নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারকাদি (আরব ডায়েরি-১০৭)

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৬



লিটু ভাইয়ের হাতে বানানো গরম গরম খেবসা শেষ করে আমরা কয়েকজন আড্ডা দিতে বসেছি। শীতের রাত, লিটু ভাইয়ের বাসাটা এমন এক জায়গায় প্রায় সময়ই মেঘ উড়ে বেড়ায়। স্বভাবতই আয়েশ করে চা পান করছি। সৌদি আরবে আসার পর এমন সব চা’য়ের স্বাদ নিয়েছি তা নিয়ে আলাদা একটি বড়সর পোস্ট দেয়া যাবে। বিভিন্ন চা’য়ের স্বাদ, গন্ধ, রূপে আমরা সবাই মজে গিয়েছি।

আমি, আযম ভাই, লিটু ভাই, শাহরিয়ার ভাই রাত ১১/১২ টায় শুধুমাত্র ১ কাপ চা’য়ের জন্য ৩০ কিলোমিটার ঘুরে আসি। এখানে জবা ফুলের চা পাওয়া যায়, যা টক স্বাদের-অনেকটা তেতুলের স্বাদ আর গাড় লাল রং। সেই চায়ে প্রতি চুমুকে তৃপ্তি। আরবিতে জবা ফুলের চা’টিকে “কারকাদি” বলে। আমি ছুটিতে ঢাকায় যাবার সময় স্পেনের তৈরি কয়েক বক্স “কারকাদি” নিয়ে যাই। সবাই খেয়ে আলাদা মজা পায়। বক্সের গায়ে চেনাজানা জবা ফুলের ছবি দেখে তা নিয়ে আর বেশী কিছু ভাবিনি।





আড্ডা দিতে দিতে চা নিয়ে আলাপ শুরু হল। সাইফুল্লাহ ভাই জানালেন তিনি সম্প্রতি “কারকাদি” খেয়েছেন এবং খুব মজা পেয়েছেন। আযম ভাই বলল, আমি বিভিন্ন ফ্রেশ জবা ফুল খেয়ে দেখেছি, কিন্তু কোনটারই টক স্বাদ পেলাম না। পাশে বসা আবুল কালাম ভাই জানালেন-এই চা’য়ের গাছ বাংলাদেশে পাওয়া যায়-‘চুকাই’ গাছের ফুল দিয়ে তৈরি। এক সৌদি ওনাকে গাছটি চিনিয়ে দিয়েছে। আমার তখন অবাক হবার পালা। ‘চুকাই’ মানে টক/চুকা পাতা গাছ?





এই ছুটিতেও গ্রামের বাড়ির বিল হতে নিজ হাতে অনেক পাতা নিয়ে আসলাম। গ্রামে এই গাছ এমনিতেই বড় হয়। অনেক ঝোপড়ানো এই গাছে হলুদ রংয়ের ফুল হয়। ফুলের বৃন্তটি থাকে লাল। আমাদের উত্তরায় একেক আটি পাতা ১০ টাকা করে বিক্রি হয়। প্রচন্ড টক এই পাতার সাথে মাছ মিশিয়ে ভর্তা বানাই, আর লাল ফুলের বৃন্তটির সাথে মাছ দিয়ে খাট্টা বা টক রান্না করি।





কুমিল্লা বেড়াতে গিয়ে গোমতি’র চরে অনেক অনেক গাছ দেখেছিলাম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার শাশুড়ি ঢাকায় ওনার বাড়ীর ছাদে টবে একটি গাছ লাগিয়েছেন শুধুমাত্র ভর্তা খাবার আশায়। এটাই কি সেই গাছ যার চা খেয়ে আমরা রাতের বেলা ঘুরে বেড়াই?

আগে “কারকাদি” সাধারণ জবা ফুলের চা ভেবে বেশী ঘাটাঘাটি করিনি। আযম ভাই ইন্টারনেটে সার্চ দিলেন, অনেক তথ্য পাওয়া গেল। আমার চেনা টক/চুকা পাতা গাছ হতেই এই চা বানানো হয়। এর ইংরেজি নাম রোসেলা বা সরেল (Rosella, Sorrel)। এটি মূলত জব ফুলেরই একটি জাত। চায়ের প্যাকেটে প্রচলিত জবা ফুলের ছবি দেখে আমরা মূলত বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। হয়তো সহজেই প্রচার পাবার জন্য কোম্পানীগুলো প্রচলিত জবা ফুলের ছবি ব্যবহার করেছে।

পৃথিবীর অনেক দেশেই এই গাছের বানিজ্যিক চাষ করা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্রই গাছটি জন্মে,তবে বানিজ্যিক চাষ হয় না। ক্রান্তীয় আফ্রিকা চুকাই গাছের আদি নিবাস বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ফলটি পরিচিত। যেমন: রাজশাহীতে চুকাই, খুলনায় ও সাতক্ষীরাতে অম্ল মধু বা অম্বল মধু, ধামরাই এবং মানিকগঞ্জে চুকুল, সিলেটে হইলফা, কুমিল্লায় মেডশ, মেট্টস বা মেষ্টা ইত্যাদি। এছাড়া চুকুর, চুকুরি, চুপুরি, চুকোর, চুপড়, চুকা, চুক্কি, চুই, মেস্তা, খিইরুপ ইত্যাদি নামও প্রচলিত আছে।

চুকাই অনেক দেশে সস্তা সবজি হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সম্ভবতঃ এটি মায়ানমারের সবচে জনপ্রিয় সবজি। চুকাই পাতা রসুন, কাঁচামরিচ ও চিংড়ি মাছ বা অন্য মাছ সহযোগে ভাজি করে অথবা তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। চুকাই পাতা ও চিংড়ি শুটকি দিয়ে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয় এবং এটি মায়ানমারে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে টক স্বাদের কারণে জ্যাম, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এদেশে টক বা খাট্টা রান্না করেও খাওয়া হয়। এর মধ্যে 'পেকটিন' আছে বলে শুধুমাত্র চিনি ও চুকাই দিয়ে সহজেই জ্যাম তৈরি করা যায়, আলাদাভাবে পেকটিন মেশাতে হয় না।

সম্পূর্ণ তথ্য জেনে আমার খুব ভালো লাগল। যদি কখনো দেশে ফেরত যাই, হয়তো প্যাকেট করা সুদৃশ্য স্পেনের চায়ের বক্স কাছে পাবনা কিন্তু খুব সহজেই চা বানিয়ে ফেলতে পারব। ধুমায়িত কারকাদি’র অভাব বোধ হবে না।



মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল আপনার কারকাদি ছবিটি দেখে, আমাদের এলাকাতে মেষ্টা বলে জানি।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৮

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৪

বিজন রয় বলেছেন: আমাদের এলাকায় বলে অম্বলমধু।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬

মধুমিতা বলেছেন: খুলনা? অম্বলমধু বলার কারন কি? মিষ্টিতো লাগে না।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০১

অদৃশ্য বলেছেন:




ভুটানের গল্পটা আধা রেখে হঠাৎই '' চুকাই চায়ের পেছনে লেগে গেলেন কেন?... ভুটানের টুরটাতো ভালোই লাগছিলো, বিশেষ করে আপনার নানার অংশটুকু... বেশ মজার চরিত্র... তিনটা পর্বই সাথে সাথে পড়ে ফেলেছিলাম... পরেরটাতে কিনা আমাদের চুকাই চা খায়াওয়ানোর ব্যবস্থা করলেন...

ইন্টারেস্টিং এক প্রকার চায়ের কথা জানলাম... ভালো লাগেছে জেনে... কোন একদিন হয়তো আমিও জঙ্গল থেকে এর ফুল ও পাতা নিয়ে এসে শুকিয়ে চা বানিয়ে খেয়ে নিব... বেশ...

শুভকামনা...

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮

মধুমিতা বলেছেন: ভুটানের গল্পটা লিখতে শুরু করব। লিখতে বসলেই আলস্য ভর করে। চুকাই চা ভালো লাগলে জানিয়ে যাবেন। ভালো থাকবেন।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:২৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: কারকাদি সম্পর্কে আগে জানা ছিলনা। আরবদের কাহওয়া খেয়েছি, কারকাদি কখনো খাই নি।
অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৩

মধুমিতা বলেছেন: গাওয়া প্রথম অবস্থায় ভালো লাগার কথা না। আপনাকেও ধন্যবাদ।

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩২

হাসান রাজু বলেছেন: পোস্ট পড়েই ইউটিউবে সার্চ দিছি । জুসটা ই কি চা ?
ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম। রেসিপির ভিডিও গুলো দেখে নেই । তাহলে হয়তো বুঝতে পারবো ।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩

মধুমিতা বলেছেন: খুব সহজ। চুকাইয়ের বৃন্তটি শুকিয়ে গরম পানিতে দিবেন, সাথে পরিমাণমতো চিনি।.... চা হয়ে গেল।

৬| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৯

শোভন শামস বলেছেন: কারকাদি সম্পর্কে আগে জানা ছিলনা।
অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১০

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.