নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার শেষ নেই...

ভ্রমরের ডানা

ভালো থাকুক কবিতাগুলো ...

ভ্রমরের ডানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেরাজুগ্রাফি- শেষপর্ব

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:০৬



মেরাজুগ্রাফি- প্রথমপর্ব

মেরাজুগ্রাফি দ্বিতীয়পর্ব

মেরাজুগ্রাফি- তৃতীয়পর্ব

চায়ের কাপে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে ডানে বামে তাকাল মেরাজ। না কেউ নেই। একটু আগে তার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। বাইকে আসা দুটো লোক তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।একটুর জন্য বেচে গেছে। সে অবাক হয়না। নির্লপ্ত দৃষ্টিতে চায়ের কাপটা দেখছে। কড়া লিকারের লাল চা যখন আদা দিয়ে বানানো হয় সেটার ঘ্রাণ আর স্বাদ দারুন। আপাতত সে চায়ের কাপের ঘুর্নিতে আদা গুলোর ডোবা ওঠার দৃশ্য দেখছে। একটা আদার ফালির উপর আরেকটা আদার ফালি ভর দিয়ে উপরে উঠে আসছে। এই টুকরো টুকরো আদা গুলোর সাথে মানুষের অদ্ভুত মিল। বারবার একই চক্রে ঘুরতে থাকে। একজন আরেক জনের গায়ে পা দিয়ে উপরে ওঠার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। তারপর একেবারে পেটে গিয়ে তবেই শান্তি। এভাবেই ঘোরপাক খায় প্রতিটি জীবন। এর যেন শেষ নেই। মেরাজ চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সে দিন দিন দার্শনিক হয়ে যাচ্ছে। আগের মত দুষ্টামি আর মাথায় খেলছে না। সে এখন চায়ের কাপের আদারু আদারু খেলার খেলোয়ার। এ খেলা সবার জন্য নয়।বাড়ির কথা মনে পড়ছে মেরাজের।সে পোয়াতি বউরে ফেলে শহরের পিচঢ্লা রাস্তায় আজব সব মানুষের সকল কর্মকান্ডের সাক্ষী। কত ভাল চেহেরার কত খারাপ মানুষ, কত খারাপ চেহেরার কত খারাপ মানুষ এই শহরে। এমনি কি কবিতায় কবিও বিরক্ত হয়ে বলেছে-

শহর শহর ঢাকা শহর,
আজব শহর ঢাকা।

কবিতাটা তার পুরো মনে নাই। তবে এই দুই লাইন যথেষ্ট। ছোট থাকতে গ্রামে গঞ্জে সার্ট পেন্ট পরা মানুষ দেখলেই সে ভাবত এরা মনে হয় ফেরেশতা। এখন এই মানুষগুলাই রাস্তায় গুন্ডামি আর বাসায় বসে ভন্ডামি করে। অবশ্য এরা সবাই এক নয়। কিছু কিছু আছে খুব ভাল। যেমন ম্যাডাম।

চায়ের দাম মিটিয়ে মেরাজ সিএনজি স্টার্ট দেয়। গন্তব্য এখন গ্যারেজ। গাড়িটা ফেরত দিতে হবে ভাবতেই আবার তার মনটা উদাস হয়ে যায়। এই গাড়ির সাথে তার কত মজার মজার সময় কেটেছে। কত অজানা কিছু দেখেছে বুঝেছে। চোখ ফেটে পানি আসে তার। এমন কান্না সে কবে করেছে তার মনে নেই। হয়ত ক্লাস থ্রী ফোরে বাবার বানিয়ে দেওয়া টিনের গাড়িটা ভেঙে যাওয়ার সময় এমন কান্না করেছিল। ঠিক মনে আসছে না তার। সে আর মনে করতেও চাচ্ছে না। রাস্তার মাঝে এভাবে কাঁদতে তার আজ খুব ভাল লাগছে। চোখের পানি বামহাতের আস্তিনে মুছে স্কয়ার ল্যাবএইডের বামের রাস্তা দিয়ে গাড়িটা ঘুরিয়ে নেয়। লক্ষ্য মিরপুর চোদ্দ। শেষবারের মত গাড়িটা চালিয়ে নেয় যত্ন সহকারে।

-কি মেরাজ মিয়া, কি খবর তোমার? আইজক্যা এত তাড়াতাড়ি চলে আইলা ক্যান? শরীর খারাপ বুঝি?
গ্যারাজ মালিক রসুল বখত অনেক ভাল মানুষ।বিপদের সময় সেই মেরাজকে গাড়িটা ঠিক করে ভাড়া দেয়। আজ তাকে গাড়িটা ফেরত দিতে গিয়ে মেরাজের চোখ ছলছল করে ওঠে।

-চাচা আমি ভালাই আছি। তয় আপনারে ক্যামনে কই আসলে আমি একটা চাকরী পাইছি। গুলশানে। গাড়ির ড্রাইভার।
- আরে সে তো ভাল খবর। তা তুমি কানতেছ ক্যান মিয়া?
মেরাজ ডুকরে কেঁদে ওঠে।
রসুল মিয়া তার পিঠে হাত রেখে বলে- বুঝছি, সব বুঝছি গাড়ির মায়ায় পড়ছ মিয়া। আরে চিন্তা কইরো না। এই গাড়ি আমি কাউরে চালাইতে দিমু না। চাকরীর টাকা জমাইয়া তুমি হেইডা কিইন্যা লইও।
মেরাজ খুশি হয়ে চোখ মুছে। শেষবারের মত গাড়িটায় হাত বুলিয়ে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে আসে।

গুলশানের বাসায়

- মেরাজ, গাড়িটা বের কর। গাজিপুরে যেতে হবে।
- জী ম্যাডাম। আমি বের করছি।
মেরাজ করোলা মডেলের গাড়িটা পার্কিং গ্রাউন্ড থেকে নিয়ে মেইনগেটের কাছে আসে। এসিটা অন করে লুকিং গ্লাসে তাকায়। পেছনে ভিন্ন মডেলের বিশটার বেশী গাড়ি পার্ক করা। কোন বাইক নেই। ম্যাডাম গাড়িতে উঠে বসে।
-ওকে চল।
মেরাজ গাড়িটা রাস্তায় ধীরে ধীরে নামায়। এরপর সোজা ড্রাইভ করে চলতে থাকে।
- মেরাজ তোমার ক্যামন লাগছে?
-জ্বী ভাল ম্যাডাম।
-কোন সমস্যা? থাকা খাওয়া?
- না ম্যাডাম সব ভালই আছে। আলহামদুলিল্লাহ।
-মন খারাপ নাকি?
- জ্বী না ম্যাডাম।
- মিথ্যা বলছ কেন? আমি সব জানি। মেয়েদের মন খারাপ হয় পুরান গয়নাগাটি হারিয়ে গেলে আর ছেলেদের হয় প্রিয় গাড়ি হারিয়ে গেলে। তোমার অবশ্য হারায়নি কিন্তু বিষয়টা একই।
-ম্যাডাম সরি। ভুল হয়ে গেছে।
আর মিথ্যে কথা বলব না। আপনি অনেক বুদ্ধিমতী। ম্যাডাম খুশি হয়ে যায়।
- ম্যাডাম একটা কথা বলি?
- বল?
- মন খারাপ সেইটা কোন কিছুই না। সব ঠিক আছে। তবে......
-তবে কি?
- ম্যাডাম আপনাকে জানানো হয়নি। যে দিন আপনার এখানে আসি সেদিন দুটো ছেলে বাইকে আমাকে ফলো করে। পরে ছুড়ি চালিয়ে পালিয়ে যায়। আমাকে একটুর জন্য আঘাত লাগেনি।
ম্যাডাম চিৎকার করে বলে ওঠেন-
-বল কি? তুমি তখন আমাকে জানালেনা কেন?
-ম্যাডাম আমি তো বাইকটার পেছনে ধাওয়া করেছিলাম। কিছুদূর গিয়ে ওটাকে আর পাইনি তখন সিএনজিটা ফেরত দিতে মিরপুর চলে গেছি।
মেরাজ রেয়ার উইন্ডোতে চোখ দেয়। মহিলা মুষড়ে পড়েছে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে। কাকে জানি ফোন দিয়ে বিড়বিড় করে কি সব ইংরেজিতে বলে।

গাজীপুরের তামান্না টেক্সটাইল এন্ড ফেব্রিকেশন লিমিটেড ম্যাডামদের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টরি। এমন আরো সাতাশটা ফ্যাক্টরি তাদের আছে। মেরাজ আগেও শুনেছে এটার কথা। দারোয়ান ভাব জমিয়ে তাকে এসব বলেছে। মেরাজ যখন ভাবতেও পারেনি যে দারোয়ান যা বলেছে তার থেকেও এটা এত বড় হবে। মেরাজ ম্যাডামকে নামিয়ে অফিসে দিতে যায়।
ম্যাডামের কক্ষে আগে থেকেই ম্যানেজার শফিক সাহেব উপস্থিত।

দারোয়ানের মতে শফিক সাহেব খুব কাজের লোক। খুব পরিশ্রমী। তবে একটু লোভী বেশী। দারোয়ান নাকি বহুবার তাকে ম্যাডামের টেবিল থেকে আপেল তুলে খাইতে দেখছে। যখন ধরা পড়ছে তখন তাকেও আপেল সাধছে। দারোয়ান সেই কথা কাউকে বলে নাই। মেরাজকে তাই কিড়া খাইতে হইছে।

ম্যাডামকে দেখে শফিক সাহেব উঠে লম্বা সালাম দেয়। পেছনে সরতে গিয়ে চেয়ার উল্টে পড়ে যায়। উপস্থিত সকলে হো হো করে হেসে ওঠে।
-শ্যাটাপ! ম্যাডাম চিৎকার করতেই সব চুপ।
শফিক সাহেব আপনি গিয়ে আজকের ফাইল গুলো নিয়ে আসুন।
- ওকে ম্যাডাম। শফিক সাহেব বেড়িয়ে যায়।
-"মেরাজ তুমি এখন বাসায় যাও। আমার মেয়ের দিকে খেয়াল রেখো।" এসব বলেই ম্যাডাম কাগজপত্রে ডুবে গেলেন।
- জী আচ্ছা ম্যাডাম। আসসালামুয়ালাইকুম।
মেরাজ দ্রুত গাড়ির দিকে রওনা দেয়। গাড়ি স্টার্ট করে, সিটবেল্ট বেধে নেয় মেরাজ।

ফ্যাক্টরি গেট পেড়িয়ে আসতেই লালসাদা বাইকটা নজরে আসে মেরাজের। এই বাইকটা করেই তাকে ছোরা দিয়ে আঘাত করতে আসে গুন্ডারা। মেরাজের বুকটা ছ্যাৎ করে ওঠে। কিছুটা ভয়ের শীতল স্রোত তার শীড়দাড়া বেয়ে নেমে আসে। গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দ্রুত সে গাড়ি নিয়ে ছুটতে থাকে। লুকিং গ্লাসে বাইকটা দ্রুত এগিয়ে আসছে। কাল হেলমেট পড়া লোকটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাটকুর ফুলে ওঠা ভুঁড়িটা বলছে লোকটা মাঝ বয়েসী তবে পেছনেরটা লিকলিকে লম্বা। মেরাজ গাড়ির থার্ড গিয়ার চালিয়ে দুরত্ব কিছুটা বাড়িয়ে নেয়। চাকরীর প্রথম দিনেই এমন অবস্থায় পড়বে ভাবতেও পারেনি সে। তুরাগ ব্রীজের কাছে এসে জ্যামে পড়ে যায় গাড়িটা। সামনে এগোনোর কোন পথ নেই। এদিকে পেছনের বাইকটা মাত্র পঞ্চাশ গজ পেছনে দাঁড়িয়ে গো গো করছে। ওটার ইঞ্জিনের প্রকট শব্দে রাস্তার লোকজন বিরক্ত। কিন্তু কোমরে হোলস্টার দেখে কেউ কিছুই বলছে না। লিকলিকে লোকটা বাইক থেকে নেমে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। মেরাজের বুকের হৃদস্পন্দন ক্রমেই বাড়তে থাকে। হ্যাংলাটার পুরো শরীরটা এখন স্পষ্ট। আরেকটু এগিয়ে এসে হ্যাংলাটা গাড়ির পাশে জানালায় পিস্তলটা ঠেকিয়ে দরজা খোলার ইশারা দেয়। হ্যাংলার মুখে বসন্তের দাগে ভরা। মনে হয় জায়গায় জায়গায় কেউ মুখটা খাবলে নিয়েছে। মেরাজের দিকে তাকিয়ে পিস্তল নাচিয়ে একটা ওয়ার্নিং দেয়। মেরাজ বুঝে ফেলে আর কিছু করার নেই। দরজা খুলে দেয়। হ্যাংলাটা গাড়ির সামনের সিটে বসে পিস্তলটা মেরাজের পেটে ঠেসে ধরে বলে-
-আমাকে চিনেছিস তুই? শালা শুয়োরছানা।
মেরাজ ওদেরকে কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না। তবে এই লিকলিকে হারামজাদার চেহেরা সে আজ নতুন দেখছেনা এটা নিশ্চিত। মেরাজের ইচ্ছে করছে এই শয়তানটার মুখে একটা বিশাল ঘুষি দিতে। কিন্তু তার করার কিছুই নেই। নড়লেই গুলিটা পেটের সব কিছু ছিঁড়ে বের হয়ে যাবে। এই হেংল্যাটার সাথে সময় নষ্ট করার বুদ্ধি করে মেরাজ। জ্যামটা খুলে গেলে ত্রিশ মিটার জায়গা পেলেই লাল্টুর মাথায় একটা আলু ফুটিয়ে দিতে পারবে মেরাজ।
- স্যার আপনি ভুল করছেন স্যার, মুই তো নয়া ড্রাইভার? মোর কি দোষ স্যার?
-শালা পানি মেরেছিলি মনে নাই?
প্রমোদ গুনে মেরাজ। তার সব কিছু মনে পড়ে যায়। লম্বু বাটুর নষ্টি ফষ্টির একমাত্র শাস্তিদাতা সে। ঘটনাটা ভুলেই গেছিল মেরাজ। মনে পড়তেই চেহেরার কোন পরিবর্তন না করেই নিজেজে সামলে নিয় মেরাজ।
- "মুই পানি দেব ক্যামতে, মুইতো আগে রিক্সা চালাইতাম। টুকটাক গাড়ি চালা শিখছি মোর দূরসম্পর্কের এক খালাতো ভাইয়ের কাছে। তাও আবার পার্মানেন্ট না। ফক্সি দেই সাহেব। মোরে বন্দুক মাইরেন না। মোর কোন দোষ নাই। আপনারে মুই হের কাছে নিয়া যামু স্যার, আমারে মাইরেন না। " মেরাজ অভিনয় চালিয়ে যায়। লম্বু হ্যাংলা তার কথায় বিশ্বাস করে বলে "চল তাইলে। তয় ওরে না পাইলে তোর বুকে চারটা ফুটা করমু।" পেছনের বাইকারকে ইশারা দিয়ে হ্যাংলু গাড়িটা ফলো করতে বলে।

জ্যামটা খুলতেই মেরাজ কিছুটা জায়গা পায় তবে যথেষ্ট না। গাড়িটা উত্তরার রোডে ঢুকতেই মেরাজ দ্রুত এগিয়ে চলে। উত্তরা দশের একটা রোডে গাড়িটা ঢুকিয়ে সোজা টানতে থাকে। রোডটা ফাকা। স্পীড যতটা বাড়ানো সম্ভব বাড়িয়ে মেরাজ হুট করে ব্রেক করে। গাড়ির সামনে বসা লম্বু সিট বেল্ট লাগায়নি। সারা রাস্তায় খিস্তিখেউড় করেছে। এখন সে পালকের মত উড়ছে। উড়ে দিয়ে জানালার কাচটা ফুটো করে গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে। মাথায় আর মুখে তার কাচের টুকরো গেঁথে গেছে। আর পেছনে আসা বাইকটার বাটুটা গাড়ির সাইডের ধাক্কা খেয়ে ড্রেনে পড়ে গোঙানি দিচ্ছে। ভাগ্যভাল সে সিট বেল্টটা খেয়াল করে বেধে নিয়েছিল নাহলে ওদের মত রাস্তায় পড়ে গোংরানি দিতে হত। মেরাজের অবশ্য মাথায় স্টিয়ারিং টা একটু লেগেছে তবে সে সামলে নিল। গাড়ির দরজা খুলে এগিয়ে যায় লম্বুর দিকে। রাস্তায় পড়ে থাকা লম্বুর পিস্তলটা নিয়ে সে ওর পাশে ফিল্মি স্টাইলে বসে গেল।
-কিরে কাদাজল খেয়ে মন ভরেনি তোর, শালা শুয়ার। আমিই সেই সিএনজিওয়ালা বুঝলি। বুকে চারটা ফুটো করবি? আয় কর। বলেই একটা কষে চড় লাগাল মেরাজ।

লম্বুর মুখের দাত কয়েকটা নেই। রাস্তার পিচে ঘসা খেয়ে আর কাচের টুকরো গেথে গিয়ে বসন্তভরা মুখটায় ওর মুখকে পৃথিবীর সবচেয়ে কদাকার মুখ মনে হচ্ছে। লম্বু কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। থাপ্পড় খেয়ে মনে হয় মাফ চাইছে। মেরাজ পাত্তা দিল না। বাটুর দিকে এগিয়ে গেল সে।

ড্রেন থেকে বাটুকে তুলে আনল। পিস্তলটা মুখের কাছে ধরে বলে-
আমাকে ফলো করছিলি কেন? আর চাকুই বা মারতে আসছিলি ক্যান? জলদি বল। তোরা যে পাপ করেছিস তার জন্য কাদা খাওয়াই উচিত। কিন্তু আমাকে এই সামান্য কারনে খুন করতে চেয়েছিস তোরা? আজ তোদের পিটিয়ে হাড় ভেঙে তারপর পুলিশে দেব।
- লম্বু গোঙায় গোঙায় বলে - "পুলিশে দিস না পুলিশে দিস না। আমরা তোকে অনেক টাকা দেব। আমরা ব্যাবসা করি। ম্যাডাম আমাদের আত্নীয় হয়। আমার ফুপাতো ভাইয়ের চাচার মেয়ে উনি। আমার চাচাতো ভাই উনার ড্রাইভার ছিল। সে ম্যাডামের সব বিজনেস ডিল শুনে রাখত। আমরা সেই অনুযায়ী বায়ারদের নিকট উলটা পালটা বলে কমিশন নিতাম। এটা ম্যাডাম জেনে গেলে আমার চাচাতো ভাইকে বসিয়ে তোকে ড্রাইভার রাখে। আজ একটা ইংরেজ ক্লাইন্টের সাথে দেড়হাজার কোটি টাকার ডিল ছিল। আমরা এই ডিলটার খবর জানতে পারলে অনেক টাকার কমিশন পেতাম "।
মেরাজের মাথা ঘুরে যায়। এ তো বিশাল চক্রান্ত। রাগে সে বাটুর ভুঁড়িতে একটা ওজনদার ঘুষি চালিয়ে দেয়। বাটু কোকাতে কোকাতে বলে- "আমার কি দোষ। শালা শফিকের বাচ্চা আমাদের নষ্ট করেছে। কুত্তার বাচ্চাটা কমিশনের ফিফটি পার্সেন্ট খায়। ওই আমাদের এই পথে নিয়ে আসছে। আমরা তো ব্যবসাই করছিলাম।তুই আমাদের ছেড়ে দে ভাই। আমরা তোকে অনেক টাকা দেব। আর এসব ছেড়ে দেব। ভাই ছেড়ে দে প্লিজ ভাই"।

গুলশানের বাসায়
মেরাজ ওদের গাড়ির পিছনে হাত পা বেধে তোলে বাসায় নিয়ে আসে। বাসার লম্বা ঝাউ গাছের গোড়ায় ওদের শক্ত করে বেধে রাখে। আরেকটা দড়ি বেশ মজবুত করে গাছের সাথে বেধে রাখে। এটা শফিকের জন্য।

ভদ্রবেশী জানোয়ারদের আস্তানায় নতুন এক শিকারি এসেছে। বাসার দারোয়ান সব কিছু দেখে বেশ চঞ্চল হয়ে উঠল। হুট করে কাজের লোকেদের আনাগোনা নিচতালায় বেড়ে গেল।
এসব দেখে মেরাজ গলা হেকে কাজের লোকদের বলে-
"এই তোরা গিয়ে উপরে আপা মনির দেখাশোনা কর। আমি এদিকে দেখছি। সব কাজ কর। ম্যাডাম এলে সব জানতে পারবি। এখন সব যা, আইজ থেকে আমি যা কমু হগলে তাই করবি বুঝছস। "

দারোয়ান স্যার স্যার ভঙ্গিতে মেরাজকে এসে বলে - স্যার চা খাবেন?" সে বুঝতে পেরেছে মেরাজ এ বাসার নেক্সট ম্যানেজার হতে যাচ্ছে। চাটুল লোকেরা ভোল পাল্টাতে দেরী করে না, আর শীতল লোকেরা তার সুযোগ নিতেও দেরি করে না।।
মেরাজ কষে একটা থাপ্পড় দেয় দারোয়ানকে।
-"যা এক্ষুনি চা নিয়ে আয়। আদা চা আনবি। আর শোন আদা গুলো ফালি ফালি করে কাটবি। থেঁতলা করবি না ভুলেও। আর হ্যা, থাপ্পড়টা মনে রাখিস। এ সবে যে তুইও আছিস এটা আমি জানি"। দারোয়ান চড় খেয়ে মুখ লাল করে হাসি দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে জী স্যার জী স্যার বলতে বলতে চা বানাতে যায়।

আজ সন্ধ্যার নাটকীয় ঘটনা দেখার জন্য বাসার সকলের মনে বেশ কৌতূহল। ম্যাডাম এলেই আজ মনে হয় এই পরিচিত দুই কালপ্রিট সাথে ম্যানেজার আর স্বল্প পরিচিত এই ড্রাইভারের সিনেমাটা বেশ জমে উঠবে। তবে ট্রেইলার হিসাবে আপাতত সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে মেরাজকে দেখছে। সে দেখাটার মধ্যে একটা শিল্প আছে। সেটা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। আবছা আলোতে চোখ দেখা যায় কিন্তু মুখ দেখা যায় না। মেরাজ এসব দেখে নির্লপ্ত থাকে। মেরাজের মন এখন আদা চায়ে ডোবা।

বাসার লনে দাঁড়ানো করোলা গাড়ির বনেট বাম্পার খুলে গেছে। গাড়ির সামনের কাচ পুরোটাই ঝরে গেছে। গাড়িটার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয় মেরাজ। অসম্ভব মোলায়েম কাভারটা হাত দিলে অন্যরকম একটা অনূভুতি। কিন্তু পুরোনো সেই সিএনজির মত নয়। ওটার গায়ের রুক্ষতা যেন মেরাজের গায়ের মতই। মনটা উদাস হয়ে যায় মেরাজের। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মেঘঘন, আকাশ থমথমে। ঝাউ গাছটার চূড়ার দিকে তাকায় মেরাজ। কি সুন্দর গাছ। কত লম্বা আর চোখা মাথা। গোড়াটাও মজবুত।

-স্যার চা। দারোয়ানের ডাকে মেরাজ ফিরে চা নেয়। একপলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে আবার চায়ের কাপে চোখ। আদার ফালি গুলো খেলছে। উঠছে আর নামছে। এ যেন এক অসীম লড়াই। থামার কোন লক্ষন নেই। মেরাজ তৃপ্ত মনে কাপ তুলে চায়ের ধোয়ার একটু ঘ্রান নেয় । আহ। আদার কি মিষ্টি ঘ্রাণ। এমন সময় বাসার গেটে একটা গাড়ির হর্নের শব্দ। সেই সাথে হঠাৎ বিজলীও চমকাল। কড়াৎ কড়াৎ। এই ডাকটা তার ভীষণ প্রিয়। এই ডাকের মানে সে বোঝে। কিন্তু আপাতত সে ডাকে সে সাড়া দিচ্ছে না।সে আদারু খেলা দেখতে মগ্ন। মেরাজ নির্লপ্ত হয়ে চায়ের কাপে থিতু হয়ে পড়া আদার ফালিতে মেরাজুগ্রাফি দেখছে। এ এক অন্য জগৎ। এই জগতের আদবকায়দা তার জানতেই হবে। খেলাটা শিখতেই হবে। সানন্দে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দেয় মেরাজ।


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:২৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
বেশ কয়েকটা পর্বের দেখছি। আস্তে আস্তে পড়ব।

ইদানীং মন্তব্য করায় আগের স্পৃহা পাচ্ছি না। দেখি আপনার গল্প পড়ে স্পৃহা ফিরে পাওয়া যায় কিনা।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


পড়ে দেখতে পারেন। থ্রিলার +কমেডি+ ক্লাইমেক্স এন্টিক্লাইম্যাক্স সবই পাবেন। গল্পের নায়ক গরীব। কিন্তু তার,লাইফ থ্রিলারে ভরা। আশা করি নিরাশ হবেন না। শুভকামনা রক্তিম ভাই!

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৫৭

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। :)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৩২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ বিলি ভাই। অনেক লম্বা হয়ে গেল। কাহিনীর বিস্তারিত ধারাপাত করতে গিয়েই এই অবস্থা। পাঠককে ধরে রাখা মুস্কিল।


আপনাকে ধন্যবাদ বিলি ভাই।

৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৫৮

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: পোস্টে লাইক!! :)

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
লাইকে অনুপ্রাণিত হলাম। গল্পটা একটু বড়ই হয়ে গেল নাকি! :D

৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শেষ? আহা ভালোই তো লাগছিলো ।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
শেষ করে দিলাম ভাই। বাকিটুকু পাঠক তার নিজের কল্পনাবলে বুঝে নিক। মেরাজুগ্রাফিতে তাদেরও কিছু কল্পনা মিশে থাক।

এত লম্বা গল্প যেহেতু পড়ছেন সেহেতু আপনার যথেষ্ট ধৈর্য আছে বুঝা যায়। :D ধন্যবাদ সাধুভাই।

৫| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:০৬

মেহেদী রবিন বলেছেন: ভালই লাগছিল মিরাজকে

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

মেরাজ ভালই ছিল তবে তার খারাপ হতে সময় লাগবে না। সে এক ভিন্ন খেলায় মেতে আছে। এ খেলা সবার জন্য নয়।

৬| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬

নীলপরি বলেছেন: জবরদস্ত অ্যাকশন থ্রিলার । খুব ভালো লাগলো ।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

আপনি যে গল্প পড়বেন এটা জানাছিল। ব্লগের প্রতিটি লেখায় আপনাকে পেয়ে খুব অনুপ্রাণিত হই। :D
এভাবে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ নীলপরি। ভালবাসা জানবেন।

৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার সমাপ্তি। বর্ণনা ভালো হয়েছে।
+।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
গল্পটি পাঠে ধন্যবাদ সুমন ভাই। আপনি পাঠ করেছেন এতেই খুশি! প্লাসে উজ্জীবিত হয়েছি! অনেক অনেক ধন্যবাদ!

৮| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:১৩

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: গল্প অস্থির হইছে। তবে একশন সিনটা আরো টানটান করতে পারতেন।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

সিনেমা করার সময় এডিট করে নিয়েন। হা হা হা।


পাঠে ও কমেন্টে অনেক অনেক ধন্যবাদ অঞ্জন ভাই!

৯| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫১

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: আমার কাছে ভালো লেগেছে। অ্যাকশন থ্রিলার। ভালো লেগেছে। তবে ঐ বিশটা গাড়ি সাতাশটা ফ্যাক্টরি কেমন যেন সিনেমেটিক করে দিয়েছে। কিছুটা।

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
সিনেমেটিক + থ্রিলার!

আপনি বেশ ধরেছেন রাজপুত্র। ২০ টা গাড়ি ২৭ টা ফ্যাক্টরি বাস্তবিক আছে। এমন লেখা লেখে মজা পাওয়া এই যা।

তবে আপনার নিকট ভাল লেগেছে জেনে লেখার কষ্টটা বারবার করে যাই।




খুব ভাল থাকা হোক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.