নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা ভাবি, যা দেখি, যা বিশ্বাস করি

আমি খুব সাধারন একটা মানুষ। সাধারন হয়েই থাকতে চাই

শিশু বিড়াল

স্বাধীন দেশের স্বাধীন এক নাগরিক। পেশায় ডাক্তার হলেও নেশা ছবি আঁকা। সবই সখের বশে। ভালবাসি দেশ ও দেশ এর মানুষ।

শিশু বিড়াল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজকের সংবাদ (আমার এলোমেলো জীবনের একটি পাতা)

০১ লা মে, ২০১৩ বিকাল ৪:১৫

কিছুদিন ধরে লেখার কিছু খুজে পাচ্ছি না। সবাই সবকিছু বলে ফেলছে, আমি আর নতুন কী বলব। তবু আজকে হাতে কলম...দুঃখিত কী-বোর্ড হাতে নিলাম। ঠিক করলাম আজকে থেকে ডায়রী লেখার মত কিছু কথা লিখব। যা মনে আসে তাই। কারো ভাল লাগুক না লাগুক, কেউ পড়ুক না পড়ুক, আমার লেখাতেই আমার আনন্দ :)



আজকে বড়ই ব্যাস্ততাপুর্ন একটি দিন গেল। সকাল বেলা ৮।৩০ এ হাসপাতালে ডিউটি করতে গেলাম। ঢুকতে না ঢুকতেই এক রোগী হাজির। ভাল কথা। কাজ কর্ম করলাম। এক প্রফেসর (গাইনির মাথা মানে হেড অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট) এসে রাউন্ড দিতে আসলেন এবং পুরো ওয়ার্ড শুদ্ধ রোগীর সামনে আমাকে অনেক ঝাড়লেন। সম্পুর্ন বিনা কারনে। এবং আমার মাথা ওনার কথা শুনে এতই গরম হয়ে যাচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল যেকোন মুহুর্তে ওনার মাথায় আমি বাড়ি মেরে বসব (যারা আমাকে চেনে তারা জানে আমি খুবই মাথা গরম মানুষ অস্থির প্রকৃতির মানুষ) রোগীরা কোন এক অজানা কারনে আমাকে বিশেষ স্নেহের চোখে দেখে। পরে তারাও আমাকে স্বান্তনা দিল যেন মাথা গরম না করি।



প্রফেসর এর যে কথাটা শুনে আমার মাথায় আগুন লেগে যাচ্ছিল প্রায় তা হল আমি নাকি দায়িত্বহীন!! আমি নাকি কোন কাজ ঠিকমত করিনা। ওনাকে তখন আমার খুব বলতে ইচ্ছা করছিল ওনার নিজের দায়িত্ববান (!) হবার ঘটনা। খুলেই বলি তাহলে। কিছুদিন আগে এক রোগী ভর্তি ছিল আমার ওয়ার্ডে। মহিলার বয়স ৩০ বছর, পেট এ ৩টি বাচ্চা (ট্রিপলেট) এবং ওনার এর আগে আরও ২টি বাচ্চা হয়েছে, দুটিই সিজারিয়ান অপারেশন। এবারও সিজার করতে হবে জানা কথা। তো ঐ রোগী কয়েকদিন ধরেই বলছিল যেন ওনার অপারেশন টা একটু তাড়াতাড়ি করে ফেলা হয়, তার অনেক কষ্ট হচ্ছে এত বড় পেট নিয়। আর এখন অপারেশন করাও যায়, সময় হয়ে গিয়েছে। আমি যেন তার হয়ে প্রফেসর কে অনুরোধ করি। আমি তাকে বলেছিলামও কিন্তু তিনি আমার কথা শুনলেন না। বললেন উনিই বুঝবেন কখন অপারেশন করতে হবে। আমি পুচকি ডাক্তার আমার চেয়ে উনি ঢের ভাল জানেন। তাইনা?



ঘটনা ঘটল এর ২ দিন পর রাতে। আমার নাইট ডিউটি ছিল। রাত ২টার সময় এই রোগীর প্রসব বেদনা শুরু হল। পানি ভেঙে গিয়েছে, পুরো বিছানা পানিতে ভেসে যাচ্ছে। আমি নিয়ম মাফিক প্রফেসর কে ফোন দিলাম। বললাম যে ওনার ব্যাথা শুরু হয়েছে, নরমাল ডেলিভারি তো সম্ভবই না, আপনি প্লীজ এখন চলে আসুন তাহলে অপারেশন এর প্রস্তুতি নেই। উনি বললেন যে উনি এখন আসতে পারবেন না। আমার খুব খারাপ লাগল। পুরো ওয়ার্ডে আমি একা ডাক্তার, আমার সেই পরিমান নলেজ এখনও হয়নি যে একা একটা ডেলিভারি করব আর এটা তো সিজার অপারেশন!! তার উপর পেটে ১টা না ৩টা বাচ্চা!! যেকোন মুহুর্তে ইউটেরাস ফেটে যেতে পারে। কি করি! কি করি!! আর রোগী যে কী কষ্ট পাচ্ছিল না দেখলে বিশ্বাস হয়না। আমি ওনাকে হাত ধরে যেটুক পারি স্বান্তনা দিলাম। এভাবেই কাটল পরবর্তি ৪ ঘন্টা। মাঝে আরো কয়েকবার প্রফেসর কে ফোন দিয়েও পাইনি, উনি ধরেননি। ভোর ৬টায় উনি ফোন ধরলেন এবং আমি বললাম যে আপনাকে আসতেই হবে নাহলে রোগীর যেই অবস্থা এক সাথে ৪টা জীবন ঝুকির মুখে আছে। আমি অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছি চলে আসুন। এবার তিনি রাজি হলেন। আমি বাকি কাজ কর্ম যা লাগে অপারেশনের জন্য রেডী করে রোগী কে ওটি তে পাঠিয়ে দিলাম।



এখন কথা হল যদি ঐ রাতে এই রোগীয়র পেট ফেটে যেত, রোগী তো মারা যেতই, বাচ্চা ৩টাও মারা যেত, সেটার দায়ভার কে নিত? ওনার মত বড় প্রফেসর এর কিছু হয়ত যায় আসত না, আর আমার যায় আসলেও আমার এখনও ঐটুক শিক্ষা নেই যে একা একটা সিজার অপারেশন তাও ট্রিপলেট কেস এর করে ফেলব। মন খুব খারাপ ছিল সেদিন। খুব ভয় পেয়েছিলাম। অপারেশন হল। আল্লাহর অশেষ দয়ায় বাচ্চা ৩টা মা সহ সুস্থ হয়েছিল। আল্লাহর রহমত না থাকলে এটা কোনভাবে সম্ভব ছিল না। ৩টা বাচ্চাই মেয়ে। বাচ্চা দের মা আমাকে বলল ওনার মেয়েদের জন্য ৩টা নাম ঠিক করে দিতে। এর আগে ২টা মেয়ে আছে কথা ও কনা তাদের সাথে যেন পারলে মিলিয়ে রাখি। আমি বললাম কংকা, কানন আর কিংশু। ওনার কংকা আর কানন নামটা পছন্দ হয়েছিল, কিংশু নিয়ে একটু আপত্তি ছিল। পরে আর জানা হয়নি উনি কী নাম রেখেছেন কারন এর পরে আমার যেদিন ডিউটি ছিল ওনার সাথে এ ব্যাপারে আর কথা হয়নি।



যাই হোক উনি আর ওনার পরিবার সুখে থাকুক ভাল থাকুক এই কামনাই করি।



নিজের মাথা গরম হবার কারন বলতে গিয়ে অনেক কথাই বলে ফেললাম। কিছু মনে করবেন না। এখন আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। আসলে এরকম একটা মানুষ যখন আমাকে দায়িত্বহীন বলে তখন সহ্য করা আমার জন্য অনেক কঠিন।



সবাই ভাল থাকুন। শুভ রাত্রি



(গতকাল রাত ১২টায় লেখা হয়েছিল। এখন পোস্ট করলাম )

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: কারন কিংশু শুনলে হিসুর কথা মনে পড়ে
স্কুলের বান্দরগুলান তো এক কাঠি সরেস

০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১০:২৮

শিশু বিড়াল বলেছেন: কিসের সাথে কী!!!

২| ০২ রা মে, ২০১৩ ভোর ৪:২৯

প্রিন্স হেক্টর বলেছেন: আপনে ভাল ডাক্তার হন। এই দুয়া করি। :)

০২ রা মে, ২০১৩ ভোর ৫:১০

শিশু বিড়াল বলেছেন: ভাল হব কিনা জানিনা তবে এতটা নির্দয় হবনা নিশ্চিত।

৩| ০২ রা মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬

একজন আরমান বলেছেন:
সবাই এক না আপু।
শুভকামনা সব সময়।

০২ রা মে, ২০১৩ দুপুর ২:১৫

শিশু বিড়াল বলেছেন: আমিও জানি সবাই এক না। এক হলে দুনিয়া টিকত না...

৪| ০২ রা মে, ২০১৩ রাত ১১:১০

বাবুই পািখ বলেছেন: খুব মনোযোগ দিয়ে আপনার লেখাটি পড়েছি ।

আপনার আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ মুগ্ধ করার মতই।

শুভকামনা থাকবে সবসময়।

০৩ রা মে, ২০১৩ সকাল ১১:০৩

শিশু বিড়াল বলেছেন: চেষ্টা করি। আপনিও সবসময় ভাল থাকবেন এই কামনা করি :)

৫| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ২:৫৯

অ্যামাটার বলেছেন: একজন প্রফেসরের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে মানুষের জীবন... হায়রে!

০৩ রা মে, ২০১৩ সকাল ১১:০৩

শিশু বিড়াল বলেছেন: সব প্রফেসর না, তবে কিছু কিছু প্রফেসর এমনই

৬| ০৩ রা মে, ২০১৩ রাত ৯:৫৮

মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: মন খারাপ করো না আপু, অনেকেই অকারনে ভুল বুঝে।

ভালো থাকবেন।

১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

শিশু বিড়াল বলেছেন: আপনিও ভাল থাকবেন ভাইয়া :)

৭| ০৪ ঠা মে, ২০১৩ রাত ১২:০৬

মশিকুর বলেছেন:
সবাই একরকম না, আপনার মত দায়িত্ববানও আছে অনেকে। যেদিন অনেক অভিজ্ঞতা হবে সেদিন, একই রকম দায়িত্ববান থাকবেন ইনশাল্লাহ......

১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

শিশু বিড়াল বলেছেন: দোয়া রাখবেন :)

৮| ১০ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১

সোহাগ সকাল বলেছেন: নতুন ছবি কই? X(

১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

শিশু বিড়াল বলেছেন: আলসেমি করে আঁকা হচ্ছেনা অনেকদিন। আঁকা হলে দেখাবো :)

৯| ১৫ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

গোলাপ ভাই বলেছেন:

কংকা, কানন আর কিংশু চমৎকার নাম।


আইচ্ছা পুচকি ডাক্তার তোমার প্রফেসরের নামটা কি যদি সুযোগ পাই তাইলে ওর সিজার অপারেশন করবার চাই :P =p~ ;)

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:১৫

শিশু বিড়াল বলেছেন: নাম তো বলা যাবে না, সেটা আমার ডাক্তারির নিয়মের বরখেলাপ হয়ে যাবে :)

১০| ১৫ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:


দায়িত্বহীন মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশী দায়িত্বশীলতার কথা বলে। বেশী মুঞ্চাইলে মাথাটা ফাটাইয়া দিয়ো। তেমন কিছু হবে না রে পিচ্চি :P

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:১৬

শিশু বিড়াল বলেছেন: আমারও অনেক ইচ্ছা করে। কোন একদিন হয়ত শুনবেন ফাটিয়েও দিয়েছি :)

১১| ১৫ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

রুপম শাহরিয়ার বলেছেন: প্রফেসারের নামে হাসপাতালের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছে কমপ্লেন করলেন না কেন?

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:১৭

শিশু বিড়াল বলেছেন: আমি জানিয়েছিলাম, কিন্তু আমি চুনোপুটি ডাক্তার, ওনাদের নামে কিছু বলেও লাভ হয়না :(

১২| ১৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৭

রাইসুল সাগর বলেছেন: আমিনুর রহমান বলেছেন:


দায়িত্বহীন মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশী দায়িত্বশীলতার কথা বলে। বেশী মুঞ্চাইলে মাথাটা ফাটাইয়া দিয়ো। তেমন কিছু হবে না রে পিচ্চি :P

আমিলুল থুক্কু খালি ভুলে হয় সরি ভাই। এর কথাটাই বলে গেলাম।

২০ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:৪২

শিশু বিড়াল বলেছেন: আপনিও আমাকে পিচ্চি ডাকা শুরু করলেন!!! এ কি বিপদ !!
মাথা ফাটাইতে তো বড়ই মন চায়, হয়ত একদিন ফাটায়ও দিব, খবরে দেখবেন, ডাক্তারের হাতে আরেক ডাক্তারের মাথা ডিমের ন্যায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রেকিং নিউজ!!!

১৩| ২০ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

রাইসুল সাগর বলেছেন: আপনি সাদরে আমন্ত্রিত। ব্রেকিং নিউজঃ রাইসুল সাগর শিশু নামক ডাক্তার বিড়ালকে মাথা ফাটানোর আমন্ত্রন জানাইছে। দেখার বিষয় তিনি ফাটাইতে পারেন কিনা না নিজেই ফাটাইতে গিয়া পটে গিয়ে নিজের মাথা নিজেই ফাটান। :P :P :P :P

১৪| ২২ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:১০

নবীন বালক বলেছেন: আপনি যে আপনার কাজে এবং বিবেকের কাছে সৎ আছেন এটাই মুল বিষয় । মাথা গরম কইরা কোন লাভ নাই।

২২ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:২৭

শিশু বিড়াল বলেছেন: কতদিন মাথা ঠান্ডা রাখতে পারি কে জানে :(

১৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ভাল লাগল... আল্লাহ আপনাকে ভাল ডাক্তার হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.