নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লালনের মনের মানুষ

লালনের মনের মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ছয় রমণী’ কি ছয়টি রিপু ?

১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১০

‘মায়া নদী’ কী আর ‘রঙ্গিলা দেশের নাইয়াই’- বা কে? লালন এই গানে কী বলছেন বা বলতে চাইছেন?

" মায়া নদী কেমনে যাবি বাইয়া
রঙ্গিলা দেশের নাইয়া।।

ও নাইয়া রে, অষ্ট ইঞ্চি নদীর দিক
খাউজ কাটা মাপের ঠিক
চার আঙ্গুল যায়গা পাড়ি দাওনা।। "

শুনছিলাম বাসুদেব বাউলের গলায় লালন ফকিরের এই অসামান্য গানটি। একবার নয়, দুইবার নয়, বহুবার। একটানা। নিরবিচ্ছন্ন নীরবতায়। দোতরার টুং টাং শব্দ আর গানের মধুময় বাণী। কিছু বোঝা যায় কিছু বোঝা যায় না; শুধু ছাপ রেখে যায় হৃদয়ে।

ধরা যাক, রঙ্গিলা দেশের নাইয়া আমি নিজে। আর মায়া নদী মানে জীবন নদী। কিন্তু তারপরই তো খটকা লাগে। ‘অষ্ট ইঞ্চি নদীর দিক’, ‘খাউজ কাটা মাপের ঠিক’ কিংবা ‘চার আঙ্গুল যায়গা’ – কী এগুলো?

এর পরই লালন বলছেন-

ও নাইয়া রে, সেই না নদীর হুমার চোটে
পাড় ভাঙ্গিয়া পানি ছোটে
কত শত সাধের বাগান গেল রে ভাসিয়া;
ও কতো সাধুজনা ভেসে ফিরে রে...
ফিরে সে মায়া নদী দিয়া

তুমি বেহুইশারী পাড়ি দিলে রে
মালামাল সব যাবে হারাইয়া।।
রঙ্গিলা দেশের নাইয়া
মায়া নদী কেমনে যাবি বাইয়া।

বুঝলাম এ নদী বড়ো ভয়াবহ নদী। পারাপারে অসতর্ক হলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়াটাই নিয়তি। কেননা – ‘সেই না নদীর হুমার চোটে / পাড় ভাঙ্গিয়া পানি ছোটে / কত শত সাধের বাগান গেল রে ভাসিয়া’। তার মানে আমিই প্রথম নই, আমার মতো আছে অনেকেই, যারা ভুল করে অসাবধানতাবশত নদী-নীরে খুইয়েছে নিজেদের। আর তাই ‘বেহুইশারী’ অর্থাৎ হুশিয়ার না হয়ে _ অজ্ঞানে অসাবধানে এ নদী পাড়ি দিলে সব ‘মালামাল’ খোয়া যাবে। কারণ,

...এই না নদীর আঁকেবাঁকে
কত কুমির ওঠে ঝাঁকে ঝাঁকে
বাগে পেলে ফেলিবে যে খাইয়া
তুমি বিবেক হলুদ গায়ে মেখে গো
কেন যাও মায়া নদী দিয়া।।

বিবেক হলুদ! তার মানে কি বিচারবুদ্ধি? যে একটিমাত্র কারণেই মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তার মানে 'মায়া নদী' কি রিপুর নদী? মায়া নদী কি ইন্দ্রিয়-নদী? এই ভাবনাতাড়িত ও দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থা থেকে কিছুটা আলোর রেখা পাওয়া যায় পরের চরণগুলো শুনে -

ও নাইয়া রে, এই না নদীর পিছল ঘাট
ছয় রমণী ধইরাছে ঠাট
তাদের রূপ দেখিয়া যাইও না ভুলিয়া
রূপ দেখিয়া ভুইলা গেলে রে
মরবি তুই হাবুডুবু খাইয়া।।

‘ছয় রমণী’ কি ছয়টি রিপু?

১. কাম - যৌন সঙ্গকামনা, রিরংসা, যৌনক্ষুধা। (Sexual urge)
২. ক্রোধ - রাগ, উত্তেজনার বশীভূত হওয়া। (Anger)
৩. লোভ - লালসা । (Cupidity)
৪. মোহ - মায়া, বিভ্রম । (Illusion)
৫. মদ - অহংকার, গর্ব, আত্মগৌরব। (Arrogance)
৬. মাৎসর্য - পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভালো দেখতে না পারা। (Envy)

এবার আবছা আবছা কিছু বোঝা যাচ্ছে যেন। যেন মনে হচ্ছে, মায়া নদী আসলে এই মানব দেহ। একটু অসাবধান হলেই যা 'বিবেক' নামক বিবেচনাবোধ পরিত্যাগ করে রিপুর তাড়নায় ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে লিপ্ত হবে এবং মরবে 'হাবুডুবু খাইয়া'।

সুতরাং 'মায়া নদী' পার হতে গেলে 'বিবেক হলুদ' গায়ে মেখে 'ছয় রমণীর' তথা ষড় রিপুর আহ্বান উপেক্ষা করে চলতে হবে - এমনই কি বলতে চাইছেন লালন?

জানিনা। হয়তো এর আরো গভীর কোনো অর্থ আছে। তা থাক। আপাতত শুনতেই ভালো লাগছে। একবার নয়, দুইবার নয়, বহুবার। একটানা। নিরবিচ্ছন্ন নীরবতায়। আর বাসুদেব বাউলের দোতারার টুং টাং তার দরদী কণ্ঠের সাথে মিশে ছাপ রেখে যাচ্ছে হৃদয়ে।

পোস্টটি যিনি লিখেছেন : ডি মুন





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৬

ঋতো আহমেদ বলেছেন: বাহ দারুণতো

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

চন্দ্রনিবাস বলেছেন: ভালো লাগলো।

"ও নাইয়া রে, অষ্ট ইঞ্চি নদীর দিক
খাউজ কাটা মাপের ঠিক
চার আঙ্গুল যায়গা পাড়ি দাওনা।"

কেন জানি মনে হচ্ছে, এইখানে সাধনপদ্ধতি বা শরীরে সাধনার স্থানজাতীয় কিছু বিষয়কে প্রকাশ করা হইছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.