নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

।।এস যুক্তির আঘাতে মুক্ত করি চেতনার জট।।

ক্ষুদ্র পরিসরের এই জীবনটাকে আমি ইচ্ছেমত উপভোগ করব। নিষিদ্ধ গলিতে প্রবেশ করে আমি শুদ্ধ হয়ে বের হব।।

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক

আমি স্বপ্নের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে রাজী নই, আমি জেগে থাকব স্বপ্নের সূর্যোদয় দেখার জন্য...........

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভোগবাদ (Epicurism) : সেকাল একাল

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩





গ্রিক দার্সনিক এপিকিরাস খ্রিস্টপূর্ব ৩৪১-২৭০ ভোগবাদ(epicurism) এর প্রবক্তা। সকল প্রকার সুখ ভোগ্য নয়। ব্যক্তিগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুখ নয় - মানসিক শান্তি লাভই মানব সমাজের অন্বিষ্ট হওয়া উচিত। এই মতবাদ অনুসারে মানুষের মৌল আকাঙ্ক্ষা যেহেতু সুখলাভ সেহেতু এ দর্শনের প্রধান কাজই হল দুঃখ পরিহার করে মানুষ কি করে অধিক সুখের সন্ধান পেতে পারে তা দেখিয়ে দেওয়া(উচ্চমাধ্যমিক বাংলা বইয়ের কোন একটি প্রবন্ধের পরে ভোগবাদকে এভাবেই সঙ্গায়িত করা হয়েছে)।



খ্যতনামা পদার্থবিদ রিচার্ড ফিনম্যনকে একবার বর্তমান বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কোনটি তা এক কথায় বলতে বলা হয়েছিল, তিনি উত্তর দিয়েছিলেন "আমাদের এই মহাবিশ্ব পরমানু দিয়ে তৈরি"। ডেমোক্রিটাস, লিউসিপ্পাসের পরমানু তত্বের ধারন করেই পরবর্তী দার্শনিকেরা এগিয়েছেন। এরকমই একজন দার্শনিক ছিলেন এপিকিউরাস। তিনি মনে করতেন আমাদের মহাবিশ্ব পরমানু এবং শুন্যতা নিয়ে। তিনি মনে করতেন, আমাদের চারপাশের সবকিছুই অস্তিত্ব পেয়েছে পরমানু এবং অসীমের স্বতপরিবর্তনশীল সংঘর্ষে যা দ্বারা সবকিছুই আবদ্ধ। এই মহাবিশ্বের শাসন করত প্রাকৃতিক নিয়ম এবং সম্ভাবন, কোন উদ্দেশ্য কিংবা পরিকল্পনা নয়। এবং মহাবিশ্বের সবাইই সুখী হতে পারে সাহস এবং স্থবিরতার ফলাফলকে গ্রহণ করার মাধ্যমে। এপিকিউরাসের কাছে ঈশ্বর কোন অতিপ্রাকৃত স্বত্তা ছিলেন না, ছিলেন এই বস্তুজগতের অংশ এবং ঈশ্বরেরা মানুষের কর্মকান্ড নিয়ে পুরোপুরিই অনাগ্রহী।



প্রাচীন অনেক জীবনদর্শনেই (ধর্ম) ভোগ বা যেকোন প্রকার আকাঙ্খাকেই ইহজাগতিক এবং পরলৈকিক ধ্বংসের কারন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রপক অনেক গল্প, উপদেশমুলক বানীতেই এর প্রমান মিলে। এর কারন বোধকরি, প্রাচীনকালের ভোগ্যপন্যের উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা। এমনকি উৎপাদনের সম্ভাবনাও ছিল খুবই কম। একারনেই সবার ভোগের অবাধ ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রন করার প্রয়োজন ছিল। এজন্যই বোধকরি নিয়ন্ত্রিত ভোগবাদকেই দেখি আমরা সর্বব্যপি।



ঈহুদী ধর্মের প্রামানিক দলিল তালমুদীয় মিসনাহ তে এপিকিউরিয়ানদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন উক্তি পাওয়া যায়-



All Israel has a share in the world to come, as Isaiah said: And all of your people who are righteous will merit eternity and inherit the land. And these are the people who do not merit the world to come: The ones who say that there is no resurrection of the dead, and those who deny the Torah is from the heavens, and Epicureans (‘Apikorsim’).





এমনকি এখন পর্যন্ত এপিকরস “apikoros”শব্দটি ঈহুদী বিশ্বাসে অবিশ্বাসী অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের ঈহুদী রচনায় এপিকিউরিজম বিরুদ্ধ রচনা খুজে পাওয়া যায়। বেনিদাহ প্রার্থনায়, যেটি ঈহুদীদের দৈনন্দিন প্রার্থনার অংশ, সেটিতে তারা বলে থাকে- "সকল অবিশ্বাসী (“apikoros”) তাৎক্ষনিক ভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করুক।"



ক্রিশ্চিয়ানিটিও ঈহুদী বিশ্বাসের পথই অনুসরন করে। ক্রিশ্চিয়ানিটির প্রাথমিক যুগে এপিকিউরাসকে "শুকর" নামে অভিহিত করে অনেক করিশ্চিয়ান মনিষীই। এ্যক্ট ১৭:১৬-১৮ তে আমরা দেখতে পাই-



“Now while Paul waited for them at Athens, his spirit was stirred in him, when he saw the city wholly given to idolatry. Therefore disputed he in the synagogue with the Jews, and with the devout persons, and in the market daily with them that met with him. Then certain philosophers of the Epicureans, and of the Stoicks, encountered him. And some said, What will this babbler say? other some, He seemeth to be a setter forth of strange gods.”





ইসলাম যে এপিকিউরিজম বন্ধুস্থানীয়, তা মোটেই বলা চলে না। কিছু মৌলিক বিষয় যেমন মৃত্যু এবং তদপরবর্তী জগৎ নিয়েই এপিকিউরিজম এবং ইসলামের দ্বন্দ। এমনকি এপিকিউরাসে কাছে পরলৌকিক জীবন অর্থহীন। তিনি লিখেছেন-



"আমাদের মৃত্যু কিছুই না এই বিশ্বাসে অভ্যস্থ হওয়া উচিত, ভাল এবং মন্দের সংবেদনশীলতা আমাদেরকে সুচিত করে, এবং মৃত্যু হল সকল ক্লেশ থেকে মুক্তি; তাই মৃত্যুকে চিনতে পারা আমাদেরকে বোধগোম্য আনন্দঘন মরনশীলতা উপহার দেয় যা অমরত্বের লিপ্সা কেড়ে নিয়ে অসীম জীবনীকালের দ্বারা সম্ভব নয়।"





ইসলামে যেখানে ভোগবাদী জীবন পরিত্যগ করেই আত্মিক শান্তি খুজতে বলা হয়েছে, সেখানে এপিকিউরাস পরজীবনকেই অস্বীকার করে বসে আছেন। মৃত্যুর পর দেহ ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু আত্মা থেকে যাবে ইহলৌকিক পাপ পুন্যের বিচারপ্রার্থী হয়ে।



৩৯১ খ্রিস্টাব্দে মানব ধর্মীয় ইতিহাসের সেই লজ্জাজনক ঘটনাটি ঘটে। ক্রিশ্চিয়ান ও পেগানদের দাঙ্গা যার ফলাফল প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরির ধ্বংস হয়, দার্শনিক হাইপেশিয়াকে হত্যা করা হয়। দ্বাদশ শতকের ক্রিশ্চিয়ানরা এই ধ্বংসযজ্ঞের পিছনে সপ্তম শতকের মুসলিক আক্রমনকে দেখাতে শুরু করে। খলিফা ওমরের একটি উক্তি-"এই বইগুলো যদি ঈশ্বরের দেয়া বইয়ের বেশি কিছুই না দিতে পারে তাহলে এগুলো অপ্রয়োজনীয়। আর যদি এগুলো ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে থাকে তবে এগুলো ক্ষতিকর। উভয় ক্ষেত্রেই এগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে।" এইউক্তি কাল্পনিক কিনা তা বিচারের ভার ঐতিহাসিকের। আরেক ব্যখ্যা এরকম যে, আলেক্জান্দ্রিয়ার লাইব্রেরির কিছু বই সংরক্ষিত হয়েছিল যা খলিফা ওমরের আক্রমনে নষ্ট হয়।



এপিকিউরাসের দর্শনের সাথে উপরের ঘটনার সম্পর্ক? হাইপেশিয়া ছাত্রদের গ্রীক দর্শন শেখাতেন। এমনকি তার মৃত্যুর পর রোমান সম্রজ্যে কোন নন ক্রিশ্চিয়ানই সেকুলার মতবাদের পাশে দাড়াতে সাহস পাননি। এই ঘটনার পরই এপিরিউরাসের দর্শন পুরোপুরি চার্চ নির্ভর হয়ে পড়ে। সেগুলোই সংরক্ষিত হতে থাকে যেগুলো চার্চ সংরক্ষণ করতে চায়। প্রকাশ্যে এই দর্শন আলোচনা পর্যন্ত করা হত না। পঞ্চদশ শতকে একুইনাসের সুচনা করা দার্শনিক ভাবনা চিন্তা মুসলিমদের দ্বারা সংরক্ষিত কিছু রচনার দ্বারা গ্রীক ও রোমান ক্লাসিক দর্শন আবার সামনে আসার সুযোগ পায়।



শেষ হাসিটা কি এপিকিউরাসই হাসলেন না? যাই হোক, আমাদের মহাবিশ্ব কিন্তু পরমানু দিয়েই তৈরি, যা কিনা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে তুরুত্বপূর্ন আবিষ্কার পদার্থবিদ রিচার্ড ফিনম্যনের ভাষায়, এই জ্ঞানকে ধারন করেই এপিকিউরাসের দর্শন এগিয়েছে। অথচ আমরা প্রায় উনিশ শতক পর্যন্ত এসেছি তার সম্পর্কে না জেনেই।



প্রযুক্তি আমাদেরকে বৈশ্বিক গ্রামের বাসিন্দা বানিয়ে ছেড়েছে। আমরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে যে বাইক চালাই, তার ফুয়েল এখন মিডল ঈস্ট থেকে আসে; ইউরোপের মানুষেরা এখন এদেশে উৎপাদিত গার্মেন্ট ব্যবহার করে; পোল্যন্ডে উৎপাদিত টমেটো আর ফুলকপি প্রায় পুরো ইউরোপের স্যলাডের চাহিদা পুরন করে; চায়নায় তৈরি ক্রিসমাসের খেলনা ট্রেন ভরে যায় স্পেনে এবং একই ট্রেন চায়নায় ফেরত আসে জলপাই তেল ও বিলাস দ্রব্য ভর্তি হয়ে; জার্মানি জাপানের প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্রাজিলের কোনায় ইন্ডাস্ট্রি বসে। ভোগকে কি এখন নিয়ন্ত্রন করার প্রয়োজন পড়ে? ভোগকে পুজি করেই পুজিবাদের মত মতবাদগুলো বেঁচে আছে।





তথ্যসুত্র:

লিংক ১

লিংক ২

লিংক ৩

লিংক ৪

লিংক ৫

লিংক ৬



পুনশ্চ: পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:১৯

হামিদ আহসান বলেছেন: চিন্তার খোরাক অাছে অাপনার এই লেখাটিতে

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১

সাইফুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন: নৃত্যু নিয়ে এপিকিউরাসের ভাবনা এবং ঈশ্বর নিয়ে বিশ্বাস আমাকে পুলকিত করেছে। মনে হয়েছে বিষয়গুলো পরস্পর বিরোধী। এ নিয়ে আরো জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে লেখাটি।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৫২

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক বলেছেন: মৃত্যু নিয়ে ভাবনাটা আমার চোখে প্রথমে পড়েনি। আমি অনুভূত হয়েছিলাম তার চিন্তা নিয়ে ঈহুদী ও ক্রিশ্চিয়ানদের দৌড়ঝাপ দেখে। পরে বিষয়টি খুজে পাই ইসলামের সাথে যোগসুত্র খুজতে গিয়ে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.