নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বুদ্বিজীবি

পাহাড়ের বালক

i am sample

পাহাড়ের বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আজম তিনি ১৯৭১ এ কার ভুমিকা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:২৮

ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আজম তিনি ১৯৭১ এ কার ভুমিকা নিয়ে সবার সাথে আমি একমত, বাংলাদেশে যে কজন রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক রয়েছে অধ্যাপক গোলাম আযম তার মধ্যে একজন। দেশের বিরাট একটি জনগোষ্টী ১৯৭১ সালে তার ও জামায়াতের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এমনকি তীব্রভাষায় আক্রমন করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ৭১ এর আগে ও পরে তিনি সমানভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

তার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল শক্ত ভিত্তির ওপর দাড়িয়েছে। এই দলের সাফল্য এসেছে ১৯৭১ সালের পরে। জামায়াত সংসদে আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে, জনগনের সাথে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলে পরিনত হয়েছে এমনকি ক্ষমতার অংশীদারও হয়েছে। ২০১৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমকে গ্রেফতারের আগে দৈনিক নয়াদিগন্তের পক্ষ থেকে তার একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। সেখানে তিনি তার রাজনৈতিক অবস্থানের ব্যাখা দিয়েছেন। তিনি নিজেই বলেছেন .. আমাদের শক্তি ও অবস্থান তখন কতুটুক ছিল? নির্বাচনে আমরা একটি আসনও পাইনি। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে শুধু বগুড়ায় একটি আসন পেয়েছিলাম। কেন্দ্রে কোনো আসন পাইনি। জামায়াতে ইসলামী তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে পারেনি।

অধ্যাপক গোলাম আযমের ১৯৭১ সালের আগের রাজনৈতিক অবস্থান ও পরে জামায়াতের উন্থানে তার ভুমিকা নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়। পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার সক্রিয় ভুমিকা থেকে তার বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের দিকটি ফুটে উঠে।


একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে ভাষা আন্দোলন থেকে আইয়ুববিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম দুই দফায় ডাকসুর নির্বাচিত জিএস ছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে তিনি স্মারকলিপি উপস্থাপন করেছিলেন। ’৭০-এর নির্বাচনের পর বিজয়ী রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরেরও দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি ও তার দল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন।

তাকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম কেন তিনি পাকিস্তানে পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। দীর্ঘ জবাবে বলেছিলেন “ আমরা ছিলাম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। দুনিয়ার কোথাও সাধারণত এমনটি হয়নি, মেজরিটি অংশ মাইনরিটি থেকে আলাদা হতে চায়। আলাদা তো হতে চায় যারা মাইনরিটি তারা। আমরা কোন দুঃখে আলাদা হতে যাবো? যেহেতু আমরা মেজরিটি তাই আমাদের দায়িত্ব ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পাকিস্তানে প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করা। আমরাই পাকিস্তানের আসল শাসক হবো। সে সুযোগ না নিয়ে আমরা কেন পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাবো? দ্বিতীয় কথা হলো, পশ্চিম পাকিস্তান ছিল ভারতের বাইরে। আর আমরা পূর্ব পাকিস্তান ছিলাম ভারতের পেটের ভেতরে। আমরা তো আলাদা হয়ে ভারতের আধিপত্য থেকে বাঁচতে পারব না। কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের দু’বার যুদ্ধ হয়েছে। সেই যুদ্ধে ভারত কিছুই করতে পারেনি এবং দু’বারই তারা পাকিস্তানের সাথে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৭১ সালে ভারত যখন যুদ্ধ লাগাল, তখন তারা জয়ী হলো এ জন্য যে, এখানে জনগণের কোনো সমর্থন পাকিস্তান পায়নি।
আওয়ামী লীগ যদি রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন করে যেত, তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারতাম। কিন্তু তারা ভারতে গিয়ে ইন্দিরার কাছে সাহায্য চাইল স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। ভারত তার কূটনৈতিক, সামরিক সব শক্তি ব্যবহার করল। এ পরিস্থিতিতে আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারিনি যে, ভারতের সাহায্য নিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারব। ভারত আমাদেরকে স্বাধীন করার উদ্দেশে সাহায্য করেনি। তারা তাদের স্বার্থের কারণে আমাদের সাহায্য করেছে। তাদের স্বার্থ ছিল তিনটা : প্রথমত, পূর্ব পাকিস্তানের নেতারা ভারতকে সুযোগ দিয়েছে পাকিস্তানকে ভাগ করে দুর্বল করার। চিরদুশমন পাকিস্তানকে দুর্বল করা গেল। দুইবার যুদ্ধ করে ভারত পরাজিত হয়েছে। এবার তারা তৃতীয়বার সুযোগ পেয়েছে তার প্রতিশোধ নেয়ার এবং তাকে ভাগ করে দুর্বল করার। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, যেহেতু বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে ভারতের পেটের ভেতরে সে জন্য তারা বাংলাদেশকে আলাদা করতে পারলে আমাদের ওপর তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। তৃতীয় স্বার্থ ছিল, তারা তাদের পণ্যের বাজারে পরিণত করবে এ অঞ্চলকে।
তাদের সেই তিনটা স্বার্থই উদ্ধার হয়েছে। তিনটা স্বার্থই পূরণ হয়েছে। আমরা এই আশঙ্কা করেই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারলাম না। আমাদের সেই আশঙ্কা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্যে পরিণত হয়েছে। আমরা সর্বক্ষেত্রে স্বাধীন নেই। আমরা এখন অনেকটাই ভারতের কুক্ষিগত। ভারত যা চায় আমরা সব দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের অধিকার কিছুই দিতে চায় না তারা। আর তাদের যা ইচ্ছা তা-ই তারা চায় এবং তা-ই তারা পায়। এ অবস্থা কোনো স্বাধীন মর্যাদাশীল দেশের জন্য কাম্য হতে পারে না। আমরা এই আশঙ্কা করেছিলাম এবং এই আশঙ্কার কারণেই ১৯৭১ সালে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান রাখার পক্ষে ছিলাম।”
অধ্যাপক গোলাম আযম তার এই অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তিনি তার ব্যাখায় শেষ পর্যন্ত অনঢ় ছিলেন। তার এই অবস্থান কতটা সঠিক বা গ্রহনযোগ্য তা ইতিহাসে মুল্যায়িত হবে। তবে ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকে সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে আতœমর্যাদা নিয়ে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাড়াতে পারছে কিনা তার সাথে এই অবস্থানের একটা তুলনামুলক বিশ্লেষন হতে পারে।


মুক্তিযুদ্ধের পর তৎকালীন সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে। তিনি এ সময় সৌদি আরব ও লন্ডনে অবস্থান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর পর থেকে তিনি দেশে অবস্থান করছিলেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তিনি নাগরিকত্ব ফিরে পান। স্বাধীন বাংলাদেশেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘ সময় জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি বৃহৎ ও সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন বিতর্ক এড়ানোর জন্য তিনিই প্রথম নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা প্রকাশ করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও জামায়াতে ইসলামী একসাথে আন্দোলন করেছে। এ ছাড়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন করেছে।


আমরা দেখছি ১৯৭১ সালে তার অবস্থান নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে বিতর্ক হলেও স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি অপরিহার্য এক রাজনৈতিক ব্যক্তিতে পরিনত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে সরকার গঠন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামীলীগ তার সমর্থনপ্রার্থী ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর শর্তহীন সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করেছিলো। আবার ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিএনপি বিরোধী আন্দোলনের সুফল হিসাবে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। রাজনীতিবিদ হিসাবে অধ্যাপক গোলাম আযমের বড় সাফল্য হচ্ছে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী ব্যালেন্সিং ফ্যাক্টরে পরিনত হয়েছে।

তিনি ২০০০ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন। বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের সর্ব্বোচ্চ ব্যক্তি নিজ থেকে সরে গেছেন এমন উদহারন এখনও সৃষ্টি হয়নি। একই ভাবে তিনি সম্ভবত প্রথম রাজনৈতিক নেতা যিনি উত্তরাধিকারকে নিজ দলে প্রতিষ্টিত করার চেষ্টা করেননি। বরং তার সন্তানরা সক্রিয় রাজনীতির বাইরে থেকেও সামাজিকভাবে প্রতিষ্টিত।

বর্তমান সরকার দ্বিতীয়বারের মতো ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনাল তাকে নব্বই বছরের কারাদন্ড দেন। কিন্তু এই বিচার নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন আছে। নব্বই ঊর্ধ্ব বয়সী একজন রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব নিঃসঙ্গভাবে কারাচিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন। রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিও একটি বিরল ঘটনা। স্বাভাবিকভাবে এই মৃত্যুও অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। এই বিচার ও কারাবন্দী রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু ইতিহাসে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে লেখা হবে।


একজন মানুষের মৃত্যুর পর তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। অধ্যাপক গোলাম আযমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন বারবার ইতিহাসে আলোচিত ও মূল্যায়িত হবে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫

আল-শাহ্‌রিয়ার বলেছেন: ভাই আজকে অনলাইন এক্তিভিস্ট ফোরামের উদ্যোগ দেখলাম আর জানাজার সম্প্রচারও দেখলাম, আর কিছুই বলতে চাই না।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৬

জামান শেখ বলেছেন: তাকে যতটা খারাপ ভাবে উপস্থাপন করছি আমরা, আমার মতে আসলে তিনি তা নন । তিনি শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা চাননি। একত্রে থেকে অধিকার চেয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় কিছু বিতর্কিত কাজ করেছিলেন। এজন্য তার অনুশোচনা করা উচিত ছিল। যাহোক মানবিক কারনে তার আত্তার মাগফিরাত কামনা করি।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

রাফা বলেছেন: মৃত্যুর পর কি ক্রিমিনাল.. সাধু হোয়ে যায়?
তাহোলে ফেরাউনের জন্য কি প্রার্থনা থাকবে?

৭১-র কুখ্যাত রাজাকারের পরিচয় একটাই -এটাই তার মুখ্য পরিচয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও চক্রান্ত করে গেছে এই নরপিশাচ।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫

সত্যের সন্ধানী এক যুবক বলেছেন: আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন।

৫| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৬

মামুন রশিদ বলেছেন: অধ্যাপক (দুই নাম্বারী করে নেয়া টাইটেল), ভাষাসৈনিক (একটা মানপত্র রিডিং পড়েছিল), আয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা (ইতিহাসকে আর কত ধর্ষন করা হবে!)

সিরাজের পতনের সময়েও মীরজাফরের অনেক অনুগামী ছিল । কিন্তু বাংলার ইতিহাস তাকে বেঈমান হিসেবেই জানে । গোআযমও বাঙালীর কাছে চিরবেঈমান রাজাকারলিডার হিসাবে বেঁচে থাকবে ।

৬| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভাশাসৈনিক,অদ্ধাপক একজন গোলাম আজম;উনার ব্যাতিত বাংলার িতিহাস অস্পম্পুরন

৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:২৫

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: রাফা বলেছেন:

মৃত্যুর পর কি ক্রিমিনাল.. সাধু হোয়ে যায়?
তাহোলে ফেরাউনের জন্য কি প্রার্থনা থাকবে?

৭১-র কুখ্যাত রাজাকারের পরিচয় একটাই -এটাই তার মুখ্য পরিচয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও চক্রান্ত করে গেছে এই নরপিশাচ।


সহমত!!!!!

৮| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০১

খেলাঘর বলেছেন:


হাউকাউ প্রলাপ; গো আজম জন্মগতভাবে জল্লাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.