নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Never Say Never Again

...

মধুমিতা

আমি তোমার কাছে পৌছতে পারিনি পথে হয়েছে দেরী। তবু আজো স্বপ্ন দেখি - বন্ধ দড়জায় কড়া নাড়ি ।। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ, আড়ালে থাকতেই পছন্দ করি ...

মধুমিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক্সোডাস কোথায় হয়েছিল? পর্ব-২ (আরব ডায়েরি-১১৪)

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০



১ম পর্ব

গাড়ী চলছে। সারাদিন অনেক ধকল যাওয়ায় দু’চোখ ভারী হয়ে আসছিল। পেছনে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে নিলাম। ভোরের দিকে ইয়ালামলাম পৌছে যাই। ইয়ালামলাম হচ্ছে ইয়েমেন ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজীদের জন্য মিকাত। এখানে ইহরাম বাঁধতে হবে।

রাতের বেলাও অনেক গরম। ইহরাম বেঁধে মক্কার দিকে রওনা দেই। সকাল ৮ টায় আমরা মক্কা পৌছে যাই। মক্কায় হারাম শরীফের কাছাকাছি পার্কিং পাওয়াটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কয়েক বার ঘুরে কিছুটা দূরে ফ্রি পার্কিং পাওয়া গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম, প্রথমেই ওমরাহ করে ফেলব। প্রখর রোদে হেটে মসজিদে পৌছতে হল। তবে ওমরাহ শেষ করতে কোন বেগ পেতে হল না। ওমরাহ করার সময় একটা প্রশান্তি কাজ করে। জুম্মার নামাজ শেষ করে আমরা বের হই।

আবু সাঈদ ভাইয়ের ভাগিনা মক্কা থাকে। সে আমাদেরকে লাঞ্চ করায়। সৌদি খাবার- আল ফাহাম। আমি সধারণত সফট ড্রিংক্স এড়িয়ে চলি। কিন্তু গরম আর খরতাপের কারনে মাউন্টেন ডিও অনেক উপাদেয় মনে হল। লাঞ্চ শেষে শরীর অনেক ভারী হয়ে গেছে। এখন এই রোদে গাড়ীর কাছে গিয়ে লাগেজ আনতে হবে, হোটেল খুঁজতে হবে ভাবতেই গরমের তীব্রতা দ্বিগুন হয়ে যায়।

আধা ঘন্টা হাটার পর সবাই লাগেজ নিয়ে ইব্রাহিম খলিল রোডে ফিরে আসলাম। এর মধ্যে অবশ্য হানিফ ভাই পরিচিত একজনের সাথে আলাপ করে একটি রুম ঠিক করে ফেলেছেন। এক রুমে ৫ টি বেড। চিত, কাইত টাইপ হোটেল। কিন্তু হারাম শরীফের খুব কাছে। এখন মক্কায় প্রচুর ভীড়, এত কাছে হোটেল রুম পাওয়া স্বপ্নের মতো। ওমরাহ করে চুল কেটেছি, সবাই গোসল করে নিলাম। তারপর গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই।

আমি আসার আগে মক্কা ও মদীনার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ম্যাপ ও বর্ণনা নিয়ে এসেছি। আমার ইচ্ছা পথে যেতে যেতে এসব স্থানগুলো খুঁজে ফিরব।



ওমরাহ করার সময় কিছু ঐতিহাসিক স্থান, নিদর্শন কাবা চত্ত্বর ও আশেপাশেই দেখতে পেয়েছি কিন্তু সে সময় ছবি তোলাটা অনুচিত বিধায় অনলাইনের ছবি যুক্ত করে দিলাম।

উম্মে হানি'র বাসাঃ
উম্মে হানি ছিলেন মোহাম্মদ (সাঃ) এর চাচাত বোন এবং আবু তালিবের কন্যা। কিং আব্দুল আজিজ গেট দিয়ে ঢুকে চত্ত্বরে নামার আগে হাতের বামের জায়গাটিতে তার বাসস্থান ছিল বলে ধারণা করা হয়। এখন নির্মাণ কাজের জন্য কিং আব্দুল আজিজ গেট বন্ধ আছে। উম্মে হানি'র বাসা হতেই জিব্রাইল (আঃ) মোহাম্মদ (সাঃ) কে বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে যান। যা 'ইসরা' নামে পরিচিত।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

বাব-উল-ফাতহ (বিজয়ের দড়জা):
৮ হিজরির ২০ রমাদান শুক্রবার মক্কা বিজয়ের দিন মোহাম্মদ (সাঃ) এই স্থান দিয়ে কাবা চত্ত্বরে প্রবেশ করেন।



বাব-উল-উমরা (উমরা'র দড়জা):
এই গেট দিয়ে মোহাম্মদ (সাঃ) উমরা করার জন্য প্রবেশ করেন।



হাজরে আসোয়াদ (কালো পাথর):

হাজরে আসোয়াদ সম্পর্কে সবারই জানা। এটা এক সময় বড় পাথর ছিল। কাবা'র পূর্ব কোনে এটা স্থাপন করা হয়েছে। এখান হতেই ওমরা শুরু এবং শেষ করতে হয়। আমি দুইবার হাজরে আসোয়াদে চুমু দিতে পেরেছিলাম।

উমাইয়া খেলাফতের সময় হারাম শরীফ অবরোধকালে হাজরে আসোয়াদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে ৯৩০ সালে বাহরাইনের শিয়া কারামাতিয়ানরা হাজরে আসোয়াদ চুরি করে নিয়ে যায়। পাথরটি ফেরত দেবার সময় একাধিক টুকরা হয়ে যায়। বর্তমান সময়কালে সিলভারের ফ্রেম দিয়ে টুকরাগুলো কাবার দেয়ালে শক্তভাবে স্থাপন করা আছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ একটি তথ্য জানতে পারলাম- হাজরে আসোয়াদের কয়েকটি খন্ড তুরস্কে রয়েছে। সেটা নিয়ে ভবিষ্যতে একটি লেখা লিখার আশা রাখি।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

মুলতাজম:
হাজরে আসোয়াদ ও কাবা'র দড়জার মধ্যবর্তী স্থানটিকে মুলতাজম বলে। ২ মিটারের মত চওড়া এ স্থানে দোয়া কবুল হয়।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

মুসাল্লা জিব্রাইল (জিব্রাইল (আঃ) এর নামাজের জায়গা):

এই স্থানে জিব্রাইল (আঃ) মোহাম্মদ (সাঃ)কে নামাজ শিক্ষা দিয়েছিলেন। জায়গাটি পুরনো আমলের পাথর দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। জায়গাটি কাবার দড়জার পাশেই অবস্থিত। বর্তমানে ইমাম এই স্থানের সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ান।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

হাতিমঃ

অনেকেই ভাবেন কাবা হচ্ছে চর্তুভূজ একটি স্থাপনা। ধরণাটি ভুল। কাবার উত্তরদিকে অর্ধাচন্দ্রাকৃতি জায়গাটিও কাবার অংশ। মোহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়ত লাভের ৫ বছর আগে বন্যার কারণে কাবা ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন কাবাকে নতুনভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কুরাইশ নেতারা তাদের হালাল উপর্জন দিয়ে কাবা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। কাবাকে ৪ ভাগ করে একেক ভাগ একেক গোত্রপতির ওপর দায়িত্ব পড়ে। কাবার উত্তরাংশ তথা হাতিমের অংশ নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে বনু আদি বিন কাব বিন লুওয়াই-এর ওপর। তাদের হালাল অর্থের ঘাটতি থাকায় তারা উত্তরাংশ নির্মাণে ব্যর্থ হয়। ফলে অর্ধাচন্দ্রাকৃতি জায়গাটি বাদ রেখেই দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। যার কারনে ইব্রাহিম (আঃ) নির্মিত কাবার ওই অংশটুকু বাদ পড়ে যায় যা হাতিম বা পরিত্যক্ত নামে আজও সেভাবে আছে।

হাতিমের ভেতর নামাজ পড়া মানে কাবার ভেতরেই নামাজ পড়া। হয়তো আল্লাহ'র ইচ্ছা এমনই ছিল, যাতে মানুষ কাবার ভেতরে নামাজ পড়তে পারে। পুরো অংশটুকো দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ থাকলে রাজা বাদশাহ ছাড়া সাধারণ মানুষের কাবার ভেতর নামাজ পড়ার সুযোগ হতো না। আমি অনেকবার হাতিমের ভেতরে নামাজ পড়েছি।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

মাকামে ইব্রাহিমঃ

কাবার দড়জা বরাবর একটি ঘেরাও স্থানে ইব্রাহিম (আঃ) এর পাথরটি অবস্থিত। পাথরটিতে দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম (আঃ) কাবা'র দেয়াল নির্মান করেন। পাথরটিতে তাঁর পায়ের ছাপ রয়ে গেছে। সময়ের পরিক্রমায় পাথরটিতে ক্ষয় ও রংয়ের ভিন্নতা এসেছে। পাথরটিতে সিলভারের ঢালাই দেয়া হয়েছে। তাওয়াফ শেষ করে আমরা এর পেছনে দু'রাকাত নামাজ পড়ি।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

রোকনে ইয়েমেনিঃ

কাবায় ৪টি কর্নার আছে। ইয়েমেনের দিকের কর্নারকে রোকনে ইয়েমেনি বলে। মোহাম্মদ (সাঃ) রোকনে ইয়েমেনি তাওয়াফের সময় স্পর্শ করেছেন। হাজরে আসোয়াদ ও রোকনে ইয়েমেনি স্পর্শে গুনাহ মুছে যায়। রোকনে ইয়েমেনি'র অংশে কাপড় উন্মুক্ত আছে, ভীড় কিছু্টা কম থাকে বিধায় অনেকেই স্পর্শ করতে পারে।



ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

দারুল আরকামঃ

সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে ৭ বার দৌড়ানো (সাঈ) ওমরাহ'র গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাফা পাহাড়ের পাদদেশে দারুল আরকাম (আরকামের বাড়ী) অবস্থিত। ইসলামের শুরুর দিকে মোহাম্মদ (সাঃ) এখানেই গোপনে ইসলামের দাওয়াত দিতেন।


ছবিঃ ইন্টারনেট হতে

পুরো মসজিদ জুড়ে নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে অনেক লোক একসাথে তাওয়াফ ও ওমরাহ করতে পারবে। মসজিদে আধুনিক ডিজাইনের পাশাপাশি পুরনো তুর্কি আমলের ডিজাইনও রেখে দেয়া হয়েছে।



জায়গাগুলো দেখতে দেখতে ওমরাহ শেষ করি। আমার এবারের ভ্রমণের উদ্দেশ্যই ছিল ইতিহাসকে জানা। এই সেই মক্কা যার রুক্ষতায় মিশে আছে ইসলামের প্রশান্তি।


(চলবে)

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৭

মলাসইলমুইনা বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো | হযরে আসওয়াদ সম্পর্কে এতো কিছু জানতাম না | এর কিছু অংশ যে এখনো তুরস্কে আছে সেটা কখনোই শুনিনি | খুবই স্বচ্ছ্যন্দ ভাষা. গতিময় আর সুন্দর হয়েছে লেখা |

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৩

মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। তুরষ্কে হাজরে আসোয়াদের ব্যাপারটি নিয়ে একটি লেখা লিখব আশা করি।

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৪৯

উম্মে সায়মা বলেছেন: এত তথ্য জানা ছিলনা! অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। পোস্ট প্রিয়তে গেল।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৪

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ। তবে আমি আপু না।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:২৯

মোঃমোজাম হক বলেছেন: কয়েকটা অজানা তথ্য জানলাম।ধন্যবাদ ভাই

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৬

মধুমিতা বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার লেখা মিস করি। কি আর করা?

৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: অসাধারণ বর্ণনা ও চমৎকার উপস্থাপনা, ধন্যবাদ আপনাকে।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৬

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৪:১৬

উম্মে সায়মা বলেছেন: ওও। মধুমিতা নিক দেখে ভাবলাম আপু! দুঃখিত।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

মধুমিতা বলেছেন: অনেকেরই ভুল হয়। মধুমিতা আমাদের এলাকার একটি রোদের নাম। সেখান হতে নেয়া।

৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:১০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: এই সেই মক্কা যার রুক্ষতায় মিশে আছে ইসলামের প্রশান্তি।

চমৎকার লেখা !

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩

মধুমিতা বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৪২

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

অনেক সহজ করে লেখেছেন মক্কা-মদিনার কথা। অনেক কৌতূহলের খাবার আছে এপোস্টে। প্রথম/প্রস্তুতি পর্বটিও পড়েছি। চলতে থাকুক।

এপোস্টগুলো শুধু ট্রাভেলগ হিসেবে নয়, বাংলা ব্লগের সম্পদ। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী ব্লগার মোঃ মোজামের পোস্টগুলোর প্রায় সবগুলোই আমার পড়া।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

মধুমিতা বলেছেন: আমার সমস্যা হচ্ছে অন্যদের মতো নিয়মিত লিখতে পারিনা। তাই আপনাদেরকে আমার লেখার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়।

নিয়মিত অপেক্ষার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪১

হাসান রাজু বলেছেন: সবকিছু কেমন জানি ঐশ্বর্যে মোড়া । অবশ্য এভাবে সংরক্ষণ না করলে হারিয়ে যেতো । যাই হোক । সুন্দর পরিবেশনা বরাবরের মতই । ভালো থাকবেন ।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৭

মধুমিতা বলেছেন: যুগের সাথে তাল মিলে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৯| ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৫৫

আরাফআহনাফ বলেছেন: অনেক অনেক ভালো লাগা জানবেন।
সাথেই আছি - অনেক না দেখাকে দেখার জন্য।

ভালো থাকুন সবসময়।

২৬ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

মধুমিতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.