নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ বৃদ্ধ খেয়ামাঝি

২২ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:১৪

সন্ধ্যার পর ছেলেটি বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল। ওর নাম জহিরুল। নদীর পাড়ে এসে দাড়িয়ে দেখল একটা মাত্র খেয়া নৌকা আছে ঘাটে। অন্য নৌকাগুলো ভয়ে চলে গেছে এখান থেকে।

জহিরুল খেয়ায় উঠল। খেয়ার মালিক একজন বৃদ্ধ, বয়স ৭০ এর মত হবে। চুল আর দাড়ি পুরোটাই সাদা হয়ে গেছে।

জহিরুল বলল, তারাতারি নৌকা চালাও। মাঝি নৌকা বাইতে শুরু করল। স্বাভাবিক গতিতেই নৌকা বাইছে সে। কোন তারাহুরা কিংবা আতংক তার মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে না।

জহিরুল বলল, আপনি কয়টা পর্যন্ত থাকেন?

বৃদ্ধ লোকটা আকাশের সন্ধ্যা তারার দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল, যতক্ষন ভাল লাগে। প্রায়ই অনেক রাত পর্যন্ত থাকি।



কাল রাতে একবার মিলিটারি এসেছিল। তারা অনেককে ধরে নিয়ে গেছে গ্রাম থেকে। আরো অনেককে খুজে সারা গ্রাম তন্যতন্য করে। যাদের ধরে নিয়ে গেছে হয়ত তাদের অনেককেই ইতিমধ্যে হত্যা করা হয়েছে। গ্রামময় ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। সবাই যার যার পরিবার বিয়ে আত্মরক্ষা করার জন্য এদিকে ওদিকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি খেয়া ঘাটের মাঝিরাও আজকে ঊদাও। স্বাধারনত এই নদীতে অনেক খেয়া নৌকা থাকে। কিন্তু আজ নেই। সবাই ভয়ে পালিয়েছে। অথচ এই বৃদ্ধ মাঝি পালায় নি।

জহিরুলের কাছে বৃদ্ধকে খুব অদ্ভুত লাগল। লোকটা কি পাগল নাকি অন্যকিছু। এত আতংকের মধ্যে কিভাবে একা একা খেয়া পার করছে।



জহিরুল বলল, কালকে মিলিটারি এসেছিল শুনেছেন?

লোকটা মাথা নাড়ল, হ্যা।

-অনেককে ধরে নিয়ে গেছে জানেন?

-হুম।

-তাদের হয়ত হত্যাও করা হয়েছে।

-হবে হয়ত।

-আপনার ভয় করেনা?

-কিসের ভয়?

-মিলিটারিরা যদি আপনাকে ধরে নিয়ে যায়।

-যাবেনা।

-কিভাবে বুঝলেন?



বৃদ্ধ লোকটি তার টাকা রাখার ছোট্ট ব্যাগটার ভীতর থেকে একটা মোমবাতি বের করল। মোমের বাতি জালানোর প্রয়োজন ছিল না। কারন অন্ধকার এখনও গাঢ় হয়নি। তাছাড়া আজকে রাতে জোৎস্না থাকবে। তাই সারা রাত আলো না জালালেও চলবে। চাদের আলোর কারনে অন্ধকারেও অনেক দুর পর্যন্ত দেখা যাবে।



বৃদ্ধ লোকটি মোমের আগুন জালিয়ে নিজের চেহারা বরাবর ধরল আর বলল, এবার বল আমার বয়স কত হবে?

জহিরুল বিস্মিত হয়ে বৃদ্ধের চোখের দিকে তাকাল। কিছুটা অন্ধকারে বৃদ্ধের বয়স যত বেশি মনে হয়েছিল চোখে মুখে মোমের আলো জলজল করে ওঠার কারনে তার থেকেও কম বয়স মনে হচ্ছে।



জহিরুল বলল, ৭০ বছর হবে হয়ত।

-তোমার অনুমান প্রায় ঠিক আছে। আমার বয়স প্রায় ৭১ বছর। ১৯০০ সালের আগে আমার জন্ম।

তাই আমার বয়সের হিসাব রাখতে অসুবিধা হয় না। সালের সাথে সাথে আমি আমার বয়সের হিসাব পেয়ে যাই।

যেমন এখন ১৯৭১ চলছে আর আমার বয়সও ৭১ বছর। কিন্তু কত তারিখে আমার জন্ম তা জানতে পারিনি।

লোকটা অনেক কথাই বলে ফেলল একবারে। কিন্তু জহিরুল প্রশ্নের জবাব এখনও পাইনি। তাই আবার প্রশ্ন করল, আপনাকে মিলিটারিরা কেন ধরবে না, তাতো বলেন নি।

লোকটা হাসল। হাসার সময় তার ভাংগা ভাংগা তিন চারটে দাত দেখতে পেল জহিরুল। লোকটা বলল, আসলে আমি অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছি। তাই ওরা আমাকে মারবে কেন? আমিকি আর তোমাদের মত যুদ্ধ করতে পারব যে ওরা আমাকে মারবে?



জহিরুল কিছুটা অবাক হয়ে বলল, কিন্তু আপনি কিভাবে যানেন আমরা যুদ্ধ করি?



বৃদ্ধ লোকটা হেসে বলল, জানব না কেন? তোমার মত কত মুক্তিযোদ্ধাকে আমি নদী পার করে দিই তার হিসাব নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পার করে দিতে দিতে অনেক অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে আমার। এখন চেহারা দেখলেই বলতে পারি কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে মুক্তিযোদ্ধা নয়। তুমি যে একজন মুক্তিযোদ্ধা তা আমি দুর থেকেই বুঝতে পেরেছি।

তোমার মত আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে যাদের আমি নদী পার করে দিই প্রতিদিন রাতে।



জহিরুল অবাক হয়ে গেল বৃদ্ধের কথা শুনে। এই বৃদ্ধ বয়সেও সে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করছে। এমন ভাল মানুষ আর কোথায় পাওয়া যাবে?



নদীর পাড়ে এসে থামল নৌকা।

-আচ্ছা আপনি এখানে কতক্ষন আছেন?

-বেশিক্ষন না। একজন লোক আসার কথা, ওকে পার করে দিয়েই বাড়ি চলে যাব। কেন?

জহিরুল বলল, আমার আবার নদী পার হতে হবে।

-কখন?

-শুধু বাড়ি গিয়ে দেখা করে আসতে যত সময় ব্যায় হয়।

-আচ্ছা তুমি তারাতারি এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।



জহিরুল বাড়ি আসল। অনেক দিন বাড়ি আসেনা ও। তাই বাবা মাকে বিদায় দিয়ে আসতে একটু দেরি হল।

জহিরুল ভাবল, বৃদ্ধ মাঝি অনেক্ষন অপেক্ষা করার পরে হয়ত এতক্ষনে বাড়ি চলে গেছে। তাই নদী সাতরে পার হতে হবে। নদী পার হওয়ার সময় সাবধান থাকতে হবে। কেউ টের পেয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে।

জহিরুল জোৎস্নার আলোয় রাস্তা দিয়ে হেটে চলছে। ওর গা ছম ছম করছে। কখন যে পাক বাহিনী সামনে এসে পড়ে বলা যায় না। তখন নিশ্চিত ডায়রেক্ট গুলি করে দেবে। ইদানিং পাক বাহিনীরা যে খেপেছে বলার মত না! এরই মধ্যে অনেক মানুষকে বিনা দোষে মেরে ফেলেছে। জহিরুলের একটাই ভয়, বাড়িতে তার বাবা আর মা রয়েছে। কখন যে আক্রমন করে বসে বলা যায় না।



এক দল পাক বাহিনী এসেছে এসেছে ট্রলারে করে। নদীর পাড়ে বৃদ্ধের খেয়া নৌকাটি দেখতে পেল তারা। খেয়ার বৃদ্ধলোকটি নৌকায় বসা ছিল। চাদের আলোয় স্পস্ট দেখা যাচ্ছিল তাকে।



পাক বাহিনীরা কাছে গিয়ে উর্দতে বলল, এই বুড়ো তুই এত রাতে এখানে কি করিশ?

একজন বাংগালী ছিল পাক বাহিনীর সাথে। সে বলল, স্যার আমার মনে হয় এই লোক মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পার করে দেয়।



এই কথা শোনার পর পাক বাহিনীর চোখ রক্ত লাল হয়ে গেল। তারা আর কোন কিছু বলার প্রয়োজন মনে করল না। বৃদ্ধ লোকটি কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় বন্ধুকের নল থেকে একটা গুলি বেরিয়ে গেল বৃদ্ধের বুক বরাবর। বৃদ্ধকে গুলি করার পর তারা ট্রলার নিয়ে আবার এগিয়ে যেতে লাগল নদী পথে। প্রথমে ট্রলারের জোরে ফট ফট শব্দ পাওয়া গেল তারপর ক্রমস শব্দের তীব্রতা কমতে লাগল।



জহিরুল নদীর পাড়ে এসে বৃদ্ধ মাঝির নৌকাটা দেখতে পেল। কিন্তু মাঝিকে দেখতে পেল না। ভাবল, মাঝি হয়ত আসে পাসে কোথাও আছে।

জহিরুল মাঝির নৌকায় উঠে বসতে চাইল। হঠাৎ পা পিছলে গেল জহিরুলের। লাইট জালিয়ে দেখল নৌকায় প্রচুর রক্ত। মুহুর্তে হতভম্ব হয়ে গেল। নদীর পানিতে লাইট মারল। বৃদ্ধের লাশটা পানিতে অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০৫

বটের ফল বলেছেন: ছোট ছোট কথায় চমৎকার লেখা।

এভাবেই কত সহস্র প্রাণের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন !!!!!!!!!!!

+++++++++++++++++++

২| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৯

আবু জাকারিয়া বলেছেন: স্বাধীনতার জন্য এমন ঘটনা আমাদের দেশে অনেক ঘটেছে। তার কোনটা মানুষ জানে আর কোনটা জানেনা। এরকম অনেক অনেক ঘটনা মানুষের চক্ষুর আড়ালে থেকে গেছে। তা আমরা কেউ জানতেও পারিনি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.