নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

Song of Solomon-৩ (জানা অজানা-৪)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৮



Song of Solomon-১
Song of Solomon-২


সালমান ফারসি (রাঃ)-

সালমান ফারসি পারস্যের ইস্পাহানের নিকটবর্তী জায়্যান শহরে জন্মগ্রহন করেন। তার পূর্বের নাম ছিল-রুজবেহ। তার বাবা ছিলেন সেই এলাকার গোত্র প্রধান এবং প্রচুর সম্পদের অধিকারী। তিনি ছিলেন অগ্নিপূজারি এবং খুবই ধর্মভীরু। বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ায় রুজবেহকে তার স্থলাভিষিক্ত করার সব শিক্ষা তিনি দিয়েছিলেন। ছেলেকে কখনো কাছছাড়া করতেন না। কিন্তু বালক সালমান অগ্নিপূজা ও তাদের ধর্মে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তিনি প্রকৃত সত্যের সন্ধান করছিলেন।

একদিন বাবা তাকে খামারের কাজকর্ম তদারক করার জন্য পাঠালেন। পথে তিনি খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের কথার আওয়াজ শুনতে পেয়ে একটি গীর্জার ভিতরে প্রবেশ করলেন। তাদের ইবাদাত, বিনম্র ব্যবহার,রীতি-নীতি এবং প্রাণখোলা ব্যবহার তার খুবই ভাল লাগলো। তাদের গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে সে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন এবং সেখানেই দিন কাটালেন। সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে বাবাকে সে ঘটনা বললেন। বাবা কথা শুনে তার ধর্ম ত্যাগের ব্যাপারে আশঙ্কা করলেন। আর তাই তাকে পায়ে বেড়ি লাগিয়ে ঘরে বন্দী করে রাখলেন। বাবার এই কঠোর ব্যবস্থায় সালমানের মন বিদ্রোহী হয়ে উঠল। প্রতীজ্ঞা করলেন যে, সত্য সন্ধানে যদি এমন বাধাই আসে তবে তিনি বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন সব ত্যাগ করবেন।

সালমান জানতে পারলেন যে এ অঞ্চলের গ্র্যান্ড পাদ্রী সিরিয়া আছেন। বন্ধুদের মাধ্যমে তিনি তার এলাকার পাদ্রীর কাছে সংবাদ পাঠালেন যে, সিরিয়ার কোন কাফেলার খোঁজ পেলে তাকে যেন জানানো হয়। যেদিন কাফেলা সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হবে সেদিন তিনি পায়ের শিকল কেটে কাফেলার সাথে মিলিত হলেন এবং সিরিয়ায় পৌছেঁ গেলেন। সালমান সিরিয়ার প্রধান পাদ্রীর কাছে তাদের ধর্ম গ্রহণ এবং তার খেদমতে থেকে ধর্ম শিক্ষা শুরু করলেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বুঝতে পারলেন যে,পাদ্রী লোকটি অসৎ। কেননা লোকটি তার সঙ্গী-সাথীদের দান খয়রাতের প্রতি উৎসাহ দিতেন আর যারা তার হাতে কিছু তুলে দিত সেসব তিনি আত্মসাৎ করে নিজের জন্য পুঞ্জিভূত করে রাখতেন, গরীব মিসকিনদের কিছুই দিতেন না। যখন পাদ্রী মারা গেল তখন তিনি এই অসততার কথা সবার সামনে তুলে ধরলেন।

নতুন পাদ্রী নিয়োগ দেয়া হল। তিনি ছিলেন খুব ভাল লোক; দুনিয়ার লিপ্সাহীন এবং আখেরাতের প্রতি আকৃষ্ট। তার সাথে সালমানের সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। তার মৃত্যুর সময় সালমান জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাকে কি আদেশ করেন এবং তিনি এখন কার আশ্রয়ে থাকবেন। পাদ্রী তাকে ইরাকের মুসুল এলাকায় একজন খাঁটি খ্রীষ্ট ধর্মীয় পাদ্রীর কাছে যেতে বললেন। কথিত আছে সালমান এভাবে সত্যের সন্ধানে একে একে ১০ জন পাদ্রীর সহচার্য লাভ করেন।

সর্বশেষ তিনি রোমের নিকটবর্তী আমুরিয়া’ নামক স্থানের এক পাদ্রীর খোঁজ পান। আবার সেই ব্যক্তির অন্তিম সময় ঘনিয়ে এলে তিনি সালমানকে সত্যের ধারক ও বাহকের সন্ধান দিলেন এভাবে-‘‘অদূর ভবিষ্যতে আরব দেশে একজন নবী আবির্ভূত হবেন-

১) তিনি ইবরাহীমের দ্বীন নতুনভাবে নিয়ে আসবেন।
২) জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বড় বড় কালো পাথরের যমীনের মাঝখানে খেজুর উদ্যানবিশিষ্ট ভূমির দিকে হিযরত করবেন।
৩) তিনি হাদিয়া বা উপঢৌকনস্বরূপ খাদ্য দিলে তা খাবেন। কিন্তু সদকা- খয়রাতের খাবার খাবেন না।
৪) তাঁর দু'কাধের মাঝখানে নবুওয়্যাতের মোহর থাকবে। তুমি পারলে সে দেশে যাও।’’

পাদ্রীর মৃত্যুর পর তিনি ‘কালব' গোত্রের কিছু আরব ব্যবসায়ীর সাথে মদীনা ও লামের মধ্যবর্তী ওয়াদী আল-কুরা' নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং কিন্তু তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে এক ইহুদির নিকট বিক্রি করে দিলেন। এরপর তিনি একজন থেকে অপরজনের কাছে বিক্রি হতে থাকলেন। এমনিভাবে দশজন মনিবের হাত বদল হন। কিছুদিনের মধ্যে বনুকুরাইজা গোত্রের এক ব্যক্তি তাকে ক্রয় করে মদীনায় নিয়ে আসেন। এলাকা দেখে তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, এটাই ঐ স্থান যার কথা পাদ্রী বলেছিলেন। তখনো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)মক্কা হতে মদীনায় আসেননি।
একদিন সালমান ফারসি তার মনিবের উপস্থিতিতে খেজুর গাছের উপরে কাজ করছিলেন। হঠাৎ এক লোক এসে তার মনিবকে সংবাদ দিল যে,কুবা এলাকায় মক্কা হতে একজন লোক এসেছে এবং নিজেকে নবী বলে দাবি করেছে। সালমান ফারসি গাছের ওপর থেকে কথাগুলো শুনতে পান। তিনি তো এমন কিছুর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

কিন্তু ইহুদী মনিব তাকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করতে বাঁধা দিচ্ছল। সালমান ফারসি কোনভাবে লুকিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করলেন। সালমান ফারসি মুহাম্মদ (সাঃ) কে কিছু খেজুর সদকা করলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) খেজুরগুলো সঙ্গীদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন কিন্তু নিজে খেলেন না।
আরেকদিন সালমান ফারসি মুহাম্মদ (সাঃ) কে কিছু খেজুর উপহার দিলেন। মুহাম্মদ (সাঃ) খেজুরগুলো সবার সাথে ভাগ করে খেলেন। এভাবে আরেকদিন সালমান ফারসি মুহাম্মদ (সাঃ) এর পিঠ মোবারক দেখার চেষ্টা করতে লাগলেন। নবীজী তার মনোভাব বুঝতে পেরে কাঁধের কাপড় সরিয়ে ফেলেন। সালমান ফারসি তার মোহরে নবুয়্যত দেখেন এবং শ্রদ্ধার সাথে চুম্বন করে কেঁদে ফেলেন। হযরত (সাঃ) তার সম্পর্কে জানতে চাইলে সালমান ফারসি তার জীবনের সুদীর্ঘ কাহিনী শোনালেন এবং তখনই ইসলাম গ্রহণ করলেন।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সালমান ফারসি (রাঃ) কে তার ইহুদী মনিব হতে মুক্ত করেন। সালমান ফারসি (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম সঙ্গী ছিলেন। তার পরামর্শেই খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন করা হয়। তিনিই প্রথম পবিত্র কোরআন অন্য কোন ভাষায় (পারসিয়ান ভাষা) অনুবাদ করেন। তিনি বাগদাদের নিকটবর্তী মাদায়ানের গভর্ণর নিযুক্ত হন, কিন্তু সরকারী কোষাগার হতে প্রাপ্ত ভাতা তিনি দান করে দিতেন। তিনি সত্যের সন্ধানে দীর্ঘায়ু লাভ করেন। খলিফা উসমানের আমলে তিনি ২৫০ মতান্ত্বরে ৩০০ বছর বয়েসে মৃত্যু বরন করেন।

তিনি কখনো তার মূর্তিপূজারি পিতার পরিচয় দিতেন না। তিনি বলতেন- I am Salman, the son of Islam from the children of Adam.

(চলবে)

সূত্রঃ

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১

মধ্যরাত বলেছেন: সালমান ফারসি (রাঃ) প্রতিষ্টিত মদিনায় একটি মসজিদ আছে.....সেখানে গিয়ে ২ রাকাত নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল....আলহামদুলিল্লাহ

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

মধুমিতা বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ।

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৭

শাহরীয়ার সুজন বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

ভারসাম্য বলেছেন: সালমান ( রাঃ ) কর্তৃক কুর'আনের অনুবাদের কথা জানতাম না। সেই অনুবাদের কোন কপি কি সংরক্ষিত আছে কোথাও?

+++

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

মধুমিতা বলেছেন: এটা আমার জানা নেই। ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ভাল লাগলো। প্রিয়তে নিলাম।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৪

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০০

ইমরান আশফাক বলেছেন: সালমান ফারসি (রাঃ) সন্মন্ধে বিস্তারিত জানতাম না, আজ জানলাম।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৪

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৭

আবু শাকিল বলেছেন: লেখায় ভাল লাগা রইল। :)

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৭

আজমান আন্দালিব বলেছেন: পরবর্তী পর্বে ...

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

৮| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০১

আছিফুর রহমান বলেছেন: লেখায় সং অব সোলায়মানের কোন সংশ্লিষ্টতা পেলাম না

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

মধুমিতা বলেছেন: সুদীর্ঘ ভূমিকা। সামনে পড়ুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.