নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বন্ধু তারেক!

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

একটা নতুন স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি হই আমি। অনেক নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে একজন বন্ধুর নাম তারেক। ওকে নিয়ে আমার এই লেখা।
তারেকের সাথে যেদিন পরিচয় হল সেদিন থেকেই মোটামুটি ভাব হতে লাগল। দুইজনে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতাম আর সাইকেল নিয়ে উড়ে বেড়াতাম। ওর সব দিকই মোটামুটি ভাল থাকলেও ছাত্র হিসেবে মোটেও ভাল ছিল না। তারপরেও আমাদের বন্ধুত্ব কম ছিল না।
ক্লাস নাইনে উঠে আমরা অনেকেই সায়েন্স নিলাম। তারেকও অতিউৎসাহের সাথে সায়েন্স নিল। আমাদের স্কুলে হায়ার ম্যাথের জন্য আলাদা কোন স্যার ছিল না বলে আমরা কেউ হায়ার ম্যাথ নিলাম না। সবাই নিলাম কম্পিউটার সায়েন্স। কিন্তু তারেক কম্পিউটার সায়েন্স নিল না। ও নিল হায়ার ম্যাথ। হায়ার ম্যাথ নিয়ে টুকটাক প্রাইভেট পড়তে শুরু করে দিল।
কিছুদিন পর আমাদের প্রথম সাময়ীক পরিক্ষা হল। পরিক্ষার কিছুদিন পর স্যাররা আমাদের পরীক্ষার খাতা নিয়ে হাজির হতে শুরু করলেন রেজাল্ট দেবে বলে। একে একে সব পরিক্ষার রেজাল্ট দেয়া হল। সবার শেষে দেয়া হল আমাদের কম্পিউটার সায়েন্সের রেজাল্ট। তারেকের দেয়া হল হায়ার ম্যাথের রেজাল্ট। আমরা কম্পিউটার সায়েন্সে কেউ পাশ করলাম আর কেউ ফেল করলাম। কিন্তু তারেক হায়ার ম্যাথে পেল ডাবল জিরো। মানে ০ পার্সেন্ট মার্কস।
সেই থেকে তারেকের নাম হল ডাবল জিরো তারেক। আবার কেউ ডাকত হায়ার ম্যাথ তারেক। আমরা ওকে বললাম, তুই হায়ার ম্যাথ ছেড়ে কম্পিউটার সায়েন্সে আয়। কিন্তু শুনল না। ও বলল, হায়ার ম্যাথ ছাড়া সায়েন্সের কোন মূল্য নেই।
একদিন তারেক আমাকে নিয়ে গেল এক অংক স্যারের কাছে। অংকে সেই স্যারের ভাল নাম ছিল। ওর কথা মত স্যারের কাছে পড়তে শুরু করলাম। অংকে কিছুটা উন্নত হল তারেক। পরের পরীক্ষা সব সাবজেক্টে মোটামুটি ফেল করল। কিন্তু হায়ার ম্যাথে ঠিকই পাশ করেছিল। আমরা অবাক হলাম।

তারেকের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে চার পাঁচ মাইল দুরে হবে। ও মাঝে মাঝে সাইকেলে আমাদের বাড়িতে আসত। আমরা অনেক সময় পর্যন্ত পদার্থ বিজ্ঞান আর গনিত পড়তাম। যতটানা পড়তাম, তার চেয়ে বেশি হত গল্প। তারেকের আশা ছিল একসময় ইঞ্চিনিয়ারিং পড়বে বুয়েটে। বুয়েটে চাঞ্চ পেতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকা লাগে, কি কি করা উচিৎ এসব ওর মুখস্ত ছিল। এমনকি বাংলাদেশ পেরিয়ে বিদেশের কোন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ভাল, সেখানে কারা পড়ে সে সম্পর্কেও অনেক কিছু জানত। আমরা অবাক হতাম ও আসলে এত কিছু জানে কি করে!
একদিন রাত বারটার সময় সাইকেলের শব্দে ঘুম ভেংগে গেল আমার। ভাবলাম এত রাতে কে আসতে পারে আমাদের বাড়িতে। দরজা খুলে দেখলাম, তারেক। বললাম, তুই এত রাতে? ও বলল, কয়েকটা অংক কিছুতে বুঝতে পারছিনা। তাই তোর কাছে চলে এলাম। দেখলাম প্রথম দিকের কিছু স্বাধারন অংক। সে রাতে আর ঘুমালাম না। সারা রাত যেগে যেগে অংক করলাম। অংক করতে করতে একদিন আবিস্কার করলাম, তারেক আসলে অংক বুঝে করেনা বরং মুখস্ত করে। ওর অংক করার ভংগি দেখে অন্তত তাই মনে হচ্ছিল।

কারন, কেউ যদি অংক মুখস্ত করে তবে তা বেশিদিন মনে থাকেনা। তবে তারেকে অংক বইয়ের প্রায় সব সূত্রই মুখস্ত ছিল। অথচ আমি অনেক সূত্র জানতাম না। তাই মাঝে মাঝে ক্লাসে ওর সাহায্য নেয়া প্রয়োজন পড়ত।

হঠাৎ কিছুদিন ধরে তারেখ স্কুলে আসছিল না। ভাবলাম, হয়ত কোন সমস্যা পড়েছে বা জ্বর হয়েছে। তাই ওদের বাড়ি চলে গেলাম কয়েকজন মিলে। গিয়ে দেখলাম, ওদের ঘরের বারান্দায় নারকেল আর সুপারীতে ভরা। জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো দিয়ে কি করবি? বলল, ব্যাবসা করব।
বেশ কিছুদিন ওর নারকেল আর সুপারির ব্যাবসা চলল। কিন্তু লাভ করতে পারেনি। তাই আবার স্কুলে আসতে শুরু করল।
একদিন তারেক আমাকে নিয়ে এক কবিরাজের কাছে আসল। বুঝতে পারলাম না কেন এসেছে। কবিরাজের কাছ থেকে একটা তাবিজ নিল ও। আমি বললাম, এই তাবিজ দিয়ে কি করবি?

ও বলল, সাথে রাখব। তাহলে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করা যাবে। তাবিজের গুনে হোক আর অন্য কারনে হোক পরের পরিক্ষায় তুলনামূলক ভাল রেজাল্ট করল তারেক। ও তাবিজের প্রশাংসা করে বলল, দেখিছিস তাবিজে কেমন কাজ হয়! এখন তুইও একটা তাবিজ নিয়ে নে।
আমি বললাম, ধুর এসব ফাও কথা!

ও বলল, আরে ফাও কথা না; বগারাম কবিরাজের তাবিজে ভাল কাজ হয়। তুই একবার ব্যাবহার করে দেখতে পারিস।
আমি বললাম, আমার দরকার নেই। সেই হতে অনেকদিন ধরে ওর হাতে ওই তাবিজটা সোভা পেত। কিন্তু একদিন ফুটবল খেলতে গিয়ে তাবিজটা হারিয়ে যায় ওর। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেল না। তাই বলল, আরো একটা তাবিজ আনতে হবে বগারামের কাছ থেকে।
কিন্তু পরে আর আনতে যায় নি।

আমাদের টেষ্ট পরীক্ষা হবে। টেষ্ট পরীক্ষা উত্তির্ন হতে পারলে তারা বোর্ড পরীক্ষা দিতে পারবে। দু একজন বাদে প্রায় সবাই টেষ্ট পরীক্ষায় উত্তির্ন হলাম। তারেকও উত্তির্ন হল। কিন্তু কোন মতে।

টেষ্ট পরীক্ষার পর খুব পড়াশুনা চলছে আমাদের। তারেক বলল, তুই রাত কয়টা পর্যন্ত পড়িশ?
বললাম, বেশি না, রাত ১০ টা ১১ টা।
ও মুখ বাকা করে বলল, মাত্র ১০ টা ১১ টা!
আমি বললাম, তুই পড়িশ কয়টা পর্যন্ত?
বলল, রাত ৩ টা।

আমি অবাক হলাম না। কারন এর আগেও অনেকবার এরকম বলেছে। তবে আমার বিশ্বাস হয় না ও এত রাত জেগে পড়তে পারে। হয়ত ও আমাদের অবাক করে দেয়ার জন্য এরকম বানিয়ে বলত।

আমাদের পরীক্ষা শুরু হল। প্রথম বোর্ড পরীক্ষা দিচ্ছি আমরা। সবাই মোটামুটি ভাল লিখছে। তারেক আমার থেকে দুই বেঞ্চ দুরে ছিল। ওর লেখার গতি দেখে রিতীমত অবাক হয়ে গেলাম আমরা। ভাবলাম এত কি লেখে! নিশ্চয় পরীক্ষা খুব ভাল হচ্ছে ওর।
পরীক্ষা শেষে বললাম, এত কি লিখলি?
ও বলল, সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। এ প্লাস পাব।

এভাবে প্রতিটি পরিক্ষাই ও ভাল দিয়েছে আর সব মিলিয়ে এ প্লাস পাওয়ার আসা করছে।
কয়েকমাস পরে আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। প্রায় সবাই পাশ করেছে। কিন্তু দঃখের বিষয় তারেক মোট ৪ টা সাবজেক্টে ফেল করেছে। তারেক ফেল করার কারনে সব চেয়ে বেশি খারাপ লাগল আমার। কারন ওর সাথেই সবচেয়ে বেসি মিসতাম। কিছুদিন ওকে আর খুজে পেলাম না। শুনেছি কোথাও একটা কাজের জন্য গেছে। কি কাজ বুঝতে পারলাম না।
কিছুদিন পরে আবার ওর সাথে দেখা হল। বলল, একটা চাকরী পেয়েছি।
আমি বললাম, কি চাকরি?
ও কি যেন বলল আমার মনে নেই।
তারেক বেশ কিছুদিন চাকরী করার পর আবার লেখা পড়ায় মন দিল। এবার ও শুধু পাশ করবে নান; গোল্ডেন ও পেতে পারে।
আমি মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম, গোল্ডেন না পাক, অন্তত পাশ করুক।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ। কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারল না তারেক। তাই একপর্যায়ে লেখা পড়া ছেড়ে দিয়ে ছোট খাট চাকরীতে ঢুকে গেল। আমরা অনেকেই কলেজ ভার্সিটিতে পড়ছি আর তারেক চাকরী করছে। কিন্তু ওর সাথে বন্ধুত্ব একটুও কমে যায় নি। আজও সময়সুযোগ পেলে তারেকের সাথে আড্ডা দিই, সুখ দুঃখের কথা ভাগাভাগি করি। কারন সময় বদলে যায় কিন্তু বন্ধুত্ব কোনদিন শেষ হয় না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: বন্ধুত্ব্য থাক চির অঠুট............।

শুভ কামনা রইলো।

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

আবু জাকারিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ নুর ইসলাম রফিক ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.