নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লালনের মনের মানুষ

লালনের মনের মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কত সহজ ভাষায় দার্শনিক প্রশ্ন করা যায়- তা লালন কে না জানলে বোঝা কঠিন।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৮


লালনের জাত বিষয়ক শানিত চিন্তার কথা আজ সকলের জানা। জাত-পাত, উঁচু-নিচু, ইতর-ভদ্র, হিন্দু- মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ইত্যাদি ভেদাভেদ তাঁকে অবাক করেছে।আহত করেছে। তাই এ সমস্ত ভেদাভেদের উর্ধ্বে উঠে তিনি একীভূত মানব সমাজের কল্পনা করেছেন। জাত-পাত কে তিনি একদমই থোড়াই কেয়ার করেছেন।তাই তো তিনি বলছেন- ‘জাত গেল জাত গেল বলে / একি আজব কারখানা/ সত্য কাজে কেউ নয় রাজি / সবই দেখি তানা নানা’। অন্য আর একটি গানে বলছেন- ‘কেউ মালা কেউ তজবী গলায় / তাইতে যে জাত ভিন্ন বলায় / যাওয়া কিংবা আসার বেলায় / জাতের চিহ্ন রয় কার রে’?

মানুষকে বিভক্তির বেড়াজালে না জড়িয়ে শুধু মানুষ হিসেবে দেখার কারনেই হয়তো তিনি মানুষ কে গুরুভাবে ভজতে বলেছেন। কারন, তাতেই লুকায়িত আছে শাশ্বত প্রেমের অমিয়ধারা- মানবমুক্তি যার ফল। কলিযুগে তিনি মানুষকে দেখেছেন অবতার হিসেবে। বলেছেন দিব্যজ্ঞানী না হলে কেউ তা জানতে পারে না্। মানুষ ভজনা ও মানব সেবার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সে জ্ঞান। কারন,নিরাকার বিধাতাই যে মানুষের মাঝে সাকার হয়ে ধরা দেয় সাঁইজি তা তুলে ধরলেন এভাবে-‘সর্বসাধন সিদ্ধ হয় তার / মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার / নদী কিংবা বিল বাওড় খাল / সর্বস্থলে একই একজন…. / দিব্যজ্ঞানী হয় তবে জানতে পায় / কলিযুগে হলেন মানুষ অবতার’।

লালন ফকিরের গানের একটি আলাদা তাৎপর্য হচ্ছে সাধারনত এ গান গুলোর শেষদিকে এসে লালন তাঁর নিজের নামে পদ রচনা করেছেন।এর ফলে যেটা হয়েছে তা হলো, তাঁর গান আর অন্য কেউ নিজের বলে চালিয়ে দিতে পারবেন না।যেমন, বহুল পরিচিত জাত বিষয়ক গানে লালন শেষ দিকে বলছেন- ‘গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায় / তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয় / লালন বলে জাত কারে কয় / এ ভ্রম তো গেল না’।

কত সহজ ভাষায় দার্শনিক প্রশ্ন করা যায়- তা লালন কে না জানলে বোঝা কঠিন। তাঁর প্রতিটি গান আমাদেরকে অনেক মৌলিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। উত্তর আমাদের জানা থাকলেও কি যেন এক অজানা আতংকে সত্যের মুখোমুখি দাড়িয়েও আমরা আমাদের অবস্থান নিই বিবেকের বিরুদ্ধে। লালন তাঁর বিবেক কে সদা জাগ্রত রাখতে পেরেছিলেন বলেই সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি বিচলিত হননি।প্রচলিত সকল ধর্মমত কে জেনে-বুঝেই অত:পর তিনি তাঁর সত্য উপলব্ধিকে নি:সংকোচে প্রকাশ করেছেন ‘লালনীয়’ ভঙ্গিতে । তাঁর সে উপলব্ধির-ই বহি:প্রকাশ ঘটেছে মরমী সব গানে যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ, ভন্ডামি, ধর্মীয় গোড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি উর্দ্ধে তুলে ধরেছেন শুধুই মানবতা আর সংশয়হীন চিত্তে গেয়েছেন তার-ই জয়গান ।

তাঁর এ গান যেন এক অসীম শক্তির আঁধার যার কেন্দ্রে আছে শুধুই মানুষ। মানবতাবোধ যার একমাত্র উপজীব্য। কিন্তু মানবতাবোধে কতজন আমরা নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি? নাকি নানান ফন্দি ফিকিরে আমরা মানবতাবোধকে দলিত মথিত করে চলেছি প্রতিনিয়ত? সমাজ পরিমন্ডলে কি আমরা এমন কোন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি যেখানে মানবতাবোধকে লালন পালন করা হয়ে থাকে? উত্তর হচ্ছে না। আর পারিনি বলেই হয়তো সাঁইজির ভাষায় তা ‘কানার হাট-বাজার’। তাই, কানার এ হাট-বাজারে লালনের পরামর্শ ভাবনার জগতে ঢেউ তোলে। লালন তাই বলছেন ‘সহজ মানুষ ভজে দেখ নারে মন দিব্যজ্ঞানে / পাবিরে অমুল্য নিধি বর্তমানে’। তবে ধীরে হলেও লালন এখন অভিজাতকুলেরও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।বাউলদের শ্রেষ্ঠধন লালনকে এখন বিদেশ বিভুয়ের মানুষজনও জানতে চায়।লালন দর্শনের রস আস্বাদন করতে চায়।

বর্তমান সময়ে লালন দর্শন তাই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ধরা দেয় প্রতিটি মানবতাবাদী মানুষের হৃদয়ে যারা এক ও অভিন্ন মানবসত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। ভেদাভেদ নয়;অভেদ দর্শনই যে পারে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে শান্তিময় পৃথিবী বিনির্মান করতে সেটাই লালন ফকিরের গানে ফুটে উঠেছে। তাই লালন দর্শনের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে আমরা তরুন প্রজন্ম যেন তেমন পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই-সে প্রত্যাশা রইলো।
Please like our Facebook Page

লালন মরলো জল পিপাসায় পর্ব -১। লালনের গানে তাঁর দর্শন ও তাঁর পথ

কবে করবে ভজন ধর্মযাজন, দিনে দিনে দিন ফুরালো

লালনগীতি মনসুর ফকির

Fakir Lalon Best Songs Collection - লালন সঙ্গীত

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩

সজীব মোহন্ত বলেছেন: ভালো লাগল।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:২০

গেম চেঞ্জার বলেছেন: লালন সাঁইজীর আধ্যাত্মিক সাধনার সাথে মানবমুক্তির পথ দেখানো আছে! সেটা নিয়ে আরো গবেষণা করা উচিত!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.