নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসায় সিক্ত জীবন (আরব ডায়েরি-৯৪)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬




বছরের শুরুতে হঠাৎ করেই কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। দেখতে দেখতে সৌদি আরবে আমার ও শাকিলার ৫ বছরেরও বেশী সময় চলে গেছে। অনেকটা সময়ই আল্লাহর রহমতে অনন্দ ও ভালোবাসায় কেটেছে।

আমি ও শাকিলা বাহিরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হায়ার স্টাডিজের জন্য এপ্লাই করতে থাকি। আমি ব্যবসায় প্রশাসন ও শাকিলা ইংলিশে। আমাদের ফিল্ড এমন যে এই ফিল্ডে ফান্ডিং পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক প্রতিকুলতা স্বত্তেও শাকিলা ৩ টি দেশের ৫ টি ইউনিভার্সিটি হতে পিএইচডি অফার পেল। এর মাঝে ৩ টি অফারের সাথে ফান্ডিং আছে। আমিও ১টি ইউনিভার্সিটি হতে মাস্টার্সের ফান্ডিং সহ অফার পেলাম। আমাদের তখন রীতিমত পাজলিং অবস্থা। কোথায় যাব? অনেক ভেবে শাকিলা অস্ট্রেলিয়া যেতে সম্মত হল। আমি আমার প্রোগ্রামটি ক্যান্সেল করলাম, কেননা সেটি ছিল আরেকটি দেশে। সিদ্ধান্ত নিলাম শাকিলা অস্ট্রেলিয়া যাবে, আমি আরো কয়েকটি বছর সৌদিতেই কাটিয়ে দেব। আমি আমার সামারের ছুটিগুলো অস্ট্রেলিয়া কাটিয়ে আসব।

একটি জায়গায় ৬ বছর কাটালে স্বাভাবিকভাবেই অনেক বন্ধু তৈরি হয়, ভালোবাসা জন্মে, অভিমান থাকে, এট্যাচমেন্ট রয়ে যায়। চাকুরী ছাড়াটা শাকিলার জন্য মোটেও সহজ ছিলনা। বারবার ইমোশন তাকে দূর্বল করে দিচ্ছিল। সে যখন তার ডিপার্টমেন্টে চাকুরী ছাড়ার কথা জানাল- সবাই আকাশ থেকে পড়ল, বিষ্মিত হল। পরক্ষনেই তার পিএইচডি অফারের কথা শুনে বাহবা দিল। কিন্তু একজন আন্তরিক বন্ধু বা কলিগ হারানোর যে বেদনা তা প্রকাশ করতে দ্বিধা করল না।

বলাবাহুল্য শাকিলা ছিল তার ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে কঠোর, জনপ্রিয়, কর্মোদ্দীপ্ত ও প্রাণোচ্ছল ব্যক্তি। যারা নিয়ম নীতিতে কঠোর হয় তারা জনপ্রিয় হয় না। তা স্বত্তেও ছাত্রীরা তাকে যেমন সমীহ/ভয় করত, তেমনি স্টুডেন্ট ও ডিপার্টমেন্টাল ই্যভুলেশনে সে বরাবরই প্রথম হত।
সেই শাকিলা চলে যাবে.... ডিপার্টমেন্টের হেড মন খারাপ করে ফেলল। ডীন ওকে ডেকে অনেক অনেক করে থেকে যেতে বলে। প্রয়োজনবোধে অনলাইনে (distance) পিএইচডি করতে বলল। পরেরদিন সকালে ডেকে নিয়ে ডীন শাকিলাকে চমৎকার একটি ঘড়ি উপহার দেয়। শাকিলার সৌদি বন্ধুটি চোখের পানি ফেলে। বাংলাদেশিদের চেয়েও এই সৌদি মেয়েটি ওর আপন বন্ধু ছিল। সুদানি কলিগরা শাকিলাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক অনেক দোয়া করে। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি কলিগরা বিদায়ী পার্টি’র ব্যবস্থা করে। আমাদের বাসা ভরে যায় অনেক অনেক ভালোবাসায়-গিফট, চকোলেট আর ফুলে।

শাকিলাকে যে সবাই এত ভালোবাসে তা আমি নিজেও ভাবতে পারিনি। সবচেয়ে অবাক হই ও যখন কয়েকটি চিঠি আমাকে দেখায়। তার স্টুডেন্টরা চিঠিগুলো লিখেছে-প্রতিটি চিঠি মায়া, মমতা আর ভালোবাসায় ছোঁয়া। রাতে সূধা’র একটি মেসেজ পড়ে বুঝতে পারি তারা তাকে কতোটা পছন্দ করত, ভালোবাসত। ওর প্রতি এই ভালোবাসা আমাকেও আপ্লুত করেছে। আমিও আবেগতাড়িত হয়েছি। একদিন শিমু ও সাঈদ বাসায় দেখা করে গেল।

শাকিলার সাথে সাথে আরো দু’জন বাংলাদেশি শিক্ষক দেশে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি হতে জমকালো আয়োজন করে সবাইকে বিদায় দেয়া হয়। ৪ জুন আমার ও শাকিলার বাংলাদেশের ফ্লাইট ছিল। বাংলাদেশে ১ মাস থেকে আমরা অস্ট্রেলিয়া যাব।

শাকিলা সবসময় আমার ভ্রমণ সঙ্গী ছিল। আমরা একসাথে সৌদি আরবের এমাথা ওমাথা ঘুরে বেরিয়েছি। ছুটির দিনগুলিতে সবাইকে বিরক্ত করে বিভিন্ন প্রোগ্রাম সেট করেছি। হুটহাট শপিং এ চলে গেছি। এ দিনগুলো আর আসবে না।এখন আমার ভ্রমণ হয়তো সীমিত হয়ে গেল। চাইলেই সেই আনন্দ আর পাবোনা।

৪ জুন সন্ধ্যায় যখন আমরা আমাদের বাসা থেকে বের হই- শাকিলার সেকি কান্না। দেখতে দেখতে কতগুলো বছর এখানে কেটে গেল। আদিল ভাই ও শম্পা ভাবি, মিলন ও লিজা এসেছে। আমাদেরকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবে। এয়ারপোর্টে পৌছে শাকিলার হাউমাউ কান্না, যেন অতি আপনজন ছেড়ে যাচ্ছে। সত্যিইতো আমরা, আদিল ভাই ও মিলন মিলে একটি ফ্যামিলির মতোই ছিলাম।

আমি ও শাকিলা ভেজা চোখে ডিপারচার টার্মিনালের দিকে এগিয়ে যাই, সাথে নিয়ে যাই একরাশ ভালোবাসা।



মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৯

মোঃমোজাম হক বলেছেন: আপনার এই সিরিজটির প্রতীক্ষায় ছিলাম।আশাকরি নিয়মিত ডিটেইলস লিখে জানাবেন।
আপনার একাকীত্ব অনুভব করতে পারছি কিন্তু ছাড়তো দিতেই হবে :(

ভাবীর জন্য শুভকামনা রইলো।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫০

মধুমিতা বলেছেন: অবস্থা এমন যে কোন কাজে আর আনন্দ পাচ্ছিনা। :(
শীঘ্রই বিস্তারিত লেখার আশা আছে। ভালো থাকবেন। আপনাকেও শুভেচ্ছা।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩২

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন: ওহ নো! ভালোইতো ছিলেন ,দাম্পত্য জীবনের এরকম গোল্ডন পিরিয়ডে কি দরকার ছিল এই দূরত্বের! যাই হোক, আপনাদের ব্যক্তিগত ডিসিশন!ভাবীর জন্য শুভকামনা রইলো।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫২

মধুমিতা বলেছেন: ওর যা ফিল্ড তাতে ফান্ডিং একটু দূর্লভ। তাই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। আপনার জন্যও শুভকামনা।

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭

শ।মসীর বলেছেন: জীবনটা এমনই...................স্মৃতিই শুধু সঙ্গী হয় । ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪

মধুমিতা বলেছেন: আসলেই এমন। কখনো সাদাকালো কখনোবা রঙ্গীন।

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: সম্ভবত এই প্রথম আপনার ব্লগে আসলাম।
এসেই এতো ভালোবাসার মাখামাখি দেখে হিংসেতে চলে পুড়ে যাচ্ছি।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪

মধুমিতা বলেছেন: আমার ব্লগে আপনাকে শুভেচ্ছা। আমি হয়তো সবকিছুই ভালোবাসার চোখে দেখি।

৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ





ভালো থাকবেন নিরন্তর।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৭

মেহবুবা বলেছেন: কষ্ট - আনন্দ মিশ্রিত অনুভুতি আমাদেরও স্পর্শ করল ।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

মধুমিতা বলেছেন: সাথে থাকার জন্য আবারো ধন্যবাদ।

৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

মুহিব বলেছেন: ওহ হো....
আপনি কি দেশে আছেন এখন?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

মধুমিতা বলেছেন: আবাহাতেই আমার কর্মস্থলে ফিরে এসেছি।

৮| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৯

মোঃমোজাম হক বলেছেন: ঘুড়ে গেলাম, নুতন পর্বের জন্য হতাশ হয়ে :(

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২২

মধুমিতা বলেছেন: :(

৯| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

Ahmad Faiz বলেছেন: ভালোবাসার মায়া ত্যাগ করা কঠিন!

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৬

মধুমিতা বলেছেন: সত্যিই কঠিন। চারপাশ আকড়ে বেঁধে রাখে।

১০| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩১

আদম_ বলেছেন: আমারও কেমন যেন কান্না লাগছে। অদ্ভুত!!!

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪

মধুমিতা বলেছেন: অদ্ভুত!!! হয়তো আমার লেখার গভীরে চলে গেছেন।

১১| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২৮

অবনি মণি বলেছেন: ভালো লাগলো পড়ে !

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫

মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.