নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চন্দ্রবিনদু

চন্দ্রবিনদু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধানমন্ত্রী সরে গেলেই তো সব‘ল্যাঠা’ চুকে যায়!

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৩০

আওয়ামী মহাজোট সরকার যে গতি ও ক্ষিপ্রতার

সঙ্গে জাতিকে ধাইয়ে বেড়াচ্ছে তার

সঙ্গে দৌড়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরাও হেরে যাবেন।

বিগত মাত্র কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ ও

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই

ধাইয়ে বেড়ানোটা শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর

টেলিফোন নাটকের পর থেকে। বেগম

খালেদা জিয়াকে সংলাপের ‘দাওয়াত’ দেয়ার

পরই আবারও চরম ফ্যাসিস্ট মনোভাবের

ন্যক্কারজনক উন্মোচন ঘটিয়েছে সরকার।

সারা দেশে শুরু হয়েছে গণগ্রেফতারের অভিযান।

এর প্রতিবাদে শুধু নয়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়

ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ার

কারণেও বিরোধী দলকে হরতালের

কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়েছে। দুই দফায় ৬০

ঘণ্টার হরতালের পর ১৮ দলীয় জোট ১০ নভেম্বর

সকাল থেকে প্রথমে ৭২ ঘণ্টার হরতাল পালনের

ডাক দিয়েছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়েই হঠাত্

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার

করেছে সরকার। সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা ও

অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ ৮ নভেম্বর বিএনপির তিন

শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম

কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম

মিয়াকে জেলখানায় ঢুকিয়েছে। গভীর

রাতে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনের

সামনে থেকে গ্রেফতার

করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল

আউয়াল মিন্টু এবং খালেদা জিয়ার বিশেষ

সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে। উল্লেখ্য,

এফবিসিসিআইয়ের যে প্রতিনিধি দলটি দুই

নেত্রীর মধ্যে সংলাপের

ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন,

সেই দলে আবদুল আউয়াল মিন্টুও ছিলেন। জনাব

মিনটু জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর

সঙ্গে সাক্ষাত্কালে তাদের

কী আলোচনা হয়েছে সে সম্পর্কে খালেদা জিয়াকে অবহিত

করতেই তিনি তার বাসভবনে গিয়েছিলেন। কিন্তু

বের হতে না হতেই তাকে গ্রেফতার

করেছে সাদা পোশাকের লোকজন।

সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত

পুলিশ হানা দিয়েছে বিএনপির এক ডজনের

বেশি নেতার বাসায়। সাবেক স্পিকার ব্যরিস্টার

জমিরউদ্দিন সরকার ও ঢাকার সাবেক মেয়র

সাদেক হোসেন খোকাসহ কয়েকজনের বাসভবন

ঘিরে রেখেছে সারা রাত। ওদিকে বিএনপির

চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনের

চারদিকেও সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাহিনীর

অবস্থান ও তত্পরতা ভীতি-আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

সরকারিভাবে গ্রেফতার বা গৃহবন্দি করার

কথা বলা না হলেও বিএনপিসহ

কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকেই

ভেতরে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

ওদিকে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত

করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন,

প্রয়োজনে বিরোধী দলের নেত্রীকেও গ্রেফতার

করা হবে। এভাবে সব মিলিয়েই

বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, সরকার না বললেও কার্যত

তিনি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। সাদা পোশাকের

লোকজন ও পুলিশের এই

তত্পরতা চলেছে গোটা দেশজুড়েই।

বিরোধী দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের

নেতা-কর্মীরাও এখনও ধাওয়ার মুখে রয়েছেন।

অনেককে গ্রেফতার করে নির্যাতন

চালানো হচ্ছে, অনেকে আবার গ্রেফতার

এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

একযোগে পাল্লা দিয়ে হুমকি দিয়েছেন

ক্ষমতাসীনরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ

হাসিনা থেকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পর্যন্ত

এমন কারও নাম বলা যাবে না,

বিরোধী দলকে যারা ভয় না দেখিয়েছেন।

বিভিন্ন সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়াকে ‘খুনি’

হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তো বেগম

খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধীদের পরিণতি বরণ

করার জন্য প্রস্তুত হওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। সহজ

কথায় যার অর্থ, খালেদা জিয়াকে তারা ফাঁসির

মঞ্চে ওঠানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো, ঘটনা প্রবাহের

কোনো পর্যায়েই সমঝোতায় আসার নাম

করেননি তারা। প্রধানমন্ত্রী বরং কলের গানের

সেই ভাঙা রেকর্ডের মতো বার বার তার

টেলিফোন করার এবং ‘দাওয়াত’ দেয়ার

কেচ্ছা শুনিয়ে বেড়াচ্ছেন।

মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আজব

একটি ঘোষণা শুনিয়ে জনগণকে তাজ্জবও

করেছেন। গত ৯ নভেম্বর ওলামা সম্মেলনের

নামে আয়োজিত আওয়ামী হুজুরদের এক

সমাবেশে শেখ হাসিনা বলে বসেছেন, হরতালের

কারণে নিরীহ মানুষের মৃত্যু এবং জনগণের কষ্ট

নাকি তার সহ্য হচ্ছে না। এজন্যই

তিনি নাকি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান

না বরং প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তেও

তিনি রাজি আছেন! মুখে বললেও প্রধানমন্ত্রীর

কর্মকাণ্ডে কিন্তু তেমন ইঙ্গিত

পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তিনি শুধু কথিত

সর্বদলীয় সরকার গঠনের

মাধ্যমে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের

প্রস্তুতি নিতেই শুরু করেননি, বিরোধী দল

যাতে নির্বাচনে আসতে এবং বাধাহীনভাবে তত্পরতা চালাতে না পারে সে ব্যাপারেও

একের পর এক সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন।

বিএনপির পাঁচ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের

পাশাপাশি বেগম

খালেদা জিয়াকে অঘোষিতভাবে গৃহবন্দি করার

এবং দেশজুড়ে দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের

অভিযান চালানোর মতো কর্মকাণ্ডকে নিশ্চয়ই

সমঝোতামুখী চেষ্টা বলা যায় না। মুখের কথায়ও

পিছিয়ে থাকছেন না তারা।

প্রধানমন্ত্রী নিজে একদিকে বেগম

খালেদা জিয়াকে ‘খুনি’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন,

অন্যদিকে তার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও দলের

নেতারা বিরোধী নেত্রীকে গ্রেফতার করার

এবং মানুষ হত্যার দায়ে হুকুমের আসামি বানানোর

হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের

একজন বলেছেন, হরতাল-আন্দোলন বন্ধ

না করলে বিরোধী দলের কাউকেই

বাইরে থাকতে দেয়া হবে না— অর্থাত্ সব

নেতাকেই গ্রেফতার করা হবে। আরেকজন, বন ও

পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আবার লোভ

দেখাতে গিয়ে বলেছেন, হরতাল প্রত্যাহার

করলে গ্রেফতার করা নেতাদেরও সরকার

ছেড়ে দেবে—যার অর্থ, অভিযোগ এবং মামলার

সবই আসলে বানোয়াট, নতি স্বীকার করানোর

এবং ক্ষমতাসীনদের ছক অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ

নিতে বাধ্য করার জন্যই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের

গ্রেফতার

এবং খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করা হয়েছে।

বোঝাই যাচ্ছে,

যে কোনোভাবে একতরফা নির্বাচন

করতে চাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা, যাতে আবারও

তারাই ক্ষমতায় আসতে পারেন।

ওদিকে নতি স্বীকার করার পরিবর্তে ১৮ দলীয়

জোটও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। শীর্ষ নেতাদের

গ্রেফতার এবং খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করার

প্রতিবাদে ৭২ ঘণ্টার হরতালকে বাড়িয়ে ৮৪

ঘণ্টার করা হয়েছে। জোটের

নেতারা জানিয়েছেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ

সরকারের দাবি না মানা হলে হরতালের

পাশাপাশি অবরোধ এবং গণকারফিউ ধরনের

অতি কঠোর কর্মসূচিও দেয়া হবে। অচল

করে ফেলা হবে সরকারকে। বিরোধী দলগুলোর

দিক থেকে এমন প্রতিক্রিয়াই অবশ্য স্বাভাবিক।

কারণ, শেখ হাসিনার সরকার প্রথম থেকেই

যেভাবে দমন-নির্যাতন চালিয়ে এসেছে, তার

ফলে বিরোধী দলের পিঠ আসলে অনেক আগেই

দেয়ালে ঠেকে গেছে। তা সত্ত্বেও বেগম

খালেদা জিয়া এতদিন যথেষ্ট

নমনীয়তা দেখিয়েছেন। সাম্প্রতিক ৬০ ও ৮৪

ঘণ্টার হরতালের আগে পর্যন্ত

বলতে গেলে কোনো আন্দোলনই

করেনি বিরোধী দল। অন্যদিকে সরকার শুধু দমন-

নির্যাতন ও গ্রেফতারের অভিযানই চালাচ্ছে না,

বিরোধী দলের সঙ্গে প্রতারণাও করছে।

প্রধানমন্ত্রীর বহুল আলোচিত টেলিফোন

নাটকের পুনরাবৃত্তিতে যাওয়ার

পরিবর্তে বলা দরকার, ক্ষমতাসীনদের দিক

থেকে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায়

পৌঁছানোর কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের জন্য

খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব ও রূপরেখা পেশ

করেছেন সেটাও মানেননি তারা। সব

মিলিয়ে তারা বরং বুঝিয়ে দিয়েছেন, আবারও

ক্ষমতায় আসার জন্য নিজেদের

পরিকল্পনা অনুযায়ী কথিত সর্বদলীয় সরকারের

অধীনেই নির্বাচন আয়োজন করা হবে।

সে উদ্দেশ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ ১০ নভেম্বর

থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির পদক্ষেপ

নিয়েছে। ১৮ দলীয় জোটকেও তাই নির্বাচন

চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়েছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য

কর্তব্য যেখানে ছিল বিরোধী দলের

সঙ্গে সমঝোতা ও সংলাপের উদ্যোগ নেয়া,

ক্ষমতাসীনরা সেখানে নতুন একটি নাটক মঞ্চায়ন

করেছেন। গত ১১ নভেম্বর মহাজোট সরকারের

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর

কাছে ঘটা করে তাদের পদত্যাগপত্র

জমা দিয়েছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময়

থেকে বিশেষ কারণে আলোচিত স্থানীয় সরকার

প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আইন

প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামসহ জনা পাঁচেক

প্রতিমন্ত্রী এ সময় ‘কদমবুচি’ও করেছেন—

প্রধানমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে তার ‘দোয়া’

চেয়েছেন। এমন এক সময়ে পদত্যাগের এই নাটক

সাজানো হয়েছে যখন দেশজুড়ে চলছিল

বিরোধী দলের ৮৪ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল।

ফলে নাটকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুঝতে সাধারণ

মানুষেরও অসুবিধে হয়নি। চেষ্টায়

ত্রুটি না থাকলেও ক্ষমতাসীনরা অবশ্য হরতালের

দিক থেকে জনগণের

দৃষ্টি সরিয়ে দিতে বা হরতালকে ব্যর্থ

করতে পারেননি। নাটকটি মঞ্চায়ন

করতে গিয়ে তারাই বরং ফেঁসে গেছেন। মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার কারণ

জানাতে গিয়ে বলা হয়েছে,

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন যে সর্বদলীয়

সরকারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন সে সরকার

গঠনের প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্যই

তারা পদত্যাগ করেছেন। অর্থাত্

তারা প্রধানমন্ত্রীর হুকুম তামিল করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাই বলে সবার পদত্যাগপত্র

রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন না। কারণ, তাদের

মধ্যে কয়েকজন তার সর্বদলীয়

সরকারে নিযুক্তি পাবেন। যারা বাদ পড়বেন

তাদেরগুলোই প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির

কাছে পাঠিয়ে দেবেন। উল্লেখ্য, সর্বদলীয়

সরকারে আওয়ামী লীগের ১০ জন এবং অন্য

দলগুলোর ১০ জনকে মন্ত্রী বানানোর

কথা রয়েছে।

এদিকে সুচিন্তিত পরিকল্পনার

ভিত্তিতে পদত্যাগের নাটক মঞ্চায়ন করা হলেও

প্রশ্ন উঠেছে সংবিধানের ‘আলোকে’। কারণ,

পঞ্চদশ সংশোধনীর

মাধ্যমে চাপিয়ে দেয়া সংবিধানের ৫৮

অনুচ্ছেদের এক-এর ‘ক’ উপ-

অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত

অন্য কোন মন্ত্রীর পদ শূন্য হবে—

যদি তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য

প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।’

এর ব্যাখ্যায় সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,

যেহেতু সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের

নির্দেশনা অন্য কোনো অনুচ্ছেদের মাধ্যমে খর্ব

বা রহিত করা হয়নি, সেহেতু অন্য

কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগের ব্যাপারে ৫৮

অনুচ্ছেদের এক-এর ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদই প্রাধান্য

পাবে এবং কার্যকর হবে। আর

সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র

জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা গৃহীত

হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। অর্থাত্ সংবিধান

অনুযায়ী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রিত্ব

হারিয়েছেন। অন্যদিকে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার

পরও যথারীতি অফিস করেছেন মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীরা। শুধু তা-ই নয়, এ বিষয়ে ‘জ্ঞান’

বিতরণ করতে গিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও

রেখেছেন তারা। যেমন সংবিধানের সুস্পষ্ট

নির্দেশনাকে দিব্যি পাশ

কাটিয়ে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেছেন, মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীরা নাকি ‘সংবিধান অনুযায়ীই’

পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ১২ নভেম্বর

তিনি আরও বলেছেন, পদত্যাগপত্র গৃহীত

না হওয়া পর্যন্ত তারা যার যার পদে বহাল

থাকতে এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছ

থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত

দায়িত্বও পালন করতে পারবেন। অন্যদিকে একই

দিন সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের

মুখে ‘থতমত’ খেয়ে ‘আইনের মানুষ’

এবং আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ

বলেছেন, পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার

বিষয়টি ‘সংবিধান অনুযায়ী’ হয়নি। সহজ কথায়

কথাটার অর্থ, ইনু সাহেবরা সংবিধান লঙ্ঘন

করেছেন।

এদিকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের

মতো করে ব্যাখ্যা হাজির করলেও বিশেষজ্ঞদের

সুস্পষ্ট অভিমত হলো, সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের

এক-এর ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদের নির্দেশনায়

কোনো অস্পষ্টতা যেমন নেই, তেমনি নেই

কোনো অপব্যাখ্যারও সুযোগ।

সুতরাং পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদ ‘শূন্য’ হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী কখন পদত্যাগপত্রগুলো রাষ্ট্রপতির

কাছে পেশ করবেন সেটা তার বিষয়। কিন্তু এই

বিলম্বের সুযোগ নিয়ে মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীরা নিজেদের পদে বহাল থাকতে,

গাড়িতে ও বাড়িতে জাতীয় পতাকা ওড়াতে,

সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ

করতে কিংবা দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন

না। যে কোনো ব্যাখ্যায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড

এবং সুযোগ-সুবিধা ভোগ

করা বরং হবে সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। সিনিয়র

আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতে, এর

মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রদোহিতার অপরাধও

করেছেন। কারণ, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত

করা একটি বিধানে সংবিধানের

লঙ্ঘনকে রাষ্ট্রদোহিতার অপরাধ

হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কথা শুধু এটুকুই নয়।

কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দিলেও

ক্ষমতাসীনরা কিন্তু আজও পর্যন্ত

দেখাতে পারেননি, প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত

সর্বদলীয় সরকারের বিধান সংবিধানের ঠিক কোন

অনুচ্ছেদ বা উপ-অনুচ্ছেদে রয়েছে। অর্থাত্

সর্বদলীয় সরকারের ব্যাপারেও তারা সংবিধান

লঙ্ঘনই করে চলেছেন। অর্থাত্ মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীদের দিয়ে পদত্যাগ নাটক মঞ্চায়ন

করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনরা আসলে সংবিধান

পরিপন্থী অবস্থানে চলে গেছেন। ‘বাপের

সম্পত্তি’ মনে করেন বলেই নিজেদের ইচ্ছা ও

সুবিধা অনুযায়ী সংবিধানের ব্যাখ্যা হাজির

করে চলেছেন তারা। উদ্দেশ্যও গোপন

থাকছে না তাদের। সে উদ্দেশ্যের

মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনার

নেতৃত্বে সংবিধানবহির্ভূত এমন একটি সর্বদলীয়

সরকার গঠন করা, যার মাধ্যমে লোক

দেখানো নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায়

আসা যাবে।

অমন আশা তারা করতেই পারেন। অন্যদিকে কঠিন

সত্য হলো, তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

করা সহজে সম্ভব হবে না। কারণ, বিভিন্ন জনমত

জরিপের রিপোর্টের পাশাপাশি পরপর দুটি ৬০

ঘণ্টার এবং একটি ৮৪ ঘণ্টার হরতালের মধ্য

দিয়ে জনমতের যে প্রকাশ ঘটেছে তা কিন্তু অন্য

রকম ইঙ্গিতই দিয়েছে। ওদিকে জাতিসংঘের

পাশাপাশি রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন,

ফ্রান্স ও গণচীনের মতো শক্তিধর দেশগুলোও। এই

তালিকায় সবশেষে ১১ নভেম্বর যুক্ত

হয়েছে ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতও। সবার পক্ষ থেকেই

জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা চায়

বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও

নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উদ্দেশ্যে ন্যূনতম

সততা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল সবার

পরামর্শ ও আহ্বানের প্রতি সম্মান

দেখিয়ে বিষয়টি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার

সঙ্গে সংলাপে বসা। তাকে আরও একবার

‘দাওয়াত’ দেয়া। কিন্তু গণতন্ত্রসম্মত সে পথের

ধারে-কাছেও যাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বরং প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন চালানোর

এবং গ্রেফতার করার ও মিথ্যা মামলা চাপানোর

পাশাপাশি একতরফা নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েই

এগিয়ে চলেছেন। বলা হচ্ছে, তাদের চাওয়াটাই

শেষ কথা হতে পারে না। কারণ, ১৮ দলীয় জোট

তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে জাতিসংঘ

এবং ‘বন্ধুরাষ্ট্র’সহ শক্তিধর দেশগুলো শুধু নয়,

জনগণও সবকিছু দেখছে। সুতরাং এতগুলো পক্ষ ও

শক্তিকে ধোঁকা দিয়ে এবং সংবিধান লঙ্ঘন

করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে একতরফা নির্বাচন

করা এবং সে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায়

আসা বা ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়া মোটেই সম্ভব

হওয়ার কথা নয়। একথাও বলা হচ্ছে,

একতরফা নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে মন্ত্রী-

প্রতিমন্ত্রীদের দিয়ে পদত্যাগের নাটক মঞ্চায়ন

করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শুধু সংবিধানই লঙ্ঘন

করেননি, পুরোপুরি ফেঁসেও গেছেন। তাই

বলে সময় অবশ্য একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। সততার

সঙ্গে চাইলে এখনও তিনি সংবিধান ও

গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসতে পারেন। নিজের

দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রিত্ব

ছেড়ে দিয়েও জনগণকে ‘চমক’ দেখাতে পারেন

শেখ হাসিনা। কারণ, সব সঙ্কটের

মূলে আসলে তিনিই রয়েছেন।

সে কারণে প্রধানমন্ত্রী সরে গেলে সব

‘ল্যাঠা’ও চুকে যেতে পারে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.