নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জোহরা উম্মে হাসান

ফ্রী ল্যনস বিশেষজ্ঞ

জোহরা উম্মে হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একান্ত ব্যক্তিগত

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

এমন তো হয়ই পথে ঘাটে , হাট বাজারে , মলে শপে, বদ্যি বাড়ী , অফিস করিডোরে কত চেনা অচেনা মানুষের সাথে দেখা । কোনসময় হয়তো কোন কোন মানুষের সাথে আপনাকে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা । ইচ্ছেও নয় অনিচ্ছাতেও নয় । কাজে । কাজ থাকলেই ঘটে কত ছন্দহীন কিংবা ছন্দময় ঘটনা । এমনি একটা ঘটনার কথা বলি ।

বেশ কিছুদিন আগে আমাদের নাতির ছবি ওয়াস বা ডেভেলপ করতে গিয়েছি । ইচ্ছে প্রথম জন্মদিনে এক বছরের যত ছবি সব এক করে এ্যালবামে ভরে ওর মা বাবাকে উপহার দেব । তো ছবি তো আর একটা দুটো নয়। হাজার হাজার ছবি । এর ওর ক্যামেরা আর মোবাইলের কল্যানে। যা একসাথে গুটিয়ে আনতে লেগে গেছে প্রায় এক মাস।

ছবি ডেভেলপ করতে গেলাম , এ আর প্লাজার উপরে । নতুন একটা ফটোশপ খোলা হয়েছে ওখানে । শপের মালিক বয়সে তরুন । দারুন একটিভ । তাঁর সাথে আছে আর চার পাঁচ জন । তারাও বয়সে যুবা ।

আসুন , আসুন আন্টি বলে আমাকে স্বাগত জানালো তাঁরা । মনটা একটু খারাপই হল। অথচ খারাপ হওয়ার তেমন কিছুই ঘটে নি । কিন্তু ওই যে সেই আন্টি সম্ভাষণ । অনেক অনেক দিন ব্যস্ত অথবা প্রতীক্ষারত দোকানীদের কাছ থেকে আপু আপু , কিনবা আপা আপা এমন ডাক শুনেছি । আর একটু বয়স বাড়লে বড় আপু কিংবা বড় আপা । উহ , এখন থেকে শুরু হয়েছে একবারে আন্টি , এর কোন নড় চড় নেই । বড় শপ বা মলগুলোর কথা অবশ্য একটু আলাদা । ওখানে ওরা সবাইকে স্যার কিনবা ম্যাদাম বলে সম্ভাষণ করে। আসলে তাইই বলা উচিত । একটা ফরমাল প্লেসে কোন ইনফরমাল ডাক ভাল লাগে না । দোকানের ছেলেগুলোর তেমন কোন দোষই নেই । অ্যান্টি বয়সী একটা মহিলাকে , আনটি না ভেবে আর কি ভাব্বে । যাগগে ,যাক সেই আন্টি আপু সমাচার ।



দোকানের একপাশে পেতে রাখা সোফায় আয়েস করে বসলাম । হাতে দু দুটো সি ডি, দুটো পেন ড্রাইভ । প্রিকশন আর কি । ছবিরা যেন কোনমতেই উধাও না হয় ।

বন্দের দিন। বিকেল বিকেল দুপুর বেলা । সাথে আমার দুই সমঝদার ভাগিণী ঝুমুর আর কাঁকন । একজন কম্পপিউটার ইঞ্জীনীয়র আর একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়েছে । ওদের আমার মত রিয়াল অ্যান্টির সাথে অনেক্ষন চুপচাপ বসে থাকা চলে না । বললেম , মার্কেটে ঘুরে বেড়া । উইন্ডো শপিং কর । কিছু টাকাও হাতে গুঁজে দিলেম জোর করে । ওরা রুম ঝুম মল বাজিয়ে চলে গেল । এখন আমি একা ।

দোকানটায় তখন অনেক কাস্টমার । আগে এলে আগে পাবেন। কেউ পাসপোর্ট এর জন্য ছবি তুলতে এসেছে । কেউবা ভর্তির জন্য । কিংবা আইডেন্টিটি কার্ড এর ছবি । আজকাল তো আর কেউ স্টুডিওতে এসে ফ্যামিলি ছবি কিংবা তুমি আমি ছবি তোলে না । এখন সবার হাতে হাতে ছবি তোলার যন্ত্র । ক্যামেরা । মোবাইল । আসলে চিঠি লেখার মত স্টুডিয়োতে গিয়ে ছবি তোলা দিনকে দিন লোপ পেতে পেতে প্রায় শুন্যের কোঠায় ঠেকেছে ।

যা হোক বসে আছি তো আছিই । বিয়ের ছবি, হলিডে সেলিব্রেশন এর ছবি, পিকনিক , পার্টি , ফেস্টিভ্যাল এসব নানা ছবির পসরা নিয়ে নানা মানুষ আসছে । কারো ছবি ডেভেলপ করা হয়ে গেছে । আবার কেউবা আমার মতো বসে আছে নতুন অর্ডার দেয়ার প্রত্যাশায় ।

এরই মধ্যে হঠাৎ করে একজন মহিলা হন হন করে স্টুডিওতে ঢুকলেন । মহিলা আর মেয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সীমারেখা আমি হামেশাই টানি । অন্য কেউ তা করেন কি না জানি না । যা হোক , যিনি এলেন , তিনি আমার মতে মহিলা তো ননই । মেয়েও নন । মানে সদ্য বিয়ে হওয়া চব্বিশ পচিঁস বছরের একজন তরুনীকে আর যা হোক মহিলা তো বলা চলে না । তবে কি মেয়ে ! দেখুন মেয়ে বলার ঝামেলাও কম না । একটা মেয়ের সামনে কি আপনি ভদ্র কথাটা তেমন করে ব্যবহার করতে পারবেন ? কিন্তু মহিলা হলেই কি সুন্দর ভদ্রমহিলা । ভদ্র মেয়ে নয় কেন !

যা হোক, তা হোক সেই ভদ্র মেয়েটি ঝড়ের বেগে ছুটে এল যেন । হাতে তার বড় বড় দুটো হলুদ পেট মোটা খাম । উপরে এই স্টুডিয়োর নামটি বাংলা আর ইংরেজী হরফে স্পষ্ট কোরে লেখা । তার মানে , তিনি ইতোমধ্যে ছবি নিয়ে গেছেন । আবার নতুন কোন অর্ডার দিতে এসেছেন কি ? যা দেবার আশু প্রয়োজন হয়েছে । বা ভুলে গিয়েছিলেন ।

ঘরে ঢুকেই যার দিকে চেয়ে প্রথম কথা বলা শুরু করলো সেই মেয়েটি, তিনি স্টুডিওটার মালিক । আবেভাবে , আগের আলাপচারিতায় স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে । মালিক সেই যুবকটির বয়স আর কত হবে । ত্রিশ ছুঁই ছুঁই । চমৎকার , স্মার্ট । চোখে ভারী মাইনাস পাওয়ারের গ্লাস ।

মেয়েটি রাখঢাক বিহীন মুখে পষ্টাপষ্টি বলেই ফেললো ; চোখে কম দেখেন বলে কি , এ ছবিগুলোও দেখেন নি ? আপনাদের মতো লোকেরা কেন যে এ ব্যবসা করে । খালি খালি লোক ঠকানো কারবার !

বলে কিরে মেয়ে? এটা কি কোন কথা হল । ছবি ভাল মন্দ তো হতেই পারে । তাই বলে এমন ব্যক্তিগত চার্জ ।

যাকে উদ্দেশ্য করে এত কথা বলা , সে কিন্তু চুপচাপ । তাঁর আগের হাসি হাসি ঝকঝকে মুখখানায় কেবল আষাঢ়ের ঘন ছায়া !

সেই মেয়েটির কথা এখনও শেষ হয় নাই । চলছে । অনবরত খর খরে বৃষ্টির শব্দের মতো । মাঝে মধ্যে ব্রজের কানফাটা ঝনঝনানি ।

এবার সেই ছেলেটি মুখ খুললো । বলল, সবগুলো ছবি ভাল ওয়াশ হয়নি বলছেন । আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না । আমরা কোয়ালিটির সাথে কক্ষনো আপস করি না ।

মেয়েটির গলার ঝাঁজ এ কথায় যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল । কোয়ালিটি ? কি যে বলেন । দেখেন , রঙ ! কেবল দুরঙ্গা , সব রঙ এসেছে ? নীল আর লাল । কি বাজে । আর পেপার দেখুন । ট্যাল টেলে , পাতলা । এটা কোন ছবি হয়েছে ? আবার কোয়ালিটি ? আহা , মুখে মুখে কোয়ালিটি কোয়ালিটি বললেই সবাই যেন তা মেনে নিল । শিখেছেন বটে , যান রাজনীতি করেন গিয়ে !

উহ ! মেয়েটির গলার যা ধার ! আশে পাশের সবাই বেশ বিব্রত ।

আমার আবার একটু আগ বাড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস । বিশেষতঃ যারা নিপীড়িত তাদের পক্ষ নিয়ে । সেই যে ছেলেবেলায় পড়েছিলাম , অন্যায় করা আর অন্যায় সহা এক । কিছু বলতে চাইলেম । আমার ছোট ভাগিনী কাঁকন , আমার ডান হাতে একটা মৃদু চিমটি দিল । তার মানে না । চুপ হয়ে গেলাম । তবু বেশ লজ্জাই পেলাম । আজকাল মেয়েদের কি না বাজে ভাবছে মানুষজন ।

মেয়েটি এবার প্যাকেট দুটো গোলপোস্টে বল ছুড়ে দেয়ার মত করে, সেই ছেলেটি যেখানে বসে আছে , ঠিক সেই সাজানো গোছানো টেবিলটার উপরে এক হাতে সজোরে ছুঁড়ে মারল । তারপর তাঁর নীল রঙ্গা ওড়নাটা গলায় অবহেলে পেঁচিয়ে দ্রুত চলে গেল সেখান থেকে !

মনে হোল , একটা ভূমিকম্প হচ্ছিল সাত রেক্ট্রর স্কেলে , তা থেমে গেল হঠাৎ করেই । আর ঘরের অপেক্ষমাণ মানুষগুলো প্রান নিয়ে যেন বাঁচল ।

পাশে দাঁড়ানো স্টুডিয়োর ছেলে দুটি মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি ছবিগুলো একটা দুটো তিনটে করে তুলছে আর বসের টেবিলে রাখছে । বস বলল , এখানে রাখার দরকার নেই , তোমাদের ড্রয়ারে রাখ ।

আবার কি ভেবে , ছবিগুলোর মধ্যে থেকে একটা ছবি হাতে তুলে নিল সে। গভীর পর্যবেক্ষণের ভঙ্গিতে ছবিটা দেখেছে সে । এক থেকে অনেকগুলো ! সবগুলো ! আমিও আড় চোখে চাইলাম । সুযোগ হল , কেননা আমি এখন বসে আছি ছেলেটির টেবিল ঘেঁসে । আমার ছবির অর্ডার নেয়া শুরু হোল বলে ।

সেই মেয়েটি । উহ , ছবিতে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে তাঁকে । বোধহয় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে তোলা ছবি । মেয়েটির পরনে সমুদ্র পোশাক । বিকিনি নয় , তবুও বিকিনি বিকিনি ভাব । বার্মিজ রঙ চঙ্গা হলুদ লাল লাল বড় ফুলপাতাওয়ালা গোড়ালির অনেক উঁচুতে তোলা স্কিন টাইট পাজামা । গায়ে গাঢ় হলুদ ফতুয়া । কিন্তু স্মাট চনবনে মেয়েটির পাশে তাঁর বরটিকে একটুও ভাল লাগলো না । কেমন যেন চাচা চাচা ভাব । গায়ের রঙ বেশ কালোই । হয়তো ভাল পয়সাওয়ালা কিংবা ভাল চাকরী বাকরী করে । তাই বাবা মা বিয়ে দিয়েছে । যাগকে যাক । মেয়েদের ভাগ্যে এমন হরহামেশাই ঘটে ।

এই তো দুদিন আগে আমাদের ফেসবুকের এক তরুণী কবি বন্ধু তাঁর পাশে আশি বছরের এক খুন খুনে বুড়োর গলে টকটকে হলুদ গাঁদা ফুলের মালার ছবির সাথে তার নিজের কুমারী ছবি পোস্ট করে কিনা মহা হট্টগোলে ফেলেছিল সবাইকে । আমি তো মনে মনে কষ্ট পেয়ে একাকার । কেউ কেউ মন্তব্য করল, এমন হলে উইশ করার কিছু নেই। যা হোক পরে আসল বরের দেখা মিলল । তরুন । সুন্দর । বুড়োটা ফেক !

তরুন তরুণীরা আসলে কোনদিনই অসুন্দর হয় না । আমার চোখে নয় । কারো চোখেই নয় । শেক্সপিয়ার তো বলেই দিয়েছে, ইয়ুথ আই এডোর দি, ওল্ড এজ আই হেট দি । তাই ভেবে আমাদের মত সব উঠতি বুড়ো বুড়ীকে কিন্তু তেপান্তরে পাঠানোর কায়দা করলে চলবে না । প্রেমিক কবি , আসলে যুবা আর বুড়ো বয়সীদের দোষ গুনের তুলনা করে এত কথা বলেছেন । আমাকে বললেও আমি তাইই বলব ।

যা হোক ভাবছিলেম , আর কেন জানি মনেও হচ্ছিল সামনে বসা এ ছেলেটির সাথে সেই মেয়েটির বিয়ে হলেই মানাত বেশ । একজন বলে কম কথা , আরেকজন কথার শিলা বৃষ্টিতে গাঁথা ।

আহ, কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই মেয়েটি আবার এল । সেই ছেলেটির সামনে এসেই আবার দাঁড়াল । দাঁড়াতেই হবে, স্টুডিয়োর মালিক বলে কথা । ভালমন্দের দায়ভার তো তাঁকেই নিতে হবে।

ইস, মেয়েটি যে কি ? জানা গেল , এবার সে এসেছে পেমেন্টটা ফেরত নিতে ।

কেন ? ছবি নেয়ার সময় সে দেখেনি ভাল মন্দ । সে না দেখুক , যে ছবি ডেলিভারি নিয়েছে তার হয়ে, তাঁর তো উচিত ছিল দেখা । আর কই , ভালই তো হয়েছে ছবি গুলো । আকাশ, বনানী আর সমুদ্রের সব রঙই তো ধরা পড়েছে ছবিগুলোর মাঝে । কেবল মেয়েটির মুখটি ম্লান , করুণ । মেয়েটির পাশের লোকটি , আনন্দে গদ গদ । তবুও তাঁকে খুব বেসুরো দেখাচ্ছে চাঁদ মুখ মেয়েটির পাশে ।

তো এ ছেলেটির কি দোষ । সে নির্বিকার । কেবল তাঁর পাশের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল সে , টাকার অঙ্ক কত। তারপর গুনে গুনে মেয়েটির হাতে তা তুলে দিল । টাকা ফেরত দিতে গিয়ে তাঁর ডান হাতটা একটু কাঁপল কি ? রাগে কিংবা অভিমানে ? কি জানি !

মেয়েটি যেভাবে এসেছিল , সেভাবেই গেল চলে । কেমন একটা উতলা ঝড়ের বেগে ।

মনে মনে হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলাম । কাজের মধ্যে গোল বাঁধলে কারই বা ভাল লাগে ? আমার ছবিগুলো হবার পথে । আহা , কি সুন্দর দেখাচ্ছে আমাদের নানু ভাইকে ! কত রকম ভাবভঙ্গি ।

ছবি গুনে গুনে পেমেন্ট নেয়া দেয়ার নিয়ম । সেই নিয়মই চলেছে । আমার চোখ ছবিগুলোর দিকে কেবল । সেখানে নানু ভাই কোলে আমারও ছবি আছে । আছে তার আসল নানা নানীর ছবি । বাবা মা , দাদা দাদী আর এক দঙ্গল আত্নীয় স্বজনের ।

যা হোক নানু ভাইয়ের ছবি বাদ দিয়ে এবার নিজের ছবি দেখছি । কেন যে নিজের ছবি দেখতে এত ভাল লাগে । কত পরিবর্তিত হচ্ছি ফি বছরে , তাও । একটা সময় ছিল যখন, একটু মুখ বাঁকা , একটু গাল ভাঙ্গা ছবি উঠলে তা চুপ করে ছিঁড়ে ফেলে দিতাম । আমার কর্তা তাতে যেত রেগে । তাই অনেক খারাপ ছবিও ছিঁড়িছিঁড়ি করে ছেঁড়া হয় নি । আজ মধ্য বয়সে এসে ফেলে আসা সেসব দিনের ছবি বেশ ভাল লাগে । মনে হয় , কেন আরও ছবি তুললাম না । এখন তো দেখতেম । আবার মাঝে মাঝে মনে হয় , দেখেই বা কি লাভ । সেই সব দিন রাত্তির তো আর ফিরে আসবে না ! আমাদের রমা সেন এসব ভেবেই বোধ হয় , আজীবন সৌন্দর্যের দেবী সুচিত্রা সেন হয়েই থাকতে চেয়েছিলেন। অনেকেই বলেছে , ভালই করেছেন তিনি । এমনটি না করলে সেই মরাল গ্রীবা , হরিন বাঁকা চাহুনি আর ছন্দময় তেজী লালিত্য ভঙ্গিমা কোথায় পেতাম । হারিয়ে যেত , সব যেত হারিয়ে । সাবিত্রী , জয়া বচ্চন , হেমা মালিনীরা কি আগের মত দ্যুতিময় আছেন !

যা হোক ছবি নিয়ে ফেরা ফেরা ভাব । আবারও তিনি । ওরে বাবা , এবার কি হবে । স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি , তাঁর হাতে সেই আগের টাকাকড়ি ।

আবার সে এগিয়ে এল সেই ছেলেটির কাছেই। টেবিলে টাকাগুলো একরকম ছুড়ে ফেলে দিয়ে সে বলল , পরের ছবি আপনার খুঁটে খুঁটে দেখতে লজ্জা করলো না?

আহা , কি নির্মম অপবাদ । কে জানালো তাকে , ছেলেটি অনেক অনেকক্ষণ ধরে একে একে তার সব ছবি দেখেছে । আমিও তো দেখেছি । কাজ ছিল না তাই । আমার কথা তাঁকে কেউ লাগায় নাই, তাই রক্ষে । এ মেয়েটি যেমন , তাতে মনে হচ্ছে যখন তখন যাকে তাকে অপমান করায় তার জুরি নেই ।

কিন্তু আশ্চর্য ! ছেলেটি এবারেও মুখ ফুটে তাঁকে কিছুই বললো না । কেবল নিরীহ হরিন শাবকের মত , মেয়েটির হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে , যার ছবি তাকে সব ফিরিয়ে দিল । ছবিগুলো সে তার নিজের কাছেই রেখেছিল । যেন সে জানতই এ ছবির মালিক আবার এসে ছবিগুলো ফেরত নিয়ে যাবে ।

দোকানের ছেলেগুলো ওপাশের চোখ বাঁচিয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটু চোখাচোখি করল । এবং ফিসফিশিয়ে বলল ; মান ! অভিমান !

ওদের টুকরো কথায় এবার বেশ স্পষ্টই বুঝতে পারলাম , এ পযন্ত যা ঘটেছে তার সবই একান্ত ব্যক্তিগত !

কিন্তু গোল বাঁধাল কে , তা বুঝতে পারলাম না। ছেলেটি কিনবা মেয়েটি । সে যেই হোক , কেবলি মনে হল দুটো ফুল ফুল মুখ এক হলে কতই না সৌরভে ভরতো মাটির এই পলকা পৃথিবীটা !!

এমন তো হয়ই পথে ঘাটে , হাট বাজারে , মলে শপে, বদ্যি বাড়ী , অফিস করিডোরে কত চেনা অচেনা মানুষের সাথে দেখা । কোনসময় হয়তো কোন কোন মানুষের সাথে আপনাকে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা । ইচ্ছেও নয় অনিচ্ছাতেও নয় । কাজে । কাজ থাকলেই ঘটে কত ছন্দহীন কিংবা ছন্দময় ঘটনা । এমনি একটা ঘটনার কথা বলি ।

বেশ কিছুদিন আগে আমাদের নাতির ছবি ওয়াস বা ডেভেলপ করতে গিয়েছি । ইচ্ছে প্রথম জন্মদিনে এক বছরের যত ছবি সব এক করে এ্যালবামে ভরে ওর মা বাবাকে উপহার দেব । তো ছবি তো আর একটা দুটো নয়। হাজার হাজার ছবি । এর ওর ক্যামেরা আর মোবাইলের কল্যানে। যা একসাথে গুটিয়ে আনতে লেগে গেছে প্রায় এক মাস।

ছবি ডেভেলপ করতে গেলাম , এ আর প্লাজার উপরে । নতুন একটা ফটোশপ খোলা হয়েছে ওখানে । শপের মালিক বয়সে তরুন । দারুন একটিভ । তাঁর সাথে আছে আর চার পাঁচ জন । তারাও বয়সে যুবা ।

আসুন , আসুন আন্টি বলে আমাকে স্বাগত জানালো তাঁরা । মনটা একটু খারাপই হল। অথচ খারাপ হওয়ার তেমন কিছুই ঘটে নি । কিন্তু ওই যে সেই আন্টি সম্ভাষণ । অনেক অনেক দিন ব্যস্ত অথবা প্রতীক্ষারত দোকানীদের কাছ থেকে আপু আপু , কিনবা আপা আপা এমন ডাক শুনেছি । আর একটু বয়স বাড়লে বড় আপু কিংবা বড় আপা । উহ , এখন থেকে শুরু হয়েছে একবারে আন্টি , এর কোন নড় চড় নেই । বড় শপ বা মলগুলোর কথা অবশ্য একটু আলাদা । ওখানে ওরা সবাইকে স্যার কিনবা ম্যাদাম বলে সম্ভাষণ করে। আসলে তাইই বলা উচিত । একটা ফরমাল প্লেসে কোন ইনফরমাল ডাক ভাল লাগে না । দোকানের ছেলেগুলোর তেমন কোন দোষই নেই । অ্যান্টি বয়সী একটা মহিলাকে , আনটি না ভেবে আর কি ভাব্বে । যাগগে ,যাক সেই আন্টি আপু সমাচার ।

দোকানের একপাশে পেতে রাখা সোফায় আয়েস করে বসলাম । হাতে দু দুটো সি ডি, দুটো পেন ড্রাইভ । প্রিকশন আর কি । ছবিরা যেন কোনমতেই উধাও না হয় ।

বন্দের দিন। বিকেল বিকেল দুপুর বেলা । সাথে আমার দুই সমঝদার ভাগিণী ঝুমুর আর কাঁকন । একজন কম্পপিউটার ইঞ্জীনীয়র আর একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে ভর্তি হয়েছে । ওদের আমার মত রিয়াল অ্যান্টির সাথে অনেক্ষন চুপচাপ বসে থাকা চলে না । বললেম , মার্কেটে ঘুরে বেড়া । উইন্ডো শপিং কর । কিছু টাকাও হাতে গুঁজে দিলেম জোর করে । ওরা রুম ঝুম মল বাজিয়ে চলে গেল । এখন আমি একা ।

দোকানটায় তখন অনেক কাস্টমার । আগে এলে আগে পাবেন। কেউ পাসপোর্ট এর জন্য ছবি তুলতে এসেছে । কেউবা ভর্তির জন্য । কিংবা আইডেন্টিটি কার্ড এর ছবি । আজকাল তো আর কেউ স্টুডিওতে এসে ফ্যামিলি ছবি কিংবা তুমি আমি ছবি তোলে না । এখন সবার হাতে হাতে ছবি তোলার যন্ত্র । ক্যামেরা । মোবাইল । আসলে চিঠি লেখার মত স্টুডিয়োতে গিয়ে ছবি তোলা দিনকে দিন লোপ পেতে পেতে প্রায় শুন্যের কোঠায় ঠেকেছে ।

যা হোক বসে আছি তো আছিই । বিয়ের ছবি, হলিডে সেলিব্রেশন এর ছবি, পিকনিক , পার্টি , ফেস্টিভ্যাল এসব নানা ছবির পসরা নিয়ে নানা মানুষ আসছে । কারো ছবি ডেভেলপ করা হয়ে গেছে । আবার কেউবা আমার মতো বসে আছে নতুন অর্ডার দেয়ার প্রত্যাশায় ।

এরই মধ্যে হঠাৎ করে একজন মহিলা হন হন করে স্টুডিওতে ঢুকলেন । মহিলা আর মেয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সীমারেখা আমি হামেশাই টানি । অন্য কেউ তা করেন কি না জানি না । যা হোক , যিনি এলেন , তিনি আমার মতে মহিলা তো ননই । মেয়েও নন । মানে সদ্য বিয়ে হওয়া চব্বিশ পচিঁস বছরের একজন তরুনীকে আর যা হোক মহিলা তো বলা চলে না । তবে কি মেয়ে ! দেখুন মেয়ে বলার ঝামেলাও কম না । একটা মেয়ের সামনে কি আপনি ভদ্র কথাটা তেমন করে ব্যবহার করতে পারবেন ? কিন্তু মহিলা হলেই কি সুন্দর ভদ্রমহিলা । ভদ্র মেয়ে নয় কেন !

যা হোক, তা হোক সেই ভদ্র মেয়েটি ঝড়ের বেগে ছুটে এল যেন । হাতে তার বড় বড় দুটো হলুদ পেট মোটা খাম । উপরে এই স্টুডিয়োর নামটি বাংলা আর ইংরেজী হরফে স্পষ্ট কোরে লেখা । তার মানে , তিনি ইতোমধ্যে ছবি নিয়ে গেছেন । আবার নতুন কোন অর্ডার দিতে এসেছেন কি ? যা দেবার আশু প্রয়োজন হয়েছে । বা ভুলে গিয়েছিলেন ।

ঘরে ঢুকেই যার দিকে চেয়ে প্রথম কথা বলা শুরু করলো সেই মেয়েটি, তিনি স্টুডিওটার মালিক । আবেভাবে , আগের আলাপচারিতায় স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে । মালিক সেই যুবকটির বয়স আর কত হবে । ত্রিশ ছুঁই ছুঁই । চমৎকার , স্মার্ট । চোখে ভারী মাইনাস পাওয়ারের গ্লাস ।

মেয়েটি রাখঢাক বিহীন মুখে পষ্টাপষ্টি বলেই ফেললো ; চোখে কম দেখেন বলে কি , এ ছবিগুলোও দেখেন নি ? আপনাদের মতো লোকেরা কেন যে এ ব্যবসা করে । খালি খালি লোক ঠকানো কারবার !

বলে কিরে মেয়ে? এটা কি কোন কথা হল । ছবি ভাল মন্দ তো হতেই পারে । তাই বলে এমন ব্যক্তিগত চার্জ ।

যাকে উদ্দেশ্য করে এত কথা বলা , সে কিন্তু চুপচাপ । তাঁর আগের হাসি হাসি ঝকঝকে মুখখানায় কেবল আষাঢ়ের ঘন ছায়া !

সেই মেয়েটির কথা এখনও শেষ হয় নাই । চলছে । অনবরত খর খরে বৃষ্টির শব্দের মতো । মাঝে মধ্যে ব্রজের কানফাটা ঝনঝনানি ।

এবার সেই ছেলেটি মুখ খুললো । বলল, সবগুলো ছবি ভাল ওয়াশ হয়নি বলছেন । আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না । আমরা কোয়ালিটির সাথে কক্ষনো আপস করি না ।

মেয়েটির গলার ঝাঁজ এ কথায় যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল । কোয়ালিটি ? কি যে বলেন । দেখেন , রঙ ! কেবল দুরঙ্গা , সব রঙ এসেছে ? নীল আর লাল । কি বাজে । আর পেপার দেখুন । ট্যাল টেলে , পাতলা । এটা কোন ছবি হয়েছে ? আবার কোয়ালিটি ? আহা , মুখে মুখে কোয়ালিটি কোয়ালিটি বললেই সবাই যেন তা মেনে নিল । শিখেছেন বটে , যান রাজনীতি করেন গিয়ে !

উহ ! মেয়েটির গলার যা ধার ! আশে পাশের সবাই বেশ বিব্রত ।

আমার আবার একটু আগ বাড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস । বিশেষতঃ যারা নিপীড়িত তাদের পক্ষ নিয়ে । সেই যে ছেলেবেলায় পড়েছিলাম , অন্যায় করা আর অন্যায় সহা এক । কিছু বলতে চাইলেম । আমার ছোট ভাগিনী কাঁকন , আমার ডান হাতে একটা মৃদু চিমটি দিল । তার মানে না । চুপ হয়ে গেলাম । তবু বেশ লজ্জাই পেলাম । আজকাল মেয়েদের কি না বাজে ভাবছে মানুষজন ।

মেয়েটি এবার প্যাকেট দুটো গোলপোস্টে বল ছুড়ে দেয়ার মত করে, সেই ছেলেটি যেখানে বসে আছে , ঠিক সেই সাজানো গোছানো টেবিলটার উপরে এক হাতে সজোরে ছুঁড়ে মারল । তারপর তাঁর নীল রঙ্গা ওড়নাটা গলায় অবহেলে পেঁচিয়ে দ্রুত চলে গেল সেখান থেকে !

মনে হোল , একটা ভূমিকম্প হচ্ছিল সাত রেক্ট্রর স্কেলে , তা থেমে গেল হঠাৎ করেই । আর ঘরের অপেক্ষমাণ মানুষগুলো প্রান নিয়ে যেন বাঁচল ।

পাশে দাঁড়ানো স্টুডিয়োর ছেলে দুটি মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি ছবিগুলো একটা দুটো তিনটে করে তুলছে আর বসের টেবিলে রাখছে । বস বলল , এখানে রাখার দরকার নেই , তোমাদের ড্রয়ারে রাখ ।

আবার কি ভেবে , ছবিগুলোর মধ্যে থেকে একটা ছবি হাতে তুলে নিল সে। গভীর পর্যবেক্ষণের ভঙ্গিতে ছবিটা দেখেছে সে । এক থেকে অনেকগুলো ! সবগুলো ! আমিও আড় চোখে চাইলাম । সুযোগ হল , কেননা আমি এখন বসে আছি ছেলেটির টেবিল ঘেঁসে । আমার ছবির অর্ডার নেয়া শুরু হোল বলে ।

সেই মেয়েটি । উহ , ছবিতে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে তাঁকে । বোধহয় কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে তোলা ছবি । মেয়েটির পরনে সমুদ্র পোশাক । বিকিনি নয় , তবুও বিকিনি বিকিনি ভাব । বার্মিজ রঙ চঙ্গা হলুদ লাল লাল বড় ফুলপাতাওয়ালা গোড়ালির অনেক উঁচুতে তোলা স্কিন টাইট পাজামা । গায়ে গাঢ় হলুদ ফতুয়া । কিন্তু স্মাট চনবনে মেয়েটির পাশে তাঁর বরটিকে একটুও ভাল লাগলো না । কেমন যেন চাচা চাচা ভাব । গায়ের রঙ বেশ কালোই । হয়তো ভাল পয়সাওয়ালা কিংবা ভাল চাকরী বাকরী করে । তাই বাবা মা বিয়ে দিয়েছে । যাগকে যাক । মেয়েদের ভাগ্যে এমন হরহামেশাই ঘটে ।

এই তো দুদিন আগে আমাদের ফেসবুকের এক তরুণী কবি বন্ধু তাঁর পাশে আশি বছরের এক খুন খুনে বুড়োর গলে টকটকে হলুদ গাঁদা ফুলের মালার ছবির সাথে তার নিজের কুমারী ছবি পোস্ট করে কিনা মহা হট্টগোলে ফেলেছিল সবাইকে । আমি তো মনে মনে কষ্ট পেয়ে একাকার । কেউ কেউ মন্তব্য করল, এমন হলে উইশ করার কিছু নেই। যা হোক পরে আসল বরের দেখা মিলল । তরুন । সুন্দর । বুড়োটা ফেক !

তরুন তরুণীরা আসলে কোনদিনই অসুন্দর হয় না । আমার চোখে নয় । কারো চোখেই নয় । শেক্সপিয়ার তো বলেই দিয়েছে, ইয়ুথ আই এডোর দি, ওল্ড এজ আই হেট দি । তাই ভেবে আমাদের মত সব উঠতি বুড়ো বুড়ীকে কিন্তু তেপান্তরে পাঠানোর কায়দা করলে চলবে না । প্রেমিক কবি , আসলে যুবা আর বুড়ো বয়সীদের দোষ গুনের তুলনা করে এত কথা বলেছেন । আমাকে বললেও আমি তাইই বলব ।

যা হোক ভাবছিলেম , আর কেন জানি মনেও হচ্ছিল সামনে বসা এ ছেলেটির সাথে সেই মেয়েটির বিয়ে হলেই মানাত বেশ । একজন বলে কম কথা , আরেকজন কথার শিলা বৃষ্টিতে গাঁথা ।

আহ, কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই মেয়েটি আবার এল । সেই ছেলেটির সামনে এসেই আবার দাঁড়াল । দাঁড়াতেই হবে, স্টুডিয়োর মালিক বলে কথা । ভালমন্দের দায়ভার তো তাঁকেই নিতে হবে।

ইস, মেয়েটি যে কি ? জানা গেল , এবার সে এসেছে পেমেন্টটা ফেরত নিতে ।

কেন ? ছবি নেয়ার সময় সে দেখেনি ভাল মন্দ । সে না দেখুক , যে ছবি ডেলিভারি নিয়েছে তার হয়ে, তাঁর তো উচিত ছিল দেখা । আর কই , ভালই তো হয়েছে ছবি গুলো । আকাশ, বনানী আর সমুদ্রের সব রঙই তো ধরা পড়েছে ছবিগুলোর মাঝে । কেবল মেয়েটির মুখটি ম্লান , করুণ । মেয়েটির পাশের লোকটি , আনন্দে গদ গদ । তবুও তাঁকে খুব বেসুরো দেখাচ্ছে চাঁদ মুখ মেয়েটির পাশে ।

তো এ ছেলেটির কি দোষ । সে নির্বিকার । কেবল তাঁর পাশের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করল সে , টাকার অঙ্ক কত। তারপর গুনে গুনে মেয়েটির হাতে তা তুলে দিল । টাকা ফেরত দিতে গিয়ে তাঁর ডান হাতটা একটু কাঁপল কি ? রাগে কিংবা অভিমানে ? কি জানি !

মেয়েটি যেভাবে এসেছিল , সেভাবেই গেল চলে । কেমন একটা উতলা ঝড়ের বেগে ।

মনে মনে হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলাম । কাজের মধ্যে গোল বাঁধলে কারই বা ভাল লাগে ? আমার ছবিগুলো হবার পথে । আহা , কি সুন্দর দেখাচ্ছে আমাদের নানু ভাইকে ! কত রকম ভাবভঙ্গি ।

ছবি গুনে গুনে পেমেন্ট নেয়া দেয়ার নিয়ম । সেই নিয়মই চলেছে । আমার চোখ ছবিগুলোর দিকে কেবল । সেখানে নানু ভাই কোলে আমারও ছবি আছে । আছে তার আসল নানা নানীর ছবি । বাবা মা , দাদা দাদী আর এক দঙ্গল আত্নীয় স্বজনের ।

যা হোক নানু ভাইয়ের ছবি বাদ দিয়ে এবার নিজের ছবি দেখছি । কেন যে নিজের ছবি দেখতে এত ভাল লাগে । কত পরিবর্তিত হচ্ছি ফি বছরে , তাও । একটা সময় ছিল যখন, একটু মুখ বাঁকা , একটু গাল ভাঙ্গা ছবি উঠলে তা চুপ করে ছিঁড়ে ফেলে দিতাম । আমার কর্তা তাতে যেত রেগে । তাই অনেক খারাপ ছবিও ছিঁড়িছিঁড়ি করে ছেঁড়া হয় নি । আজ মধ্য বয়সে এসে ফেলে আসা সেসব দিনের ছবি বেশ ভাল লাগে । মনে হয় , কেন আরও ছবি তুললাম না । এখন তো দেখতেম । আবার মাঝে মাঝে মনে হয় , দেখেই বা কি লাভ । সেই সব দিন রাত্তির তো আর ফিরে আসবে না ! আমাদের রমা সেন এসব ভেবেই বোধ হয় , আজীবন সৌন্দর্যের দেবী সুচিত্রা সেন হয়েই থাকতে চেয়েছিলেন। অনেকেই বলেছে , ভালই করেছেন তিনি । এমনটি না করলে সেই মরাল গ্রীবা , হরিন বাঁকা চাহুনি আর ছন্দময় তেজী লালিত্য ভঙ্গিমা কোথায় পেতাম । হারিয়ে যেত , সব যেত হারিয়ে । সাবিত্রী , জয়া বচ্চন , হেমা মালিনীরা কি আগের মত দ্যুতিময় আছেন !

যা হোক ছবি নিয়ে ফেরা ফেরা ভাব । আবারও তিনি । ওরে বাবা , এবার কি হবে । স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি , তাঁর হাতে সেই আগের টাকাকড়ি ।

আবার সে এগিয়ে এল সেই ছেলেটির কাছেই। টেবিলে টাকাগুলো একরকম ছুড়ে ফেলে দিয়ে সে বলল , পরের ছবি আপনার খুঁটে খুঁটে দেখতে লজ্জা করলো না?

আহা , কি নির্মম অপবাদ । কে জানালো তাকে , ছেলেটি অনেক অনেকক্ষণ ধরে একে একে তার সব ছবি দেখেছে । আমিও তো দেখেছি । কাজ ছিল না তাই । আমার কথা তাঁকে কেউ লাগায় নাই, তাই রক্ষে । এ মেয়েটি যেমন , তাতে মনে হচ্ছে যখন তখন যাকে তাকে অপমান করায় তার জুরি নেই ।

কিন্তু আশ্চর্য ! ছেলেটি এবারেও মুখ ফুটে তাঁকে কিছুই বললো না । কেবল নিরীহ হরিন শাবকের মত , মেয়েটির হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে , যার ছবি তাকে সব ফিরিয়ে দিল । ছবিগুলো সে তার নিজের কাছেই রেখেছিল । যেন সে জানতই এ ছবির মালিক আবার এসে ছবিগুলো ফেরত নিয়ে যাবে ।

দোকানের ছেলেগুলো ওপাশের চোখ বাঁচিয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটু চোখাচোখি করল । এবং ফিসফিশিয়ে বলল ; মান ! অভিমান !

ওদের টুকরো কথায় এবার বেশ স্পষ্টই বুঝতে পারলাম , এ পযন্ত যা ঘটেছে তার সবই একান্ত ব্যক্তিগত !

কিন্তু গোল বাঁধাল কে , তা বুঝতে পারলাম না। ছেলেটি কিনবা মেয়েটি । সে যেই হোক , কেবলি মনে হল দুটো ফুল ফুল মুখ এক হলে কতই না সৌরভে ভরতো মাটির এই পলকা পৃথিবীটা !!



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:৪৩

নিঃশব্দ শিশির! বলেছেন: ভাল লিখেছেন আন্টি!!! দুষ্টামি করলাম!!

২| ২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৫

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ !

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২১

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লেগেছে আপা।

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আজমান আন্দালিব ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.