নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার শেষ নেই...

ভ্রমরের ডানা

ভালো থাকুক কবিতাগুলো ...

ভ্রমরের ডানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিল্প ও প্রযুক্তি বিপ্লব

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৪

মানব প্রজাতির উৎকর্ষময় কর্মতৎপরতা তাকে তাবৎ প্রাণিজগৎ থেকে আলাদা করেছে। প্রস্তর যুগের মানুষ আজ হাতে তুলে নিয়েছে আইফোন, ল্যাপটপ। এসব সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র প্রযুক্তি উন্নতকরণের মধ্য দিয়ে।


প্রযুক্তি কি?

আমার দৃষ্টিতে প্রযুক্তি হল একটি বিজ্ঞানসিদ্ধ কর্মপদ্ধতি যার মাধ্যমে আমরা আমাদের নানা সমস্যার সমাধান করি বিশেষ করে শিল্পের ও অর্থনীতির। প্রযুক্তি হল আমাদের জীবনধারার সেই ভিত্তি যার উপরে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কর্মময় জীবন। বিংশ শতাব্দীর এই যুগে একটি মিনিটও আমরা প্রযুক্তিকে অস্বীকার করে থাকতে পারব না। প্রযুক্তি হল রুপকথার সেই জিয়নকাঠি যার ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত আমরা জেগে ঊঠি আবার ঘুমিয়ে যাই।

প্রযুক্তিগত বিপ্লবঃ

প্রযুক্তিগত বিপ্লব হল এমন একটি বিপ্লব যেটি মানবজীবনের প্রতিটি স্তরকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ তার সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রভূতি বিষয়ে অবদান রাখে। মোটকথা সমাজের যে রুপ বা গতি তার ব্যাপক পরিবর্তন করে। আমরা যদি ইতিহাসের পাতায় ফিরে যাই তবে দেখি যে আমাদের এই কর্মময় মানবইতিহাসে এই পর্যন্ত তিনটি শিল্প তথা প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে। আরেকটি চলমান।

প্রথম শিল্প বিপ্লব-বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার - ১৭৭৫

দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব- বিদ্যুৎ আবিষ্কার - ১৮৭৫-১৯২০

তৃতীয় শিল্প বিপ্লব- ইন্টারনেট -১৯৬৫-১৯৯৬

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব- বর্তমান সময়ে রোবটিক্স, মোবাইল, ক্লাঊড কম্পিঊটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির আবিষ্কার ও ব্যাপক উন্নতি সাধন।


মানুষ সর্বপ্রথম কখন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে তা নিয়ে কোন পরিস্কার মতবাদ নেই। ব্যাপক পর্যায়ে জনজীবনে প্রযুক্তির ব্যবহারের ইতিহাস কিন্তু বেশিদিনের নয়। মাত্র তিনশত বছর পূর্বেকার কথা। ইংলিশম্যান জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন ইংল্যান্ড, ইউরোপের বিভিন্নদেশ ওআমেরিকায় ছড়িয়ে পরে। ফ্যাশনদুরস্ত কাউবয়দের তাগড়া ঘোড়ার যায়গা দখল করে আধুনিক যান্ত্রিক ইঞ্জিন। প্রথম শিল্প বিপ্লবের অভ্যূথানের জয়জয়কার সারা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখে আরো উন্নত জীবনের।



প্রথম শিল্প বিপ্লবের কিছুদিন পরে মাইকেল ফ্যারাডে আবিষ্কার করেন বিদ্যুৎ, তার কিছুদিন পর আমেরিকার টমাস আলভা এডিসন আবিষ্কার করেন বিদ্যুৎ চালিত বাল্ব। রাস্তাঘাট আলোতে ভরে গেল।তেল উত্তোলন শুরু হল। জ্বালানী শিল্প নতুন গতিতে উৎপাদনশীল চুল্লি গুলোতে বিভিন্ন ধাতু গলিয়ে সংকর ধাতু তৈরি করতে লাগল।এভাবে একসময় স্টিল তৈরী হল। শুরু হল নির্মাণ শিল্প, উচু উচু বাড়ি, কলকারখানা, অফিস তৈরি হল। টেলিফোন, টেলিগ্রাফের আবিষ্কারের ফলে তথ্যপ্রযুক্তির জাগরন মানুষের স্বপ্নকে এক অসীম উচ্চতায় নিয়ে গেল।





১ম বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হয় প্রযুক্তির ভয়ংকরতম রুপ তখন সবার সামনে প্রকট রুপে হাজির হয়। ট্যাংক, কামান, মেশিনগানের ভয়ানক শব্দে প্রকম্পিত হয় ইউরোপের ব্যাটেলফিল্ড গুলো। যুদ্ধাহত আহত সেনারা দলে দলে গ্যাংরিন হয়ে মরতে বসে। অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। এগিয়ে আসেন আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। পেনিসিলিন নোটাটাম নামক ছত্রাক থেকে আবিষ্কার করেন প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক। তার এই আবিষ্কার ২য় বিশ্বযুদ্ধাহত অনেক সৈনিকের জীবন রক্ষা করে।পরবর্তীতে এই ওষুধটি তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের কারিগরদের জীবন রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।



প্রথম দুটি শিল্প বিপ্লব শহরের মানুষদের ধনী থেকে আরো ধনী করেছে। কিন্তু এই নতুন ৩য় শিল্প বিপ্লবটি সেই শহরের উন্নয়ন কিভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেছে।

৩য় শিল্প বিপ্লবের পুরোটাই মূলত তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এর সূচনা হয় নাৎসি বাহিনী ভি-২ নামক ব্যালাস্টিক মিসাইল ও অ্যামেরিকার পারমানবিক বোমা আবিষ্কারের মাধ্যমে। শুরুটা খারাপ হলেও এরপর শুধুই এগিয়ে যাবার ইতিহাস। ষাট ও সত্তরের দশকে একে একে আবিষ্কার হয় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইন্ট্রিগেটেড সার্কিট, লেজার, জ্বালানী হিসেবে পারমাণবিক শক্তির ব্যাবহার, বুলেট ট্রেন ইত্যাদি।

লেজারঃ


প্রথম ইন্টারনেট বার্তাঃ




এরপর আশির দশকে আসে অ্যালটেয়ার ৮৮০০। মাইক্রোকম্পিউটার জগতে এক নতুন মাইলফলক রচনা করে। তার আগে ইন্টেল কর্পোরেশনের টেড হফ অনেক ইন্ট্রিগেটেড সার্কিটকে এক করেন একটি সিলিকন চিপের মধ্যে। তিনি এর নাম দেন মাইক্রো প্রসেসর। ১৯৭৫ সালে বিল গেটস নির্মাণ করেন মাইক্রোসফট কোম্পানি। এরপর বাকিটা শুধু ইতিহাস।



এরপর নব্বই দশকের শুরুতে ১৯৮১ সালে এপসম কোম্পানি প্রথম ল্যাপটপ প্রবর্তন করে। ১৯৮৩ সালে বাণিজ্যিক ভাবে প্রথম প্রজন্মের মোবাইল ফোন চালু হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠে পূর্বের চেয়ে ঢের সহজ।এর কিছুদিন পর ১৯৯০ সালে নেটওয়ার্কিং জগতে এক বিপ্লবের অভিষেক ঘটে। ফলে মানুষ দ্রুততম গতিতে তথ্য আদানপ্রদান করতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটারটির নাম আইবিএম-১৬২০। ১৯৬৪ সালে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য এটি নিয়ে আসা হয়। মজার ব্যাপার হল কম্পিউটার আসার প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে প্রথম ইন্টারনেট চালু হয়। তার কিছুদিন পর ১৯৯৮ সালে বাজার আসে তৃতীয় প্রজন্মের (3G) মোবাইল। মোবাইল জগৎের সেরা আকর্ষন স্মার্ট ফোন আসে অ্যাপল ইনকোর্পোরেটেডের প্রধান স্টিভ জবসের হাত ধরে।



এরপর একে একে এল এন্ড্রোয়েড, আইপড ইত্যাদি।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রযুক্তি ও শিল্প বিপ্লবের হাত ধরে বিশ্ব আজ চতুর্থতম বিপ্লবের দিকে এগিয়ে গেছে। আবিষ্কার হয়েছে ক্লাউড কম্পিঊটিং, রোবটিক্স, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, স্মার্টফোন, আধুনিক অ্যাপস, সামাজিক মাধ্যম(ব্লগ, ফেসবুক,টুইটার), নেটওয়ার্কিং ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ ও তার ব্যবহারের উৎকৃষ্ট বেবস্থা ইত্যাদির। উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সারাপৃথিবী মানুষ আজ একে অপরের খুব কাছাকাছি। যোগাযোগের সফটওয়্যার স্কাইপি, হুয়াটস অ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি ব্যবহার করে চাইলেই ঘরে বসে বাড়ির পাশের পড়শীর মত বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কথা বলতে পারি, কম খরচে ভিডিও কল করতে পারি।



বিজ্ঞানের এই নববিপ্লব বিশ্ব জুড়ে যে আলোড়ন তুলে দিয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন দেশে কনসোর্টিয়াম হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যৎবানী করেছেন যে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি কলম থেকে শুরু করে একটি স্পেসসিপ পর্যন্ত সব কিছুই ইন্টারনেটের আওতাধীন হবে। ২০১৬ সালেই তার কিছু কিছু নমুনা আমরা আসে পাশে লক্ষ্য করছি। সে যাই হোক, এমনটা হলে কিন্তু মন্দ হবে না। যারা জব করেন তারা অফিসে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওভেনে খাবার গরম করে রাখতে পারবেন। বাসায় ফিরে ঠান্ডা খাবার খেতে কার ভালো লাগে। আমার তো কোনদিনই নয়। বাসায় ফিরে ঠান্ডা খাবার খাওয়ার দিন শেষ হয়ে এল মনে হয়।

ছবিঃ গুগল মামা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ল্যাপটপ আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯৮১ তে আর আমরা পাচ্ছি এখন, তাও সবার হাতে পৌঁছেনি। মোবাইলের ব্যাপারটাও এমন।
এটাই বলে দেয় আমরা এখনও কতোটা পিছিয়ে!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: আসলেই পিছিয়ে আছি। মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাছাড়া সৃজনশীল কাজ ও কম হচ্ছে বলে এমনটা ঘটছে। এসবের পরিবর্তন হলে একদিন আমরাও কিছু করে দেখাতে পারব।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: ভ্রমরের ডানা




সুন্দর একটি বিষয়ের উপর লিখেছেন সন্দেহ নেই । জানাও গেল বেশ কিছু ।

কিন্তু একটা কথা না বলে পারছিনে । প্রযুক্তি কি? বলতে গিয়ে বলেছেন একটি আশীর্বাদ। আশীর্বাদটা হলো এর বিশেষণ । আবেগীয় উচ্চারন । এটা প্রযুক্তির সংজ্ঞা নয় । প্রযুক্তি হলো যুক্তির প্রয়োগ তথা জীবনের বিভিন্ন কাজ, শিল্প প্রভৃতিতে কৌশলের প্রয়োগ ।
প্রস্তরযুগের পাথরের হাতিয়ার ও একটি প্রযুক্তি । তেমনি সব কিছুই ।

শুভেচ্ছান্তে ।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: জী এস ভাই, প্রযুক্তির সংজ্ঞাটা এভাবে দিলাম।

আমার দৃষ্টিতে প্রযুক্তি হল একটি বিজ্ঞানসিদ্ধ কর্মপদ্ধতি যার মাধ্যমে আমরা আমাদের নানা সমস্যার সমাধান করি বিশেষ করে শিল্পের ও অর্থনীতির।

আশা করি এবার ঠিক আছে।

শুভকামনা।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৯

সুমন কর বলেছেন: বড় পোস্ট........হাজিরা দিয়ে গেলাম ;)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: মোগাম্বো খুশ হুয়া

অনেক ধন্যবাদ সুমন ভাই =p~

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৭

কল্লোল পথিক বলেছেন: সুন্দর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ।শুভকামনা জানবেন।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কল্লোল ভাই, শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৪

অর্থহীন চিন্তাবিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কাজ দেবে

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.