নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি আসবে বলেই আমার দ্বিধারা উত্তর খুঁজে পায়নি।।

এই ফটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো বেঁচে নেই ...

আদনান মাননান

আমি হয়তো মানুষ নই , মানুষগুলো অন্যরকম...শখ করে লেখালেখি , পেশায় একজন শিক্ষক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াই।

আদনান মাননান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি মা ...এখন আমি অনেক স্বার্থপর

১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:২৫

অনেকের মতই হতে চেয়েছিলাম এই এক জীবনে। কিন্তু কারও মতই হইনি। কিন্তু একজন মানুষ সবসময় আমার মতই হতে চেয়েছেন এবং আমার মত করেছেন সবকিছু। আমি যখন খুব ছোটবেলায় ঘুমাতে যেতাম, সেই মানুষটাও ঘুম না পাওয়া সত্ত্বেও ঘুমাতে যেত আমার জন্য। আমি যখন খেতে চাইতাম না একজন মানুষ বিরামহীন আমার পেছনে দৌড়াত; অদ্ভুতভাবে আমাকে খুশি করার জন্য খেত সেসব তিক্ত যত খাবার। খিদেয় একজন মানুষের পেট জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু আমরা যতক্ষন বাসায় যেতাম না ততক্ষন তিনি ভাত ছুঁয়েও দেখতেন না। বাসায় উৎসব, কিন্তু একজন মানুষ একটা দানাও ছুঁয়ে দেখবেন না যতক্ষন না শেষ মানুষ টি পর্যন্ত খাচ্ছে, শেষ রাত্রিতে তার প্লেটে থাকবে রান্নার পুড়ে যাওয়া অংশের উচ্ছিষ্ট। যার পুরো জীবন টাই উৎসর্গ করেছেন তার সন্তান দের সামান্য আনন্দের জন্য, হাসির জন্য, যার কোন ব্যক্তিগত জীবন ছিলনা সেই মানুষটি “মা”।

আমার নিকটাত্মীয় কিংবা বোনদেরকে আজকে যখন দেখি একটা বাচ্চার জন্যই এত এত শিক্ষক- অঙ্কের, গানের, ছবি আঁকার, ধর্ম শেখার জন্য হুজুর, আবার বই পড়তে ব্রিটিশ কাউন্সিল। আমি তখন অবাক হয়ে ভাবি, এই এক জীবনে আমার মা কতগুলো শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন? জীবনে প্রথম কবিতা মায়ের কাছে শেখা, মজা করে অঙ্ক করা মায়ের কাছে শেখা, রবিন্দ্রনাথ আর নজরুল কে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মা, প্রথম বাংলাদেশের পতাকা আঁকতে শিখিয়েছিলেন মা, ধর্ম একজন মানুষ কে নৈতিক হতে শেখায়,সংযত করে এই উপলব্ধির বীজ প্রথম বুনে দিয়েছিলেন মা। আমার কাছে সবচেয়ে বড় আর আন্তরিক শিক্ষকটির নাম আমার মা জোবায়দা লুৎফুন্নাহার কাদেরী।

এই দূর পরবাস থেকে মাকে ফোন দিলেই মুঠোফোনে সবার আগে যেই কথাটি শুনতে হয় সেটি হল- তুই দেশে ফিরে আসবি তো? প্রতিদিন একবার করে বাবা মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করি দেশে ফিরে যাওয়ার। কারন তারা বিশ্বাস করেন- দেশকে অনেক কিছু দেয়ার বাকি আমাদের প্রজন্মের। আমার মা বিশ্বাস করেন দেশের প্রতি আমার যে ঋণ তা আমার শরীরের সমস্ত রক্তের ফোয়ারাতেও শোধ হবেনা। এভাবেই আমার এবং আমাদের মাঝে দেশাত্মবোধের আর দেশকে ভালবাসার শেকড় প্রোথিত করে দেন আমাদের সেই চিরকালের বনফুলের পাপড়ি মায়েরা।

যখনই কোথাও বন্যা বা ঘুর্নিঝড় হত- সাথে সাথে আমার মায়ের প্রশ্ন- কিছু না করে বসে আছ কেন? ঈদের বোনাস মায়ের হাতে দিলে তার প্রথম কথা- এই টাকা দিয়ে তোমাদের বাড়ী বাঁশখালির অনাথ শিশুদের ঈদের কাপড় কিনে দেব। কতটা উদার, মানবিক আমাদের মায়েরা! কখনও তারা জাহানারা ইমাম হয়ে রুমি কে যুদ্ধে পাঠান, কখনো সুফিয়া খাতুন হয়ে শহীদ আজাদের স্মৃতিকে সঙ্গে নিয়ে আজীবন ভাত না খেয়ে থাকেন , কখনও রমা চৌধুরীর মত রাস্তায় খালি পায়ে হেটে বেড়ান কারন মাটির নিচে যুদ্ধে হারানো তার সন্তানে শুয়ে আছে। আমাদের মায়েরা আজও গ্রাম থেকে নগরে টলমল করে থাকা অশ্রুবিন্দু।

আমার কখনই দুঃখ বা আক্ষেপ হয়নি এই ভেবে যে আমার মা চিকিৎসক, বিজ্ঞানী বা শিক্ষক নন। আমি গর্ব বোধ করি আমার মা এবং তার মত লক্ষ লক্ষ গৃহিণী মা কে নিয়ে- যারা চিকিৎসক, বিজ্ঞানী বা শিক্ষক নন । কিন্তু তারা জন্ম দেন বিজ্ঞানীর, তৈরি করেন একজন প্রকৌশলী কে, ভিত্তি গড়ে দেন একজন চিকিৎসকের, চেতনা বুনে দেন আগামীদিনের নেতার মাঝে। আজকের মা দিবসে পৃথিবীর সব নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগী আর নির্মোহ মায়েদের জন্য অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

আমি জানি পত্রিকায়, ফেসবুকে, টুইটারে বা ব্লগে মাকে নিয়ে লিখলে অনেক বেশি নেকামো আর কৃত্রিমতা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মত কিছুটা রক্ষণশীল আর আটপৌরে বাঙালী পরিবারে মাকে কখনও মুখ ফুটে বলা হয়না ভালবাসার কথা, কোথায় যেন একটা দূরত্ব, একটা সংকোচের পর্দা। ভালবাসা প্রতিদিনের তবে আজ একদিনের জন্য হলেও পুরো পৃথিবীকে চিৎকার করে বলতে চাই –মা, তুমি অসাধারন , তুমি বৃষ্টির পর শেষ বিকেলের কোমল আকাশকে ধারন কর, তুমি ভোরের ঠান্ডা বাতাসের মত স্নিগ্ধ, তুমি আমার রক্তের প্রতিটি কণিকার প্রবাহের সাথে মিশে আছ। বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে।

আজ বিশ্ব মা দিবস। কাতালগঞ্জের বত্রিশ নাম্বার বাসাটিতে একজন মা অধীর প্রতীক্ষায় বসে থাকবে। মুখে হয়ত কিছুই বলবেনা কিন্তু মনে মনে অপেক্ষা করবে- বিকেল হলেই তার ছোট্ট ছেলেটি আড়ং কিংবা নবরুপা থেকে কেনা একটা আকাশী রঙের মিহি সুতোয় বোনা শাড়ী নিয়ে এসে মায়ের হাতে দেবে। কিন্তু পৃথিবীটা খুব নির্মম। তার সেই অযোগ্য, হতভাগা ছেলেটা বড় বিজ্ঞানী আর অনেক বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্নে মাকে ছেড়ে জুলিয়া গিলার্ডের দেশে এক উজ্জ্বল শহরে বসে আছে। আমরা নিজেদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে আমাদের পেছন ফিরে তাকানোর সময় নেই, আজীবন নিজেকে উৎসর্গ করা মানুষ টিকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। এখন আমি অনেক বড় হয়ে গেছি মা, অনেক বেশি স্বার্থপর!

(লেখক : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক এবং বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত।)

দৈনিক পুর্বকোনে ১২।০৫।২০১৩ তে প্রকাশিত মা দিবসের বিশেষ লেখা-

Click This Link

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:০৫

সজল৯৫ বলেছেন: লিংকটি শেয়ার করে ভাল করেছেন। লেখাটি অনেক ভাল তাই। পূর্বকোণ পড়াহয়না তাই হয়তো অপঠিতই থেকে যেত। ধন্যবাদ.......

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

আদনান মাননান বলেছেন: পত্রিকায় না পড়লেও এখানে পড়েছেন জেনে ভাল লাগছে। চট্টগ্রামে থাকেন বুঝি?

২| ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

সুফিয়া বলেছেন: মেনে নিতে কষ্ট হলেও চরম সত্য কথাটা বলেছেন।

http://www.somewhereinblog.net/blog/sufia

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

আদনান মাননান বলেছেন: এটাই বাস্তবতা। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

অবাক মানুষ বলেছেন: ++++++++

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৫

আদনান মাননান বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: নির্মম সত্য।মায়ের দানের প্রতিদান অসম্ভব।

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৪

আদনান মাননান বলেছেন: সেটা কখনই সম্ভব না।

৫| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৫৫

এরিস বলেছেন: মায়ের ভালোবাসার তুলনা হয় না। +++

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৪

আদনান মাননান বলেছেন: মা অসাধারন। ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।

৬| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭

এল এইচ, জুয়েল বলেছেন: View this link

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৩

আদনান মাননান বলেছেন: আপনার লেখাটি আগেই পড়েছি। আপনি নিশ্চয় হুমায়ুন আহমেদের অনেক ভক্ত? ভীষণ মাতৃভক্ত তারা সব ভাই।

৭| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:৩৫

লাবনী আক্তার বলেছেন: মায়ের তুলনা আসলে হয়না।

১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:১১

আদনান মাননান বলেছেন: একদম সবকিছুর উর্ধে ।

৮| ১২ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার লিখাটি হৃদয় স্পর্শ করলো। আপনার বিনয় আমাকে মুগ্ধ করলো।
আপনি যদি লিংকটি না দিতেন- এ লিখাটি মিস করতাম।
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো। খালাম্মাকেও আরেক দুখী পরবাসীর সবিনয় সালাম পৌঁছে দিবেন।

৯| ১২ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:১৩

আদনান মাননান বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আপনি চমৎকার লিখেন, হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

১০| ১৩ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: অনেক চমৎকার।+

১৪ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:৪৩

আদনান মাননান বলেছেন: জেনে ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ।

১১| ১৪ ই মে, ২০১৩ রাত ১:০৪

ছবিকর বলেছেন: স্যাড বাট ট্রু।
ভালো হয়েছে।

১৪ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:৪২

আদনান মাননান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

১২| ১৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

সুমন আহমাদ স্বাধীন বলেছেন: আপনার বিনয় আমাকে মুগ্ধ করলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.