নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাব্বির ধীর পায়ে হাটছে। ভাদ্র মাসের দুপুরে তেতে উঠা রোদে হাঁটতে যেয়ে ক্লান্ত হয়ে যায় সে । সকাল থেকে কলের পানি ছাড়া আর কিছু জুটেনি। ক্ষুধা সয়ে সয়ে একসময় খাওয়ার ইচ্ছাও মরে যায় তাঁর। সে এখন আর ক্ষুধা টের পাচ্ছে না । পাড়ার দোকানে বাকি বেড়ে যাওয়ায় দোকানদার সাফ জানিয়ে দিয়েছে আর বাকি দেওয়া যাবেনা। গত রাতে কৌটার তলায় মিইয়ে যাওয়া কিছু মুড়ি ঝেড়ে ঝুড়ে বের করে তাতে আহার সেরে শুয়ে পড়েছিলো।
গোপীবাগে একরুম সাবলেট নিয়ে থাকে সে। একটা এক্সপোর্ট কোম্পানিতে ইনচার্জ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল । ওভারটাইম মিলিয়ে বেতন যা পেতো তাতে তাঁর বেশ চলে যেতো। সাজেদাকে ঘরে তোলার স্বপ্নও দেখছিল দুজন। হঠাত চাকরিটা চলে যায় তাঁর। চাকরিতে জয়েন করার শুরুতেই ম্যানেজারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে যেতে হয় । সেই বিবাদ থেকেই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেয় এমডি। রগচটা হিসেবে তার একটা দুর্নাম আছে । শুধুমাত্র সাজেদা সামাল দিতে পারে তার বদস্বভাবটা। প্রচন্ড মেজাজ খারাপের সময় অদ্ভুত এক ভাললাগা দিয়ে সাজেদা তাকে বশ করে নেয় জাদুকরি মায়ায় যেন। হঠাত সাজেদার কথায় বুকের ভেতর তিরতির করে উঠে।
হাঁটতে গিয়ে খেয়াল করে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে পা দুটোও ভারি হয়ে আসছে । আর হাঁটা হয় না সাব্বিরের। শরীর অসাড় লাগছে। জিভ দিয়ে নীচের ঠোঁট চেটে গলা ভেজানোর চেষ্টা করে । রাস্তার পাশে বাড়ির গেটের কাছে ট্যাপ থেকে পানি ঝরছে ফোঁটা ফোঁটা। ঐ দিকে তাকিয়ে পানির তৃষ্ণা আরও বেড়ে যায় তাঁর। ট্যাপের পাশে ঝুঁকে দুই আজলা পানি দিয়ে ক্ষুধা তৃষ্ণা মেটানোর বৃথা চেষ্টা করে সে। এবার কলের পানিও মুখে বিস্বাদ লাগলো। ভাত খাওয়া হয়নি আজ দুইদিন । ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের মৌতাত গন্ধ নাকে লাগছে খুব ।
সাব্বির পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে। ময়লা কয়েকটা ভাংতি টাকা গুনে হতাশ মনে মানিব্যগ আগের জায়গায় রেখে দেয় । গতমাসের বেতনের টাকায় ঘর ভাড়াসহ নিজের প্রয়োজনীয় খরচ আর গ্রামে বাবার জন্য কিছু পাঠিয়ে টাকা শেস হয়ে গেছে। আজ মাসের ২০ তারিখ। কয়েকটা অফিসে আসা-যাওয়ার বাস আর রিকশা ভাড়াতেই বাকি টাকা শেষ হয়ে যায়।
এখন মতিঝিল গিয়েছিল একটা ফ্যাক্টরির হেড অফিসে ইন্টারভিউয়ের জন্য। তার অভিজ্ঞতা আর দক্ষতা দেখে এম ডি আশ্বাস দিয়েছেন ডাকবেন । তবে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কয় মাস সেটা পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। কঠিন বেকারত্বের হতাশায় সে অচল হয়ে যায় যেন। মতিঝিল থেকে পায়ে হেঁটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আসতে পারে সে।
পরবর্তী ট্রেন ছেড়ে যেতে দেরি হবে তাই জনমানুষ খুব কম। ষ্টেশনের ভেতর উঁচু পিলারের নীচে মাছি ভনভন একটা জায়গায় হাত দিয়ে ময়লা ধুলাবালি সরিয়ে বসে যায় সে। আশে পাশে দুটি নেড়ী কুকুর লেজ উঁচিয়ে তাকে গভির পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে যায়। দুটি পথ শিশু কাগজের ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে নিশ্চিন্তে তাকে পাশ কাটিয়ে যায়। ভর দুপুর রোদে সে ঠাই বসে এক জায়গায়।
মাথার উপরে সূর্যের তাপ নরম হয়ে দুপুরের আলো কমে আসছে । আবছায়ায় সাজেদার মুখটা মনে পড়ে খুব। কিছু টাকা জমিয়ে সাবলেট বাসা ছেড়ে নতুন একটি ফ্ল্যাট হবে দুজনের সেই সাথে সীমিত আয়ের রঙ্গিন সময়। সাজেদাও একটি বেসরকারি এনজিও তে ফিল্ড অফিসার হিসেবে চলনসই বেতনে চাকরি করছে। অফিসের কাজে সে এখন ঢাকার বাইরে। সাজেদাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চায়না । তাই তাকে জানায়নি চাকরি চলে যাওয়ার কথা।
সাব্বিরকে নিয়ে সাজেদার ভাবনার যেন শেষ হয়না। প্রতিদিন সকাল বিকাল মুঠোফোনে খোঁজ নেওয়া চাই তার। ঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো নাস্তা করে সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না রাস্তার পাশের দোকানে খোলা খাবার দিয়ে টিফিন করে? এমন কত রকমের প্রশ্ন থাকে প্রতিদিন । হাসি মুখে সব কিছু হ্যা বলে যায় সে। ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ করে সাব্বির । এই মুহূর্তে উপাদেয় খাবার ছাড়া আর কিছুই তাঁর মনে আসছেনা। সেগুন কাঠের ডাইনিং টেবিলটা হরেক পদের খাবার দিয়ে সাজানো । পাশে সাজেদা !!
হঠাত ষ্টেশনে হট্টগোল বেড়ে যায় । হকারের হাকডাক, মানুষের ব্যস্ততায় মুখর হয় ষ্টেশন । আলগোছে চোখ খোলে সাব্বির। অদূরে একটি ছায়া স্পষ্ট হতে থাকে । গোলাপি সালোয়ার কামিজে হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি মধুময় ছন্দ তোলে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায় সাজেদা। বাতাসে এলোমেলো চুলের গোছা হাত দিয়ে পেঁচিয়ে দ্রুত পায়ে সাব্বিরের কাছে এগিয়ে এসে উৎকণ্ঠিত সাজেদা বলে, " আমি তোমাকে কোথায় না খুঁজেছি "
সাব্বির ঠোঁটের কোণে খুশির ঝিলিক নিয়ে শুকনো গলায় বলে , "সত্যিই তুমি ?" ।
সাজেদার গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে নামে বলে " এভাবে এখানে বসে আছো, ফোন ধরছনা কেন ?"
সাব্বির কিছু বলে না । ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে তাকিয়েই থাকে।
সাজেদা হাতের উলটা পিঠে চোখ মুছে নিয়ে বলে "আর একটা কথাও না । চলো আমার সাথে"
ঈশ্বর তাদের এক আশ্চর্য ক্ষমতা দিয়ে পাঠিয়েছে যার নাম মমতা। তারা এক অপার মমতায় একে অপরের ছায়া হয়ে জীবনের বাকিটা পথ পাড়ি দিবে ।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:১৩
স্বপ্ন কুহক বলেছেন: সজিব নামেই লিখে শেষ । পরে সাজেদার সাথে সাব্বির নামটাই মানানসই লাগলো । তাই সজিব নামটি কয়েকটা জায়গায় থেকে যায় । আসলে গল্প লেখার সময় চরিত্রের নাম নিয়ে বিরাট সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
ধন্যবাদ ভুলটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ।
ভাল থাকবেন।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:২৬
বিজন রয় বলেছেন: ওহ!! আপনি পোস্ট দিলেন!! তাহলে আপনার সাথে কথা বলার আরও একটি অদৃশ্য জানালা পাওয়া গেল।
গল্পটি পড়লাম।
আমার ওখানে আপনার করা শেষ মন্তব্যটির উত্তর এখনো করিনি। গতকালই দেখেছি কয়েকবার।
আজ উত্তর দিব কোন এক সময়ে।
শুভকামনা রইল।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২
স্বপ্ন কুহক বলেছেন: পড়েছেন জেনে আনন্দ পেলাম ।
গল্পে মানব মানবীর অভিমান-অনুরাগ, সঙ্গম-অাসক্তি , অতলস্পর্শী প্রণয় কে এক সূতায় বেঁধে নাম দিতে চেয়েছি "মমতা" ।
মানব -মানবীর ভেতর যে মমত্ব বোধ বিরাজ করে সেটা আঁকড়ে দুটি নারী - পুরুষ হাত ধরে এক সাথে জীবন পার করে দেয়।
এটাই মানবিক জীবন।
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।
প্রানবন্ত।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩
স্বপ্ন কুহক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।
ভাল থাকবেন ।
৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন।
তবে একখান কথা- চলো আমার সাথে! এখঅনে শেষ হলেই বোধ করি ছোট গল্পের পূর্ণ স্বাদ টুকু রয়ে যেত।
শেষ হইয়াও হইল না শেষের আমেজ টুকু অনেক প্রশ্ন নিয়ে কৌতুহল তৈরি করতো।
যাক। সব শেষে লেখকই লেখার ভগবান
+++
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৪
স্বপ্ন কুহক বলেছেন: তা যা বলিয়াছেন জনাব সঠিক বলিয়াছেন ।
উপযুক্ত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করিবেন
৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:২২
অপ্রকাশিত কাব্য বলেছেন: বাহ্ চমৎকার
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:১৪
স্বপ্ন কুহক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।
৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:০৬
জাহিদুল হক শোভন বলেছেন: চলে। গল্প পড়ার সময় গল্পের ভিতর ডুব দিতে না পারলে আমার কেন যেন তৃপ্তি লাগে না। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।
১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০৯
স্বপ্ন কুহক বলেছেন: আপনিও খুব ভাল থাকবেন
শুভ কামনা।
৭| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩
বর্ণা বলেছেন: এর ই নাম ভালবাসা। আমার ব্লগ এ আসার নিমন্ত্রণ রইল।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫০
স্রাঞ্জি সে বলেছেন:
সজীব কে???