নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়েবাহুল্য-১ (চট্টগ্রাম থেকে)

০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১:২৫

বিয়ের কার্ড ও বিয়ের দাওয়াতের ধরণের দুইটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা বলবো আজকে।

আমাদের অনেক মহাগুরুত্বপূর্ণ খবর থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ছোটখাটো সব যোগাযোগ ও বার্তা লেনদেন হয় অনলাইনে। চাকরির প্রমোশন, পরীক্ষার রেজাল্ট, কারো জন্ম-মৃত্যু, ভিসা পাওয়া, রেসিডেন্সি পাওয়া, চাকরি পাওয়া, ব্যবসার প্রফিট, ইত্যাদি সবকিছুই মোবাইল কল, মেসেজ, ইমেইল বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাওয়া যায়।

তাহলে বিয়ের দাওয়াত ডিজিটাল/অনলাইন হতে সমস্যা কোথায়?

মোবাইল নাই দেশে কার কাছে? প্রধানমন্ত্রীর ঈদ বার্তার মেশিন-রেকর্ডেড কলও আসে দেশের সব মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছে! ইমেইলে, মেসেজে, বা কল করে যদি কাওকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হয়, তবে কি তাকে ফেলনা করা হয়?! অর্থ ও সময়ের যেই সেভিংস এখন অনলাইন ইনভাইটেশনের মাধ্যমে সম্ভব, সেটা কি আগে সম্ভব হতো?

দাওয়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা কি হতে পারে? আমরা কখনোই সেটা ভেবে দেখিনি বা সেটার প্রয়োগ করিনি। যখন মোবাইল ছিলো না, তখনো ল্যান্ডলাইন নাম্বার দেওয়া হতো কার্ডে- কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু কয়জন মেহমানই আক্কেল জ্ঞান করে নাম্বারে কল দিয়ে বলতোঃ- আমি ২ জন সাথে নিয়ে আসবো, কিংবা আমার ব্যস্ততা আছে তাই আসতে পারছি না।

অথচ যেকোন দাওয়াতের একমাত্র প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে- দাওয়াতটা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না; এবং কিভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে।
কর্পোরেট ও প্রফেশনাল ওয়ার্ল্ডে এটার একটা অফিশিয়াল নাম আছে- #RSVP; সহজ কথায়- কনফার্মেশন দেওয়া, আপনি দাওয়াতটা এক্সেপ্ট করছেন নাকি ক্যান্সেল করছেন। ক্যান্সেল করার মধ্যে অভদ্রতা বা খারাপ কিছু নাই!! বরং আপনার কথা বিবেচনা করে- হোস্ট যেই কষ্ট ও খরচ করবে, সেটা কমানোই আপনার মাহাত্ম্য ও বদান্যতা।

শুধু বিয়ে না, বাংলাদেশের প্রতিটা খাবার-দাবারের গণ-আয়োজনে খাবারের অপচয়টা বেশ লক্ষণীয়। অপচয় হওয়া খাবারের বেশিরভাগ ডাস্টবিনে বা জলে-স্থলে দূষণের কারণ না হলেও- যদি সেসব অন্য মানুষের পেটে যায়, সেটা কি কিছুতেই মানবিক? আপনার-আমার ফেলে দেওয়া বা নষ্ট করা খাবার অন্য মানুষ যদি খায়, তবে আমরা নিজেদের নিজেরা কতটা সম্মান দিচ্ছি?

মানুষকে অর্থনৈতিক, নৈতিক, পরিবেশগত, আইনগত কিংবা ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা শুনিয়ে অতি-সামাজিক গোয়ার্তুমি থেকে বিরত রাখা যায় না। যেসব বিষয়ে ট্র্যাডিশনাল হওয়া উচিত- সেসব বিষয়ে মানুষ অতি বিপ্লবী। আর যেসব বিষয়ে চেইঞ্জ আসা উচিত- সেসবে তারা অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। এরকম বৈপরীত্য যে জাতির মধ্যে যত বেশি দেখা যায়, সেই জাতি তত বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়।

Carbon footprint ও Water Footprint কে গুরুত্ব দেওয়ার মত জ্ঞান ও সচেতনতা আমাদের আশেপাশের মানুষের মধ্যে বিন্দুমাত্র নাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগব্যাধি, খাদ্য সংকট, যুদ্ধ, এবং সর্বোপরি বসবাসযোগ্য পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্বের সাথে আমাদের ছোটখাটো অভ্যাস ও সিদ্ধান্তগুলো চেইন রিয়েকশনের মত সম্পর্কিত।

ভেবেছিলাম, লেখার মাঝে বা শেষে কিছু ছবি এড করবো। নিজের কালেকশনে নেই কিছু; করলে ওয়েব ব্রাউজ করেই করতাম। কিন্তু করলাম না; তার বদলে কিছু লিখি। আমাদের দেশের বিয়েবাড়ি বা বিয়ের ক্লাবের যেখানে খাবার রান্না করা হয়, খাবার বেড়ে দেওয়া হয়, এবং খাবার টেবিল থেকে জিনিসপত্র ফেরত আনা হয়, সেখানে কয়জন নিজে কাজ করেছেন ও দেখেছেন- সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু দেখেশুনেও অনেকের মধ্যে পরিবর্তন আসেনি, আসছেনা, আসবে না। বিয়ের খানাপিনার আয়োজনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ খাবার সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়, পুরোটাই নালা-নর্দমা বা ডাস্টবিনে যায়, সেটার পরিমাণ অস্বাভাবিক রকমের বেশি। যারা এসব দেখেও না দেখার ভান করে, যারা এসব বছরের পর বছর হতে দেখেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না, তারা জীবনে নিজে বীজ থেকে গাছ গজিয়ে কতখানি খাদ্যদ্রব্য (সবজি, ফল, ইত্যাদি) উৎপাদন করেছে- সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৮:০২

শেরজা তপন বলেছেন: আপনি ভাল করে খবর নিয়ে দেখেন- ঢাকার কমিউনিটি সেন্টার বা হোটেলে যতগুলো অনুষ্ঠান হয় তাঁর উচ্ছিষ্ট খাবার বিক্রি হয়ে যায়। সেগুলো আবার দরিদ্র অতি দরিদ্র লোকের কাছে সাজিয়ে গুছিয়ে প্লেট হিসেবে বিক্রি হয়- সেখানে সস্তায় কাচ্চি বিরিয়ানি, জর্দা এমন কি বোরহানি ও মেলে।
গ্রাম মফস্বলে কিছু খাবার নষ্ট হয় সত্য, কিন্তু সেটার পরিমান খুব বেশী নয়। লক্ষ্য করবেন বিয়ে বাড়ির পেছনে বাবুর্চির আশেপাশে কিছু হত দরিদ্র মানুষ উচ্ছুষ্ট খাবার থেকে হাড়গোড় সহ অন্য কিছু আলাদা করে পোটলায় করে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা যদিও অমানবিক তবুও এসব খাবারের একটা হিল্লে তো হচ্ছে।
সব দেশ ও সমাজের একটা নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। আপনারা কর্পোরেট কালচারের সাথে অভ্যস্তরা 'ক্লিন কাট ও সুপার প্রফেশনালিজমে বিশ্বাসী হয়ে উঠছেন'। সবাইকে সেই দলে সামিল করতে চাচ্ছেন।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:০২

আবীর চৌধুরী বলেছেন: দম ফাটানো হাসি পেলো আপনার কথা শুনে (প্রচণ্ড রাগ হয়েছে সেটা তো আর বলা যাচ্ছে না)। আরএসপিভি শব্দটা অফিশিয়ালি ও কর্পোরেট ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বলা মানেই যে আমি কর্পোরেট কালচারের সাথে অভ্যস্ত- সেটা আগ বাড়িয়ে ধারণা করে নিয়েছেন দেখেই বুঝেছি- আপনি কতটা কুপমন্ডূক।

আমি আপাতত গ্রামে থাকি। বিদেশে চাকরি হারিয়ে দেশে চলে এসেছি। দেশে-বিদেশে বেশ কিছু ব্যতিক্রমধর্মী (ডাইভারসিফায়েড) সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশের যেকোন কালচার (কর্পোরেট বা ওয়েডিং) এর সাথে উন্নত/সভ্য দেশগুলোর রীতিনীতি ও গ্রোথের আকাশ-পাতাল তফাৎ। ভালো-মন্দ সবখানেই আছে; কিন্তু আমাদের মত নোংরা-অপার্থিবকে আঁকড়ে ধরে রাখার অসঙ্গতি ও আকুতি- আর কোন দেশে/জাতিতে দেখা যায় বলে আমি অন্তত দেখিনি, শুনিনি।

নিজের আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের বিয়েসহ প্রায় ৫০ এর অধিক বিয়েতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ, দায়িত্বপালন ও ব্যাক-এন্ডে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। শুধু অতিথি হিসেবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখিনি, গিফটের পয়সা উসুলের জন্য জোরসে পেটে ঠুসে খাবার ঢুকাইনি, অতিরিক্ত খাবার থেকে যাওয়ায় পলিথিন ভরে নিয়ে আসিনি, কিংবা খাবার শর্ট পরায় গালমন্দ করিনি।

এই সব বিয়ে বা আয়োজনেই বেঁচে যাওয়া খাবারের ক্ষেত্রে যা দেখেছি- তা হলো হোস্ট ও গেস্টরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়, যারা রান্নার কাজ করেছে ও ক্লাবের কাজের লোকেরা নিয়ে নেয়, কিংবা কোন এতিমখানা বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর বাইরেও এমন খাবার থাকে, যেটা বিয়ের রান্নার জায়গার আশেপাশে, নালায়, মাটির উপরে, নোংরা পাত্রে/ঝুড়িতে/বস্তায় পরে থাকে- যার অধিকাংশই মানুষের প্লেটের না খাওয়া, এঁটো করা, ফেলে দেওয়া খাবার। সেগুলো হয় পশুপাখি-কীটপতঙ্গের ভাগ্যে যায়; নতুবা হতদরিদ্র মানুষের পেটে যায়।

আমি কিছুতেই এই দেশের একটা সিঙ্গেল পিস মানুষও নোংরা কীটের মত জীবনযাপন করুক- সেটা চাই না। আপনাদের সাথে আমার হয়তো সেটাই তফাৎ! অন্যের মুখের এঁটো খাবার, অপরিচ্ছন্নভাবে সংরক্ষিত বাসি-নষ্ট খাবারকে পুনর্ব্যবহার করা, প্রক্রিয়াজাত করা, এবং পুনরায় "বিক্রি" (!!) করা- এসব কিভাবে দেশীয় ঐতিহ্য ও মানবিকতা হতে পারে- সেটা আমার মগজে ঢুকে না।

বাংলাদেশের (বিশেষত আমার বিভাগ/জেলা চট্টগ্রামের) বিয়ের আদ্যোপান্ত পুরোটাই অমানবিক, অপ্রাসঙ্গিক এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা। গোটা বিষয়টা পয়েন্ট আকারে লিখতে গেলে নতুন ব্লগ লেখা হয়ে যাবে; এক পর্বেও কুলোবে না। আমি মুলত এই ব্লগে- কিভাবে দাওয়াত দিলে ও কিভাবে দাওয়াতের রেসপন্স করলে- অর্থ, সময়, শক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও খাবার অপচয় কমানো যায়, সেটাই সামান্য ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিলাম।

সুস্থায়ী/টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, মিনিমালিস্ট জীবনযাপন, জিরো-ওয়েস্ট লাইফস্টাইল, সার্কুলার ইকোনমি, পরিবেশ দূষণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো- সবগুলো একই সুতোয় গাঁথা; এবং এগুলোর সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ছোট-বড় অসঙ্গতিগুলো পরিবর্তন খুবই জরুরি।

আমাদের দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে- বিশেষত মেয়েসন্তানের অভিভাবকেরা (কারণ মেয়েপক্ষই বিয়ের খরচ দেয়!!) যে কি পরিমাণ আর্থিক, মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যায়, সেটা শুধু যার হয়- সে ই বুঝে! করোনার পরে ঘরে ঘরে অর্থনৈতিক ও শারীরিক অশান্তি আরো বেড়েছে। এর মধ্যেও আমরা গদবাধা, অসুস্থ ও অযৌক্তিক অতি-সামাজিক রীতিনীতি আঁকড়ে পরে আছি। অনেকে এসবের সাফাই এখনো গাইছে- কারণ যতকিছুর যতই ক্ষতি হয়ে যাক না কেন- এইসবের কারণে অনেকে ফ্রি তে পেট ও পকেট ভরছে। এই বিনামূল্যে, বিনা বিনিয়োগে, কম পরিশ্রমে- অতি লাভ করতে গিয়েই গোটা জাতির বারোটা বেজে গিয়েছে অনেক আগেই।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪

নাহল তরকারি বলেছেন: আপনার কথা শুনে ক্ষিদে লেগে গেছে।

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:০৬

শেরজা তপন বলেছেন: আপনি কতটা কুপমন্ডূক!

কুপমন্ডূক শব্দের অর্থ হোল কুয়োর ব্যাঙ নয়কি? আপনি আমার জ্ঞান-গম্যি যোগ্যতাকে কোথায় নিয়ে ফেলেছেন -ধারনা আছে???
মানুষকে সম্মান করতে শিখুন- আপনার অতীব সৌভাগ্য যে যেচে গিয়ে আপনার পোষ্টে একমাত্র আমিই মন্তব্য করেছিলাম।
আমার ব্লগ বাড়িতে একটু ঢুঁ দিয়ে যাবেন- হয় কুপমন্ডূক-এর অর্থ আপনি জানেন না , না হয় এ শব্দ কোথায় সঠিকভাবে ব্যাবহার করতে হবে সেটা আপনার গুরুজনেরা শেখায় নি।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.