নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জোহরা উম্মে হাসান

ফ্রী ল্যনস বিশেষজ্ঞ

জোহরা উম্মে হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অফিসের গাড়ী ( দুই )

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৮

দুই -কমপ্লেন

চারজনে কি কাজ হয় । নীলার মা বলতেন , একে উসখুস , দুইয়ে খাস, তিনে গণ্ডগোল আর চারে হাট। এখানেও কি হবে ঠিক তেমনি ! চারজনে এক রুমে বসে কাজ করা যায় নাকি !

হেড অফিসে এই ভালোমত বসে কাজ করার অসুবিধাটুকু মেনে নিতে নীলার বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল ! রাশেদকে টেলিফোনে এসব বলায় সে তো হেসে কুটি কুটি । বললো , অফিস কি নিজের বাড়ি নাকি যা চাইবে তাই পাবে । আর হেড অফিসে এরকম সমস্যা থাকবেই । আবার ঠিকমত কাজ কর , দেখবে বাড়তি কত সুবিধা !

নীলা কেবল , হু হা বলল ! সে জানে রাশেদের এই এক দোষ , সে কিছুতেই নেগেটিভ কিছু বলবে না , পাছে নীলা হতাশ হয় । একে অবশ্য দোষ না বলে গুনও বলা চলে !

যা হোক , তানজিলা আর নীলা পাশাপাশি । ওপাশে আফরিন আর বায়েজীদ !

রুমটা বেশ সুন্দর করে আগে থেকেই সাজানো । নীলা এখানে বদলী হবার আগে এখানে ওরা তিনজন বসতো । চারজনের জায়গা এক রকম প্রায় জোর করে করা হয়েছে ! আর তা হয়েছে আলতামাস স্যারের নির্দেশ মতই । তিনি নাকি ম্যাডামের সাথে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন ! বিষয়টা আফরিন চুপি চুপি বায়েজীদকে বলল ।

বায়েজীদ সব না শুনেই কেবল পরম বিজ্ঞের মতো মাথা নোয়ালো । সে জানে আফরিনের এরকম আগাম খবর সংগ্রহ করার বেশ নেশা আছে । কেবল এই ছ’তলায় নয় আর বাদবাকি পাঁচ তলায় কি হোচ্ছে না হোচ্ছে তা তার মোটামুটি জানা ! কি ভাবে যে সে এত খবর রাখে তা ভাবতে গেলে সত্যিই অবাক হোতে হয় ।

চারজন এক রুমে বসা নিয়ে বায়েজীদের তেমন কোন আপত্তি নেই । আফরিন শুরুতে বেশ একটু গলা বাড়িয়ে ছিল , কিন্ত আলতামাস স্যার নিজে আসাতে জোখের মুখে যেন চুন পড়েছে !

তানজিলার কোন অসুবিধা নেই । বেশী মানুষের সাথে কথা বলতে পারলেই সে যেন খুশী ! আর নীলাকে তাঁর আগে থেকেই খুব পছন্দ ! বিষয়টা যে আফরিন আপু ভালভাবে নেবেন না , তা সে বেশ ভাল করেই জানে !

যে যাই বলুক না কেন , আফরিন এর রুচি আছে বটে ! গোটা রুমটকে সে খুব ভালভাবে সাজিয়েছে । এখানে উনিশ বিশ কিছু করেনি । প্রত্যেকের টেবিলে সূক্ষ্ম কাজকরা মাটির পটে ঘন বাহারী মানিপ্লান্ট । ডেস্ক ক্যালেন্ডার ! দেয়ালের কোন জুড়ে দুটো টবে ইনডোর প্ল্যান্ট ! প্রত্যেকের চেয়ার জুড়ে ঘাসফুল তুলতুলে টাওয়েল । সুদৃশ্য পেন স্ট্যান্ড আর তাতে মুখ উঁচিয়ে থাকা রংবেরঙের কলম । বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর কলম কালেক্ট করা নাকি আফরিনের হবি !

বায়েজীদ এর সাথে আফরিনের সম্পর্ক বেশ ভালো । আর বায়েজীদও আফরিনকে ছোট খাট ভুল টুল বাদ দিয়ে বেশ পছন্দই করে । তবে এই পছন্দের মুল কারণ কাজ । তারা একই প্রকল্পে কাজ করে । কাজের জন্য একে অপরের উপর নির্ভর করতে হয় ।

এই যেমন বায়েজীদ কম্পিউটারে একেবারেই কাঁচা । তবে রিপোর্ট লেখায় বেশ দক্ষ । কম্পিউটারে পুরো রিপোর্টটা টাইপ করতে আফরিনকে অবশ্য অবশ্যি প্রয়োজন পড়বে !

এদের চারজনের মধ্যে তানজিলাই সবচেয়ে জুনিয়র ! এক হারা লম্বা ফর্শা । মাথা ভর্তি কুচকুচে কালো চুল । যা আজকালকার মেয়েদের বেলায় দেখা যায় না ! হাসতে খুব ভালবাসে যেন সে । সব সময় তাঁর মুখে মিষ্টি একটা হাসি যেন লেগেই আছে ! এখনকার কাজের ভিত্তিতে নীলা তানজিলার বস ! নীলা যদিও এসব বস টস বিশ্বাস করে না , তারপরও তানজিলা তাঁকে সব সময় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানান দিয়ে বলবে , বাবা বস বলেছে আমি কি তা না কোরে ফেলে রাখতে পারি !

আফরিনের কানে এসব কথা যায় । তাঁর ভাল লাগে না । মনে মনে বলে ন্যাকামি ! তানজিলা একটু জোরে কথা বললে সে ওপাশ থেকে মুখ না তুলেই কপাল কুঁচিয়ে বলে , দেখছ না কাজ করছি । কথা বল ক্যান !

বায়েজীদ কিছু বলে না । একবার সে তানজিলার দিকে তাকায় আর একবার আফরিনের দিকে । তানজিলাকে কেউ কিছু বললে তাঁর কেন জানি ভীষণ কষ্ট হয় ! সে তার কেউ নয় , আত্নীয় নয় , নয় স্বজন তবুও !

নীলার কাজ বুঝিয়ে নিতে সময় লাগছে । পরিচালক ম্যাডাম তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন একটু আগে !

নীলার খুব ভয় লাগছিল । এর আগে তাঁর সাথে কাজ করার সুযোগ হয় নি তাঁর । কিন্তু দূর থেকে অনেকদিনই দেখা হয়েছে তাঁর সাথে । সালাম বিনিময়ও হয়েছে । তারপরও ভয় । মনে হোচ্ছে চাকরির ইন্টারভিউ যেন দিতে যাচ্ছে সে !

অফিস ক্যামন লাগছে , ম্যাডাম হাসিমুখে জিঞ্জেস করলেন !

ভালো , নীলা মৃদু স্বরে বললো ।

আর একটু জোরে । এত ধীরে ধীরে কথা বললে অন্যে শুনবে কি কোরে ?

ওহ , তাইতো , নীলা লজ্জিত হোল ।

ম্যাডাম বললেন তোমার আগের বস তো তোমার নামে অনেক প্রশংসা করে গ্যাছেন আর আলতামাসও তো বেশ ভালই বলল তোমার কথা । তাই তোমায় নিয়ে এলাম । খুশী হয়েছো তো ।

নীলা এবারে ম্যাডামের মুখের দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে বেশ উচ্চ কণ্ঠেই বলে উঠলো , খুব খুব খুশী হয়েছে সে । এখানে না আসতে পারলে তার সংসারের যে কি হাল হোত!

না , ও কথা আর বোল না , ম্যাডাম নীলার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়েই যেন বললেন । দেখ নীলা সংসারে সবারই কম বেশী সমস্যা আছে আর তা থাকবেই । আমরা কেবল তা ভেবেই কিন্তু পদায়ন দেই না । সব ক্ষেত্রে যোগ্যতাকেই বেশী গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করি । তবে আর কে কি করেন এ ব্যাপারে আমি জানি না , কিন্তু আমি করি !

নীলা মিন মিন কোরে মাথা ঝাকালো ।

ম্যাডাম বললেন তুমি আলতামাসের সাথে কাজ করবে । তাঁকে হেল্প করবে আর কাজও শিখবে । তোমার জন্য এটি একটা গোল্ডেন অপরচুনেটি । আর সেই সাথে কি যেন নাম মেয়েটার , হ্যাঁ তানজিলা । ওকেও কাজে এনভল্ব করবে ! সে তো দেখি কেবল হেসেখেলে বেড়ায় ।

ওহ , ম্যাডামের দেখছি নজর এড়ায় না কিছুই ! ভাল ।

আফরিন এসেছে ম্যাডামের সাথে দেখা কোরতে । ম্যাডাম ফাইল দেখা বাদ দিয়ে তাঁর দিকে সপ্রশ্ন তাকিয়ে জানতে চাইলেন , কি ব্যাপার ।

আফরিন হেসে বলল , ম্যাডাম একটু পরে বলছি । তার মানে সে একা কথা বলতে চায় । নীলার থাকা চলবে না !

নীলা চলে গেলে আফরিন মুখ খুললো । দ্বিধাহীন কণ্ঠে বললো , ম্যাদাম চারজনে কিন্তু বেশ অসুবিধা হোচ্ছে । যদিও মিলেঝিলে আছি তারপরও ।

ম্যাডাম হাসলেন । এই কমপ্লেনটা যে একসময় না একসময় আফরিনের কাছ থেকে আসবেই তা যেন তিনি আগে ভাগেই জানতেন । তাই আফরিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি অফিস বন্দের দিনই লেবার আর পিওন ডাকিয়ে আর একটা বাড়তি সিটের বন্দোবস্ত করিয়েছেন । এ মেয়ে বড় সাংঘাতিক । নিজের প্রয়োজনে হেন কাজ নেই যা সে কোরতে পারে না । দরকার পড়লে তাঁকে ডিঙ্গিয়ে ডিজি স্যারের কাছে চলে যাবে সে !

তবে আফরিনকে এসব একেবারেই বুঝতে দেয়া যাবে না। এ উইংটার কনন্টোলিং অথরিটি তিনিই । যা বলতে হয় ডিজি মহোদয়কে না হয় তিনি নিজেই বলবেন । আফরিনের মতো একটা পুঁচকে মেয়েকে ভয় পেলে তো তাঁর আর চলবে না !

আর কিছু বোলবে আফরিন । ফাইলে মুখ ডুবিয়ে রেখেই আবারো প্রশ্ন করলেন তিনি ।

না, ম্যাদাম তেমন কিছু নয় । তবে এই বায়েজীদ স্যারকে নিয়ে । যা ঘন ঘন সিগারেট খান তিনি । রুমে টেকাই দায় ।

অহ, তাইতো , রুমে স্মোকিং বারণ সে নোটিস তো দেয়াই হোয়েছে আগে থেকে ! দেখি আবার কি করা যায় !

আফরিন চুপ করার মেয়ে নয় । আরও কথা আছে তার ।

আর কি কথা বল ।

ম্যাদাম , আমাকে আলতামাস স্যারের সাথে এ্যাটাচসড করে দিলে হোত না , একটু কাজ শিখতাম !

আসমা মাহবুব বেশ ভালো করে বুঝতেই পারছেন , নীলা মেয়েটিকে আলতামাসের সাথে যোগ কোরে দেয়ায় আফরিন নতুন কোরে কাজ শেখার বাহানা করেছে । বললেন , আগে বলনি ক্যান । আমি তো সুইটেবল অফিসার খুঁজছিলামই ।

আফরিন চুপ করে থাকল । তারপর বলল , নীলার চেয়ে কিন্ত আমিই সিনিয়র ম্যাদাম । ---- ব্যাচের !

ওকে আমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দিলে আমার সম্মান কমে যাবে !

আসমা মাহবুব প্রথমে কিছু বললেন না। তারপর বললেন , সব কাজই সমান গুরুত্বপূর্ণ । মিছেমিছি এত ঊনিশ বিশ ভাবলে কষ্ট পাবে ! কাজ করগে যাও ।

আফরিন যে বড় অখুশী হোল তা তাঁর লালচে গম্ভীর মুখখানা দেখে খুব বোঝা গেল ! মুখে মেকি হাসে টেনে চেয়ার ছেড়ে ঊঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে সে বলল , ম্যাদাম এই তানজিলা মেয়েটিও কিন্তু এই নীলা নামের নতুন মেয়েটির সাথে দিন রাত গুজুর গুজুর কোরে । চারজনে কি আর ঠিক মত কাজ হয় !

আসমা মাহবুব মাথা না উঁচিয়েই বললেন, বিষয়টা আমি পর্যবেক্ষণ করব !



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ধীরে ধীরে একটা রুপ পাচ্ছে লেখাটা +

ভালো থাকবেন সবসময় :)

২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: হা , দেয়ার চেসটা কোরছি , কত দুরে গিয়ে দাঁড়ায় , আর অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে !

৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭

নুরএমডিচৌধূরী বলেছেন:
কি আপু?
কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে...?
যেখানে যেতে চাই ঠিক সেখানেই তো
নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
অনেক সুন্দর
বেশ পাকা পাকা লিখা
হচ্ছে,
ভাল থাকা হোক
শুভ কামনা আপনার জন্যে

৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: মন্তব্য দেখলে যেমন ভাল লাগে তেমনি ভয়ও পাই । লেখা ভাল হচ্ছে কি না এসব আর কি । সাহস পাচ্ছি আপনার কথায় , যা হোক খুব খুশী হলাম ! ভাল থাকবেন !

৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৬

আবু শাকিল বলেছেন: লেখা পড়ে সমাপ্তিতে এসে বোঝলাম।
সম্ভবত লেখা আরেকটা কিস্তি হবে।

চালিয়ে যান আপু। শুভ কামনা ।

৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩৭

জোহরা উম্মে হাসান বলেছেন: আবু শাকিল , হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন , আরও কয়েকটা কিস্তিতে লিখব ভাবছি । পাঠকের ভাল লাগলে লিখতে থাকব , না লাগলে থামিয়ে দেব । আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.