নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প- ময়না পাখি

২৩ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১১

একই বাড়িতে মোট তিনটা ঘর। একটি সুভাসের, একটি গনেশের আরেকটি গোপালের। ওরা তিনজন আপন ভাই। সুভাস আর গনেশ এরই মধ্যে ইন্ডিয়া চলে গেছে। সেখানে তারা স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছে। গোপালও ইন্ডিয়া চলে যাবে। সেও সেখানের স্থায়ী বাসিন্দা হবে।

গোপাল তার স্ত্রী রানীকে নিয়ে ইতিমধ্যে সব পরিকল্পনা শেষ করেছে। ভারতের বর্ডার পর্যন্ত পৌছাতে পারলে আর কোন ভয় থাকবে না। তখন তারা নিশ্চিন্তে তাদের গন্তব্যে পৌছে যেতে পারবে।

সাথে বেশি কিছু নেয়া যাবেনা। কিছু কাপড়চোপড় আর টাকা পয়সা সাথে নিতে হবে। বেশি কিছু নিয়ে গেলে পথে কোন বিপদ হয়ে বসতে পারে। বাড়িতে যা কিছু আছে তার সব কিছুর মায়া ত্যাগ করতে হবে। গোপালের ভাইরাও তাই করেছে। কিছু কাপড়চোপড় আর টাকা পয়সা ছাড়া আর সব কিছুই ফেলে গেছে তারা। এমনকি গনেশদার দামী সিন্ধুকটা যার মধ্যে অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল সেটাও ফেলে গেছে।

গোপালেরও তাই করতে হবে। দামী অনেক কিছু ফেলে যেতে হবে। নতুন কাঠের ঘর, সুন্দরী কাঠের একটি আলমারী, নতুন চকচকে পালংখাট ইত্যাদি। এমন কি তাদের পোষা ময়না পাখিটাও।

কিন্তু রানী বলল, ওকে ফেলে যাওয়া কি ঠিক হবে?

-কি করবে তাহলে?

-আমাদের সাথে ভারতে নিয়ে যাব।

-বাড়তি ঝামেলা হয়ে যায় না?

-তাই বলে ওকে আমরাও ফেলেও যেতে পারিনা। ও এত দিন আমাদের সাথে ছিল, এতদিন ধরে ওকে পুষেছি, এখন কিভাবে ওকে এখানে ফেলে যাব? ওর যদি কোন বিপদ হয়?

-আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যা বলবে তাই হবে।



গোপাল বাধ্য হয়ে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল। পাখিটাকে তারা সাথে নিয়ে যাবে। শুধু মাত্র রানীর কথা রাখার জন্যই তার সিদ্ধান্তের এই পরিবর্তন। গোপাল জানে পাখিটার প্রতি রানির অনেক মায়া জন্মে গেছে। অনেক দিন ধরে পাখিটাকে পুষেছে সে। তাই মায়া হওয়াটাই স্বাভাবিক।

পাখিটাকে এখানে ফেলে গেলে ওর বিপদ ঘটবে নিশ্চিত করে বলা যায়। সবচেয়ে বড় বিপদ বিড়াল। বিড়ালটা পাখিটাকে ধরে খেয়ে ফেলতে পারে।



গোপাল আরো একটা কারনে তার সিদ্ধান্ত পরিপর্তন করেছে। আর তা হল একটা নিরীহ প্রানীকে ফেলে যাওয়ার ফলে কোন বিপদ ঘটতে পারে তাদের।

দেবতারা তাদের অভিষাপ দিতে পারে। হয়ত এমন অভিষাপ দিবে যে তাদের ছোট্ট পরিবারটি ধংস হয়ে যেতে পারে। অথবা অন্য যে কোন বিপদ। কে কখন কোন বিপদে পড়ে বলা যায়। গোপাল চায় না তার সুখী সুন্দর জীবনে কোন বিপদ নেমে আসুক।





এই ময়না পাখিটার জন্য গোপালেরও মায়া লাগে। গোপাল নিজেই কিনেছিল পাখিটা। পাখিটাকে ইতিমধ্যে অনেক কথা বলতে শিখিয়েছে গোপাল আর রানি। খুব সুন্দর কথা বলতে পারে।



"ও রানি বৌদি, গোপাল দাকে ভাত দাও

গোপাল দা ভাত খাবে ভাত দাও

ও রানি বৌদি গোপালদাকে ভাত দাও"



এরকম আরো অনেক কথা বলে ময়না পাখিটা। কখনও গোপালকে নাম ধরে ডাকে আবার কখনও রানীকে। ময়না টিয়াকে যা শেখান হবে তাই শিখবে এটাই স্বাভাবিক। গোপালের ময়না পাখিটার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গোপাল আর রানী মিলে যা শিখিয়েছে তাই শিখেছে।



রাত পোহাবার অনেক আগে গোপাল রানীকে নিয়ে রওয়ানা হল। তাদের সাথে একটা কাপড়চোপড়ের ব্যাগ আরেকটি পাখির খাচা। পাখিটা চুপ করে খাচার ভেতরে বসে আছে। হয়ত ঘোমাচ্ছে।



রানী আর গনেশ তাদের শরীরে, ব্যাগে, গায়ের কাপড়চোপড়ে এমকি পাখির খাঁচায় যত হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন ছিল সব মুছে ফেলেছে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে তারা হিন্দু।

গোপাল পড়েছে লম্বা পাঞ্চাবী আর গোল টুপি। আর রানী পড়েছে কাল বোরকা।

গনেশ পথে বসে রানীকে কোন কথা বলতে নিশেধ করে দিয়েছে। কেউ যদি কোন কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে গোপাল উত্তর দেবে। রানীর সেই মুহুর্তে কথা বলা নিশেধ। দেশের অবস্থা একটুও ভাল না। পাকিস্থানীরা গন হত্যায় মেতে উঠেছে এরই মধ্যে। কোন কারন ছাড়াই বাংগালীদের গুলি করে মেরে ফেলছে। সবচেয়ে বেশি নির্জাতন করছে হিন্দুদের উপর। অন্য কাউকে ছেড়ে দিলেও হিন্দুদের ছাড়তে চায় না তারা। ডায়রেক্ট গুলি করে মেরে ফেলে। যেহেতু হিন্দুদের কোন নিরাপত্তা নেই তাই মুসলমানদের পোশাক পরেছে গোপাল আর রানী। যাতে কেউ বুঝতে না পারে তারা হিন্দু।



গোপাল আর রানীকে নদী পার হয়ে ওপার যেতে হবে। ওপার গিয়ে বাসে উঠবে তারা। বাস সব সময় পাওয়া যায় না। না পাওয়া গেলে অপেক্ষা করতে হবে বাসের জন্য।



একটা নৌকা ঠিক করল গোপাল। নৌকাটা কিছুতে যেতে চাইছিল না। গোপাল বেশি টাকা দেয়ার কথা বললে যেতে রাজি হয়েছে নৌকার মালিক। ইদানিং রাস্তা ঘাটে জীবনের ঝুকি বেড়ে গেছে। তাই কেউ বাড়ি থেকে বের হতে চায় না। মুক্তিযোদ্ধারা আর যুবক ছেলেরা প্রায়ই বনে জংগলে লুকিয়ে থাকে। বলাতো যায় না কখন পাকিস্থানীরা এসে হামলা করে বসে।



নদী পার হল গোপাল আর রানী। বাস স্ট্যান্ডে দুইটা গাড়ি আছে। গাড়ি ছাড়তে দেরি হবে। তাই গোপাল আর রানী অপেক্ষা করছে বাস স্ট্যান্ডে বসে। বেশিরভাগ দোকান পাঠ বন্ধ, রাস্তায় লোকজন কম। অল্প কিছু লোক রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে।

হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামল গোপাল আর রানীর সামনে। গাড়িতে এক গাড়ি পাক বাহিনী। মাথায় টাক পড়ে যাওয়া একজন পাকিস্তানি গোপালের কাছে এসে বলল, তোরা এখানে কি করছিস?

-গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি?

-কেন কোথায় যাবি?

-যশোর।

-কেন যশোর কি?

-মামা বাড়ি যাব।

-তোর সাথে কে?

-আমার স্ত্রী।

-ও,,, আচ্ছা, হঠাৎ মামার বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন?

মাথায় টাক পড়া পাকিস্থানী মুখ ভেংচিয়ে প্রশ্ন করল।

গোপাল কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছিল না। বলল, মামা অসুস্থ তাই তাকে দেখতে যাচ্ছি।

মাথায় টাক পড়া পাকিস্থানী আবার মুখ ভেংচিয়ে বলল, ও মামার জন্য খুব দরদ রে বাংগালী। তোর নাম কি আর তোর বাড়ি কোথায়?



-আমার নাম সোলায়মান আর বাড়ি এই নদীটার ওপার।

-ঠিক আছে, যশোর গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিবিনাতো।

-না।

-মনে থাকে যেন, তা না হলে গুলি করে মেরে ফেলব।

গোপাল ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল, আচ্ছা।

পাক বাহিনী চলে যাবে এমন সময় ময়না পাখিটা ডেকে উঠল-





"ও রানি বৌদি, গোপাল দাকে ভাত দাও

গোপাল দা ভাত খাবে ভাত দাও

ও রানি বৌদি গোপালদাকে ভাত দাও"



মাথায় টাক পড়া পাকিস্থানী আবার ফিরে এল গোপালের কাছে।

বলল, সত্যি করে বল গোপাল আর রানী কে?



গোপাল পথে অনেক বিপদের কথা চিন্তা করেছিল। কিন্তু ময়না পাখিটাও যে বড় একটা বিপদের কারন হতে পারে তা কখনও ভাবেনি। ময়না পাখিত নিষ্পাপ। অপরাধ তাদের যারা মানুষের জীবন নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে ওঠে আর নিরীহ মানুষের প্রতি অবিচার করে।

গোপাল ভয়ে ভয়ে বলল, আমি চিনিনা।

-তাহলে তোর পাখিতে শিখল কিভাবে?

-হয়ত পথে কোথাও শিখেছে।



গাড়ি থেকে একজন পাকিস্থানী সৈনিক চেঁচিয়ে বলে উঠল, স্যার, আমার মনে হয় ওরা হিন্দু।



টাক পড়া পাকিস্থানী বলল, তোরা কি হিন্দু?

-না স্যার আমরা মুসলমান।



আচ্ছা একটা সুরা বলত।

গোপাল মাঝে মধ্যে মুসলমানদের সুরা পড়তে শুনেছে। দুই এক লাইন মনেও আছে তার।

গোপাল ভাংগা ভাংগা গলায় ফাতেহা সুরার দুই লাইন পাঠ করে থেমে গেল।

টাক পড়া পাকিস্থানী বলল, কি হল থেমে গেলি কেন? গোপাল কোন কথা বলছে না।

টাক পড়া পাকিস্তানি ধমক দিয়ে বলল, কি হল, থেমে গেলি কেন?

গোপাল মাথা নিচু করে বলল, আর মনে নেই।



টাক পড়া পাকিস্থানী বলল, মাথায় টুপি আর লম্বা পাঞ্জাবী পরেছিস অথচ ফাতেয়া সুরা ভুলে গেছিস সালা হিন্দু। এবার সত্যি করে বল তোর নাম কি? সত্যি কথা না বললে এখানেই গুলি করে মারব।



গোপাল মনে করল, ওদের সত্যি কথাই বলে দেয়াই ভাল। তা না হলে গুলি করে মারবে। সত্যি কথা বললে ছেড়েও দিতে পারে।



গোপাল সব সত্যি কথা বলে দিল। শোনার পর পাকিস্থানী দাঁত বের করে হেসে বলল, সালাদের গাড়িতে তোল তারাতারি।

কয়েকজন সৈনিক গোপাল আর রানীকে গাড়িতে তুলে নিল।

গোপাল তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে, বলেছে আমরা ভারত চলে যাব, আর এদেশে আসব না, আমাদের ছেড়ে দিন।

কিন্তু পাকিস্তানীরা সেদিকে বিন্দু মাত্র কান দিল না। গোপাল কাদছিল। আর পাকিস্থানীরা হাসছিল। মাথায় টাক পড়া পাকিস্থানী বলল, কিরে হিন্দুর বাচ্চা, তোর নাম সোলায়মান! বলেই হো হো করে হেসে উঠল সবাই।



গোপাল জানে তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকে খুব কম মানুষ ফিরে আসতে পেরেছে। গোপাল দেখল, রানীর চোঁখ থেকে পানি ঝরছে। এই মুহুর্তে গোপালের কষ্টে কলিজা ফেটে যাচ্ছিল। তার সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে পাকিস্তানীরা কি করতে পারে ভাবতে শিউরে উঠছিল গোপাল।



গাড়ি এসে ক্যাম্পের সামনে থামল। পাকিস্থানীরা রানী আর গোপালকে আটকে রাখল। হয়ত কিছুক্ষন পরেই ওদের উপর নির্জাতন শুরু হবে। নির্জাতন করে মেরেও ফেলতে পারে ওদের।



মাথায় টাক পরে যাওয়া পাকিস্থানী ময়না পাখিটার খাঁচাটা একটা টেবিলের উপর রাখল।

পাখিটা তখনও ডেকে চলছিল-





"ও রানি বৌদি, গোপালদাকে ভাত দাও

গোপাল দা ভাত খাবে ভাত দাও

ও রানি বৌদি গোপালদাকে ভাত দাও"

...(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ২:০৪

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: ময়না পাখিটার জন্য গোপাল আর রাণী বিপদে পড়েছে, এটা ভাবা ঠিক হবে না। বরং যুদ্ধের ভয়াবহতা কতটা নির্মম ছিল সেটাই আমাদের ভাবা উচিৎ এবং উপলব্ধি করা উচিৎ। হিন্দুদের প্রতি পাকিস্তানিদের বিদ্বেষের ছোট্ট একটি নমুনাই গল্পে উঠে এসেছে; পাক হায়েনারা কতটা হিংস্র ছিল সেটাও গল্পে উঠে এসেছে। ভালো লাগলো গল্প আবু জাকারিয়া।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:১৪

আবু জাকারিয়া বলেছেন: ঠিক বলেছেন বিদ্রোহী। বিপদে পড়ার জন্য ময়না পাখি দায়ী নয়, দায়ী যারা বিপদ সৃষ্টি করে। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর মন্তব্য করার জন্য।

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

জেন রসি বলেছেন: পাখির আর দোষ কি! পাখিত পাকিদের বর্বরতার রুপ দেখে নাই। যেখানে মানুষ হয়েও পাকি ভক্তের অভাব নাই এ দেশে!

গল্প ভালো লেগেছে।

৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫০

আবু জাকারিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য আর মন্তব্য করার জন্য। শুভ কামনা।

৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭

তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো লেগেছে গল্প ।

৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩০

আবু জাকারিয়া বলেছেন: তুষার কাব্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা ভাল থাকুন।

৭| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪

এম এম করিম বলেছেন: ভালো লাগা জানবেন।

৮| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৫

আবু জাকারিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ মতামতের জন্য। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.