকে জলে নামিয়ে নিল, ভিজিয়ে দিয়ে গেল।
আমি অবাক চোখে শুধু নিতুর চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। বলার ভাষাটা হারিয়ে গিয়েছিল। একসময় দেখলাম সুবীর আমাকে ডাকছে।

সুবীর, কিরে দীপ্ত নাটক শেষ যাবি না।
আমি, ও হ্যাঁ হ্যাঁ। চল চল জাইগা। দারুন লাগলো দোস্ত।
এমন সময় সুবীরের কাছে একটা ফোন এল। সুবীর থিয়েটার থেকে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল। আমি রাস্তার ধারের একটা দোকান থেকে দুটি বেনশন সিগ্রেট কিনলাম। সিগ্রেট ধরিয়ে একটা টান দিলাম। আর একটা জ্বালিয়ে সুবীরকে দিলাম।
ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরেই খাওয়া শুরু করেছি। নিতুর টেনশনটা আমাকে খেতে বাধ্য করেছে। বাসায় বাবা ও মা জানে। প্রথম প্রথম মায়ের হাতে ধরা খেতে ভীষণ লজ্জা লাগত। মা কেমনে যেন বুঝে যেতেন। মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। নিতুর বিষয়টা মা ই সর্বপ্রথম ধরেছিলেন।

সুবীর দেখি হঠাৎ সিগ্রেট টা মাটিতে ছুড়ে ফেলে পা দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দিতে লাগল। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করতে লাগলো।
সুবীরের কাছে গেলাম।

সুবীর ফোনের ওপাশে বলতে লাগলো, আরে ব্যাটা আরও খোঁজ লাগা। এটা হতেই পারে না। বলেই ফোন কেটে দিল।

সুবীর আমাকে বলল, কুত্তার লেজের মত মেয়েদের কারবার। এদের বিশ্বাস করতে নেই।
আমি, কি হয়েছে বল সুবীর, কোন খারাপ খবর।
সুবীর, শালা আমি ভাবতেও পারছিনা। মেয়েরা এত নিচে নামতে পারে।আমি, তুই বলবি তো আমাকে কি হয়েছে?
সুবীর, শুনে কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবি না আগেই বলে রাখলাম।চল ওই মাঠে চল। ওখানে গিয়ে বলছি তাহলে।
আমি,চল তাহলে।
সুবীর হাটতে হাটতে বলল, তবে শোন হট নিউজ। নিতু অলির সাথে ব্রেকআপ করছে।
আর..............................

আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে লাফাতে লাফাতে বললাম, মামা এতো সুখের খবর মামা, চল তোকে আজ তোকে তাভা তে খাওয়াব।

সুবীর মুখ কাল করে বলল, আরে ব্যাটা তাভা-ডাবা রাখ। পরের কাহিনীটা শুনলে তুই এখান থেকে হলে যেতে পারবি কি না সন্দেহ আছে।

আমি অসহায় হয়ে বললাম, নেক্সট কাহিনী কি দোস্ত? ওর কি কিছু হয়েছে?

সুবীর বলল, আরে ধুর। নিতু ভালো আছে শুধু ভাল না খুবই ভাল আছে। ও নাকি সজলকে অফার দিছে। ডাক্তার নাকি ওর অনেক পছন্দ। সজল ও নাকি ওরে আগে থেকেই পছন্দ করত কিন্তু বলে নাই। এখন ও অফার পেয়ে পুরাই আকাশে দোস্ত। তোর কপালে কিছুই নাই রে পিলু।

সুবীরের কথায় মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। দুচোখে জল ছলছল করে উঠল। বুঝতে পারলাম নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছি না। সুবীরের বুকে গিয়ে মুখ লুকালাম। সুবীর আমাকে জড়িয়ে ধরল। সান্তনা দিয়ে বলল,

এখনকার মেয়েদের চরিত্র বলে কিছু নেই। সব স্বার্থবাদী। অলির সাথে রিলেশন রাখবে না কারন ওর কোন ফিউচার নাই। সজলের ভবিষ্যতের দিকে ওর চোখ সজলের দিকে নেই। দেখিস এমন বেইমানি মেয়ে একদিন ওর পাপের শাস্তি পাবেই।
এখানে সজলের কোন দোষ নেই বুঝলি। ও তো তোর বিষয়ে কিছু জানে না। তোর উচিত ছিল বন্ধুদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করা। আমি আগেই তোকে এটা নিয়ে বলেছিলাম, তোর মনে আছে। এখন বোঝ ঠ্যালা শালা। তুই একটা ভীতু বলদ।

সুবীরের কাছ থেকে সরে আকাশের দিকে তাকালাম। আকাশের বুকে চাঁদ নেই শুধু তারা গুলো আবছা জোনাকির মত জ্বলছে। হঠাৎ পৃথিবীটা দুলে উঠল। আমি প্রবল ঝড়ে উপড়ে পড়া অসহায় বৃক্ষের মত মাঠের ঘাসে বসে পরলাম।

প্রবল তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেল। সুবীরকে কিছু বলতে গিয়েও গলা আটকে গেল। অনেক কষ্টে সুবীরের দিকে তাকিয়ে বললাম,

জানতে পারলে বিলের পাখিরা আমার প্রেমের কথা
হাহাকারে মরিত সবে বুকে নিয়ে নীল ব্যাথা।

মরন যদি হয় রে বন্ধু জানিও না কারো কিছু
পাছে ভয় সদা রয়, প্রিয়ার হয় যদি হেট নিচু।

মনের কথা মনেই রেখে আমারা থাকব চুপ
ঘুম আসছে গভীর ঘুম দিলাম আমি ডুব।



বিঃদ্রঃ তৃতীয় পর্বে গল্পের সমাপ্তি ঘটবে।এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। এটি আমার প্রথম গল্প লেখার প্রয়াস মাত্র তাই ভুলত্রুটি মার্জনীয়।






মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:০৪

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার পুরনো পোস্ট পড়তে এখানে চলে এলাম। গল্পটাতে আরেকটু টুইস্টস এন্ড টার্নস থাকলে ভাল হতো।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:০৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
এই পুরোনো ও অপরিনত লেখায় আপনাকে এভাবে কষ্ট দেবার জন্য দুঃখিত সুপ্রিয় লেখক। গল্পটি শেষ করতে পারিনি। ভেবেছিলাম আরেকটি পর্ব লেখব। কিন্তু না। হল না। টুইস্ট টার্ন্স নিয়ে শেষতক লেখার ইচ্ছেটা আবার জাগিয়ে দিলেন। আশাকরি, একদিন সব তাতিয়ে আবার লেখে ফেলব।


শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানবেন।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.