নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাবণের দেশে মায়ার মানুষ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

হোটেলে চেক-ইন করার সময় কাউন্টারে দুইজন ছিলেন। দু’জনই তরুণ।

তাদের একজন দেখতে আমার দেশের নায়ক ফেরদৌসের গড়নের। আরেকজন ঢাকা এটাকের হিরো শুভর গড়নের। কিন্তু শুভর মতন রংটা ফর্সা না। আর অতো লম্বাও না। তবে লম্বাটে, ছিপছিপে, হ্যান্ডসাম, শ্যামাঙ্গ তরুণ।

শ্যামাঙ্গ তরুণটিই আমার ভাগ্যে পড়লেন। মানে তার সাথেই হলো আমার যাবতীয় আলাপ-সালাপ।

দরকারী কথা-বার্তার এক ফাঁকে শ্যামাঙ্গ জানতে চাইলেন, সি-সাইড রুম এভেইলেবল আছে। আপনি কি একটা সাগরমুখো কক্ষ নিতে চান?

আমি জানালাম, আমাকে যে রেঞ্জের মধ্যে রুম দেয়া হয়েছে যদি সেই রেঞ্জের মধ্যে কুলায় তাহলে একটা দিতে পারেন।

কম্পিউটারে কিছু একটা চেক-টেক করে তরুণ জানালেন, সাগরমুখো রুম নিতে গেলে রাত প্রতি আরো ৭০ ডলার করে বাড়তি ভাড়া যোগ হবে।

তাহলে আমার এই রুম লাগবে না বলে জানিয়ে দিলাম।

শ্যামাঙ্গের বুকের উপর নেমপ্লেট। আরাফাত। আরাফাত কম্পিউটারে খুঁট-খুঁট করে কিছু একটা টাইপ করলেন। আরো যেনো কী কী কাগজ প্রিন্ট নিলেন।

তার কাছ থেকে কিছু ডলার পাল্টে লংকান রুপি নিলাম। সুন্দর করে সব হিসেব-পত্তর বুঝিয়ে দিয়ে একটা খামে ভরে রুপিগুলো গুছিয়ে দিলেন।

সবশেষে রুমকার্ড বুঝিয়ে দেয়ার পালা। রুমকার্ড দেয়ার সময় শ্যামাঙ্গ বললেন, আমার জন্য যে রুমের রিজার্ভেশান ছিল সেটির বদলে তিনি আমাকে অন্য আরেকটা ফ্লোরে রুম দিয়েছেন। নিজে থেকেই ফ্লোর ও রুম পাল্টানোর কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, তিনি নিজ এখতিয়ারে আমার রুম আপডেট করে দিয়েছেন।

মানে বাড়তি কোনো ভাড়া গোনা ছাড়াই আমার জন্য সাগরমুখো রুম বরাদ্দ হলো। কেন তা হলো? কেন দিলেন এই শ্যামাঙ্গ তরুণ আমাকে সাগরমুখো রুম? আমি তা জানি না।

এর আগেও একবার এমন হয়েছিল। তবে তা রুমের ক্ষেত্রে না। প্লেনের টিকিটের ক্ষেত্রে। জীবনের প্রথম লং ডিসটেন্স বিমান ভ্রমণ ছিল সেটা।

বাংলাদেশ থেকে জার্মানীতে যাচ্ছিলাম। এয়ারপোর্টে লাগেজ দিতে গিয়ে দেখি সেখানে বসে আছেন আমার ইউনিভার্সিটি লাইফের হলের এক বড় আপু। পরম বদান্যতায় তিনি সেদিন আমার ইকনোমিক ক্লাসের টিকিটকে বিজনেস ক্লাসে আপ করে দিয়েছিলেন নিজের এখতিয়ারে। আমার কানেক্টিং ফ্লাইট ছিল বাহরাইনে। বাহরাইন পর্যন্ত পর্যন্ত আমি, বলতে গেলে, রাজার হালে ছিলাম।

আপুর এই বদান্যতার একটা ব্যাখা ছিল। তিনি আমাকে চিনতেন। আমার হলের বড় বোন। কিন্তু এই শ্যামাঙ্গ তরুণ কেন আমাকে দিল সাগরমুখো রুম?

আমার মুখে অবশ্য মিসকিন মার্কা একটা ছাপ মারা আছে। তারউপরে দেখতে কৃশকায়, কৃষ্ণকায়, বেঁটে আর বানরের চেহারার সাথে আমার মুখের আদলের একটা মিল আছে। এই মিসকিন মার্কা মুখ দেখেই কি শ্যামাঙ্গের মায়া হলো ভারী?

নাকি আমার মুখে এমন একটা ছাপ মারা আছে যে, আমি আসক্ত? নেশা করতে কারো লাগে শুকনা পাতা, কারো খুলতে হয় ছিপি, কারো লাগে বদি-বাবা। কিন্তু আমার সেসব কিস্সু লাগে না। একটা খোলা সাগর হলেই তার ঢেউয়ের কল্লোল আর বাতাসের জাদুতে আমি মাতাল হয়ে যাই। ভোর থেকে গভীর রাত অব্দি চুম্বকের সাথে লেগে থাকা লোহার মতন সাগরের সাথে আটকে থাকি। এই কথা কি লেখা ছিল আমার মিসকিন-মার্কা মুখে?

কী জানি! জানি না। সব উত্তর পেতেও হয় না বুঝি।

তবে, শ্যামাঙ্গ সে তরুণকে ধন্যবাদ দিয়ে রুমকার্ড হাতে লিফটের দিকে হাঁটতে-হাঁটতে মনে হতে থাকে, আহা! রাবণের দেশ! তুমি মায়ায় বেঁধেছো বটে!

জুলাই ২৮। ২০১৮।

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: রাবন।।। যাই হোক রাবন কিন্তু নায়ক ও। আবার ভিলেন। নচিকেতা দাদার গানটা মনে পড়ে যায়।।
রাম যদি হেড়ে যেতো রাবন হতো ভগমান।।

সুন্দর ছিলো বর্ণনা
।।।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪১

আফরোজা সোমা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০০

ডার্ক ম্যান বলেছেন: আপনি কক্সবাজারে বসবাস করতে শুরু করুন। নেশা আর কখনো কাটবে না

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪২

আফরোজা সোমা বলেছেন: ভালো বলেছেন!

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
কলম্বোতে অনেক হোটেল। আপনি কোনটাতে ছিলেন?

হোটেল গালাদারি, হিল্টন, তাজ সমুদ্র, হোটেল গলফেস, সিনামন গ্রান্ড, সিনামন লেকসাইড আরো কত কি।

আমার সাড়ে পাঁচ বছরের প্রবাস জীবন ছিল শ্রীলঙ্কায়। সেই লঙ্কা এখন আরো উন্নত। কেননা, যুদ্ধ নেই।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৪

আফরোজা সোমা বলেছেন: এগুলোর একটিতেও আমি ছিলাম না।

যুদ্ধের পর খুব দ্রুত শ্রীলঙ্কাকে গুছিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। দেশে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪

বাকপ্রবাস বলেছেন: সাগরমুখী রুম
আসেনা আর ঘুম
জোয়ার, ভাটা, ঢেউ
বাতাসে মদির ওম।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১

আফরোজা সোমা বলেছেন: সাগরমুখো রুম
জানলা খুলে রেখো
হাওয়া দেবে চুম।

ভালো থাকবেন। কল্যাণ হোক।

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪০

মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: তাহলে সাগর মুখো দালানে ভালই দৃশ্য উপভোগ করেছেন।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১

আফরোজা সোমা বলেছেন: না, দালান ছিল না। পুরোটাই ছিল কাচ ঘেরা। কাচের ওপারে শহর। কাচের ওপারে সাগর।

৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



দারুন লিখেছেন; শ্যামাঙ্গ যুবকটা নিশ্চয়ই আপনার প্রেমে পড়েছিলা!! না হলে নিজ উদ্যোগে কেন সাগরমুখী কামরা দেবে? ভাললাগার সাথে সাগরের একটা সম্পর্ক আছে৷আপনার চেহারা কিন্তু দারুন মিষ্টি৷রাবন কিন্তু ডায়মন্ড চিনতে ভুল করে নাই B-)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

আফরোজা সোমা বলেছেন: আমার প্রেমে পড়ার কোনো কারণই নাই, মানে আমার তাই মনে হয়। আমার ধারণা, আমার মুখের ওই গরিবী-মার্কা ছাপটা দেখে ওই তরুণের মায়া হয়েছিল। মায়া খুব অদ্ভুত জিনিস। এটা মানুষকে দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে নেয়।

৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৯

সনেট কবি বলেছেন: দারুন লিখেছেন

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

আফরোজা সোমা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৮| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: এটা কি শুধুই একটা গল্প না বাস্তব?

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪

আফরোজা সোমা বলেছেন: আরে নাহ! গল্প না। সত্যি ঘটনা। বাস্তব।

৯| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার লেখনী। এরপরের গল্প কোথায়? আরও লিখবেন আশা করি। পোস্টে ভাললাগা রইল। সাথে অনুসরণে নিয়ে রাখলাম আপনার আগামী লেখাগুলো পড়ার জন্য।

ভাল থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

আফরোজা সোমা বলেছেন: শ্রীলঙ্কার আরো বেশ কিছু গল্প মনে জমা। পেটেও ঘুরঘুর করে। যদি আটঁকাতে না পারি, ঢেঁকুরের মতন টেলে বেরিয়ে যায় সেগুলো এখানে দেবাো নিশ্চিত। তাছাড়া আরো দুটো লেখা ফেসবুকের নোটসে আছে। সেদুটোও দেবো এখানে।

ভালো থাকবেন। অনেক শুভ কামনা।

১০| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সাগরমুখো রুম
ইকনোমিক ক্লাসের টিকিটকে বিজনেস ক্লাসে আপ।

আপনি লাকি।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬

আফরোজা সোমা বলেছেন: আসলেই আমি লাকি। পরম প্রভুর অশেষ কৃপা ছিল আমার উপর।

১১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:১৭

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: খুব মজা করে লিখেন আপনি।

আমি অবশ্য অনলাইনে হোটেল রুম নেওয়ার সময়ই যেখানে সাগর আছে, সাগরমুখি রুম নেই।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭

আফরোজা সোমা বলেছেন: ওহ. আপনিও তাহলে সাগরমুখো মানুষ!

ভালো থাকবেন। অনেক শুভ কামনা।

১২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনি বড় ভাগ্যবতী।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮

আফরোজা সোমা বলেছেন: সত্যি! কোনো কোনো ঘটনা যখন ফিরে দেখি নিজেকে পরম ভাগ্যবান বলেই মনে হয়।

ভালো থাকবেন। আপনার কল্যাণ হোক।

১৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৫

মিজান ঢাকা ব্লগ বলেছেন: আসলেই আপনার চেহারাতে একটা মায়া মায়া ভাব আছে। মন খারাপ করবেন তাই কমেন্ট করলাম মায়া করে। হা! হা! হা!

আসলেই ভাল লিখেছেন। আপনার লেখার হাত ভাল। আরও লিখবেন আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.