নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা ভাবি, যা দেখি, যা বিশ্বাস করি

আমি খুব সাধারন একটা মানুষ। সাধারন হয়েই থাকতে চাই

শিশু বিড়াল

স্বাধীন দেশের স্বাধীন এক নাগরিক। পেশায় ডাক্তার হলেও নেশা ছবি আঁকা। সবই সখের বশে। ভালবাসি দেশ ও দেশ এর মানুষ।

শিশু বিড়াল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্ণগ্রাফি ও ধর্ষন ও পর্দাপ্রথা

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৫৪

কিছু কিছু মানুষ বর্তমানে অধিক ধর্ষনের কারন হিসেবে মেয়েদের বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি দাড় করান, যুক্তিগুলো নিম্নরুপ:



আজকালকার মেয়েদের পোশাক আশাক অশালীন ও উত্তেজনাপূর্ন, এতই উত্তেজক ও আকর্ষনীয় যে পুরুষরা তাদের কোনোভাবেই সংযত করতে পারেনা, ধর্ষন করে বসে। যেন মেয়েটির আর তার পোশাকেরই সব দোষ।মেয়েদের নিজেদের রক্ষা করতে ইসলামী নিয়ম মোতাবেক পর্দা করা ছাড়া কোনো গতি নাই। ভদ্র পোশাক পরলেও যেহেতু তা পর্দা নয় তাই সেই মেয়ে ধর্ষিতা হতেই পারে। ধর্ষন হওয়াই এখানে স্বাভাবিক(!) অনেকে এরকম কথাও বলে থাকে, "মেয়েরাতো রসগোল্লার মত, খোলা রেখে দিলে পিপড়া আসবেই।" তাহলে আমরা কি ধরে নিব পিপড়ার জীবন ধারনের জন্যে রসগোল্লা মিষ্টি আহরন করা যেমন জরুরী, পুরুষ মানুষ এর জন্যেও উত্তেজক পোশাক পরা মেয়েমানুষ ধর্ষন করা ততটাই জরুরী? তাহলে পিপড়া আর মানুষের মধ্যে ফারাকটা রইল কই?



এই সমাজে ধর্ষকের চেয়ে ধর্ষিতার অপরাধ বেশি। এখনতো আবার নতুন ফ্যাশন চালু হয়েছে, শুধু ধর্ষনেই ক্ষান্ত হয়না, জানে মেরে ফেলে তবে না শান্তি, আমাকে কেউ একটা জিনিস বুঝাক, যখন ড: ইভা কে ধর্ষনের চেষ্টা করে ব্যা্র্থ হয়ে তাকে হত্যা করা হয় তখন সেটা কি ড: ইভার উত্তেজনাপুর্ন পোশাকের কারনে হয়েছিল? ঐ লোকের মাথায় কি ড: ইভা কে দেখে, যদিও সে হিজাব করতো, মনে হয়েছিল "ইশ, কি খাসা মাল, আজ একে পেতেই হবে"? না। তার মাথায় ইভার হিজাব কে যৌন উত্তেজক বলে মনে হয়নি, ইভা যে একজন শিক্ষিত ডাক্তার তাও আসেনি, তার মাথায় ছিল একটাই কথা, "আরে আমি তো পুরুষ, তুই একটা মেয়ে মানুষ, তুই হিজাব কর, কি ডাক্তার হ, তাতে আমার কি? আমার এখন তোকে ছিড়ে খাবার দরকার, আমি খাব।" নাহলে একজন নিম্নশ্রেনীর কর্মচারী কি করে এমন কাজ করার সাহস দেখায়? এই সমাজে এমনিতেই পুরুষের সমকক্ষ হতে পুরুষের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেখানো লাগে, এখন মনে হয় তাও সম্ভব নয়। যতই শিক্ষিত হও তুমি মেয়ে, আর যতই পর্দা কর, রাতের আঁধারে একটি পুরুষের সামনে, তা সেই পুরুষ হোক তোমার চেয়ে শিক্ষায়, যোগ্যতায় তোমার চেয়ে অনেক কম, তুমি তার কাছে একটি আপাদমস্তক যৌনপুতুল ছাড়া আর কিছু নও। তার যদি ইছ্ছা হয় তোমাকে দিয়ে তার কামপিপাসা মিটানোর, তা সে মিটিয়েই ছাড়বে, তোমার শিক্ষা, তোমার পর্দা তোমাকে রক্ষা করতে পারবেনা, আর যদিও বা রক্ষা পাও, জানে যে বেঁচে যাবে তার সম্ভাবনা খুবই কম।



আমি বলব না যে মেয়েদের দোষ নেই, কিন্ত সেই দোষ দেখার আগে দেখতে হবে সে কেন এই দোষ করছে। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের আপাদমস্তক পন্য বানিয়ে ছেড়েছে। যখন যেখানে দরকার, কাপড় খুলে দাড় করিয়ে দিল নিজেদের সুবিধার জন্যে, আবার দরকার পরলে কেন কাপড় কম পরল তাহলে তো ধর্ষিতা হবেই তাও বলে ফেলল।আমারই এক ছোটভাই আমাকে একদিন বলল, "ভারতের মত যেই দেশে, ক্যাটরিনা কাইফ এর 'চিকনি চামেলী আর 'শীলা কি জাওয়ানি' গান সবার প্রিয় আর সানী লিওন এর মত পর্ণতারকা যেখানে সবার আইডল, সেদেশেতো এমন হতেই পারে"।



এর অর্থ হল সেদেশের মানুষ সানী লিওন কে দেখে সবসময়ই উত্তেজিত, তাই তারা একটু ক্ষুব্ধ হয়ে একটা মেয়েকে শুধু ধর্ষন না, যোনীপথে লোহার রড ঢুকিয়ে নাড়ীভুড়ী বের করে আনতেই পারে! এতে এত অবাক হবার কিছু নেই।এখন কথা হল যাদের দেখে আমরা উত্তেজিত হই বা ধরে নিলাম ধর্ষনের চিন্তা মাথায় আনি তাদের অর্থাৎ তথাকথিত পর্নতারকা ও কামোদ্দীপক অভিনেত্রীদের, তাদের কি আমরা ধর্ষন করি? করি না। করবো ও না। কারন আমাদের সেই মুরোদ নেই। আমরা তাই অসহায় মেয়েদের যারা আমরা জানি যে গায়ের জোরে কোনভাবেই আমাদের সাথে পারবে না বা যাদের পাশে দাড়াবার মত কেউ নেই তাদের উপর চেপে বসি। এজন্যেই এদেশে ৫ বছরের একটা শিশুকেও ধর্ষন অত্ঃপর খুন করা হয় এবং আমরা চুপ করে থাকি। ঐ শিশুটির কী দোষ ছিল? সে উত্তেজিত করেছিল কী দিয়ে তার ধর্ষক কে? নাকি তার দোষ সে পর্দা মাফিক পোশাক পরেনি তাই এমন পরিনতি হল তার? ডঃ ইভা আর এই শিশুটি আর বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়ে আসলে একই রকম অসহায়, নিরাপত্তাহীন। এই অবস্থার জন্যে না তো দায়ী কোন পোশাক পরিছ্ছদ, না দায়ী কোন পর্নতারকা।নগ্নতাই যদি ধর্ষনের কারন হত তাহলে প্রতিটি পুরুষ ডাক্তার একজন ধর্ষক হত। তা হয় কি? হয়না। দায়ী আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা যেখানে মেয়ে শুধুই মেয়েমানুষ, মানুষ নয়।



যেদিন পুরুষজাতি ঠিক করবে যে আজ, এই মুহুর্ত থেকে আমরা ধর্ষন করবনা, আমাদের সামনে যেই আসুক যাই আসুক, আমরা তার উপর ঝাপিয়ে পড়বনা, সেদিন থেকে আর ধর্ষন বলে কিছু থাকবে না। যতদিন না পুরুষ মানুষ নিজেদের শুধু পুরুষ না মনে করে মানুষ বলে ভাবতে শিখবে অর্থাৎ নিজের বিবেক সম্পর্কে সচেতন না হবে, ততদিন ধর্ষনের কোন প্রতিকার হবেনা। তা মেয়েরা যতই শিক্ষিত, হোক আর পর্দা করুক, আর দেশের সরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করুক (যেই শাস্তি এখনো দেয়া হয়নি), আসলে গাছের শিকড়ে যদি পোকা ধরে তাহলে আগায় কীটনাশক দিয়ে কোনো লাভ হয়না। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে আমরা যে সবাই মানুষ এটা শিখাতে হবে, ছোটবেলায় পড়া "তুমি অধম বলিয়াই আমি উত্তম হইব না কেন" এটা শুধু বুলি আউরালে চলবে না, অন্তরে উপলব্ধি করতে হবে।



সেদিনের আশায় রইলাম।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:০১

না পারভীন বলেছেন: আজ নারী মানেই উন্মুক্ত পণ্য ।
ডাঃ ইভা এক বেদনা,আর দীর্ঘশ্বাসের নাম । |-) |-) :-<

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮

ভিটামিন সি বলেছেন: বোধাই কোনহানকার। মাথায় ভিটামিন সিএর অভাব আছে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৯

শিশু বিড়াল বলেছেন: কেন রে ভাই? কি দেখে আপনার মনে হল যে আমার মাথায় ভিটামিন সি এর অভাব আছে?

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৫৯

খোরশেদ জয় বলেছেন: বুঝলাম । কিন্তু প্রধান সমস্যাটা কোথাই জানেন ? যারা এগুলা করে তারা ব্লগ পড়ে না ।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪৬

শিশু বিড়াল বলেছেন: ব্লগ পড়ে, আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজই এরকম অনেক মানুষ আছে যারা ভদ্রতার আড়াল নিয়ে তলে তলে কার্যসিদ্ধি করে যায়।পারলে বাসার কাজের মেয়ে তো দুরের কথা, নিজের মেয়ে, নিজের ভাই এর মেয়ের দিকেও হাত বাড়ায়।আমরা সবই দেখি, বুঝি, তাও চুপ করে থাকি। কারন আমরা যে ভদ্রলোক, তাই

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৭

অন্যরকম একজন বলেছেন: ওইসব লোকের কথা শুনলে মনে হয় দুনিয়াবাসী যখন চিকনি চামেলি বা শীলাদের দেখেনি তখন কোন ধরষন হত না।আমাদের দেশে এই অপরাধ বাড়ার প্রধান কারন হল এর বিচার না হওয়া।বোরকা আর স্কার্ফের সংখ্যা গত কয়েক বছরে যত বেড়েছে নারী নির্যাতনের সংখ্যা কি ততটা কমেছে?উত্তরটা যে কোন মানুষেরই জানা।আমার কথা একটাই।পুরোপুরি রেলিজিয়াস ভিউপয়েন্ট থেকে কেউ বোরকা আর স্কার্ফ প্রোমোট করতে চায় ত করুক।কিন্ত,স্রেফ মাথাটা খোলা ছিল বলে একজন ধর্ষিত হওয়া ডিজার্ভ করে -এই মিথ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।কেউ উলংগ হয়ে চললেও তা এই ঘৃ্ন্য অপরাধকে জাস্টিফাই করে না ।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৩

শিশু বিড়াল বলেছেন: বিচার যে কবে হবে উপরওয়ালাই জানে।কিছু ছেলে যখন এমন কথা বলে তখন মনে হয় এদের কি একটুও আত্মসম্মান নেই? নিজেদের মধ্যে এই বোধটুকু কেন আসেনা যে কেউ ন্যাংটা হয়ে চললেও আমি তাকে স্পর্শ করবনা, এটুক ভাবতে কি খুব বেশি ভাল হতে হয়? এতই কি কঠিন?


আমি কি তোমাকে চিনি? :) আমার এক বন্ধুও এই নামে ফেসবুকে আছে। তুমি কি সেই?

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫০

ফকির সাইঁ বলেছেন: সুনদর লেখা, আসোলে জানেন কি আমরা কেউ সেইফ না। আর ডাঃ ইভা এক বেদনা,আর দীর্ঘশ্বাসের নাম । করো গায়ে হাত তোলা আমার সব চেয়ে কঠিন কাজ মোরওভার ঐ শয়তান টাকে পেলে....

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০১

শিশু বিড়াল বলেছেন: এটা ভাল বলেছেন আমরা পুরুষ বা নারী কেউই আসলে নিরাপদ না, আপনি যদি পুরুষ হন তাহলে সকালে বের হয়ে রাতে যে সুস্থ শরীরে বাসা ফিরতে পারবেন তারও আসলে কোন নিশ্চয়তা নেই। আর মেয়ে হলেতো জীবন ও সম্মান দুই ই হারানোর ভয় থাকে।

৬| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৩৭

মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: নিজেদের মধ্যে এই বোধটুকু কেন আসেনা যে কেউ ন্যাংটা হয়ে চললেও আমি তাকে স্পর্শ করবনা, এটুক ভাবতে কি খুব বেশি ভাল হতে হয়? এতই কি কঠিন?

আপনার এই কথাটুকু আমাকে স্পর্শ করেছে। আর বেশি কিছু বলবো না।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫১

শিশু বিড়াল বলেছেন: আশা করি আপনার মত আরও কিছু মানুষকে আমার লেখা কিছুটা হলেও স্পর্শ করুক, তবেই আমার কষ্ট সার্থক হবে :)

৭| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

আমিনুর রহমান বলেছেন: দারুন লিখেছেন।
আমরা যদি কামোদ্দীপক কিছু দেখে ধর্ষন করি তাহলে আর পশুর সাথে মানুষের তুলনার রইল কোথায়!!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫

শিশু বিড়াল বলেছেন: আসলে পশুরাও কামোদ্দীপক কিছু দেখে ধর্ষন করেনা। পশুর সাথে এসব মানুষের তুলনা করলে আসলে পশুদেরই অপমান হয় :(

ধন্যবাদ আপনাকে :)

৮| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৪

অন্যরকম একজন বলেছেন: হুম।আমিই সে।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৫

শিশু বিড়াল বলেছেন: হিহিহিহি :P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.