নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মজার কিছু টুকরো গল্প-৫ (আরব ডায়েরি-৬৮)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮





১ম পর্ব



২য় পর্ব



৩য় পর্ব



৪র্থ পর্ব





১/ মোশতাক ভাই ও দিবা নতুন সংসার শুরু করেছেন। মোশতাক ভাই তনুমা ক্যাম্পাসে আর দিবা আবহা ক্যাম্পাসে। ফলে মোশতাক ভাই প্রতি উইকএন্ডে আবহা চলে আসেন।



সাঈদ নতুন দম্পতির সন্মানে এক বিকালে গাড়ী নিয়ে বের হল। আমরা সবাই মিলে এক পাহাড়ী রাস্তায় চললাম। চারপাশে পাহাড়ী সৌন্দর্য্য, আঁকাবাকা রাস্তা, বুনো ফু্ল, অস্তগামী সূর্য- এক কথায় দূর্দান্ত। দিবা তো আমাদের ঘরের মানুষ, কিন্তু যার জন্য এত আয়োজন সেই মোশতাক ভাইয়েরই কোন সারা শব্দ নেই। দেখা গেল উনি পেছনের সিটে আরামে ঘুমাচ্ছেন।



সাঈদ চিৎকার দিল- ‘মোশতাক ভাই, আছেন?’

মোশতাক ভাই-‘ এ্যা আছি, আছি- আহা! চারপাশ কত সুন্দর।’

২ মিনিটের মাঝে মোশতাক ভাইকে আবার ঘুমিয়ে পরতে দেখলাম।



২/ তনুমায় এক পার্টিতে মোশতাক ভাই ও কচি ভাই এক সাথে গেলেন। ট্রাডিশনাল খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। আস্ত দুম্বা সেদ্ধ করা হয়েছে- যাকে এখানে মান্দি বলে। সাথে রাইস, ফলমূল আর ড্রিংকস। দুম্বা’র বোটকা গন্ধ কচি ভাইয়ের নাকে বাড়ি দিল।



কচি ভাই ফলমূল খেয়ে কাজ সারলেন। ওদিকে মোশতাক ভাই ঝাপিয়ে পড়েছেন। একের পর এক মাংস সাবার করছেন। দুম্বার আস্ত মাথাটি মোশতাক ভাইয়ের সামনে লোভনীয় ভাবে পড়ে আছে, চকচকে দাঁত দেখা যাচ্ছে, দু’পাটি দাঁতের মাঝখান দিয়ে জিহবাটি বেরিয়ে আছে। জিহবায় তখনো ঘাস লেগে ছিল, দুম্বাটি হয়তো খেয়ে শেষ করতে পারেনি। মোশতাক ভাই নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। জিহবাটি টেনে নিয়ে মুখে পুরে দিলেন।



কচি ভাই পাশে তাকিয়ে দেখলেন মোশতাক ভাই কচকচ করে দুম্বার জিহবা খাচ্ছে- যেন অমৃত।





৩/ মোশতাক ভাই মদীনায় ট্যাক্সিতে করে কোথাও যাচ্ছিলেন। পুলিশ হঠাৎ করেই গাড়ী থামাল। ড্রাইভারকে জরিমানা করল, অন্যদেরকে জেরা করল। পুলিশ মোশতাক ভাইয়ের আইডি অনেক্ষন ধরে চেক করল, বেশী কিছু না বলে ছেড়ে দিল।



মোশতাক ভাই ক্যাম্পাসে এসে সবার কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন, ‘আসলে শিক্ষকদের সম্মানই আলাদা। আমি টিচার বলে পুলিশ আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি; আইডি কার্ড দেখেই সসম্মানে ফেরত দিয়েছে।’



কিছুদিন পর ২ মাসের বাৎসরিক ছুটি শুরু হল। উনি এক্সিট-রিএন্ট্রি ভিসার জন্য এটিএম বুথে ভিসা ফি জমা দিতে গেলেন। ফি আর জমা হয় না। কচি ভাইয়ের একাউন্ট থেকে ফি জমা দিতে গেলেন তাতেও কাজ হয় না। ব্যাপার কি? পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল- ওনার ট্রাফিক আইন ভায়োলেশনের জরিমানা আছে। আগে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে, তারপর ভিসা ফি জমা দেয়া যাবে।



মোশতাক ভাই আকাশ থেকে পড়লেন, ‘আমারতো গাড়ী নেই, ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই- কিভাবে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলাম?’



আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেল-মদীনায় সিট বেল্ট না বাঁধার কারনে পুলিশ ওনাকে ১৫০ রিয়াল জরিমানা করেছিল। সময়মতো তা পরিশোধ না করায় জরিমানা ৩০০ রিয়াল হয়েছে।



মোশতাক ভাইয়ের আক্কেল গুডুম।



৪/ উসামা তার ছাত্রদেরকে তাদের Future Plan নিয়ে লিখতে বলেছে।

এক ছাত্র লিখেছে, ‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে দুবাই চলে যাব, তাকে বিয়ে করব। এই দেশে আর ফিরে আসব না। ওখানে মৌজ, মাস্তি সব করব।’



৫/ কচি ভাই ফেসবুকে একটা ছবি শেয়ার করেছেন। গত মাসে একটা পার্টি হয়েছিল, ব্যাপক খানাদানা হয়েছে। সেই ছবিটিতে থলথলে চর্বি সমেত দুম্বার মাংস ও অন্যান্য খাবার ছিল- মোশতাক ভাইয়ের জন্য লোভনীয়ই বটে।



আমি কচি ভাইকে মেসেজ পাঠালাম, ‘মোশতাক ভাই কেমন খেল? খালি চর্বি আর চর্বি দেখা যায়।’

কচি ভাই জানালেন, ‘মোশতাক ভাইতো মান্দি খাওয়ার ওস্তাদ। মাশাল্লা সেইরকম কোপাইছেন।’



হুম ... দিবার পাল্লায় পরে উনি আবহায় ডায়েট করেন আর তনুমা গিয়ে দুম্বা কোপান !!!





৬/ কচি ভাই স্পিকিং পরীক্ষায় এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘What's your favorite hobby?’

ছাত্র বলল, "I like Football wawa (এবং) Khebsa wawa Alfaham wawa Broast wawa ......"



(খেবসা, আলফাহাম, ব্রোস্ট সৌদিদের প্রিয় খাবার। এগুলো না খেলে রাতে তাদের ঘুম হয় না)



৭/ ওমরাহ্‌ শেষে আমি, আদিল ভাই ও মোশতাক ভাই চুল কাটাতে বের হলাম। আদিল ভাই খুঁজে খুঁজে এক বাংলাদেশি সেলুনে নিয়ে গেলেন। বেচারারা বসে বসে মাছি মারছিল। আমরা ৩ জন একসাথে যাওয়াতে চাঙ্গা হয়ে উঠল।



মোশতাক ভাইয়ের চুল কাটানো যখন শেষ পর্যায়ে-

নাপিত বলল, ‘ভাই, আপনার মাথায় অনেক খুশকি। একটা মধু থেরাপি মাইরা দেই।’

মোশতাক ভাই-‘কি রকম খরচ পরবে?’

নাপিত- ‘আপনি বাংলাদেশি মানুষ, আপনার কাছ থেকে কি বেশী নিব?’



মোশতাক ভাই আমার দিকে তাকালেন। আমি হ্যাঁ সূচক ইশারা দিলাম। কত আর খরচ পরবে? ২০ রিয়াল নাহয় লাগবে?

নাপিত সাহেব আমাকেও মধু থেরাপি নিতে বললেন। আমি রাজী হলাম না। মনে মনে ভাবলাম, আগে মোশতাক ভাইয়েরটা দেখে নেই। ভালো হলে পরে করা যাবে।



নাপিত সাহেব মোশতাক ভাইয়ের মাথায় মধুর একটা জেল লাগালেন। মধুর গন্ধে চারপাশ মাতোয়ারা। তারপর নড়বড়ে একটা যন্ত্র ওনার মাথার উপর বসিয়ে দিলেন। যন্ত্রটি থেকে বাষ্প বের হচ্ছিল। মোশতাক ভাইকে মনে হচ্ছিল ভীনগ্রহবাসী-স্পেস স্যুট পড়ে আছেন। এভাবে ১৫ মিনিট ওনাকে থাকতে হলো।

আমি বললাম, ‘ভাই, আপনার ব্রেইনতো সেদ্ধ হয়ে যাবে।’



থেরাপি শেষে নাপিত সাহেব ৭০ রিয়াল দাবী করে বসল। আমরা সবাই নাপিতের ধান্দাবাজীতে অবাক। শেষে ৬৫ রিয়াল দিয়ে মোশতাক ভাই রক্ষা পেলেন।



আমরা যখন সেলুন থেকে বের হব তখন শুনলাম আরেকজন বাংলাদেশি কাস্টমার নাপিতকে বলছে, ‘আমার ৩/৪ পাকা চুল আছে। একটু তুলে দিয়েন।’

নাপিত বিগলিত কন্ঠে বলছে, ‘কলপটা করে ফেলেন। ভালো হবে।’



খাইছে ! এই ফাঁদে পা না দেয়ায় স্বস্তি বোধ করলাম। ওদিকে আদিল ভাই কোনমতে হাসি চেপে রেখেছেন, ‘Mushtaq has been ripped off.’



৮/ আমার সৌদি কলিগের ভাই মাত্রই বিয়ে করেছে।

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার ভাই হানিমুনে কোথায় গেল?’

সে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, ‘ brother & your wife go to Dubai.’



অবাক হলাম না। ওরা pronoun নিয়ে ঝামেলায় পড়ে সেতো জানা কথা।



৯/ চারপাশে সবাই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ফেলেছে। মোশতাক ভাইও গাড়ী চালাতে চাইলেন। একদিন তিনি প্র্যাক্টিসে বের হলেন। অটোমেটিক গাড়ী। ডানে বামে না তকিয়ে, শক্ত হয়ে সোজা টান দিলেন। একই সাথে এক পা এক্সিলারেটরে, আরেক পা ব্রেকে। সে এক হযবরল অবস্থা।



১০/ এক ছাত্র আদিল ভাইয়ের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘Where are you …?’

আদিল ভাই- ‘I am here.’

ছাত্র – ‘No, where are you Dr. X?’

আদিল ভাই- ‘I see, go over there.’





লেখাটি শেষ হবার পর দেখা গেল- লেখাটি পুরোপুরি মোশতাকময় হয়ে গেছে। এছাড়া আর কোন মজার ঘটনা হাতের কাছে ছিল না। কি আর করা? জয়তু মোশতাক ভাই।





(আপাতত শেষ)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর গল্প।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৫

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৭

মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: গল্পে ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১২

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৬

গ্রীনলাভার বলেছেন: ++++++++++++

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১২

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.