নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু জাকারিয়া

আমি খুব স্বাধারন মানুষ। স্বাধারনদের থেকেও স্বাধারন। জীবনে জাঁকজমক পছন্দ করিনা। স্বাধারন ভাবে বাঁচতে চাই। সব চেঁয়ে অপছন্দের কারো অধিনে থাকা। \nউক্তিঃ পরাধীনতার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল, মৃত্যুযন্ত্রনার থেকে পরাধীনতা অনেক ভাল। [email protected]

আবু জাকারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবানুর নাম salmonella...

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪২

ইদানিং টাইফয়েডের প্রকটতা বেশি। যারা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসে পরীক্ষার পর তাদের অধিকাংশেরই টাইফয়েড ধরা পরে। টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ; হয় Salmonella নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে।

আমার শরীরটা যথেষ্ঠ রকমের ভাল, রোগ শোকে সহজে আক্রান্ত হইনা। তবে ছোট বেলার অসুখের কথা মনে আছে, সন্তানের প্রতি মায়ের যত্নের তুলনা হয় না।

কয়েকদিন আগে অনেকদিন পরে হঠাৎ কিছুটা জ্বর জ্বর ভাব অনুভব করতে থাকি-সেই সাথে অল্প অল্প মাথা ব্যাথা; বিষয়টা পাত্তা দেয়ার মত ছিল না। তাই কোন চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি- ধরে নিয়েছিলাম এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

অফিস শেষ করে সন্ধ্যার পর যখন বাসায় আসলাম, তখন আস্তে আস্তে গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে লাগল- সেই সাথে Headache.

এখন আসলে রোগটাকে পাত্তা দেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবুও নিজে নিজে কোন ব্যাবস্থা করার মত শক্তি ছিল না।

খাবার খাওয়ার রুচি একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসল। তবুও জোর পূর্বক সামান্য খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম আসেনা, প্রচন্ড গরমেও শীত করতে শুরু করল। কাথা কোম্বল খুজে বের করে গায়ের উপর ফেলে রাখলাম। তাতেও শীত কমেনা। অথচ গা পুরে আগুন বের হওয়ার মত অবস্থা। বুঝতে পারলাম জ্বরটা হয়ত সিরিয়াস পর্যায় চলে গেছে। তবুও রাতটা কষ্ট করে হলেও অতিবাহিত করি। সকালে একজনের সহযোগীতায় হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেব। এত রাতে কাউকে বিরক্ত করা ঠিক হবেনা।


আমি একটা বেসরকারি প্রতিষ্টানে চাকরি করি; থাকি একটা ছোট রুম ভাড়া করে- একা একা। খাই নিজে পাক করে, কখনও কখনও হোটেলে। সারা দিন কাটে অফিসে ডিউটি করে। বেতন পাওয়ার পর কিছু টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিই, আর কিছু টাকা নিজের খরচের জন্য রাখি। বেতন বেশি নয় তাই অনেক হিসেব করে চলতে হয়। এভাবেই আমার জীবনটা চলছে বর্তমানে। অফিস শেষ হলে কটা খেয়ে নাক টেনে ঘুমিয়ে পড়ি, আসে পাশে কি ঘটল বা না ঘটল সেদিকে খেয়াল রাখি না।

রাত ৪ টা। থার্মোমিটার ছাড়াই বুঝতে পারলাম, জ্বর এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌছে গেছে। এই মূহুর্তে সবচেয়ে বেশি কার কথা মনে পড়ছিল যানেন? অফিসের ধমকবাজ, বদমেজাজি বসের কথা; যাকে মনে মনে কয়েকশবার খুন করি প্রতিদিন? না। সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়েটার কথা; যাকে আমি অল্প অল্প ভাল বেসে ফেলেছি? না। আমার কলিগ বন্ধুদের কথা; যাদের সাথে আমি সারা দিন অনেক কিছু শেয়ার করি? আমার ভাই? আমার বোন নাকি আমার খালা নাকি আমার ফুফু? না। এই মুহুর্তে আমার সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আমার মায়ের কথা। অথচ মাসের পর মাস কেটে যায়_ মাকে এভাবে কখনও মনে আসেনা। এত ব্যস্ত। থাকি আমি! মনে হচ্ছিল মা যদি এখন পাশে থাকত তাহলে কয়েক মুহুর্তের মধ্যে আমার জ্বর কমে যেত। তাই জ্বরের ঘোরে বার বার মাকে ডাকতে থাকি। আমি নিশ্চিত মা যদি আমার ডাক সত্যিই শুনতে পেতেন, কয়েকশত মাইল পাড়ি দিয়ে হলেও আমার কাছে ছুটে আসতেন। গাড়ি না পেলে পায়ে হেটে আসতেন।

শেষ রাতে হঠাত করেই কেন যেন জর অনেক কমে গিয়েছিল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টের পাইনি। অফিসের টাইম হওয়া পর্যন্ত শুয়ে কাটিয়ে দিলাম। গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম, গা যথেষ্ট ঠান্ডা। ভাবলাম জ্বর কমে গেছে, এখন আর চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু অফিসে আসার পরে জ্বর যতটা কমে ছিল বলে ভেবেছিলাম, আসলে ততটা কম ছিল না। দুপুরের পর থেকে জ্বর যেন আবার বাড়তে শুরু করল। বদ মেজাজি, বদ রাগী বসের নিকট ৩ দিনের ছুটি চেয়ে দরখাস্ত পাঠালাম। সেদিনের মত নমনীয় বসকে আর কোন দিন হতে দেখিনি।

ভাবছিলাম, প্যারাসিটামল আর এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পরে জ্বর ভাল হলে আর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অযথা টাকা খরচ করব না। এমনিতেই টাকা পয়সায় অনেক সমস্যায় আছি। চিকিৎসা করাতে গেলে না জানি কত টাকা খরচ হয়ে যায়।

কিন্তু সে ইচ্ছা আর পূরন হল না। রাত্রে আবার জ্বর বেড়ে গেল। রাত বেশি হয়নি। সাড়ে দশটা। হাসান নামে এক কলিগ আমার বাসার কাছাকাছি থাকে। তাকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসলাম।

হাসান রিক্সায় করে হাসপাতালে নিয়ে আসল। ডাক্তার দেখানর পর ডাক্তার সাহেব কয়েকটা পরীক্ষা করাতে দিলেন। পরীক্ষার রিপোর্ট বের হতে রাত বারটা বেজে গেলে। ধরা পরল টাইফয়েড। ডাক্তার সাহেব এক গাদা অশুধ প্রিস্ক্রিবশনে লিখে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে গেলেন। অশুধ গুলো কিনতে অনেক টাকা খরচ হল। প্রায় তিন হাজার টাকা। তিন হাজার টাকা আমার মত ব্যাচেলরের জন্য অনেক টাকা! এত গুলো টাকা অশুধ কিনতে লেগে গেল ভেবে জ্বর যেন এমনিতেই সেরে গেছে!

হাসানকে বললাম দোস্ত এখন আমায় বাসায় দিয়ে আয়, বাসায় বসে অশুধ গুলো চালিয়ে যাব। কিন্তু ও বলল, না তুই জ্বর না কমা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাক। বাসায় তোর দেখা শুনা কে করবে- খাওয়ার ওশুধ না হয় একা একা খেতে পারলি, ইঞ্জেকশন দিয়ে দেবে কে?

বেশি কিছু না ভেবে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। একটা ছোট বেড। আসে পাসে কয়েকটা নার্স ঘুরে বেড়াচ্ছে, রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে।
হাসানকে বললাম, তুই এখন চলে যা দোস্ত, অযথা কষ্ট করে লাভ নেই। কিন্তু ও গেল সকাল বেলা। সারা রাত হাসপাতালে কাটিয়ে দিল। আমার দেখাশুনা করল। এত করে বললাম, তুই এখানে থাকলে তোরও টাইফয়েড হতে পারে; কিন্তু কিছুতেই কিছু শুনল না। রাতে জ্বরের ঘোরে কি কি করেছি কি বলেছি নিজেও জানিনা। হয়ত আমার মায়ের কথা, বাবার কথা, ছোট ভাইটার কথা! হয়ত আমার রানী বেশী সুন্দর সবুজ গ্রামের কথা।

ডাক্তারের চিকিৎসা যথেষ্ট ভাল ছিল, মাত্র দুই দিনের মাথায় জ্বর অনেক কমে গেল। কিন্তু ডাক্তার বলল, এখনও ভাল করে কমেনি, তাই আরো একদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। ডাক্তারের কথা না শুনে উপায় নেই। থেকে গেলাম হাসপাতালের বেড়ে। এখন আর নিজেকে অতটা অসুস্থ মনে হয় না। ইচ্ছা করে এখনই হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে বাসায় চলে যাই।

এই দুই দিনে হাসপাতালের নার্সদের সাথে ভাল পরিচয় হল। তাদের সুন্দর ব্যবহার আর ঘন ঘন খোঁজ খবর নেয়া, মনে হয় কত আপন মানুষ ওরা!

তিন দিনের মাথায় বাসায় ফিরে যাওয়ার মত যথেষ্ট সুস্থ হলাম। হাসান রিক্সা নিয়ে আসল আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। ডাক্তার শেষ সাক্ষাতে ওশুধগুলো ঠিক মত চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।

আমার ছুটির মেয়াদ ছিল তিন দিন। ইতিমধ্যে ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কাল অফিসে না যেতে পারলে বদরাগী বস না জানি কি বকাবকি করে, কিনা বলে_ এরকম জ্বর জ্বর করলেতো অফিস চলবে না! এমন নিষ্ঠুর কথা চাকরী জীবনে খুবই স্বাধারন ব্যাপার।

যেই বসকে এত বদরাগী এত বদরাগী বলে মনে মনে গালাগালি দিই, যাকে দিনের মধ্যে একশবার খুন করি; সেই বস রাতে ফোন করে আমার খোঁজ খবর নিলেন। সেই সাথে ছুটি বাড়িয়ে দিলেন জ্বর ভাল করে না কমা পর্যন্ত। এমন মানুষের মধ্যেও যে কত সুন্দর মানুবিকতা থাকতে পারে; উপরের আচরনে তা বোঝাই যায় না।

বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটা ফার্মিসি আছে। ওখানে গিয়ে টাইফয়েডের ইঞ্জেকশন গুলো নিতাম। যেহেতু ডাক্তার সম্পূর্ন কোর্স শেষ করতে বলেছে।

ফার্মিসি ম্যানকে আমার প্যাথলজির রিপোর্টটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রিপোর্টে সমস্যা ধরা পড়েছে কোন টায়। দেখলাম একটা যায়গায় লেখা রয়েছে-TO 320. বললাম, TO টা কি জিনিস। জানতে পারলাম, TO হল টাইফয়েড জ্বরের জীবানুর নাম। আর যতগুলো টাইফয়েডের জীবানু আছে সবগুলোকে একত্রে salmonella বলে। যাই হোক আমার সমস্যার কারন হল salmonella TO. আমার টাইফয়েড সেরে উঠছে জানি; কিন্তু সামনে আমার অনেকগুলো দিন পড়ে রয়েছে....
মা আর ছোট ভাইটার জন্য কিছু কাপড় চোপড় পাঠানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তা এখন পেরে উঠব না। অল্প বেতনের চাকরী করি , অনেক হিসেব করে চলতে হয় আমাকে। হিসাবের পয়সা থেকে salmonella TO নামক জীবানু অনেকটা অংশ খেয়ে নিয়েছে...


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫২

সুমন কর বলেছেন: দুঃখজনক।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪

রিফাত_হাসান বলেছেন: বাইরের খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। যেকোন খাবার (ফল, সুবজি, শাক) ধুয়ে রান্না করুন। salmonella প্রধানত fecal oral route এ ছড়ায়। /:)

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮

নক্‌শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: টাইফয়েডের টিকা পাওয়া যায়, একটা ইন্জেকশন নিলে ৩ বছরের জন্য টাইফয়েড হওয়া থেকে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। দেড় হাজার টাকা মতো লাগে। আমার সর্বশেষ টাইফয়েড হয়েছিলো ১৯৯৯ সালে। এখন টাইফয়েডে টিকা নিয়ে রাখি যাতে আর না হয়। বাইরের খাবার না খেলে যে টাইফয়েড হবেনা এমন কোন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭

আবু জাকারিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ সবাইকে!

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৬

বিজন রয় বলেছেন: সাংঘাতিক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.