নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি আসবে বলেই আমার দ্বিধারা উত্তর খুঁজে পায়নি।।

এই ফটকাবাজির দেশে স্বপ্নের পাখিগুলো বেঁচে নেই ...

আদনান মাননান

আমি হয়তো মানুষ নই , মানুষগুলো অন্যরকম...শখ করে লেখালেখি , পেশায় একজন শিক্ষক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াই।

আদনান মাননান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি, নূতন বাবু অথবা একজন হারিয়ে যাওয়া সুপারম্যান

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৪২

অনেক কেঁদেছিলাম সেই রাতে। যেদিন আনিসুল হকের মা উপন্যাস পড়েছিলাম। শহীদ আজাদ আর তার মা সুফিয়া খাতুনের ত্যাগের কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল একবার যদি মৃত্যুর আগে সুফিয়া খাতুন তার মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া ছেলে আজাদ কে দেখতে পারতেন। পুরো এক সপ্তাহ কোন কাজে মন দিতে পারিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের “একাত্তরের দিনগুলি” বইটি পড়ার পর। চমকে উঠছিলাম একটু পর পর। মনে হচ্ছিল এই বুঝি কেউ এসে রুমির বাবা কিংবা জামিকে রাইফেল দিয়ে খোঁচাবে। এত কষ্ট বুকে নিয়ে কিভাবে বেচে ছিলেন জননী সাহসিকা? জাফর ইকবাল সারের আমার বন্ধু রাশেদ গল্পের রাশেদ পাক হানাদাদের হাতে চোখ বাধা অবস্থায় খুন হওয়ার আগে শেষ বারের মত দেশকে দেখার যে আকুতি জানিয়েছিল তা এখনও চোখে ভাসে, এখনো আমাকে আপ্লুত করে। এই প্রত্যেকটি চরিত্র, গল্প, ঘটনা আমাকে নতুন ভাবে জীবনকে চিনতে শিখিয়েছে, এরা সবাই আমার কাছে কখনও ব্যাটম্যান , কখনো স্পাইডারমান, কখনও “প্রিজন ব্রেক” সিরিয়ালের নায়ক স্কোরফিল্ডের মত জ্বলজ্বলে। কিন্তু আনিসুল হক বা জাফর ইকবাল স্যারের উপন্যাসে উঠে না আসায় বাংলাদেশের মানুষ একজনকে জানতে পারেনি। জানতে পারেনি আত্মত্যাগের গল্প, জানতে পারেনি সাহসিকতার কাহিনি। তিনিই আমার কাছে সুপারম্যান। তিনি নুতন চন্দ্র সিংহ।
আজকে খুব হালকা লাগছিল নিজেকে। একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে অশ্রু ঝরছিল। হয়তবা বেদনার, হয়তবা বিচারের, হয়তবা চুয়াল্লিশ বছরের গ্লানির। আজ নুতন চন্দ্র সিংহের খুনির বিচার হয়েছে। শাহবাগে যে আগুন জানিয়ে দিয়েছিল- কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি—সেই আগুনে উত্তপ্ত হল চুয়াল্লিশ বছরের অপরাধবোধ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক কে মুক্তিযুদ্ধে নিজের বাড়িতে গোপনে আশ্রয় দিয়েছিলেন কুন্ডেশ্বরি ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নুতন বাবু। তার বাসাতেই হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক অপারেশনের নকশা, নিজের সবটুকু অর্থ ঢেলে দিয়েছিলেন মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে, অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা তৈরিতে সাহায্য করে। নিজ বাড়িতে পাকিস্তানী বাহিনির আসার খবর পেয়ে সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন নিরাপদ আশ্রয়ে, কাউকে পাঠালেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছাকাছি। কিন্তু নিজে এক পা ও নড়লেন না। তার সন্তানেরা যখন তাকে যাওয়ার জন্য জোর করছিল, বললেন- মরতে হলে নিজের দেশের মাটিতেই মরব। এ যেন রবীন্দ্রনাথের কথাটিই মনে করিয়ে দেয়- অনেক তোমার খেয়েছি গো,অনেক নিয়েছি মা—তবু জানি নে‐যে কী বা তোমায় দিয়েছি মা! দেশ মায়ের এই ঋণ তিনি শোধ করলেন নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় দেয়ার দায় কাধে তুলে নিয়ে, কারও সন্ধান না দিয়ে- রক্তের বন্যায় ভেসে গিয়ে। নিহত হলেন সেই পশুদের হাতে।
জীবনে অনেক বিতর্ক আর বক্তৃতার মঞ্চে দাড়িয়েছি, এমনকি ইউরোপেও বিতর্কের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু আমি অনেক বেশি সম্মানিত বোধ করেছিলাম যেদিন নুতন চন্দ্র সিংহ এর জন্মশতবার্ষিকিতে আমাকে তরুন প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে বলার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। অভিভুত হয়ে গিয়েছিলাম দেশ নিয়ে তার সুদূরপ্রসারী ভাবনার নিদর্শন দেখে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ছাত্রদের নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর হয়, সেই বছর আমার লক্ষ ছিল শুধু ইন্ডাস্ট্রিই কেন দেখাব? সাথে তারা জানুক সত্যিকারের বাংলাদেশের কথা। নিয়ে গেলাম ছাত্রদেরকে নুতন চন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত কুন্ডেশ্বরি ঔষধালয় আর পানি পরিশোধনাগার প্রজেক্টে। তার সামনে নুতন চন্দ্র সিংহ এর প্রতিকৃতি আর পরতে পরতে ইতিহাসের চিহ্ন, যেন আমাদের বলে দিচ্ছিল – যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভুমি।
ইতিহাস কখন ক্ষমা করেনা, যেমনটা করেনি আপনার প্রতি অমানবিকতার। স্বাধীন বাংলাদেশেই বিচার হয়েছে, আপনি আকাশের ওপার থেকে দেখতে পাচ্ছেন? আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমাদের আগমনধ্বনি? - কার তাতে কি, আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি.। সুপারম্যান , স্পাইডারমান আর প্রিজন ব্রেক দেখেছি টেলিভিশনের পর্দায়; কিন্তু বাস্তবের সুপারম্যান কিন্তু একজন। প্রিয় নুতন চন্দ্র সিংহ – আপনিই আমার বাস্তবের সুপারম্যান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.