নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ছেড়া টাকার গল্প-(ছোট গল্প)

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১০

৫০ টাকার একটা নোট। ছেড়া। আজ ১৭ দিন হল পকেটের কোনে পড়ে আছে। অনেক বার চেষ্টা করেও চালানো গেল না।
সুতারাং ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অযথা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর মানে হয় না।

টাকাটা মুহুর্তেই ছিড়ে টুকরো টুকরো করলাম। ফেলে দেব এমন সময় ৫০ টাকার নোটটি কেঁদে উঠল। ভাবলাম টাকাটা ছিড়ে ফেলেছি বলে ব্যাথা পেয়েছে। তাই কাঁদছে।
অবাক হয়ে বললাম, তুমি কাঁদছ কেন?
ছেড়া ৫০ টাকার নোটটা কাদতে কাদতে , আজকেই তাহলে আমার জীবনের শেষ দিন?
আমি বললাম, তুমি অচল হয়ে গেছ, তাই আজকেই তোমার শেষ দিন।
৫০ টাকার নোটটা আরো জোরে কাঁদতে শুরু করল।
আমি অনেক নোট দেখেছি, কিন্তু কোন নোটকে এভাবে কাঁদতে দেখিনি।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তোমার জীবনের আজ শেষ দিন তাতে কাঁদার কি আছে?
ছেড়া ৫০ টাকা বলল, আমি সে কারনে কাঁদছি না।

-তাহলে কেন কাঁদছ?
-ওই ছেলেটা।
-কোন ছেলেটা?

ছেড়া নোটটা কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি কি শুনবে?
-হ্যা শুনব।
-সত্যি করে বল শুনবে আমার কথা?
-হ্যা শুনবে।
-আমার বিশ্বাস হয়না তুমি আমার কথা শুনবে।
-কেন বিশ্বাস হয় না।
-কারন এর আগে আমার কথা কেউ শুনতে চায়নি।
-আমি শুনব, তুমি বল।

ছেড়া টাকাটি মহা আনন্দে বলল, সত্যি তুমি শুনবে?
-হ্যা শুনব।
টাকাটি কিছুটা উচ্ছাস নিয়ে বলল, আমার খুব আনন্দ লাগছে, অন্তত আমার জীবনের শেষ পর্যায় এসে একজন মানুষকে পেলাম যে আমার কথা শুনতে চায়।
আমি বললাম, তুমি কি এমন বলতে চাও, আমার কাছে মন খুলে বল, আমি ধৈর্যের সাথে তোমার সব কথা শুনব।

৫০ টাকার ছেড়া নোটটি বলতে শুরু করল।

"আমার যখন জন্ম হল, খুব আনন্দ লাগছিল আমার। কারন আমি দেখতে দারুন সুন্দর ছিলাম। তারপর আরো আনন্দ লাগল যখন এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে শুরু করলাম।
আমাকে প্রথমে যার পকেটে রাখা হল, তার শরীর থেকে সুন্দর পারফিউমের গন্ধ পেলাম।
তারপর আমি এসে পড়লাম এক রিক্সা ওলার কাছে। রিক্সাওয়ালার আমাকে পেয়ে অনেক খুশি হল, তার খুশি দেখে আমারও খুশি লাগছিল। এভাবে কত মানুষের পকেটে যে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি তার হিসাব নেই। কখন চায়ের দোকানদার, কখনও ফেরিওয়াল, কখনও ভীক্ষারি, কখনও কামার, কখনও কুমার, কখনও ধনী কখনও গরিব- এভাবে লাক্ষ মানুষের পকেটে পকেটে ছিলাম। হাজার পেশার মানুষের কাছে ছিলাম, কেউ গরিব আবার কেউ ধনী। তারা সবাই আমাকে ভাল বাসত।"

আমি বললাম, এ জন্য কাঁদার কি আছে?
-আমি এজন্য কাঁদছি না।
-তাহলে?
-আমি কাঁদছি ওই ছেলেটার জন্য।
-কোন ছেলেটার জন্য?
-তুমি শুনবে?
-হ্যা শুনব, বল।

ছেড়া ৫০ টাকার নোটটি আবার বলতে শুরু করল।

"একদিন আমি একজন ক্লান্ত পথিকের পকেটে চুপচাপ বসেছিলাম। আমার সাথে আরো কয়েকজন বন্ধু ছিল। ক্লান্ত পথিক একটা গলির ভেতর থেকে যাচ্ছিল। হঠাৎ কয়েকজন লোক এসে তার কলার চেপে ধরে- টাকা পয়সা যা আছে বের কর।
ক্লান্ত পথিক কিছুতে বের করতে চাচ্ছিল না। তাই তার পেটে ছুড়ি মেরে দিল। পথিক রাস্তায় পড়ে গেল ধপ করে। যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিল।
হঠাৎ দেখলাম সেই লোকজন আহত পথিকের পকেট থেকে আমাদের বের করে নিয়ে পালিয়ে গেল। আমরা এত করে বললাম, আমাকে আমার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আস, কিন্তু তারা কিছুতে শুনল না। আমার কারনে এভাবে অনেক মানুষকে আহত হতে হয়েছে।"

আমি বললাম, তাহলে ওই আহত হয়ে পথিকের জন্য কাঁদছ?
-না।
-তাহলে?
-সেই ছেলেটা।
-বল তাহলে, আমি শুনছি।

৫০ টাকার ছেড়া নোট আবার বলতে শুরু করল।

"মাঝে মাঝে দেখতাম পুলিশ ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ আমার মালিক আমাকে বের করে গোপনে তাদের হাতে ধরিয়ে দিত। তখন খুব খারাপ লাগত। অবিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারতাম, আমার মালিক কোন খারাপ কাজের সাথে যুক্ত। আর যার হাতে আমাকে তুলে দিচ্ছে সেও আমাকে অবৈধ ভাবে পাচ্ছে। এভাবে অনেক মানুষ আমাকে অবৈধভাবে ব্যাবহার করত।"

...আসলে আমি একারনেও কাঁদছিনা।
-তাহলে?
-আমি কাঁদছি ওই ছেলেটার জন্য।
-কোন ছেলেটা?
-যে ছেলেটা আমাকে হারিয়ে ফেলেছিল।
-কোন ছেলেটা তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিল?

-শুনবে তাহলে?
-হ্যা শুনব, বল।

৫০ টাকার ছেড়া নোটটি আবার বলতে শুরু করল।
"অনেকদিন আগের ঘটনা। তখন আমার বয়স কম ছিল। আমাকে দেখতেও সুন্দর লাগত।
আমি এক কারখানার মালিকের মানি ব্যাগে ছিলাম। কারখানায় একটা ছোট্ট ছেলে কাজ করত। ছোট হওয়ার কারনে ওর বেতন কম ছিল। মাত্র ৫০ টাকা। এই শুনছতো,,, এই শুনছোতো!"
-হ্যা শুনছি। তারপর কি হল বল।
৫০ টাকার ছেড়া নোট আবার বলতে শুরু করল।

"কাজের শেষে আমাকে নিয়ে ছেলেটার হাতে ধরিয়ে দিল। ছেলেটা আমাকে পকেটে করে বাড়ি নিয়ে আসল। একটা ছোট থলের মধ্যে আমাকে রেখে দিল। থলেটিতে আমার মত আরো অনেক বন্ধু ছিল। আমরা চুপচাপ থলের মধ্যে বসে রইলাম। এই শুনছোতো আমার কথা!"

- হ্যা শুনছি। তারপর কি হল বল।

"তারপর হঠাৎ একটা গোংগানীর আওয়াজ শুনলাম। আমাদের কান খাড়া হয়ে গেল গোংগানীর শব্দ শুনে। ছেলেটা বলল, মা আজকে রাতটা একটু কষ্ট কর, তারপর কালকে তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব, তুমি সুস্থ হয়ে উঠিবে।

ছেলেটার মা গোংগাচ্ছিল আর ছেলেটা তার মাকে যত্ন করছিল। কালকেই তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। আমি টাকা গুছিয়ে ফেলেছি মা। তোমার আর কোন চিন্তা নেই। কিছু হবেনা তোমার।

ছেলেটা রাত পোহানোর জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু সারারাত ঘুমালো না সে। সারারাত জেগে জেগে মায়ের সেভা করছিল। ... শুনছো তুমি... আমার কথা শুনছ?"

-হ্যা শুনছি, তারপর কি হল বল।

"তারপর যখন রাত পোহালো ছেলেটা তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে রওয়ানা দিল। হাসপাতাল বাড়ি থেকে অনেক দুরে। তাই গাড়িতে করে যেতে হবে।
ছেলেটার সাথে একটা ব্যাগ ছিল। ব্যাগের মধ্যে তার কিছু কাপড়চোপড় ছিল। আর আমরা ছিলাম ব্যাগের ভেতরে একটা ছোট্ট টোপলার মধ্যে।"

তারপর কি হল?

"তার অসুস্থ মাকে ধরে ধরে একটা গাড়িতে তুলল। কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য আসছিল না। তাই ছোট হওয়া সত্ব্যেও একা একা তুলতে হল। ছেলেটার মা গাড়িতে বসেও গোংগাচ্ছিল আর ছটফট করছিল।... আর ছেলেটা বলছিল, আর একটু কষ্ট কর মা, আর একটু কষ্ট কর। এইত প্রায় এসে গেছি। চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে যাবে তুমি।,,,,, এই শুনছোতো?

- হ্যা শুনছি বল।

-তারপর হাসপাতালের সামনে আসলে গাড়ি থামালো ছেলেটা। মাকে নিয়ে নেমে পড়ল সে। কিন্তু ব্যাগটা সাথে নিতে ভূলে গেল। ব্যাগের মধ্যে আমরা অনেকগুলো বন্ধু ছিলাম। আমরা ছেলেটাকে ডাকছিলাম কিন্তু শুনতে পেল না। ছেলেটা ওর অসুস্থ মাকে নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। (সমাপ্ত)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.