নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যা ভাবি, যা দেখি, যা বিশ্বাস করি

আমি খুব সাধারন একটা মানুষ। সাধারন হয়েই থাকতে চাই

শিশু বিড়াল

স্বাধীন দেশের স্বাধীন এক নাগরিক। পেশায় ডাক্তার হলেও নেশা ছবি আঁকা। সবই সখের বশে। ভালবাসি দেশ ও দেশ এর মানুষ।

শিশু বিড়াল › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকিটাকি ভাবনা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪

বাসার কাজের বুয়া গত ৬ মাস ধরে ভ্যাজাইনাল ক্যন্ডিডিয়াসিস এ আক্রান্ত (যৌনাঙ্গের ছত্রাকজনিত রোগ, মুলত চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও সাদা স্রাব এর উপসর্গ তবে সংক্রামক নয়)। রোগের উপসর্গ বলার পর তাকে ওষুধ লিখে দেই আর বলি দেই স্বামী সহবাস ৪ সপ্তাহ বন্ধ রাখতে আর ওষুধ ক্ষতস্থানে লাগাতে।

২ সপ্তাহ পর বুয়া জানাল তার চুলকানি কমেছে, আগের চেয়ে ভাল আছে। তারও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ৩য় সপ্তাহে সে বলল আবার চুলকানি বেড়েছে, ক্ষতস্থান থেকে চামড়া আরও খসে পরেছে। কি হয়েছে জানতে চাইলাম। বলল তার স্বামী আর অপেক্ষা করতে চায়না। তাই মানা করার পরেও জোর করে শারীরিক মিলন স্থাপন করেছে এবং করছে। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ওষুধ লাগানোর পর যে ঘা গুলো শুকিয়ে আসছিল সেগুলো ঘর্ষণের কারনে আবার বেড়ে গিয়েছে। বুয়াকে বুঝিয়ে বললাম যে যতই ওষুধ দেয়া হোক না কেন যদি অন্তত ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ সহবাস বন্ধ না রাখে এই ইনফেকশন সারানো সম্ভব না আমার পক্ষে। বুয়া বলে সে বুঝে কিন্তু তার স্বামী শুনবে না, সে বড়জোর ১০ দিন অপেক্ষা করতে পারে তারপর তাকে আর ঠেকানো যায় না। আর না করলে গালাগালি, মারামারি শুরু হয়। বললাম আমার কাছে নিয়ে আসতে, আমি বুঝিয়ে বলব কিন্তু বুয়ার স্বামী সেটাতেও রাজি নয়। কনডম ব্যবহার করে করতে বললাম তাতেও নাকি রাজি নয়। এমনকি এইডস হবার ভয়ও দেখাতে বলেছি সেটাতেও কাজ হয়নি। মোটকথা তার স্বামী সম্পূর্ণ অসহযোগী ভুমিকা পালন করছে। আমি কি করব কি বলব আর বুঝতে পারছিলাম না। এখনও সে তার ঘা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এটা গেল বাসার বুয়ার কথা। আমার পরিচিত এক ডাক্তার আপা আছেন। উনি এফসিপিএস পার্র্ট ২ দিচ্ছেন। আমাদের সমাজ যে শ্রেণীর মেয়েকে "লক্ষ্মী মেয়ে" বলে তার সবকটা গুনই এই আপার আছে। হাসপাতালে কাজ করে ঘরের কাজ করা, বাচ্চাকে মানুষ করা, মোটকথা একটা সংসারে যা করা লাগে কোনটাই তার করা বাদ যায় না। ৪ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে আছে। স্বামী ইঞ্জিনিয়ার। দেখে নিতান্তই ভাল মানুষ মনে হয়। ভদ্র সভ্য চেহারা, মুখে দাড়ি, আল্লাহভক্ত মানুষ।

একদিন দেখি আপুর মুখ চোখে কালশিটে দাগ, গাল ফোলা। কি হয়েছে জানতে চাইলাম বলে স্বামী মেরেছে। কেন মেরেছে? তরকারি কম ছিল আরও বেশি কেন ছিলনা এটা নিয়ে মেরেছে। আমি ভাবলাম বাহ! কি চমৎকার কারন নিজের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার। বড় কারন আর ছোট কারন তো কথা না, স্বামী মানেই তার মার দেবার অধিকার আছে। এত গুলো টাকা দিয়ে বিয়ের সময় কিনেছে, চাইলে মারতেই পারে, তাইনা???

আরও কথা বলে জানলাম এই ডাক্তার আপা প্রায়ই তার স্বামীর কাছে মার খান। মার খেতে খেতে ওনার কাছে এই ব্যাপারটা এতই স্বাভাবিক ঠিক যেন ভাতের সাথে আচার খাওয়া। মার খাবার দুই দিন পরে স্বামী একটা ভাল কথা বললে সে সব ভুলে যায়। কিন্তু আবারও কিছু নিয়ে গণ্ডগোল হয়, আবারও সেই একই কাহিনী। সমস্যা হল আপার মেয়ে তাদের এসব মারামারি দেখে এখন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। স্কুলে রেজাল্ট খারাপ করছে, সবসময় নাকি ভয়ে ভয়ে থাকে। কিন্তু সে যে মার খায় এটা নিয়ে তার তেমন ভ্রূক্ষেপ নেই। স্বামী মানুষ, আদর করে, লাথিও মারে, কি করা যাবে। স্বামী বদ্ধ ঘরে চুমু খেলে যেমন শব্দ হয় না, থাপ্পড় মারলে তার শব্দও যেন কারো কানে না যায় সে দায়ও তো বউ এর তাই না? কি দরকার গোলমাল করার!

কৌতূহল হল এই ব্যক্তির সাথে ওনার দাম্পত্য জীবন কেমন তা জানার। বললেন সবই নিতান্ত অনিচ্ছায় অথবা জোরপূর্বক "করতে হয়" বলে করা। আদর বলে কিছু নেই, কোন প্রস্তুতি নেই, ওনার স্বামীর যখন করতে মন চাইল, যখন উত্তেজনা আসল তখন তাকে আরও উত্তেজনা দিয়ে উত্থিত করতে হবে, এবং সেটা হলে এরপর মনমতো "সেবা" প্রদান করতে হবে তাকে। এটাও তার দায়িত্ব! কিন্তু তার স্বামী কোন কিছু করতে রাজি নয়। সেই ভদ্রলোক পর্ণ মুভি দেখেন। পর্ণ দেখে দেখে এখন সেটাকেই তিনি বাস্তব বলে ধরে নিয়েছেন। ফলে যৌনাঙ্গ উত্তেজিত হলেও যথেষ্ট পরিমাণ উত্থিত হয়না। এটাও এখন আপার দোষ!! সে কেন পারেনা তাকে আরও উত্তেজিত করতে। এবং এমন হতে হতে আপা নিজেও এখন বিশ্বাস করা শুরু করেছেন হয়ত তারই দোষ!!

আরও কথা বলে বুঝলাম তাকে আমি যতই নিজের আত্মসম্মান রক্ষা করার পুঁথি পড়াই না কেন কোন লাভ হবে না। মানসিক পরজীবীত্বের শিকড় অনেক দূর চলে গিয়েছে। তাই ওকথা বেশি বাড়ালাম না। থাকুক উনি ওনার মত। শুধু এটুক বললাম, স্বামীর প্রেমে নিজের জীবনের তরকারি তো বানিয়ে ফেলেছ আপু খুব ভাল কথা, অন্তত নিজের মেয়ের কথাটা একটু ভেবো। এমন চলতে থাকলে অর মানসিক বিকাশ অসম্ভব ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে যা বুঝতে বুঝতে তোমাদের হয়ত অনেক দেরী হয়ে যাবে। কতটুকু উনি শুনবে জানিনা।

এমন অনেক গল্প আছে। শুধু দুটি উদাহরণ দেখালাম। এটুক বলার জন্য যে আগে আমার ধারনা ছিল হয়ত মেয়েদের শিক্ষার অভাব বলে এখনও এদেশের মেয়েরা নির্যাতিত। ভুল ভাবতাম। শিক্ষা, পেশা, সামাজিক অবস্থান কোন সমস্যা না। সমস্যা আমাদের মেয়েদের মধ্যে। নিজেদের আত্মসম্মান বলে যে একটা বস্তু থাকতে হয় সেই তাগিদটাই একশ্রেণীর মেয়েদের নেই। এর সাথে অন্য কোন কিছু সম্পর্কিত না। বাসার কাজের বুয়া আর একজন ডাক্তার মেয়ের মধ্যে আসলেই কোন পার্থক্য নেই যদি না একটা মেয়ে নিজেকে নিজে আগে সম্মান করে, নিজেকে সবার স্বীকৃতি পাবার আগে নিজে স্বীকৃতি দেয় যে "হ্যা, আমি একজন মানুষ, আমি আমার সাথে কোন অন্যায় হতে দেব না আর অন্যায় হলে তা রুখে দাঁড়াব। ভাঙব কিন্তু মচকাব না।"

যেই বৈশিষ্ট্য একটা পুরুষকে বীরপুরুষ করে তোলে সেই একই বৈশিষ্ট্য একটা মেয়েকে সমাজের চোখে করে বেয়ারা, বেয়াদপ। কেন? কারা করেছে এই নিয়ম? কবে করেছে? কাদের সুবিধার জন্য করেছে?
যারা নিজেই নিজেকে অত্যাচার করার জন্য পেতে দেয়, অন্যায় হতে দেখেও কিছু বলে না, যে যা খুশি বলল আর করল চুপচাপ সয়ে যায় এবং এরপর কাঁদতে কাঁদতে দুখবিতান গায় তবে সেই মানুষদের তা হোক সে মেয়ে কি ছেলে, কি করবেন আপনি? তাদের দুঃখের কথা শুনে মায়া লাগতে পারে, কষ্ট হতে পারে তাদের জন্য। কিন্তু সম্মান নয়। করুণা ফ্রি ফ্রি পাওয়া খুব সহজ, কিন্তু সম্মান অর্জন যেমন কঠিন রক্ষা করাও কঠিন।

আমাদের দেশের মানুষের বিশেষ করে মেয়েদের এক শ্রেণীর মানসিক পঙ্গুত্ব এই পর্যায়ে পৌছেছে যে তারা যে সবার আগে মানুষ, এর পর অন্য কিছু এটাই ভুলে গিয়েছে। খুব দরকার মনে করানোর। খুব বেশি দরকার। তাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চায়। যদি নিতান্তই ভুলে বসে থাকতে চায় যে তারা মানুষ তবে তাদের অধিকার নেই সম্মান পাবার, তারা কেবল করুণারই পাত্র, তাই থাকবে চিরকাল।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৩

নিকষ বলেছেন: আচ্ছা

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

নতুন ছবি দেখতে চাই

৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

নতুন ছবি দেখতে চাই

৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: বাংলাদেশে প্রতিরাতে হাজারো নারী তার স্বামীর কাছে ধর্ষিত হচ্ছে :( :( :(

৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০

খাটাস বলেছেন: হাজার বছরে জন্ম নেয়া প্রভুত্ব আর দাসত্বে পরিবর্তন দরকার।
তবে দাসত্ব মুক্তির উপায়ে মাঝে মাঝে অতি চর্চা চলে।
পোস্ট অনেকাংশে সত্যি।

৬| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: মানসিক পরজীবীত্বের শিকড় ছেড়ে বেড়িয়ে আসা খুব কঠিন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের জন্য । আমারা কেন যে একটু মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি না !

ভালো থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.