নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]
তখন ছোট ছিলাম। মনে আছে, আমাদের গ্রামের মধ্যে মাত্র দুইটা বাড়িতে টেলিভিশন ছিল। তাও আবার সাদাকালো। আমরা ছোট বড় সবাই দল বেঁধে টেলিভিশন দেখতে যেতাম। ভাল কোন অনুষ্ঠান থাকলে, বারান্দায় লোক ঠাসা থাকত। বসার জন্য ইঞ্চি পরিমান যায়গা থাকত না। তখন একটা মাত্র চ্যানেল দেখার সুযোগ ছিল। আর তা হল বিটিভি। বিটিভিতে তখন দুই ধরনের অনুষ্টান সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল। সেগুলো হল ছায়াছবি আর অ্যারাবিয়ান সিরিজ আলিফ লায়লা। ছায়াছবি আর আলিফ লায়লা সাপ্তাহিকভাবে সম্প্রচার হত। বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার বিকেলে চলত বাংলা ছায়াছবি আর সপ্তাহে একটা দিন রাতে চলত আলিফ লায়লা।
গ্রামের সবাই অপেক্ষা করত কখন অনুষ্টান শুরু হবে। যেদিন বাংলা ছায়াছবি সম্প্রচার হবে, সেদিন সবাই আগে ভাগে সব কাজকর্ম গুছিয়ে রাখে। সবাই সকাল সকাল গোছল করে, খাওয়া দাওয়া করে ছবি দেখার জন্য রেডি থাকত। অনেকে ছবি শুরুর এক দুই ঘন্টা আগে গিয়ে হাজির হয়ে বসার যায়গা দখল করে নিত। কারন একটু দেরিতে গেলে বসার যায়গা পাওয়া যায় না। তখন দাড়িয়ে দাড়িয়ে টিভি দেখতে হত। অনেকে আবার বসার জন্য বাড়ি থেকে টেবিল, বেঞ্চ ইত্যাদি নিয়ে আসত। অনেকে পাটি নিয়ে আসত। আমরা যারা পিচ্চি পিচ্চি ছিলাম, বসার যায়গা না পেয়ে মাটিতে বসে পড়তাম অনেক সময়। তখন ছবি দেখায় যে কি আনন্দ পেতাম, আর কিভাবে যে ছবি দেখায় মগ্ন থাকতাম তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভন না। তখন ছবির কাহিনীগুলো সত্যি মনে করতাম আমরা। অনেক বাংলা ছবির করুন কাহিনী দেখে চোঁখ ভিজে যেত। আলিফ লায়লা দেখে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারি হতে ইচ্ছে করত। মনে হত যাদুর আকরাম বিচ্ছুটা যদি পাওয়াই যেত, তাহলে যে কতকিছুই করতাম।
আলিফ লায়লা, বাংলাছবি দেখার পর সবার মধ্যে ছবির দৃশ্য আর কাহিনীগুলো নিয়ে আলোচনা চলত।
"ইশ নাইকা যদি মারা না যেত,,,ভিলেন টাকে মাফ করে দেওয়া ঠিক হয়নি,,,একটুর জন্য নায়ক বেঁচে গেল,,, নায়ক মারা গেলেত ছবি শেষ হয়ে যেত।"
আবার কেউ কেউ বলত "নায়ক অত উপর থেকে লাফিয়ে পড়ল কিভাবে?""" আরে ক্যামেরা সাহায্যে নায়ক লাফিয়ে পড়ে""
তখন বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করত কাহিনীগুলো সত্য। বুড়ো বুড়ি অনেক সময় কেঁদে ফেলত কোন কোন কাহিনী দেখে, তেমনি ভিলেনকে দিত অভিশাপ।
সেই দিন এখন আর নেই। এখন সবার বাড়িতে টেলিভিশন আছে। সবাই সব কিছু জানে কোথায় কি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে। এখন মানুষ অনেক অগ্রসর হয়েছে।
কিন্তু সেদিনের মত আনন্দ এখন আর নেই। এখন আর সেদিনের মত টেলিভিশন দেখার জন্য এত মানুষ এক যায়গায় জড় হয় না।
©somewhere in net ltd.