নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি আসবে বলেই আমার দ্বিধারা উত্তর খুঁজে পায়নি।।

এই ফটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো বেঁচে নেই ...

আদনান মাননান

আমি হয়তো মানুষ নই , মানুষগুলো অন্যরকম...শখ করে লেখালেখি , পেশায় একজন শিক্ষক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াই।

আদনান মাননান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন তরুন শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অথবা অদেখা ভুবন

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭

অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা । চলে এল সেই বিশেষ সপ্তাহ। কাল থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। আহ! সেই ভর্তি পরীক্ষা! বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের প্রথম বছরে যখন হল পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছিলাম এক সিনিয়র শিক্ষক আমাকে ছাত্র ভেবে দেরিতে যাওয়ার অপরাধে প্রায় বের করে দিচ্ছিলেন (যতই বলতে যাচ্ছিলাম আমি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষক- আমার পুরো কথা শেষ করতে দিচ্ছিলেন তো না-ই বরং চিৎকার – লেট করে এসে আবার বলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে, সাহস কত? পারবা প্রথম ২০ জনের মধ্যে থাকতে? দেখতে তো মনে হয় মিষ্টিকুমড়া। অন্যদিকে পরিক্ষার্থিদের নিয়ে বরাবরই হত সব মজার ঘটনা। একবার এক জামালপুরের মেয়ে প্রবেশপত্রে নিজের ছবি না এনে কার্টুনের চরিত্রের ছবি নিয়ে এসছে, বলে ওই ছবির মেয়েটাকে নাকি তার নিজের মত লাগে। আরেকবার ভর্তি পরিক্ষা শুরু হওয়ার আগে খাতা প্রস্তুত করার জন্য দেয়া ৩০ মিনিটের মধ্যেই দেখি রাজশাহির এক ছেলে আর নড়াইলের এক মেয়ের মধ্যে মিষ্টি মিষ্টি রোমান্টিক বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, পুরো অর্ধেক সময় জুড়ে ছেলেটা মেয়েটিকে উত্তর বলে গেল, কয়েকবার সতর্ক করার পর যখন ছেলেটির খাতা নিয়ে নিলাম, ওই মেয়ে দেখি কাদতে কাঁদতে ১০ মিনিট পরিক্ষাই দিলনা, এই বয়সের ছেলেমেয়েরা কত অল্প বয়সেই রোমান্টিক হয়ে যায়! আহা! টিন এজ প্রেম। একেবারে অন্যরকম ভাব থাকত বিবিএ এর ভর্তি পরীক্ষার দিন, রঙ্গিন রঙ্গিন লাগে সবকিছু। ভীষণ ফিটফাট, চলতি হাওয়ার সব ছেলেমেয়ে। কেউ এসেছে ইস্পাহানি কলেজ থেকে, কেউ ঢাকা কলেজ, কেউ চট্টগ্রাম কলেজ, কেউ ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, কেউ ইংলিশ মিডিয়াম। সবচেয়ে মজার তথ্য যেটা আবিষ্কার করতাম – সবচেয়ে বেশি প্রক্সি পরিক্ষার্থি এই দিনই দিতে আসত। ২ জন কে এভাবে ধরে ফেলেছিলাম। আরেক সমস্যা হত বোরকা ও পর্দা পরে যেসব মেয়েরা আসত তাদেরকে সনাক্তকরন নিয়ে। কারন প্রবেশপত্রের ছবি দেখে চেহারার সাথে সনাক্তকরন ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। মজার ব্যাপার , ছবিতে সেই মেয়ে একেবারে পাশের বাসার তরুনির মত- ফকফকে চেহারা, লিপস্টিক দেয়া- চুল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে আর আমাদের সামনে নেকাব ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। ভীষণ অস্বস্তির মুখোমুখি হতে হত। তাও আবার তরুন শিক্ষক বলে কথা। খুব কষ্ট হত দূরদূরান্ত থেকে আসা ছেলেমেয়েদের দুর্ভোগ দেখে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩-৪ টা ভর্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, অর্থ, শ্রম ও সময়ের অপচয়। মাঝে মাঝে কিছু পরিক্ষার্থি আমাকে চিনে ফেলত বিতর্ক ও অন্যান্য কাজে জড়িত থাকার সুবাধে। একবার এক মেয়ে ভাইয়া ভাইয়া করে অস্থির করে তুলছে এমন অবস্থায় এক সিনিয়র ম্যাডামের ঝাড়ি- ভাইয়া ডাক কেন? তোমার তালত ভাই লাগেনি? অনেকক্ষণ ঝড় যাওয়ার পর কাঁদোকাঁদো সেই মেয়েটিকে দেখে আমি নিশ্চিত- পরের এক সপ্তাহ সে নিজের আপন ভাইকেও ভাইয়া ডাকতে ভুলে গেছে। আমার কাছে আকর্ষনের জায়গাটা একটু ভিন্ন। এই একটা সময়েই ট্রাফিক জ্যাম কে অনেক মধুর মনে হত। মনে হত- নাই থাকলে আরও কিছুক্ষন ... কারন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে পুরো শিক্ষক বাস জুড়ে থাকতো গানের উৎসব। দীপান্বিতা দিদি আর সুকান্ত সার শুরু করতেন- আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রানে । সেই পরশ থেকে চলে যেত- কফি হাউজের সেই আড্ডাটা, কতবারো ভেবেছিনু, ঘাটে লাগাইয়া ডিঙ্গা, তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা । এরপর আসত কবিতার পালা- কেউ কথা রাখেনি, রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভালবাসা মানে দুজনের পাগলামি। আমি যতবারই শুরু করতাম- বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুনা বলেছিল , ততবারই বাশার ভাই চাটগাইয়া ভাষায় শুরু করত- শিনার মিদ্ধি খশবু ওয়ালা রুয়াল গুজিয়েরে বরুনা কইলূ দে...ওদিকে গিটারে যেসব গান তোলা আছে সেগুলোই গাইবে অনুপম দাশ, সাথে আছে জাকির হোসেনের মত তবলা ম্যান অনু দা আর শান্ত বনিক তাদের আঙ্গুল আর সিটের তাল তোলা নিয়ে। মুরাদপুরের পরেই পাঁচলাইশে আমার বাসা হওয়াতে সবার আগে নেমে যেতে হত, সাথে সাথে মৌরি, অলক আর সুমন দা শুরু করত- যেওনা সাথি। আহা! আমার প্রিয়তমাও ভবিষ্যতে এত মধুর ভাবে গাইবে কিনা সন্দেহ। সে যাই হোক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা । আর যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়নি কিংবা পড়ছনা, তারা কিন্তু কখনই শাটল ট্রেনে মোবাইল ব্যান্ড এর চমৎকার সব গান শুনতে পারবেনা, একটা ভবনের চারদিকে চারটা পাহাড় থাকলে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগে তা দেখতে পাবেনা, মাত্র ৩০ টাকায় মউ এর দোয়ানে ভুরিভোজ সহ জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ পাবেনা, ফরেস্ট্রি বিভাগের সামনের পুকুরে অসাধারন মায়াময় পরিবেশে হিমু- রুপার মত প্রেম করতে পারবেনা, কলাভবনের সামনে সন্ধ্যার নিভু নিভু আলোতে ভাস্কর্য গুলোর পাশের রাস্তা গুলোকে প্যারিসের কোন হারিয়ে যাওয়া পথ ভেবে ভুল করার আনন্দটা পাবেনা। যারা এবারের ভর্তি পরিক্ষায় আমার বিভাগে টিকবে? দেশের বাইরে থাকায় আমি তিন বছর তোমাদের ক্লাস নিতে পারবনা , কিন্তু মাস্টার্সের ক্লাসে ধুম করে একদিন হাজির হয়ে যাব আমার সম্বোধন দিয়ে- গুড মর্নিং জিইবি। তাই আগে থেকেই পার্থ বড়ুয়ার মত বলে রাখছি- দেখা হবে বন্ধু ...।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৩

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৪

আদনান মাননান বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৫

স্রাবনের রাত বলেছেন: আপনার লেখা টা অনেক সুন্দর হয়েছে ।

ছোট ভাই কে নিয়ে আসছি, আপনার ক্যম্পসে । আশা করি দেখা হবে । ভাল থাকবেন ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৭

আদনান মাননান বলেছেন: ধন্যবাদ কিন্তু আমি তো এখন অস্ট্রেলিয়া, তাই খুব মিস করছি। দেখা হবার সম্ভাবনা নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.