নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়াদি লাজাবের গহীনে-২ (আরব ডায়েরি-১০৬)

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৯



ওয়াদি লাজাবের গহীনে-১

(হাতে এত লেখা জমে আছে, লিখতে বসলেই অস্থির লাগে- আরে ঐ লেখাটাতো বাকী আছে। ফলে কোনটাই লেখা হয়ে উঠছে না। আজকের লেখাটি তড়িঘড়ি করেই শেষ করব।)


আমরা ওয়াদি লাজাবের দিকে চলছি। আজকে ওয়াদি’র ভেতরে ঢুকব। যাত্রাপথের বর্ণনা আজ আর দিচ্ছি না। আগের একটি পোস্টেই বিস্তারিত বলেছি। দুই ঘণ্টার মতো ড্রাইভ করে ওয়াদি লাজাবে পৌছে গেলাম। অনেক লোক এসেছে। ভেতরের বড় খোলা জায়গায় গাড়ী পার্ক করে আমরা হাতের বামে নেমে গেলাম। হাতের বাম হতে অবিচ্ছিন্নভাবে পানি আসছে। বড় একটি পাথর পেরোতেই ঝর্ণার কুল কুল শব্দ। ঠিক ঝর্ণা বলা যাবে কিনা আমি শিউর না। হাত দুয়েক উচ্চতায় পানি জমে প্রচন্ড শব্দে নীচে পড়ছে। নীচে ছোট খাট একটা লেকও তৈরি হয়েছে। আমরা মনের আনন্দে পানিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম- অনেক ঠান্ডা পানি। আযম ভাইয়ের গবেষণা মতে ওয়াদি বেইশের পানি বিভিন্ন পথ ঘুরে এখানে এসেছে, ওয়াদি বেইশ ও লাজাব কানেক্টেড।




আমরা এগিয়ে যেতে থাকলাম। নুড়ি পাথরের মাঝ দিয়ে পানি আসছিল। দুই পাহাড়ের মাঝখানটা ১০০ ফিটের মত প্রশস্ত। পাহাড়ের দেয়াল বেয়ে বড় বড় গাছ, কোথাও বানর। নীরব ও শীতের মত একটা পরিবেশ।




লোকাল কয়েকজন ছেলে আমাদের দিকে আসছিল। আমাদেরকে ঘুরতে এসেছি কিনা তা জিজ্ঞাসা করল। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি খারাপ লোকালদের হাত হতে বাঁচার উপায় হচ্ছে- প্রথমেই সালাম দিয়ে তাদেরকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা। এতে তাদের বদ মতলব দূর হয়ে যায়, সাহায্য করার চেষ্টা করে। লোকালদের মাথায় ফুল ও পাতার তৈরি মালা, গায়ে শার্ট ও নীচে হাতে বানানো রঙ্গীন লুঙি। তাদের হাতে কিছু পাতা ছিল, সেটা তারা চিবুচ্ছিল। এখানকার সবার কাছেই এই পাতা বেশ পরিচিত- এটা একধরনের মাদক, “গাদ” নামে সবাই চিনে। বর্ডার এলাকার গ্রামগুলোতে ছেলে বুড়ো সবাই আমাদের পানের মত এই পাতা চিবিয়ে থাকে। সৌদিতে “গাদ” নিষিদ্ধ। কিন্তু ইয়েমেনে ব্যাপাক হারে এটা চাষ হয় ও বর্ডার পাড়ি দিয়ে চলে আসে। ছেলেগুলো আমাদের সেই পাতা সাধল, আমরা ‘না’ করলাম। সামনে এগুতেই লোকাল পোশাক পরিহিত অস্ত্রসহ এক নিরাপত্তাকর্মীকে পেলাম সে নিজেও “গাদ” চিবুচ্ছে।


আমাদের সাথে আরো অনেকেই হাটা পথে যোগ দিল, কেউ কেউ ফিরে আসছিল। আমরা ছবি তুলতে তুলতে এগুচ্ছি। লিটু ভাই উনার ডিএসএলআর নিয়ে ব্যস্ত। জহির ভাই যাই দেখে-মুখ দিয়ে ‘ওয়াও’ বের হয়ে আসে, বড় বড় গাছ জড়িয়ে ধরেন। একসময় তিনি পানিতে মাছ খুঁজে পেলেন। আযম ভাই আমাদের ফেলে এগিয়ে গেছেন।




এক জায়গায় এসে আমাদের থমকে দাঁড়াতে হলো। ছোট একটি ঝর্ণা বেশ বড়সর একটি লেক তৈরি করেছে। স্বচ্ছ, নীল পানি। অনলাইনে এরই কিছু ভিডিও দেখেছিলাম-অনেকেই এখানে সাতার কেটেছে। আমি নিজে সাতার জানিনা তাই ঐ পথ মাড়ালাম না। কিন্তু আমাদের সামনে এগোবার পথে বাধাঁ হয়ে দাঁড়াল এক তলা সমান উচ্চতার বিশাল এক পাথর। ওখানে একটি দড়ি ঝোলানো। সৌদিরা অনেক সাহসী, সেই দড়ি বেয়ে তারা অনেকেই ওপাশে চলে গেল। লিটু ভাই আর সামনে যেতে নারাজ, জহির ভাইও এই দড়ি ধরে ঝুলতে চাইলেন না। আমি কি করব ভাবতে না ভাবতেই দেখি আযম ভাই উঠতে শুরু করেছেন। তিনি ভালোভাবেই পাথরের উপরে উঠলেন এবং নেমেও এলেন। আমি নিজেও এই কাজে সাহস করলাম না। আযম ভাই প্রমাণ করে দিলেন আমাদের মাঝে একমাত্র তিনিই আসল ‘রেজ্জ্বাল’ বা পুরুষ। যেই লিটু ভাইয়ের মুখে সবসময় সত্যিকারের পুরুষের গল্প শুনি তিনিই সবার আগে পিছপা হয়েছিলেন। আইরনি।




ফেরার পথে একটি বড়ই গাছ দেখলাম, কিন্তু লিটু ভাইয়ের এক কথা এটা বড়ই গাছ হতেই পারেনা। ৫০০ রিয়াল বাজী। আমরা গাছ হতে ঢিল মেরে বড়ই পেড়ে খেলাম, ছোট ছোট জংলি বড়ই কিন্তু মিষ্টি। কিন্তু লিটু ভাই বাজীর টাকা দিলেন না।


ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল। আমরা ওয়াদি হতে বের হয়ে খাবারের খোঁজ লাগালাম। আজ সবার এক কথা-ছাগলের মান্দি খেতে হবে নাহলে পোষাবে না। জুম্মার নামাজ শেষ হয়েছে। সবাই রেস্টুরেন্টে হামলে পড়েছে। ২টি রেস্টুরেন্টে মান্দি পেলামনা। এলাকার শেষ রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি তা বাংলাদেশীদের, তবে তারা মান্দি বানিয়েছে কিন্তু শেষ পর্যায়ে। আমরা অনেক রিকোয়েস্ট করে আমাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে বললাম। তারা ২/৩টি ছাগলের পিস আর চর্বি দিয়ে ১ প্লেট মান্দি নিয়ে আসল। মাংসের অপর্যাপ্ততা ঢাকতে বেশী করে পেয়াজ, টমেটো আর রুটি দিয়ে প্লেট ভরে ফেলেছে। এই খাবার খেয়ে আমাদের মনের তৃপ্তি মেটল না। কিন্তু দাম রাখল পুরোটাই।


বিকাল ৪টা নাগাদ আমরা ওয়াদি বেইশে পৌছে গেলাম। এবার মাছ ধরার পালা। গতবারের অভিজ্ঞতা বলছিল চারজনে অনেক অনেক মাছ ধরে আবহা ফেরত যাব , হয়তো সঙ্গে আনা বরফেও কুলাবে না। আমি মাছ ধরতে গেলে শুরুতেই ঝামেল আসে। পাথরের সাথে বড়শি আটকে মূল্যবান ২০টি মিনিট নষ্ট হল। আযম ভাই তখন বেশ কিছু মাছ ধরে ফেলেছেন। নতুন করে বড়শি ফেললাম- মাছ ধরছে না। লিটু ভাই ও জহির ভাই এদিকে ওদিকে, আগে পিছে, কোনায় দূরে বিভিন্নভাবে ছিপ ফেলেও মাছ ধরতে পারলেন না।

আমরা অস্থির হয়ে গেছি- মাছ কেন ধরছে না? সূর্য ডুবে গেলে আমার ছিপে মাছ ধরতে শুরু করল। লিটু ভাই একটা দুটা ধরছেন কিন্তু জহির ভাই শুন্য। আযম ভাই সবার চেয়ে এগিয়ে। একসময় মনে হল আমাদের ব্যাগ ভরবে তো? সম্মিলিত ও আযম ভাইয়ের একক প্রচেষ্টায় সন্মানজনক পরিমান মাছ ধরা গেল। মাগরিবের পর আবহার পথ ধরলাম।



(শেষ)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: মধুমিতা ,




রোমাঞ্চকর ।

মাছের ছবি কই ? ভয় নেই ভাগ চাইবেনা কেউ ... :(

ছবিতে লেখায় সুন্দর ।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭

মধুমিতা বলেছেন: মাছের ছবি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ১০টির বেশী ছবি আপলোড করতে পারলাম না। উপায় থাকলে জানাবেন।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো, তবে আমার মনে হয় আপনারা শুকনো মৌসুমে গিয়েছিলেন ওখানে, যার জন্য পানি অত্যন্ত কম ছিলো। তবে জায়গাটা সত্যিই অসাধারণ!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬

মধুমিতা বলেছেন: বর্ষাকালে ওখানে যাওয়ার উপায় নেই। যেকোন সময় পাহাড়ী ঢল এসে সব শেষ করে দিবে। লেখনিতে যতটা না, বাস্তবে তার চেয়েও সুন্দর।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪০

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আগের পোষ্টে মন্তব্য করে এসেছি

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭

মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৫

অদৃশ্য বলেছেন:



এসবইতো মজার... আপনারা ঘোরেন, মজা করেন, খাওয়া দাওয়া করেন... আর আমরা তা জেনে মজা পাই... ঘুরতে পারিনা, খাইতে পাইনা ঠিকই তবুও মজা পাই...

আপনার আরও জমে থাকা গল্পগুলো ব্লগে নামান তাড়াতাড়ি...
শুভকামনা...

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:০৫

মধুমিতা বলেছেন: আপনাদেরকেও মজা দেবার জন্যইতো লিখি। আপনাদের কারনেই কত নতুন জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি।
সামনে একটি নতুন সিরিজ লিখব। ভালো থাকুন।

৫| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: প্রিয় মধুমিতা ভাই, ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে কিন্তু কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। আশা করি এখন কোন সমস্যা নেই।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮

মধুমিতা বলেছেন: পোস্ট করার সময় ১০টির বেশী ছবি নেয়নি। পরে এডিট অপশনে গিয়ে আরো ২টি ছবি আপলোড করতে পারলাম।

ভালো আছেন নিশ্চয়ই।

৬| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:৫১

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
জায়গাটা বেশ সুন্দর তো।
অ্যাডভেঞ্চারটাও বেশ রোমাঞ্চকর।

যাক শেষমেশ, ভাল পরিমাণ মাছই পেয়েছেন। +

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

মধুমিতা বলেছেন: জায়গাটা আসলেই অনেক সুন্দর। মাছ পেয়েছিলাম বটে কিন্তু আগেরবারের চেয়ে কম ছিল। আপনাকে ধন্যবাদ।

৭| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪৪

গ্রীনলাভার বলেছেন: শুনেছি আরবদেশের মসজিদগুলো অনেক সুন্দর। কিছু ছবি দিন, দেখি।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:২২

মধুমিতা বলেছেন: দেখাব ইনশা আল্লাহ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.