নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মজার কিছু টুকরো গল্প-৮ (আরব ডায়েরি-৯১)

১২ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮



১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ঠ পর্ব ৭ম পর্ব

১/ রক্তস্বল্পতা ও শাররীক দূর্বলাতার কারনে সাইফুল ভাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এক বিকালে আমি ও আদিল ভাই হাসপাতালে ওনাকে দেখতে গেলাম। চমৎকার পারিপাটি বেডে উনি শুয়ে আছেন। এ কথা সে কথায় সাইফুল ভাইকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখা গেল। ব্যাপার কি?

শেষ পর্যন্ত রক্তিম মুখে বলেই ফেললেন- সকাল বিকাল দুইজন সৌদি নার্স উনাকে দেখতে আসে, খাতির যত্নের কোন কমতি নেই। হাসপাতালে থাকতে ভালোই লাগছে।
এই রক্তস্বল্পতার মাঝেও সৌদি নার্সদের কথা বলার সময় ওনার শরীরের বাকি রক্ত মুখে গিয়ে হাজির হয়েছিল।

২/ ওসামার বিশাল শরীর। সে অরনী’র বাঁধা উপেক্ষা করে লুকিয়ে লুকিয়ে বাহিরের খাবার খায়। তারপরও খাবার দাবারের কিছুটা অনিয়ম হলেই তার Hypoglycemia হয়। তাই তাকে সাথে সাথেই সুগারের জন্য কিছু না কিছু খেতেই হয়। একদিন সে আমার অফিসে আসল বিস্কুটের খোঁজে, তার এখন হাইপো। কিন্তু সেদিন আমার কাছে কিছুই ছিল না। সে বের হয়ে গেল- অন্য কারো কাছে যদি খেজুর পাওয়া যায়।

আরেকদিন তার সাথে দেখা।
বলল,- ‘গাড়ীতে এখন একটা ড্রিঙ্ক রাখি। হাইপো উঠলে খেয়ে নেই। কোন টেনশন নাই।’
আমি বললাম, ‘কোন ড্রিঙ্ক?’
-‘কুদরত, খেতে খুব ভালো।’

কুদরত নামের কোন পানীয় চিনতে পারলাম না। ভাবলাম- হবে হয়তো কোন পাকিস্তানি ড্রিঙ্ক। কিন্তু মাথার ভেতর খচ খচ করতেই থাকে। তাকে বেশী জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না। যদি বলে বসে- এই বিখ্যাত ড্রিঙ্কটাও চেনেন না?
আরেকদিন বাসার পাশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলাম। এনার্জি ড্রিঙ্ক সেকশনে একটা লাল ক্যান চোখে পড়ল-Code Red। সাথে সাথে যা বোঝার বুঝে নিলাম। এই তাহলে ওসামার “কুদরত”!


৩/ আরবের একটা রীতি হচ্ছে ছেলের/মেয়ের নামে বাবাকে ডাকা। আমার অফিসেও এর ব্যতিক্রম নয়। সকাল বেলা অনেক্ষন ধরে সম্ভাষণ চলে।
-কাইফাল হাল আবু ওমর? (কেমন আছ ওমরের বাবা?)
-কাইফাল হাল আবু সালেহ?
-কাইফাল হাল আবু নামিরা? ...
আমার কাছে এসে সম্ভাষণদাতাকে থমকে দাঁড়াতে হয়। আমার এখনো বাচ্চা কাচ্চা নেই। তাই তারা আমাকে বলে,
-কাইফাল হাল মোহাম্মদ?

মোহাম্মদ আরবে বহুল ব্যবহৃত এবং পছন্দের একটি নাম। কারো নাম না জানা থাকলে অথবা কাউকে সন্মানিত করতে চাইলে “মোহাম্মদ” নামে ডাকা হয়।
আমি স্মিত হেসে মাথা নাড়ি।

৪/ জহির ভাইয়ের কথা আগেও বলেছি। বিয়ের আগে জহির ভাই খুব স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেলেন। ত্বকের কোমলতা ও ভুড়ি কমানোর জন্য জনৈক ব্যক্তি পরামর্শ দিল-লেবু, মধু মিশিয়ে পান করার জন্য। সে রাতেই জহির ভাই ১ কেজি মধু ও ১ ব্যাগ লেবু কিনল।
দুই দিন পরে আমার সাথে দেখা। মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে। কারণ কি জিজ্ঞাসা করতেই ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করলেন-‘আরে ভাই, লেবু মধু’র পানি খেয়ে আমার ডায়েরিয়া শুরু হইছে।”

৫/ এক রাতের আড্ডায় আদিল ভাই গান গাচ্ছেন। আমরা কয়েকজন উনার সাথে হেড়ে গলায় গলা মেলানোর চেষ্টা করছি। হঠাৎই আদিল ভাই সিরিয়াস হয়ে গেলান। আমাদের অবস্থা দেখে গান থামিয়ে মিউজিকের উপর ক্লাস নিতে শুরু করলেন।

৬/ একদিন লিটু ভাই বলছিলেন-
প্রথম যখন সৌদিতে আসি একজন বলল, ‘সৌদিরা গাড়ীর হর্ন দিয়ে কথা বা মনের ভাব প্রকাশ করে।’ আমি বিশ্বাস করিনি। এখন বুঝি- আসলেই তারা হর্ন দিয়ে কথা বলে।

২ সেকেন্ডের হর্ন – কেমন আছ? / সতর্ক হও
৩ সেকেন্ডের হর্ন – ভালো আছি / খোশ মেজাজ
৫ সেকেন্ডের হর্ন – বিরক্তি
৭ সেকেন্ডের হর্ন – আমি আগে যামু, সামনে থেকে সর
১০ সেকেন্ডের হর্ন – তর খবর আছে। দেখাইতেছি মজা

৭/ বিয়ের আগে জহির ভাই ব্যাপক উৎসাহে জিমে ভর্তি হয়েছেন। শরীরটাকে ঠিক করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলেন প্রতিরাত ৯:৩০ এর দিকে জিমে যাবেন। ৯:৩০ হলেই উনি আমাদের সাথে আড্ডা দিতে বের হন, জিমের আশে পাশে ঘুরাঘুরি করেন, কিন্তু জিমে আর ঢুকেন না। শেষ পর্যন্ত উনি এই প্রজেক্ট বাতিল ঘোষণা করলেন।

৮/ সবারই এখন মোটামুটি গাড়ী আছে। জহির ভাইয়েরও শখ উনি গাড়ী করে অফিসে আসবেন। কিন্তু উনার বাসা যে আফিসের পাশেই। হেটে ২/৩ মিনিট লাগে। কি করা যায়? সিদ্ধান্ত নিলেন- যদি গাড়ী কেনেন তবে বাসা থেকে বের হয়ে পুরো শহর ঘুরে অফিসে ঢুকবেন।
গাড়ীতে করে অফিসে যাবার ইচ্ছাতো পূরণ হবে।

৯/ জনৈক ব্যক্তি ও আমাদের এ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার মাহমুদ ভাই পাশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলেন। আমিও সাথে ছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে তারা দু’জনই অদ্ভুত দর্শণ একটি জিনিস দেখতে পেলেন। অনেক্ষণ গবেষণা করেও তারা ধরতে পারলেন না এই জিনিস দিয়ে কি করা হয়। শেষ পর্যন্ত দু’জনই সিদ্ধান্তে পৌছলেন যে- এটা আসলে বাচ্চাদের শৌচকার্যে ব্যবহার করা হয়।


আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে ওনাদের যুক্তি উপভোগ করছিলাম। এত মজার ঘটনা জীবনে ঘটেনি।

১০/ আরবের সৌন্দর্যের অন্যরকম একটা মাত্রা আছে। এটা শুধু রুক্ষতা আর মরুভূমি’র দেশ নয়। এখানে ভালোবাসা আছে, মায়া আছে, সবুজ আছে। আছে বেদুঈনদের উদারতা যারা আপনাকে তাদের সাথে একবেলা খাবার জন্য দাওয়াত করবেই।


মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩

যাযাবরমন বলেছেন: চমৎকার

১২ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১২ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:০২

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

১৩ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫১

মধুমিতা বলেছেন: সে জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

ইমরান আশফাক বলেছেন: আমি তো জানতাম ওখানে ফিলিপাইনী, কেরালা বা মিসরী্য় নার্স পাওয়া যায় কিন্তু সৌদী নার্স পাওয়া যায় এটা তো জানতাম না!

১৩ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

মধুমিতা বলেছেন: সৌদারাও এখম নার্সিং পেশায় ঢুকছে। তবে এরা ফিলিপাইনী, কেরালা বা মিসরী্য় টাইপ নার্স না। এরা আমেরিকা হতে নার্সিং এ মাস্টার্স ও পিএইচডি করে হাসপাতালগুলোতে ঢুকছে। এসব নার্সরা ডাক্তারদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।

আমরা যেসব এশিয়ান নার্সদের জানি- তারা মূলত সাহায্যকারী অথবা ক্লিনার।

৪| ১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: হাহা, দারুণ মজা পেলাম পড়ে।

১৩ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৩১

মোঃমোজাম হক বলেছেন: ভাল লাগলো।
হ্যা নাম না জানা থাকলে নন আরবীদের চট করে ইয়া মোহাম্মদ বলেই ডাকে।তবে আরবীয়রা জিজ্ঞেস করে জেনে নেয় ছেলের নামকি,আর অবিবাহিত বা সন্তান না থাকলে জিজ্ঞেস করবে তোমার বাবার নাম কি? অর্থাৎ বাচ্চার নাম দাদার নাম দিয়েই ডাকবে :)

আমার ম্যানেজারের অবিবাহিত ভাইকে একজন আবু ফয়সাল বললে আমি হেসে দিই।তখন তারা ব্যাপারটা আমাকে বলেছিল।

১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬

মধুমিতা বলেছেন: হ্যা - ঠিক বলেছেন। তবে এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার এই নামের সৌন্দর্য্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। যেমন - সৌদিতে সবাই মুদির (ম্যানেজার)। মুদির শব্দটা এখন তাচ্ছিল্যের মতো শোনায়।

৬| ১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

মোঃমোজাম হক বলেছেন: আমিও দেখেছি লেবার থেকে ম্যানেজার সবাইকে আজকাল মুদির বলে ডাকা হচ্ছে :(
অনেকটা কি আমাদের দেশের মামু ডাকের মতো ? :)

১৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:১৪

মধুমিতা বলেছেন: :D :D

৭| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:১৩

মুহিব বলেছেন: কিছুদিন পড়া হয় নাই। আগের মতই আনন্দ পাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.