নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে পড়ি এবং নিজের ক্ষুদ্রতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা স্বীকার করি। নিজেকে বুদ্ধিজীবী ভাবি না। ঐ বয়সটা পার করে এসেছি।

ব্লগার_প্রান্ত

Ashraful Alam Khan Pranto

ব্লগার_প্রান্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্যতার চোরাবালি

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৪১



প্রচলিত বিশ্বাস একজন পুরুষকে কাঁদতে দেখতে চায় না। কিন্তু রাতের নির্জনে ছ'তলার ছাদে ঠিকই কাঁদে তুহিন। কখনো চিৎকারও করতে চায় নিশির অন্ধকারে। তবে, সামাজিক শিষ্টাচার জিওভাকে ভারী করে রাখে।
তুহিনের দুঃখ অনেকদিনের পুরোনো। আটাশ বছরের ছোট্ট জীবনটিতে, অব্যক্ত দুঃখের চক্র তাকে প্রতিনিয়ত শূন্যতার চোরাবালিতে ডুবিয়ে নিচ্ছে। কাউকে সে দুঃখ বোঝানো যায় না। কেউ তার বেদনার কথা শুনে হাসতে লজ্জা পায় না।
কেননা, প্রচলিত বিশ্বাস এও বলে যে, একজন পুরুষকে একজন নারী অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে দুঃখ দিতে পারে না।

আর পাঁচজনের মতোই অনলাইনে তুলতুলির সাথে পরিচয় হয় তুহিনের। ব্যাপারটা বন্ধুত্বে গড়ায়, সবশেষে মুঠোফোনে ভালোবাসা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তুহিন আবিষ্কার করে তুলতুলি তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। শৈশব, কৈশোর সম্পূর্ণ নারী সঙ্গ ছাড়া লালিত পালিত হওয়ায়, প্রেমের প্রথম দোলায় গা ভাসিয়ে দেয় তুহিন। তুলতুলি মেয়েটিও মন্দ নয়। কিন্তু সেই শুরুর সমস্যাটি, তুহিনকে বন্দী করে রাখে, তুলতুলির পুতুল সুতোয়।

তুহিন তুলতুলিকে ভালোবাসে। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে সে আবিষ্কার করে, তুলতুলি তাকে সন্দেহ করে। চোখে চোখে রাখে। ভালোই লাগতো সেই খুনসুটি। তবে, সদ্য ভার্সিটি ভর্তি হওয়ায়, অন্য মেয়ে বন্ধুদের সাথে তুহিনের সখ্যতার অশ্লীল কল্পনাও সে করে। যদিও, বাস্তবতা এই যে,তুলতুলি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে তুহিনের মাঝারি ধরনের আন্তরিকতার সম্পর্কও নেই। কিন্তু তুলতুলি স্রস্টাকে যেমনটি বিশ্বাস করে, তেমনি বিশ্বাস করে, সে দেখতে ভালো না বিধায়, তুহিন তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। তুহিন যদি জাহান্নামেও যায়, তারপরও তুলতুলির খুদেবার্তার জবাব দুমিনিটের মাঝে দেয়া লাগে। তুহিন যেহেতু ফেরেশতা নয়, তাই একসময় গভীর বিতৃষ্ণা নিয়ে সম্পর্কটি ভেঙে দিতে চায় সে।
তুলতুলি কাঁদে। গালি দেয়। আত্নহত্যার হুমকি দেয়। তুহিন নরম মনের মানুষ, একসময় সব মিটিয়ে নেয়।
অমন অনেকবার হয়। তুলতুলি নিজের রূপহীনতার অলীক দৈন্যতায় ভোগে। যদিও তুহিন মনে করে, তুলতুলি দেখতে শুনতে ভালোই।

নিজের পূর্ণ যৌবন বিশ্ববিদ্যালয়ে, লিঙ্গ সংবেদনশীলতায় কাটায় তুহিন। মেয়ে বন্ধু বানানোর ব্যাপারটি তুলতুলি আদতে ঘৃণা করে। তুহিনের দেহ এবং আত্মার উপর তুলতুলি পৈতৃক অধিকার অনুভব করে। কখনো তীব্র বিবাদ হয়, মিটমাট হয়।
এর মধ্যে একদিন তুলতুলি সত্যি সত্যিই কয়েকটি ঘুমের বড়ি খেয়ে নেয়। সে যাত্রায় সুস্থও হয়।

তুহিন সবকিছু স্বাভাবিক করতে চায়, এদিকে তুলতুলির অবিশ্বাস দৃঢ় হয়। তুহিন শুধু তার, সে আর কাউকে ভাগ বসাতে দিবেনা। কখনো তুহিনের বন্ধুকে গোয়েন্দা নিয়োগ দেয়া, বা সহপাঠী মেয়েদের বিরক্ত করা তুলতুলির নিত্যকার দায়িত্ব। তাদের ভালোবাসা ক্যাম্পাসে চলমান হাসির নাটক যেন। তুহিন অপমানিত বোধ করে। সবার হাসিঠাট্টার ভিড়ে, তাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করে শুধু তার বাবা-মা। তুলতুলির আত্নহত্যার প্রবণতা, তাদের ভাবনায় তালগোল পাকিয়ে দেয়।

তুহিন ফেসবুক টুইটার চালানোর কথা আর কল্পনাও করে না। তুলতুলির পৃথিবীতে একাকী অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকে সে। পাঠ্য-অপাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠায় একান্তে মনোনিবেশ করে। সত্যি বলতে, যৌবনের ফুল মুকুলেই ধ্বংস হয়, তাও তুহিন আপত্তি করেনা। সাত পুরুষ ভদ্রলোক হিসেবে বেঁচে থাকার ফলে, তুহিনের রক্ত বলে, হয়তো তুলতুলিই সঠিক। একটু বেশি ভালোবাসাটা হয়তো দোষের কিছু নয়।
এভাবেই অবর্ণনীয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যায়, তুহিনের জীবন।
(২য় পর্ব)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৪৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।
কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪১

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: সহমত

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৩২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ঠিক আছে চলুক, সাথে আছি।

যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটু বলি,
একটা দৃশ্য বর্ণনা করতে করতে হঠাৎ করে কেটে দেওয়াটা ঠিক নয়। যেহেতু ধারাবাহিক কাজেই যতটা সম্ভব প্রতিটি দৃশ্যের পারিপার্শ্বিকতাকে ধরে এগোনোই সমীচীন বলে আমার বিশ্বাস।
বিষয়টি আরও একটু সহজ করে বলল, "তুহিন তুলতুলিকে ভালোবাসে। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে সে আবিষ্কার করে তুলতুলি তাকে সন্দেহ করে।" এখানে এই অবিশ্বাসের প্রসঙ্গটি আনাটা দরকার ছিল।পাঠক কিসের ভিত্তিতে বুঝবে যে তুলতুলে তুহিনকে সন্দেহ করছে।
একই ভাবে একটা অপরিচিত নম্বরে মুঠোফোনে পরিচয়, নারীকণ্ঠ, তা থেকে টুকটাক কথোপকথন, একে অপরের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া, পরে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসায় রূপান্তর। ক্রমশ সম্পর্কের ভিতরে ঢোকা। দুজন দুজনকে নিয়ে মনের ফানুস উড়ানো বা স্বপ্নের ছবি দেখা। একে অপরের দেখার জন্য ছটফট করতে থাকা। ইত্যবসরে তুহিনের ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন। আমার দৃষ্টিতে এইভাবে স্টেপ বাই স্টেপ এগোলে দৃশ্যপটের বুনোট আরো জমজমাট হতো।

আর একটা কথা, তুহিন ভার্সিটির পড়ুয়া অথচ 28 বছর; বয়সটা একটু বেশি হলো নয়কি? এক্ষেত্রে আর্থিক দুরবস্থার কারণে মাজা 4/5 বছর ব্রেক ঘটেছে পড়াশোনা করতে পারেনি অথবা বয়স কমিয়ে 21/22 এ আনায় সঙ্গত।

যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভেচ্ছা প্রিয় ছোট ভাই প্রান্তকে।


২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা , খেয়াল করে পড়েছেন

১ম পর্ব আসলে তুহিনের প্রেমের শুরুটা নিয়ে । অর্থাৎ তারবয়স ২৮ বছর এই ধারণাটা বর্তমানের।
২য়ত তাদের পরিচয় অপরিচিত নাম্বারে নয় অনলাইনে। আজকাল মিসকল বা রং নাম্বারে কারো মন পাওয়া যায়না। যদিও সেটি চেষ্টা করে দেখিনি, হাহাহা
দৃশ্য বর্ণনার ধারণায় একমত। আমার মাথায় থাকা দৃশ্য সহজে কলমে আসে না :)
সুন্দর মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৪২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: অতিরিক্ত পজেসিভনেস, সে ছেলেরই হোক আর মেয়েরই হোক........যে কোনও সম্পর্কের জন্যই ভয়াবহ। এই বয়সেই পুরুষের যন্ত্রণা সম্পর্কে ভালোই অভিজ্ঞতা সন্চয় করেছেন দেখা যাচ্ছে! ভালো!! =p~

ব্লগার পদাতিক চৌধুরি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন, তাই সেইদিকে আর গেলাম না। ভালো শুরু হয়েছে.....চলুক! :)

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৫৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। এ ব্যাপারগুলো সবার কপালে জোটেনা সত্য। কিন্তু যে বেচারার কপালে জোটে তার কপালটাই মরুভূমি হয়ে যায় :(
আমার এক পরিচিত লোকের জীবন দেখেই লিখছি, বাকিটা কল্পনা :)
ভালো থাকুন আবার আসবেন।

৪| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আচরণ হিসেবে পুরুষের কান্নাকে অনেকেই ঠাট্টা-উপহাস করেন।
তারা বলেন, অশ্রু হলো মেয়েলি, প্রশ্রয়পূর্ণ ও অতিনাটকীয় বিষয়।
এটা অনুমান করা কঠিন নয় যে এ ধারণা
পুরুষতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
কান্নায় দুঃখ উপশম হয়।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০২

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আপনার সাথে একমত,
সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
ধন্যবাদ নিবেন।

৫| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: তুহিন তুলতুলিকে ভালোবাসুক। এই ভালোবাসা দীর্ঘজীবি হোক।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৬

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: তুহিন তুলতুলি কাল্পনিক চরিত্র, তাদেরকে সুখে শান্তিতে রাখতে ইচ্ছে করছে। দেখা যাক কি হয়। ধন্যবাদ।

৬| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভাইরে এমনিতে যন্ত্রণার শেষ নাই এখন। আবার গল্পে যন্ত্রণা । পিউর ভালোবাসার গল্প চাই।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: হাহাহা।
ধন্যবাদ ভাই, সত্যি বলতে দু:খই সত্য।

৭| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫২

শের শায়রী বলেছেন: অতিরিক্ত ভালোবাসা আবার অত্যাচারের নামান্তর। এই মাইয়া গুলা লাইফ হেল বানাইয়া দেয়। দেখি পরের পর্বে কোন দিকে টার্ন করান :)

২৯ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৪

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ শের ভাই।
আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করি। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।
আগামী দুই পর্বে শেষ করার সংকল্প রাখি। আশা করি পাশে পাবো আপনাকে :)

৮| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০০

রূপম রিজওয়ান বলেছেন: কাল রাতে লগইন না হয়ে লেখাটা পড়ে তুলতুলি চরিত্রটিকে একরকম মনে হয়েছিল,আজ কমেন্ট করার আগে দ্বিতীয়বার পড়ে কিছুটা ভিন্নরকম মনে হয়েছে। "শৈশব,কৈশোর সম্পূর্ণ নারী সঙ্গ ছাড়া লালিত পালিত হওয়ায়,প্রেমের প্রথম দোলায় গা ভাসিয়ে দেয় তুহিন" তথ্যটিকে তুলতুলির আচরণের কারণ বিশ্লেষণে খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। তুলতুলি হয়তো দূরদর্শী এবং সতর্ক,তার আচরণের যৌক্তিকতা রয়েছে;কিন্তু এটাও ঠিক যে তার ওভার-পজেসিভনেস তুহিনের জন্য যথেষ্টই যন্ত্রণাদায়ক। তাছাড়া,যে জন্যই হোক,'বিশ্বাস' জিনিসটার অভাব থাকলে শেষমেশ সম্পর্কটা খুব একটা সুখকর হয় না,প্রবল ভালোবাসাও বৃথা যায়-অনেক সফল মানুষদের জীবনেও এমনটা দেখা যায়।

আপনার লেখার ভঙ্গি খুব সুন্দর এবং বলিষ্ঠ। শুভকামনা জানবেন।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ রূপম, আপনার মন্তব্যটি আমাকে অনুপ্রেরণা দিলো।
আমি আপনার সাথে একমত। বিশ্বাসই মানুষকে সুন্দর সময়ের দিকে নিয়ে যায়। ওভার-পজেসিভনেস একটি যুগলের জন্য কেমন হতে পারে, সেটাই চিত্রায়িত করার চেষ্টা করেছি। আপনি বেশ দায়িত্ব নিয়ে পড়ে মন্তব্য করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।

আমিও একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আপনার তথ্য বহুল লেখাগুলো দারুণ লাগলো। আপনি যে সময় নিয়মিত লিখতেন, তখন ব্লগে বিরতি দিয়েছিলাম। তাই আপনার সাথে পরিচয় নেই।
আপনি নিয়মিত লিখুন ভাইয়া, শিক্ষামূলক লেখা সবার দারুণ লাগে। আপনার জন্যও অনেক শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.