নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:২২

বাংলা ছবির ঢিসুম ঢিসুম দেখে আমরাও ছোট বেলায় ঢিসুম ঢিসুম করতাম। একদল থাকতাম পাকিস্তান বাহিনীতে আর আরেকদল থাকতাম মুক্তিবাহিনীতে। দুই বাহিনীতে লেগে যেত যুদ্ধ। বনের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে পাকিস্তান বাহিনীকে ধুলো ছুড়ে মারতাম। আর ওরা আমাদের গুলি ছুড়ে মারত।



তখন বুঝতাম না মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা কি জিনিস। তারপরেও আমরা পিচ্চিপাচ্চারা স্লোগান দিতাম, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। যখন যেটা মনে আসত।

আমাদের গ্রামে জহির উদ্দিন নামের একজন বয়স্ক লোক ছিলেন, খুব দরিদ্র ছিলেন সে। এখনও আগের মত আছেন। তিনি আমাদের স্লোগান শুনে মুচকি মুচকি হাসতেন। শুনেছি তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক গল্প করতেন আমাদের সাথে।

আমাদের গ্রামে যত গৃহস্থ আছে তার মধ্যে জহির উদ্দিন সবচেয়ে গরিব। তার সংসার কোন মতে চলে। অথচ যারা একসময় দেশের বিরোধীতা করেছে তারা অনেক ভাল অবস্থানে আছে সমাজে। দেশের বিরোধীতা করা স্বত্বেও তারা সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

জহির উদ্দিন দুঃখ করে বলতেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, কিন্তু স্বাধীনতা রক্ষা করা হয় নি। যার কারনে সমাজে অনিয়মে ভরে গেছে।



জহির উদ্দিন দরিদ্র ছিলেন সে কারনে তার আফসোস ছিল না। সে কষ্ট করে হলেও তার জীবিকা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু আফসোস করতেন খারাপ মানুষদের সমাজে পদমর্যাদা দেখে, যারা একসময় দেশের বিরোধীতা করেছেন তারাই এখন সমাজের মাতবর শ্রেনীর লোক।



জহির উদ্দিনের একটা মাত্র ছেলে। ছেলেকে নিয়ে ছোট্ট একটি ভাতের দোকান খুলেছিলেন জহির উদ্দিন। দোকানে রান্না বান্নার কাজ করতেন দুই বাবা ছেলে। আমরা তার দোকানে প্রায়ই গল্প শুনতে যেতাম। হাজার কাজের মাঝেও আমাদের গল্প শোনাতেন বেশ হাসিমুখে।

জহির উদ্দিন ছোটদের খুব ভাল বাসতেন। গল্পে গল্পে অনেক কিছু শেখাতেন আমাদের যা আমরা স্কুলে শিখতে পেতাম না। বলতেন যুদ্ধের ভয়ংকর অবিজ্ঞতাগুলো। তিনি সবসময় বলতেন, যুদ্ধ কখনও শান্তির বিকল্প হতে পারেনা। যুদ্ধ হতে হবে শান্তির জন্য।

ছোট বেলায় তার অনেক কথা বুঝতে পারতাম না। তবু কেন জানি তার কথা শুনতে ভাল লাগত। এরকম কত মুক্তিযোদ্ধা যে শান্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন কিন্তু প্রতিদান হিসেবে কিছু চান নি। অনেক দিন পরে গ্রামে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আগের মতই আছেন তিনি। তবে তার দোকানটা নেই। দোকানের পরিবর্তে ছোট একটা চাকরী নিয়েছেন। তাতেই তার সংসার চলে যায়। আমরা তাকে চাচা বলে ডাকি। দির্ঘদীন পরে আমাকে দেখতে পেয়ে ভীষন খুশি হলেন জহির চাচা। অনেক কথা হল তার সাথে। কথার এক পর্যায়ে বললাম, চাচা অনেকেরতো মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আছে, আপনার নেই কেন? চাচা মুচকি হাসলেন আর বললেন, সার্টিফিকেট থাকলেই কি মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায়? আমাদের সাথে যুদ্ধ করে কত মানুষ শহীদ হয়েছে, তাদের অবদান কি সার্টিফিকেট দিয়ে মুল্যায়ন করা যাবে?

আমরা তার অবস্থার কথা চিন্তা করে অনেকবার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিতে বলেছি, কিন্তু প্রতিবারই একই কথা বলেছেন তিনি। তার একমাত্র ছেলেটা মেট্রিক পাশ, তাই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট থাকলে হয়ত সরকারী চাকরী পেয়ে যেত। তখন হয়ত একটু হলে সচ্ছল হতে পারতেন। এরকম মানুষ আরো আছেন আমাদের সমাজে যারা মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ব্যেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট গ্রহন করেন নি। অথচ হাজার হাজার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে বীর বেঁসে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এটাই হল মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.