নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য থেকে শান্তি!

সত্যবাদী।

ওয়াসিম সাজ্জাদ

সৎ এবং প্রতিবাদী।

ওয়াসিম সাজ্জাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজের ছেলে

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৭

প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। প্রথম প্রথম অনেক খারাপ লাগত। খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক, ১০-১১ বছরের একটা বাচ্চার সামনে তাঁর সমবয়েসী কোন বাচ্চাকে যদি তাঁর বাবা-মা ভাল ভাল খাবার খাওয়ায় আর তাঁর কপালে যখন উচ্ছিন্ন জোটে তখন কেমন লাগে টা মনেহয় আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।
খুব ছোট বেলায় মা-বাবা দুজনেই মারা যায় আমার। তখন থেকেই দাদুর কাছে বড় হয়েছি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সেই দাদুটাও বছর খানেক হল মারা গেছে। আমি তখন সম্পূর্ণ একা। এত লোকের পৃথিবী, কিন্তু আমার পৃথিবীতে কেউ নেই।
তখন এক দুঃসম্পর্কের আত্বীয় আমাকে ঢাকা এনে কবির সাহেবের বাসায় কাজে দেয়। কবির সাহেবের দুই ছেলে-মেয়ে। মিলি আর আবির। আবির হয়ত আমার সময়বয়েসী হবে। কথা হয় যথাসম্ভব লেখাপড়া করার সুযোগ দিবে আমাকে, আমারও খুব লেখাপড়া করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কথাটা শুধু কথাই থেকে যায়।
সেই প্রথম দিন থেকেই আমার উপর নেমে আসে কাজের খড়গ! তখন আমার বয়স ৯ এর মত হবে। ৯ বছরের একটা বাচ্চার জন্য যা ছিল একপাহাড় সম বোঝা। আজানের সময় ঘুম উঠে মিলি-আবিরের জন্য রাস্তা রেডি করা,তাদের ব্যাগ গোছানো, মোজা-জুতা পড়িয়ে দেয়া ছিল আমার সকাল বেলার রুটিন। তারপর ম্যাডামের জন্য মানে কবির সাহেবের স্ত্রীর জন্য চা বানানো, তাঁর গোসলের জন্য গরম পানি করতে করতেই আমার পুরো সকাল কেটে যেত। সারাদিনে আরও কত যে কাজ করতে হত তাঁর কোন ইয়াত্তা ছিল না। ঘরমোছা, থালা-বাসন ধোয়া আরো কত কি!
মাঝে মাঝে সামান্য সামান্য ভুলের জন্য প্রচণ্ড মার খাওয়া লাগত।এইত সেইদিন হাত ফসকে একটা কাঁপ ভেঙ্গে যায়। এর জন্য ম্যাডাম অনেক মারধোর করে আমাকে। পিঠে দাগ পড়ে যায়! আমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে সামান্য কিছু ভাঙ্গলেই মার খেতে হত কিন্তু আবির ভাইয়া যখন অনেক দামী কিছু ভাঙ্গে তখন তো ম্যাডাম কিছু বলে না, আরো আবির ভাইয়াকে কোলে নিয়ে আদর করে!
এটাতো কেবল একটি ঘটনা। এরকম শত শত ঘটনা ছিল।সকাল থেকে গভীর রাত পর্জন্ত শুধু কাজ আর কাজ। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল আমার দিন। আর এভাবেই কেটে যেত যদি না আমি একদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার বয়েসী দুইজন টোকাইকে রাস্তায় খেলা করতে না দেখতাম! ওরা আমার বয়েসী, হয়ত ওদেরও বাবা-মা নেই, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে,কাগজ কুঁড়ায় আর রাতেরবেলা খেয়ে-নাখেয়ে কোন রেলস্টেশনে ঘুমিয়ে থাকে! কত সুখের জীবন ওদের! কাজের কোন চিন্তা নেই, মার খাওয়ার কোন ভয় নেই। ৫ তালা অট্টালিকার উপর থেকেও আমি ওদের দেখে হিংসা করতে শুরু করলাম। প্রচণ্ড রকমের হিংসা। একদিন আবিস্কার করলাম এই বন্দি জীবনের উপর আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি এখান থেকে পালানোর চিন্তা করলাম। ওই বাধাহীন জীবনের টান আমি উপেক্ষা করতে পারি নাই।
একদিন সুযোগ বুঝে আমি বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম। আমি এখন সম্পর্নু স্বাধীন। হয়ত ঠিকমত তিন বেলা খেতে পাই না, হয়ত রাতে ঘুমানোর জন্য কোন বালিশ পাই না তবে আমি এখন অনেক ভাল আছি।

বিঃদ্রঃ- আমাদের চারপাশে এমন অনেক শিশু আছে যারা তাদের সামান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা কি পারি না যেকোন একজন শিশুর অধিকার পাইয়ে দিতে! অসম্ভব কিছু না। শুধুমাত্র একটা ভাল মন আর একটু ইচ্ছা থাকা দরকার। আমি আশা করে আমাদের সবার সেই মন আছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫২

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লেখা। ভালো আহ্বান!

ধন্যবাদ আপনাকে।।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০

ওয়াসিম সাজ্জাদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.