নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাথেই থাকুন…… ধন্যবাদ:-)

জে আর শুভ

ফেসবুকে আমিঃ www.facebook.com/zrshuvoo

জে আর শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার খুন

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৯


চুলগুলো বালিশে ছড়িয়ে জানালা দিয়ে শুয়ে শুয়ে বৃষ্টিভেজা বিকেল দেখছে মেয়েটি... পড়ন্ত বিকেল অথচ মেঘের আনাগোনার জন্য বুঝাই যাচ্ছেনা.. টুপ টুপ বৃষ্টি আর ঘনকালো মেঘ মনটা মলিন করে তুলেছে মেয়েটির.. মুখের নিচে দুটো হাত রেখে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহিরে..
.
ইরা...
একুশে পা দেয়া যুবতী..
একটি অঘোষিত নাট্যমঞ্চে অভিনয় করে.. মঞ্চের নাম "মধ্যবিত্ত"
এ দুনিয়ায় মধ্যবিত্তদের চাইতে বড় অভিনেতা কেইবা আছে!! এরা দুনিয়ার সব অভিনয়ই পারে.. অতি কষ্টে হাসিমুখে থাকা অথবা অতি সুখেও মলিন থাকার এক অদ্ভুত ক্ষমতাধর অভিনেতা এরা..
.
আজ স্কুলে পড়াতে যায়নি ইরা.. পড়াশুনার পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের একটা স্কুলে পড়ায় সে...
পড়ন্ত বিকেল অথবা বিষন্ন দুপুর অথবা বৃষ্টিভেজা কোন দিন যাই হোকনা কেন, মৃদু রোধে আবছা গাছের ছায়ায় কিংবা বৃষ্টিস্নাত কোন পথ দেখলেই আয়ানের কথা মনে পড়ে যায় ইরার.. বরাবরের মত আজও
.
সেই ছোট্টবেলার কথা.. মাধ্যমিকে পড়া মেয়েটি স্কুল ছুটির পর যখন বৃষ্টিভেজা কাদা রাস্তায় চুলের বেনী দুলাতে দুলাতে হাটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল, তখন একদল দুষ্টের অট্টহাসি উপেক্ষা করে যে ছেলেটি ছুটে এসেছিল, সেই তো আয়ান..
.
যখন স্কুলের বারান্দায় পা মুচকে জুতাজোড়া ছিড়ে ফেলেছিল মেয়েটি সেদিন বন্ধুদের দল থেকে চুপিসারে পালিয়ে এসে যে ছেলেটি জুতাজোড়া সেলাই করে এনে দিল, সেই তো আয়ান..
.
এইতো সেদিন, বছর পাঁচেক আগের কথা.. এমনই একটা পড়ন্ত বিকেলে গাছের সাথে হেলান দিয়ে যৌবনের প্রথম দিকে যে ছেলেটার সাথে কথা হয়েছিল লাজুক সুরে, সেইই তো এই আয়ান..
.
আয়ান...
ইরাদের পাড়াতেই থাকে.. এলাকার সবচেয়ে লাজুক ও ভদ্র ছেলের ট্রেডমার্ক নিয়ে ঘুরা ছেলেটির নাম আয়ান... ইরাকে ভালোবাসে আয়ান সেই মাধ্যমিক থেকে... কিন্তু আজও চুটিয়ে প্রেম করতে পারলো না ইরার সাথে, হাত ধরা হলনা ভালোবেসে...
.
মেয়েটা যে কি চায় আল্লাহই জানে!!
হ্যা....না, কিচ্ছু বলেনা... শুধু চোখে চোখ পড়লে একটু মুচকি হাসি দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়... আর এতেই আয়ানের সাত রাজ্য ভেংগে সুখের গুড়োবালি হয়ে মনের আকাশে উড়ে বেড়ায়... কেটে যায় শত অপেক্ষার গ্লানি... কিন্তু এভাবে আর কতদিন!!
"একদিন মনের সব আকুতি খুলে বলব ইরার কাছে দেখি কি বলে..."
..এই বলে মনে সংকল্পের বীজ বুনলো আয়ান
.
একদিন সাঁঝের বেলায়......
- ইরা দাড়াও.. (আয়ান)
- আমায় যেতে দিন.. (মাথার ওড়না টেনে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইল ইরা)
- না ইরা!! আজ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে.. আমি তোমাকে ভালোবাসি... বলব বলব বলে আজ চরটি বছর পার হয়ে গেল অথচ বলা হল না!! আমি তোমাকে ভালোবাসি ইরা!! (চোখ বন্ধ করে জানিয়ে দিল মনের কথাগুলো ইরাকে)
.
... কিছু না বলেই দ্রুত হেটে চলে গেল ইরা.. আয়ান স্তব্ধ হয়ে জায়গায় দাড়িয়ে.. মনে তার একটাই ভয়, ইরা তাকে ভালো বাসবে তো?? নাকি আজ থেকে আবার ঘৃণা করা শুরু করবে!! প্রপোজটা করে ভুল করল নাতো???
এসব ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা গড়িয়ে এল..
.
রাতে কারোরই ঘুম নেই... এক অদ্ভুত হৃদকম্পনে কেঁপে উঠছে আয়ান.. ইরা কি সিগন্যাল দিবে সেই কল্পনাই করছে আয়ান... যাই হোকনা কেন, যেভাবেই হোক উত্তরটা নিতেই হবে আয়ানের এই প্রতিজ্ঞায় চোখ ভুজলো আয়ান
. . এদিকে ভয় ও ভালোবাসার মিশ্র বিক্রিয়া চলছে ইরার মনে... সেও যে আয়ানকে নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসে কিন্তু সে ভালোবাসা ঘিরে রয়েছে কিছু বাস্তবতা ও নাটকীয়তা, যা কিনা ইরার বুকের বাম পাশটার গলা টিপে ধরেছে... এই আহত বুক থেকে ভেসে আসা ভালোবাসার ধক ধক ধ্বনি হয়ত আয়ানের কান পর্যন্ত পৌছবে না সেটা ইরা খুব ভালো করেই জানে... অসুস্থ বাবা আর ছোট ভাই বোন ও মায়ের আচল ঘিরেই ইরার পরিবার..
পরিবারের শিক্ষিতা বড় মেয়ে মানেই অনেক দায়িত্বের ভার... আর এই ভার উপেক্ষা করে আয়ানের সাথে ভালোবাসায় জড়িয়ে যাওয়া নিছক স্বার্থপরতা ছাড়া কিছুই নয় ইরার কাছে... তাই নিজের ভালোবাসাকে পাথর চাপা দিয়ে আয়ানকে দোটানা থেকে মুক্তি দিতে হবে এই প্রতিজ্ঞায় চোখ ভুজলো ইরা...
.
দুজনের দিনটি আজ অশুভ কাটবে..
পথে ইরার সাথে আয়ানের দেখা... দুজন পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়েও যেত পারলো না.. নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই নিজেরা দাড়িয়ে গেল মুখোমুখি... আয়ান কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল, ইরা আটকয়ে দিল..
- দেখো আয়ান, তোমাকে আমার আজ একটা কথা বলতেই হচ্ছে... আমি তোমার সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়াতে পারবো না.. তোমাকে নিয়ে আমি কখনও এসব ভাবনি.. আজ থেকে অযথা আমাকে বিরক্ত করবে না..
... বলেই ইরা চলে গেল
.
আয়ান স্তব্ধতা নিয়ে দাড়িয়ে... আয়ানের চার বছরের গড়া ভালোবাসার লীল আকাশে আজ ঘনকালো মেঘ জমেছে.. সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে নিজের অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আয়ানের... এ কি বলে গেল ইরা!!
.
এদিকে কাজল ধোয়া চোখের জলে ভেসে গিয়েছে ইরার বালিশ.. কোনভাবেই স্থির করতে পারছেনা নিজেকে সে... আয়ানের প্রতি এতদিনের জমানো ভালোবাসাকে নিজ হাতে খুন করে আসলো সে... বাস্তবতা যে তাকে খুনী হতে বাধ্য করেছে...
.
... তিন বছর হল আয়ানের সাথে ইরার দেখা নেই... হয়ত এতদিনে শহরে নতুন কারও প্রেমজালে আটকে গেছে আয়ান.. হয়ত ভালোই আছে অনেক... হয়ত ইরাকে এখন আর মনেও পড়েনা... আয়ান আর কোনদিনও জানবে না ইরার ভালোবাসার কথা...
ইরার মনে এই ভাবনাগুলো গত তিন বছর ধরে পায়চারী করছে... কিন্তু আজ বৃষ্টিভেজা বিকেলে ইরার কেন জানি মনে হচ্ছে আয়ান তার জীবনে একদিন ফিরে আসবে... আবার রাস্তায় দাড় করিয়ে ইরাকে বলবে ভালোবাসার কথা...
এবার ইরা আর ফেরাবেনা আয়ানকে.. জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলবে "ভালোবাসি... ভালোবাসি.... ভালোবাসি...."
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি আপু, এই বলে খিলখিল করে হাসছে তার ছয় বছর বয়সী ছোট বোন মীরা..
ইরার ঘোর কেটে গেল হাসির শব্দে.. চোখের জলটুকু মুছে বোনকে জড়িয়ে ধরলো ইরা.. অনেকটা আবেগকে মুছে ফেলে বাস্তবতাকে জড়িয়ে ধরার মতই.. যে বাস্তবতা ইরাকে বঞ্চিত করেছে আয়ানের ভালোবাসা থেকে...
.
.
গল্প: ভালোবাসার খুন
লিখা: জে আর শুভ
২১/১২/২০১৬ খ্রী:
.
ফেসবুকে আমিঃ http://www.facebook.com/zr.shuvo

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.