নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য থেকে শান্তি!

সত্যবাদী।

ওয়াসিম সাজ্জাদ

সৎ এবং প্রতিবাদী।

ওয়াসিম সাজ্জাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টমি

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৩

একদিন স্কুল থেকে আসার পথে খড়ের গাদার নিচে ৪-৫ টা কুকুরের বাচ্চা দেখে আমার কুকুরের বাচ্চা পালার ইচ্ছা পেয়ে বসে। কিন্তু কুকুরের বাচ্চা পালার অনুমতি দিতে নারাজ আমার ফ্যামিলি। বহু শর্তসাপেক্ষে অনুমতি পেতে পেতে ৬ মাস চলে যায়, ততদিনে কুকুরের কিউট বাচ্চাগুলা অনেক বড় হয়ে যায়। আমাকে আরও ১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশেষে একদিন একটা কুকুরের বাচ্চা ঠিক বাড়িতে নিয়ে আসলাম। একটা নামও দিলাম-টমি। প্রথমে বাচ্চাটা সারারাত কান্না করত, একসময় ঠিক হয়ে যায়। আমার সারাদিন এই টমিরে নিয়েই কাটতো, স্কুল থেকে এসেই নিজে না খেয়ে ওরে খাইতে দিতাম। অনেকসময় আমি যখন খাইতাম তখন ও আমার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করত, আমিও মায়ের চোখ এড়িয়ে ওরে প্লেট থেকে খাবার দিতাম। টমিও আমার এরুপ ভালবাসার সুন্দর প্রতিদান দিত। আমার সাথে সাথে স্কুল পর্যন্ত যেত,আমি ক্লাশে ঢুকে গেলে ক্লাশের সামনেই বসে থাকত, স্কুল ছুটি হলে আবার আমার সাথেই বাড়ি ফিরত।বাকি সময়টাও আমার আশেপাশেই থাকত।আমরা একসাথে গোসল করতাম।সপ্তাহে ওরে ২ দিন সেম্পু দিতাম। অবস্থা এমন হয়েছিল যে টমিরে ছাড়া আমার ভাল লাগত না। রাতে প্রস্রাব করতে বের হয়ে যদি ওরে না দেখতাম তাহলেই চিন্তা করা শুরু করে দিতাম।ওরে খুজে বের করে তবেই আমি নিশ্চিন্ত হইতাম।
এত আদরের টমি একদিন আমার নিজেরই বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছিল। কিছুদিন পড়েই আব্বা একটা টিয়া পাখি কিনে আনে।ফ্যামিলির সবার নজর এই টিয়া পাখি নিয়ে তাই বলে কিন্তু টমির আদরে কমতি পড়ে নাই। একদিন টিয়া পাখিটারে খাবার দিয়ে দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছিলাম। সেই সুযোগে টমি টিয়া পাখিটারে কামড়িয়ে মেরে ফেলে। এই ঘটনাটা আমাদের সবাইকে অনেক প্রভাবিত করে। এর পর থেকে আমরা টমিকে অপছন্দ করা শুরু করি, এমনকি আমিও। টমিরে কাছে আসতে দিতাম না, আমি কোন খাবার দিতাম না। টমিও খুব মনমরা হয়ে বসে থাকত, মনে হইত এই অল্প কয়েকদিনে ও অনেক বুড়ো হয়ে গেছে। টমি আমাদের এইবস্থা বুঝতে পেরে আগের থেকে আরো বেশি বেশি চারপাশে ঘুরঘুর করতে শুরু করল। কিন্তু এতে আমাদের সবার বিরক্তি আরো বাড়ত, কমত না একটুও!
ইতঃমধ্যে টমি ২ বার আমাদের খাবারে মুখ দেয়, তারপরে আব্বা পিটাইয়া বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আর ঘোষনা দেয় টমি যাতে আমাদের বাড়ির ত্রিসীমানায় ঢুকতে না পারে! টমি কিন্তু বারবার বাড়িতে ঢুকার চেস্টা করত কিন্তু তাকে তাড়িয়ে দেয়া হত।ইতঃমধ্যে তার কিছু সঙ্গী-সাথি জুটে যায়।
দিনের বেশিরভাগ সময় সে আমাদের বাড়ির আশেপাশেই থাকত।বাকি সময়টা ওই সঙ্গী-সাথিদের সাথে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াত।খাবারের ব্যাবস্থা সে নিজেই করত,
একদিন বিকালে আমি ঊঠানে বসে ছিলাম।রাস্তা থেকে আমাকে দেখতে পেয়ে টমি এক দৌড়ে আমার কাছে চলে আসল।আমার তখন অনেক মন খারাপ ছিল, মা বকা দিছিল সম্ভবত। এই অবস্থায় টমিরে দেখে আমার এত বিরক্তি লাগে যে রাগের মাথায় আমি একটা লাথি দিয়ে ফেলি! কিন্তু টমি একটুও দৌড় দিল না। আবারো কাছে এসে পায়ের সাথে ঘষা শুরু করল। আমি নিষ্ঠুরের মত আবারো লাথি দিলাম। এইবারে টমি উঠোনের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল!সেখানে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল অনেক সময়।ঠিকমত খেয়াল করলে হয়ত ওর চোখের জলও দেখতে পেতাম। কিন্তু তখন আমি এতই পাষাণ ছিলাম যে আমি বিগত সব স্মৃতির কথা ভুলে গেছিলাম। তারপর একসময় টমি আস্তে আস্তে হেটে চলে গেছে।
এর পরে টমি আর কখনো আমাদের বাড়িতে ঢোকার চেস্টা করে নাই। সত্যি কথা বলতে এরপরে আর আমি কখনোই টমিকে দেখতে পাই নাই। অনেক খুঁজেছি! আমাদের গ্রাম তো অবশ্যই, আশেপাশের গ্রামগুলাও খুজেছিলাম।
টমিকে খুজে পাওয়ার আশা যখন প্রায় ছেড়ে দিছি, তখন এক ফ্রেন্ড বলল প্রায় ১০-১২ দিন আগে তাদের বাড়ির পাশে নাকি একটা বাদামী রংয়ের কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে! আমি জানি না সেইটাই আমার টমি ছিল কিনা! কিন্তু আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম যে, আমার চোখের পানি বাধাহীন ভাবে ঝরতেছে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.