নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চন্দ্রবিনদু

চন্দ্রবিনদু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বজিৎ হত্যার পোস্টমর্টেম ও আওয়ামীদের বানিজ্য??

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৩৯

কী ঘটেছিল সেদিন

সময় সকাল ৯টা।

একজনকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করতে গিয়ে বাসা থেকে বের

হন পুরান ঢাকার

দর্জি ব্যবসায়ী বিশ্বজিত্। হঠাত্ ধর ধর

শব্দ। প্রাণভয়ে দৌড় দিয়ে আশ্রয় নিলেন

পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া ডেন্টাল

ক্লিনিকে। তখনও কে জানত, এখানেই

ঘটবে সেই মর্মন্তুদ, হৃদয়বিদারক, নৃশংস

ঘটনা? ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ

কর্মসূচি চলাকালে ৯ ডিসেম্বর সকাল

পৌনে ৯টার দিকে পুরান ঢাকার

বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে ছাত্রলীগ

আর বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর বিশ্বজিত্

দাসকে রড-লাঠি আর চাইনিজ কুড়াল

দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ যেন

২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবরের পুনরাবৃত্তি!

রড, লাঠির

আঘাতে এবং পরে কুপিয়ে প্রকাশ্য

দিবালোকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়

২৪ বছর বয়সের এক টগবগে যুবককে। বাঁচার

জন্য ‘আমি হিন্দু’ পরিচয় দিয়েও

রক্ষা পাননি বিশ্বজিত্ দাস। কারণ,

আক্রমণকারীরা যে সেই লগি-

বৈঠাধারীদের উত্তরসূরি। তাই

তো মানবিকতা ভুলে পৈশাচিকতার

উন্মাদনায় মেতে উঠে ছাত্রলীগের

অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। তার

আর্তচিত্কারে আকাশ-বাতাস

ভারী হয়ে উঠলেও এতটুকু দয়ার উদ্রেক

হয়নি পাষণ্ড খুনি ছাত্রলীগ

ক্যাডারদের অন্তরে। যে কোনো দিন

রাজনীতির ধারে-কাছেও ছিল না,

তাকেই ‘শিবিরকর্মী’

সন্দেহে বলি হতে হলো।

রক্তভেজা শরীরে স্যার সলিমুল্লাহ

মেডিকেল কলেজ

হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।

শিবিরকর্মী সন্দেহে সেখানে তার

চিকিত্সায় চরম অবহেলা করা হয়। এক

পর্যায়ে চিরতরে নিভে যায়

বিশ্বজিতের জীবন প্রদীপ।



মিডিয়া কী বলে

বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ড সারাদেশের

বিবেকবান মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়ার

মতো একটি ঘটনা।

টিভি সংবাদে অথবা সামাজিক

যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যারা এই

নির্মম হত্যাকাণ্ডের ভিডিও

ছবি দেখেছেন তাদের অনেকেরই দীর্ঘ

দিন পর্যন্ত দুঃস্বপ্ন দেখারই কথা। এমন

নির্মম ও আলোড়ন

সৃষ্টিকারী ঘটনা নিয়ে সরকারি মদতপুষ্ট

মিডিয়াগুলো নির্জলা মিথ্যাচারে মেতে উঠে।

তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঘটনার

সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে।

ঘটনার বিবরণে তারা উল্লেখ

করে ছাত্রশিবিরের মিছিল থেকেই

বিশ্বজিতের ওপর হামলা করা হয়েছে।

অতএব এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবির জড়িত।

কিন্তু অন্যান্য মিডিয়ার

কল্যাণে গোটা জাতি প্রত্যক্ষ

করেছে যে, অবরোধবিরোধী এক সশস্ত্র

মিছিল থেকেই বিশ্বজিতের ওপর

হামলা করা হয়। বিশ্বজিেক হত্যায়

যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ

করেছে তাদের অনেককেই

অবরোধবিরোধী ওই মিছিলের প্রথম

সারিতে দেখা গেছে। ফলে আপাতত এ

পদ্ধতিতে শিবিরকে দায়ী করতে না পেরে তারা ভিন্ন

পন্থা অবলম্বন করতে শুরু করে।

‘হামলাকারীরা ছাত্রলীগের

মধ্যে অনুপ্রবেশকারী শিবিরকর্মী’

হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রচার

ও প্রকাশ করতে থাকে ওই মিডিয়াগুলো।

হামলাকারীদের আত্মীয়-স্বজনদের

কেউ কখনও মাদরাসায়

পড়ালেখা করেছে কিনা,

ইসলামী ব্যাংক বা এ ধরনের

কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কিনা,

জামায়াতের সঙ্গে কারও দূরতম সম্পর্ক

আছে কিনা—এসব খুঁজতে ব্যস্ত

হয়ে পড়ে এক শ্রেণীর মিডিয়া। এ

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শিবিরের

সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে এমন

কোনো চেষ্টা নেই যা তারা করেনি।

ঘটনার সঙ্গে শিবিরের অদ্ভুত সম্পর্ক

আবিষ্কার করতে ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক

আমাদের অর্থনীতি ‘মৃত্যু নিশ্চিত

করে শিবির’ শিরোনামে প্রতিবেদন

প্রকাশ করে তারা এক্ষেত্রে একধাপ

এগিয়ে থাকার চেষ্টা করে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘হামলার

টার্গেট বিশ্বজিত্ না হলেও একটি বড়

ধরনের ঘটনা ঘটানোর মিশন

নিয়ে শিবিরকর্মীরা ছাত্রলীগের

মিছিলে ঢুকেছিল। এ সময়

আশপাশে দর্শকের মতো অনেক

শিবিরকর্মী পূর্বপরিকল্পিতভাবে দাঁড়ানো ছিল।

তারা আহত বিশ্বজিেক

পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল

হাসপাতালে নিতে না দিয়ে দূরবর্তী স্যার

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

হাসপাতালে পাঠায়।

সেখানে যেতে যেতেই

রক্তক্ষরণে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন

বিশ্বজিত্। সূত্র আরও জানায়, আগের

রাতেই শিবির পুরান ঢাকা এলাকায়

একটি বৈঠকে এ ধরনের

একটি ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করে।’

এভাবে কিছু টিভি চ্যানেল ও দৈনিক

পত্রিকা প্রায় প্রতিদিনই

কোনো না কোনোভাবে শিবিরকে জড়িয়ে সংবাদ

প্রচার ও প্রকাশ করতে থাকে।



সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যা বলেন

নির্মম এ হত্যাকাণ্ড

নিয়ে দোষারোপের

রাজনীতিতে মেতে ওঠেন সরকার ও

আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা।

তাদের একজনের বক্তব্য

নিচে তুলে ধরছি। ১২ ডিসেম্বর

দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের

সঙ্গে আলাপকালে পরিবেশ ও

বনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড.

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বজিতের

হত্যাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী নয়,

ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীরাই

তাকে হত্যা করেছে। সরকারের

কাছে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য

রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে তাদের চিহ্নিত

করে গ্রেফতার করার জন্য সরকারের

সর্বোচ্চ মহল থেকে আইন-

শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ

দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

প্রক্রিয়া যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন

জামায়াত-শিবির চক্র

এবং বিএনপি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য

হয়ে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। তারেক-

কোকোর দুর্নীতির বিচার যখন

গণদাবিতে পরিণত হয়েছে তখন ১৮ দলীয়

জোট জনগণের জানমালের ওপর আঘাত

করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।

বিএনপি লাশের রাজনীতি করার জন্য

বিশ্বজিতের মতো সাধারণ

মানুষকে দুষ্কতকারী লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করেছে।’

তিনি হামলাকারীদের একজনের নাম

উল্লেখ করে বলেন, সে আগে শিবির

করত, আরেকজনের পিতা মাদরাসায়

শিক্ষকতা করেন, আরেকজনের বড়ভাই

ছাত্রশিবির করত এবং আরেকজন

পূর্বে ছাত্রদল করত বলে উল্লেখ করেন।

এভাবে তিনি হত্যাকারীদের

সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংযুক্ত থাকা ও

ছাত্রলীগকে আড়াল করার

চেষ্টা করেন। প্রায়

সবগুলো টিভি চ্যানেল, দৈনিক ও

অনলাইন পত্রিকায় ফলাও করে তার বক্তব্য

প্রকাশ ও প্রচার হতে থাকে।

ছাত্রশিবিরের বক্তব্য

ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে এমন বর্বর

হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি এবং ঘটনার

সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা খোঁজার

অপচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে সব

মিডিয়ায় একটি সংবাদ

বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সংবাদ

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মিডিয়ার

সুবাদে বিশ্বজিত্ হত্যার সঙ্গে জড়িত

ছাত্রলীগ নেতাদের সারাদেশের

মানুষ যখন চিনে ফেলেছে, তখন কিছু

মিডিয়া একটি স্পর্শকাতর

বিষয়ে সত্যকে পাশ

কাটিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরকে জড়ানোর

চেষ্টা করছে। বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের

সঙ্গে ছাত্রলীগের

সংশ্লিষ্টতা যেখানে প্রমাণিত,

সেখানে উদ্ভট

কাহিনী সাজিয়ে টেনে-

হিঁচড়ে শিবিরের যোগসূত্র খোঁজার

চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু কিছু মিডিয়ায়

বিশ্বজিত্ হত্যার

আসামি হিসেবে গ্রেফতারকৃত

দুজনকে শিবিরের সদস্য আবার কখনও

‘শিবিরের সাথী’ উল্লেখ করা হয়েছে,

যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তথ্য। সরকারের দমন-

নিপীড়ন ও অগণতান্ত্রিক আচরণের

ফলে যেখানে শিবিরের

নেতাকর্মীদের অফিস,

বাসা বা রাজপথ কোথাও এতটুকু

নিরাপত্তা নেই,

সেখানে ছাত্রলীগের

অবরোধবিরোধী মিছিলের

সামনে কীভাবে শিবির

থাকতে পারে? লাইমলাইটে আসার জন্য

বিকৃত মানসিকতা থেকেই কিছু

মিডিয়া এ ধরনের বানোয়াট সংবাদ

প্রচার করছে বলেই আমাদের ধারণা।

বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তারই

একটি বাস্তব প্রমাণ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের

কর্তাব্যক্তিরা যখন বিশ্বজিত্

হত্যকাণ্ডের তদন্ত চলছে বলে বক্তব্য

দিচ্ছেন তখন তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই

ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে বিভিন্ন

মিডিয়া ন্যক্কারজনকভাবে অপপ্রচার

করছে যা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। সংবাদ

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,

‘আমরা ইতোপূর্বে এ হত্যাকাণ্ডের

নিন্দা জ্ঞাপন করেছি এবং এর

সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে চিহ্নিত

করে আইনের আওতায়

নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান

করারও দাবি জানিয়েছি।’



প্রকৃত খুনিদের মুখোশ উন্মোচন

১৩ ডিসেম্বর ’১২ বৃহস্পতিবার দৈনিক

কালের কণ্ঠ ‘খুনিদের

সঙ্গে মিছিলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়

নেতা’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ

করে। রিপোর্টে বিশ্বজিত্ দাস

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৮ ছাত্রলীগ

কর্মীর ছবিসহ পরিচয় তুলে ধরা হয়।

হামলাকারীরা হলো : ১. মশিউর রহমান

সুমন, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক, ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় কমিটি; ২. ইমদাদুল হক, জগন্নাথ

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স দর্শন

বিভাগের ছাত্র; ৩. মামুন,

জবি মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম

ব্যাচের ছাত্র; ৪. মাহফুজুর রহমান নাহিদ,

জবি মাস্টার্স বাংলা বিভাগের

ছাত্র; ৫. সৈকত, জবি সমাজবিজ্ঞান

বিভাগের ২০০৮-০৯ ব্যাচের ছাত্র. ৬.

পাভেল, জবি অর্থনীতি বিভাগ

দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র; ৭. রফিকুল ইসলাম

শাকিল, জবি ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত

কর্মী; ৮. তাহসিন, জবি মনোবিজ্ঞান

বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র।

মশিউর রহমান সুমনের

নেতৃত্বে হামলাকারীদের চাপাতি ও

ধারালো অস্ত্রসহ মিছিলের

সম্মুখভাগেই দেখা যায় ছবিতে।

পরে অন্য মিডিয়াগুলোও খুনের

সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের জড়িত

থাকার বিষয়ে সংবাদ

ছাপাতে থাকে। হামলাকারীদের

পরিচয় জানার পর জবি কর্তৃপক্ষ ঘটনার

সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় ৫

ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

করে। মাহফুজুর রহমান নাহিদ ও ইমদাদুল

হকের সনদ বাতিল এবং রফিকুল ইসলাম

শাকিল, মীর মো. নূরে আলম, ওবাইদুল

কাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

করা হয়। (সূত্র : ১৩ ডিসেম্বর যায়যায়দিন,

ইনকিলাব, আজকালের খবর,

ইন্ডিপেনডেন্ট, ভোরের ডাক,

ডেইলি সান, মানবজমিন, ইত্তেফাক)।



খুনিদের বিচার দাবিতে সামাজিক

আন্দোলন

সম্ভবত এমন কোনো টিভি চ্যানেল

পাওয়া যাবে না যারা এই নির্মম

হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য সম্প্রচার করেনি।

টিভির পর্দায় খুনিদের

চেহারা স্পষ্টভাবেই প্রদর্শিত হয়। পুরান

ঢাকার সর্বস্তরের মানুষ

তাদেরকে ছাত্রলীগের নেতা-

কর্মী হিসেবে চিনলেও পুলিশ তাদের

বিরুদ্ধে মামলা করেনি। পুলিশ কিছু

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির

বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের

করে কোনো রকম দায়িত্ব পালনের

চেষ্টা করে। কিন্তু

ধীরে ধীরে বিভিন্ন মিডিয়ায় আসল

ঘটনা প্রকাশ হতে থাকলে ঘটনার বিচার

দাবিতে সোচ্চার হন পুরান ঢাকার

জনগণ। তারা বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের

সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির

দাবিতে পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ

মিছিল করে। ঘাতকদের গ্রেফতার ও

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির

দাবিতে থানা ঘেরাও

এবং জেলা প্রশাসক বরাবর

স্মারকলিপিও পেশ করে ‘পুরান

ঢাকাবাসী’। বিশ্বজিতের পরিবারের

পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস

ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন

করে খুনিদের বিচার দাবি করা হয়।

তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ও ইউটিউবে খুনিদের

নাম-পরিচয়সহ ছবি প্রচার করে বিচার ও

দৃষ্টান্তমূলক

শাস্তি দাবি করা হতে থাকে।



খুনি ছাত্রলীগ নেতার বাবার সরল

স্বীকারোক্তি

বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম

হোতা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের

পটুয়াখালীর ফায়ার সার্ভিস এলাকার

বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ।

অভিযান পরিচালনা করার সময়

শাকিলের বাবা পটুয়াখালী কর

কমিশনের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী আনসার

মিয়া জানান, তিনি টিভিতে তার

ছেলেকে চাপাতি হাতে বিশ্বজিেক

কোপাতে দেখেছেন। কিন্তু এরপর

থেকেই শাকিলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন

বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। (সূত্র : দৈনিক

যায়যায়দিন)



শুরু হলো লুকোচুরি খেলা

প্রকৃত ঘটনা ও হামলাকারী ছাত্রলীগ

কর্মীদের পরিচয় বিভিন্ন

গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরও সরকার ও

পুলিশের মধ্যে চলে লুকোচুরি খেলা।

দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ১৩ ডিসেম্বর

২০১২ ‘কী জবাব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’

শিরোনামে প্রকাশিত

রিপোর্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার

(ডিবি) মনিরুল ইসলামের বক্তব্য

তুলে ধরা হয়। সাংবাদিকদের

সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন

খান আলমগীর বলেন, বিশ্বজিত্ হত্যার

সঙ্গে জড়িত আটজনকে গ্রেফতার

করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের ৪৮

ঘণ্টা পরও

আটজনকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়নি।

অন্যদিকে একই দিন দুপুর পৌনে ১টায়

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার

(ডিবি) মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের

বলেন, বিশ্বজিত্ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত

কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

তবে পুলিশ ছয়জনকে শনাক্ত করেছে।

এই দু’জন কর্তাব্যক্তির

পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের পর অনেকের

মনে প্রশ্ন জাগে, বিশ্বজিত্

হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নিয়ে কেন এই

লুকোচুরি খেলা? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও

পুলিশের

পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিশ্বজিত্

হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের গ্রেফতার

নিয়ে গোটা জাতিও

অন্ধকারে নিপতিত হয়।



পরবর্তী সময়ে সরকারি পদক্ষেপ

দৈনিক আজকালের খবর ১৩ ডিসেম্বর ’১২

‘বিশ্বজিতের ৩ খুনি গ্রেফতার, অন্যরাও

পুলিশি জালে’ শিরোনামে রিপোর্ট

করে। এতে বলা হয়, আশুলিয়ার গাজীরচর

এলাকার একটি বাসা থেকে ছাত্রলীগ

নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও

সৈয়দ ওবায়দুল কাদের

তাহসিনকে গ্রেফতার

করেছে ডিবি পুলিশ।

দৈনিক ভোরের ডাক ১৩ ডিসেম্বর ’১২

‘বিশ্বজিতের ঘাতক ওবায়দুল, নাহিদ,

শাকিল গ্রেফতার’

শিরোনামে রিপোর্ট করে। ঞযব

ওহফবঢ়বহফবহঃ ১৩ ডিসেম্বর ’১২ ‘two JNU

students arrested for Bishwajit killing.’

শিরোনামে নিউজ করে।

এভাবে প্রকৃত ঘটনা দিবালোকের

মতো স্পষ্ট হয়ে গেলে আর

ধামাচাপা দেয়ার সুযোগ না থাকায়

শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক খেলা।

হত্যা মামলাটি যখন নিম্ন

আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু

হবে তখনই বদলির আদেশ দেয়া হয়। ১৪ জুন

দ্রুত নিষ্পত্তির

কথা বলে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার

আদালতে ট্রান্সফার করা হয়। (সূত্র :

বাংলা নিউজ, ১৩ জুন-২০১২)

এর আগে ২ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের

২১ আসামির বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট

দাখিল করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ

জহুরুল হক। মামলার সাক্ষী সংখ্যা ছিল

৬০ জন। ৫ মার্চ বিশ্বজিত্ হত্যাকাণ্ডের ২

মাস ১৪ দিন পর ২১

জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট

দাখিল করা হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত

অভিযুক্তদের মধ্যে মাত্র ৮ জন

কারাগারে ছিলেন। বাকি ১৩ জন

আছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

চার্জশিটভুক্ত ২১ আসামি হলেন,

ছাত্রলীগ ক্যাডার শফিকুল ইসলাম

শাহীন, মাহফুজুর রহমান, এমদাদুল হক, জিএম

রাশেদুজ্জামান শাওন, এইচএম কিবরিয়া,

কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম, রাজন

তালুকদার, খন্দকার মোহাম্মদ ইউনুস আলী,

আজিজুল হক, তারিক বিন জোহর আলম,

গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, কায়দুল

হক তাহসীন, ইমরান হোসেন, আজিজুর

রহমান, মীর মোহাম্মদ নূরে আলম মিলন,

আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক

পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ

হোসেন।

জেল হাজতে থাকা ৮ জনের

মধ্যে শাকিল , নাহিদ, এমদাদ ও শাওন

সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

মামলার রায় ঘোষণা

অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বুধবার বহুল

আলোচিত বিশ্বজিত্ হত্যা মামলার রায়

ঘোষণা করা হয়েছে। রায়

পরবর্তী প্রথমআলোডটকম’র

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুরান ঢাকায়

দরজি দোকানি বিশ্বজিত্ দাস

হত্যা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর

মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ

দেয়া হয়েছে। বাকি ১৩

জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও

প্রত্যেককে ২০ হাজার

টাকা করে জরিমানার আদেশ

দিয়েছে আদালত।

আজ বুধবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের

দিকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-

এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায়

ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ড

পাওয়া ছাত্রলীগের আট কর্মী হলেন

রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মাহফুজুর

রহমান ওরফে নাহিদ, জিএম

রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, কাইয়ুম

মিয়া, ইমদাদুল হক ওরফে এমদাদ, সাইফুল

ইসলাম, রাজন তালুকদার ও নূরে আলম

ওরফে লিমন। তাদের মধ্যে রাজন

তালুকদার ও নূরে আলম পলাতক।

বাকি ছয়জন কারাগারে আছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পাওয়া ছাত্রলীগের বাকি ১৩

কর্মী হলেন এ এইচ এম কিবরিয়া, গোলাম

মোস্তফা, খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক

বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের,

ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল

আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক

পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ

হোসেন। এদের মধ্যে এসএম কিবরিয়া ও

গোলাম মোস্তফা কারাগারে আছেন।

বাকি ১১ জন পলাতক।

অবশেষে শিবিরকে জড়ানো গেল না

ধীরে ধীরে গোটা বিষয়টি দেশবাসীর

সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। খুনের

ঘটনায় জড়িত থাকায় যে ৮

জনকে গ্রেফতার করা হলো তারা সবাই

সরকারের সোনার ছেলে ছাত্রলীগের

নেতা। যে ২১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ

গঠন করা হলো তারাও ছাত্রলীগের

নেতাকর্মী। সর্বশেষ

যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ

এবং যে ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ও প্রত্যেককে ২০ হাজার

টাকা করে জরিমানার আদেশ

দেয়া হলো তাদের মধ্যেও শিবির নেই।

এভাবে শেষ পর্যন্ত কোথাও

খুঁজে পাওয়া গেল না ছাত্রশিবিরের

সংশ্লিষ্টতা। এ বর্বর ঘটনার

সঙ্গে শিবিরকে জড়ানোর জন্য

সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কত চেষ্টাই

না করলেন। মিডিয়ার সামনে গাল

ভরে গলাবাজিও করলেন প্রচুর। কিন্তু

শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টাই বৃথা গেল।

মিথ্যা প্রমাণিত হলো সরকারি মদতপুষ্ট

মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত অসংখ্য

প্রতিবেদন। বিশ্বজিত্

হত্যাকাণ্ডটি যতটা বর্বর ও নির্মম, ঠিক

ততটাই ঘৃণা পাওয়ার যোগ্য এর

সঙ্গে শিবিরকে জড়ানোর অপচেষ্টা।

লেখক: কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক,

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪৯

মোঃ শিলন রেজা বলেছেন: আমি মনে করি বিশ্বজিত যদি হিন্দু না হয়ে মুসলমান হতো। তবে নিশ্চিত তাকে শিবির বলে চালিয়ে দিতো। আর শিবির হত্যা জায়েয এবং পুন্যের কাজ।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:২৮

চন্দ্রবিনদু বলেছেন: কিভাবে জায়েজ হয় শিবির হত্যা???

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫

মুহাম্মদ তাইফ বলেছেন: নিকৃষ্ট একটা রাজনৈতিক দল আওয়ামীলিগ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.