নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুই সিঁধেল চোর ও এক বুড়ো - ছোট গল্প।।

২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩

ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারদিকে আলোর চিহ্ন মাত্র নেই। আকাশে একটুকরো চাঁদ যদিও আছে, কিন্তু সারাক্ষন ফালি ফালি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে, কিন্তু ততক্ষনাক আবার মুখ লুকিয়ে ফেলে লজ্জা পেয়ে। কিসের লজ্জা কে জানে!

এমন সময় মধ্য রাতে দুই চোর এসেছে চুরি করতে। ওরা শুনেছে বাড়িতে এক বয়রা বুড়ো একা একা থাকে। আর বুড়োর ঘরে অনেক কিছু আছে চুরি করার মত। তাই বয়রা হবার কারনে আর বুড়ো বাড়িতে একা থাকার কারনে চুরি করতে সুবিধাই হবে বটে।
দুই চোর বাগানে একটা গাছের আড়ালে চুপ করে বসে অপেক্ষা করতে লাগল। বুড়োর ঘরে একটা প্রদিপ তখনও মিটমিট করে আলো দিচ্ছে। তাই ওরা বুঝতে পারল, বুড়ো এখনও ঘুমাইনি।

দুই চোরের একজনের হাতে ঝুলছে একটা বড় বস্তা, তাতে রয়েছে খন্তা, সাবলসহ আরো অনেক চুরি করার যন্ত্রপাতি। একটা ধারাল চাকুও আছে, কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চাকুটা সবসময় সাথে রাখে ওরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেরকম কোন বিপদে পরেনি চোর দুটো।

দ্বিতীয় চোরের হাতে একটা টর্চ লাইট। অন্ধকারে পথ চলার জন্য টর্চ লাইটটা মাঝে মাঝে ব্যবহার করতে হয়। তবে খুব সাবধানে। কেননা, টর্চের আলোর কারনে কেউ দেখে ফেলতে পারে।

কিছুক্ষন পরে চোর দুটো দেখল বুড়োর ঘরের বাতি নিভে গেছে। এখন নিশ্চয়ই বুড়ো শুয়ে পড়েছে বাতি নিভিয়ে দিয়ে । শোয়ার সাথে সাথে কারো ঘুম চলে আসে না। তাই চোরদুটোকে আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে।

চোর দুটো সাথে যে বিশালাকার বস্তা নিয়ে এসেছে- ওদের ইচ্ছা বস্তাটা আজ পূর্ন করেই নিয়ে যাবে। জীবনে কতবার যে বস্তাটা ভর্তি করেছে চুরি করে, তার হিসাব ওদের নেই। তবে চুরি করে ওদের জীবন ভালই কাটে। কিন্তু মাঝে মাঝে ধরা খেয়ে গন ধোলাইও খেতে হয়েছে ওদের। অনেক দিনের অভিজ্ঞতায় ওরা দুজনই পাকা চোর বলা চলে।

চোর দুটো যেখানে লুকিয়ে অপেক্ষা করছে, তার পাশ দিয়ে ছোট একটা রাস্তা চলে গেছে অনেক দুরে। রাস্তাটি দিয়ে রাতের বেলাও কিছু মানুষকে হাটাচলা করতে দেখা যায়। তাই কেউ যাতে টের না পেয়ে যায়, তাই চোর দুটো যথা সম্ভব কম কথা বলছে। আর যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করছে।

কিছুক্ষন পরে চোর দুটো গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে বুড়োর ঘরের পাশে এসে চুপ করে বসে রইল। বুড়ো এখনও ঘুমাইনি- খুক খুক করে কাশছে সে। সুতারাং যতই কানা হোক, না ঘুমানো পর্যন্ত চুরি করা সম্ভব হবেনা। কেননা ঘরে ঢুকতে হলে আগে শিধ কাটতে হবে। তাই বুড়ো যদি জেগে থাকে, তাহলে শিধ কাটার সময় বাতি জালিয়ে দেখে ফেলতে পারে। তখন নিশ্চিত ধরা!

আসে পাশে আরো কিছু ছড়ানো ছেটানো বাড়ি ঘর আছে। সেসব বাড়তে একসাথে অনেক মানুষ থাকে আর তারা এত রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন। তবুও সেসব বাড়িতে চুরি করতে যাওয়া নিরাপদ নয়। কিছুক্ষন পর পর জেগে ওঠে তারা। কেউ জেগে ওঠে টয়লেটে যাওয়ার জন্য আবার কেউ জাগে অভ্যাসবসত। সেসব যায়গায় ধরা খাওয়ার ঝুকি বেশি।

বুড়োর বাড়িটা একেবারে স্যাঁতসেঁতে যায়গায়। স্যাঁতসেঁতে হওয়ার কারনে প্রচুর মশা জন্মায় এখানে। মশাগুলো সুযোগ পেলেই কুট কুট করে কামর দিয়ে রক্ত চুরি করে খায়। মশার কামড়ে চোরদুটোর অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাতের বেলা চুরি করতে হলে মশার কামড় খাওয়ার অভ্যাস থাকতে হবে। আর দির্ঘদীন চুরি করার কারনে তা ওদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে অনেক আগেই।

বুড়োর কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছেনা। নিশ্চয়ই এতক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে। চোর দুটো তাদের যন্ত্রপাতি বের করে শিধ কাটতে শুরু করল। মাটি প্রচুর শক্ত। শীধ কাটতে ভালই কষ্ট হচ্ছে ওদের। তবুও দক্ষতা বলে কথা!
কিন্তু ওদের কপাল খারাপ। শীধ কাটা শুরু করতে না করতেই বুড়ো আবার জেগে উঠেছে। উঠেই বাতিটা জ্বেলে দিয়েছে। চোর দুটো একটু দুরে সরে গিয়ে দেখল, বুড়ো আরাম করে বসে বিড়ি টানছে। দেখে মনে হচ্ছে ঘুম আসছেনা তার।

প্রথম চোর ফিসফিস করে বলল, ট্যার পাইয়া যায়নায় তো?
দ্বিতীয় চোর বলল, আমার মনে হয়, না। শুনছি কানে কিছুই হুনেনা বুড়ো।
-এএক্কেবারে কিছু না?
-না
-যদি কেউ কানের কাছে গিয়া চিল্লায়?
-তাও না।
-তাইলেতো চুরি করতে ভাল সুবিধা হইব।
-হু, এহন ঘুমাইলে হয়।
-না ঘুমাইয়া যাইবে কই, ঘুমাইয়েতো হইবই। সারা রাইত আমাগো মত কেউ যাগতে পাইরব না।

দ্বিতীয় চোর হাতের বাতাশে মশা তারাতে তারাতে বলল, সালার ঘরে অনেক কিছুই আছে মনে হয়?
প্রথম চোর গলাবাড়িয়ে ঘরের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করল, হুম, চিন্তা করিসনা, ওইগুলো এখন বুড়োর, একটুপর আমাগো হইয়া যাইব।

-হুম।
-এহন ঘুমাইলে হয়।
-হুম। দেখি।

প্রথম চোরটা আবার মাথাটা সামনে দিয়ে বেড়ার ফাক দিয়ে বুড়োকে দেখার চেষ্টা করল। বুড়ো এখনও বিড়িতে আরাম করে টান মারছে আর খুক খুক করে কাশছে। কখন যে ঘুমোবে বুড়ো!

রাত বাড়ে, বুড়ো শুয়ে পরে, আবার কিছুক্ষন পরে জেগে উঠে বাতি জ্বালায়, বিড়ি টানে আর খুক খুক করে কাশে। কিন্তু ঘুমানোর নাম নেই।

দ্বিতীয় চোরের পকেটে একটা ঘড়ি আছে- অনেক দিন আগে চুরি করে পেয়েছে ওটা। খুব পছন্দ হয়েছিল, তাই বিক্রি না করে রেখে দিয়েছে। ঘড়িটা সবসময় পকেটে থাকে ওর। যখন প্রয়োজন হয় বের করে সময় দেখে আবার পকেটে রেখে দেয়।

দ্বিতীয় চোরটা টর্চের সাহায্যে তার শখের ঘড়িতে সময় দেখে নিল একবার। ঠিক তিনটা বেজে গিয়েছে। চুরি করার জন্য এখনও অনেক সময় আছে ওদের হাতে। তাই অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু বুড়োর ঘুমের কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছেনা ওরা।

বুড়োর বাতিটা আবার নিভে গেল। কিন্তু খুক খুক কেশেই চলছে সে। অনেক সময় পরে বুড়ো ঘুমিয়ে পরেছে ভেবে আবার শীধ কাটতে শুরু করল চোর দুটো।
একেবারে শান্ত পরিবেশ, শীধা কাটার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা আসে পাশে। চোর দুটো খুব মজা করেই শীধ কাটছে। আজ ওরা অনেক কিছু চুরি করতে পারবে । তাদের বস্তাটা ভরে ফেলতে পারবে চুরি করা জিনিস দিয়ে । সেগুলো বিক্রি করে অনেক টাকা পাবে। কিছুদিন সেগুলো খরচ করে ভাল আরামেই কাটবে ওদের। চোরদুটোর চোখের সামনে চুরির টাকাগুলো দিয়ে স্বপ্ন পূরনের ইচ্ছা খেলা করে যাচ্ছে।


শীধ কাটা প্রায় শেষ। এমন সময় বুড়ো আবার কাশতে শুরু করলে। এবার খুক খুক করে নয়, গলা ফাটিয়ে কাশছে সে। মনে হচ্ছে যক্ষার কাশী। হয়ত রাত জেগে অতিরিক্ত বিড়ি খাওয়ার কারনে যক্ষা হয়ে গিয়েছে তার। কিন্তু তাকে দেখার মত কোন আপন মানুষ নেই। বউ নেই ছেলেমেয়ে নেই। সম্পূর্ন একা সে। কেউ তাকে দেখছে না। এই মুহুর্তে চোর দুটোই দেখছে তাকে, শুনছে গলা ফাটানো কাশীর শব্দ।

এবার বুড়ো আর বাতি জ্বালালো না। কিন্তু একটানা কেশে চলছে সে। থামছে না, ঘুমাচ্ছেও না।
চোর দুটো বুড়ো কখন ঘুমাবে তার অপেক্ষা করতে লাগল। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, আসে পাশের পরিবেশ পরিস্কার হবার সময় এসেছে। হয়ত কিছুক্ষন পরেই দিনে আলো ফুটতে শুরু করবে।

চোর দুটো অন্ধকার কেটে যাওয়ার অনেক আগেই ওখান থেকে তাদের শুন্য বস্তা নিয়ে সরে পড়েছে। আজ কোন চুরি করা হল না তাদের। আর কোন দিন কোন বুড়ো মানুষের বাড়িতে আর চুরি করতে আসবেনা ওরা।
বুড়ো রাত পোহানোর একটু আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। আস্তে আস্তে ঘুম গাঢ় হচ্ছে তার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.