নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ চেতনার দ্বারে V for Vendetta

আহমাদ ইবনে আরিফ

নিভৃতচারী নই, পড়ি-লিখি-গান গাই উল্লাসে। ক্ষ্যাপা একটা ভাব আছে পণ্য- ভোক্তা আর অর্থনৈতিক চালবাজির প্রতি। পিশাচ এবং পৈশাচিক যা কিছু আছে সেগুলো ছাড়া সবকিছুকেই বেশ ভালবাসি। সঙ্গীত আমার জ্বালানী, লাল-সবুজ হৃদয়ের রঙ। কিঞ্চিৎ লিখালিখি করি, পেশাদারী- নেশাদারী নয়- কেবল শখের বশেই। কিছু কর্ণিয়া না হয় জানল এই সত্য!

আহমাদ ইবনে আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অশরীরী উপহাস

২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬

দিবসব্যাপী ঝঞ্ঝাট ফুরালে রাতের অগ্রভাগেই ঘুমিয়ে পড়ে মানুষগুলো। উপায় নেই, শহরজোড়া শাব্দিক গোলযোগ ইদানীং মাথায় চাপা যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। কানের কাছে সারাক্ষণ ভোঁ ভোঁ বাজতে থাকে কি যেন। লো-ভল্টেজ বাতির মত দপদপ দপদপ করতে থাকে চোখের পর্দা। এ অবস্থায় আর কতক্ষণ জেগে থাকা যায়!



আনিস সাহেব সেরাতে ঘুমাচ্ছিলেন। প্রতিরাতের মতই রুটিন ঘুম। সুদীর্ঘ অথবা কুদীর্ঘ যাই হোক তিরিশ বছরের চাকুরী জীবনে খুশি হওয়ার মত এই একটা ব্যাপারই ঘটেছে "ঘুম" আর ঘুমের ঘোরে কিছু "সু-স্বপ্ন"। তাছাড়া, স্বপ্ন দেখার জায়গাও তো ঐ একটাই। চাকরি-সুযোগ-অর্থ এই তিনের সম্মিলিত মারপ্যাঁচে পড়ে জীবনটা ক্রমশঃ এতটাই রোবটিক হয়ে গেছে সেখানে একফালি স্বপ্নের আদিখ্যেতা নেই আর। স্বপ্নের জগতে হাফ প্যান্ট পড়ে আনিস সাহেব তখন কেয়াবনে দৌড়াচ্ছেন- ঘোর শৈশব! হঠাৎ ঘাড়ে প্রচন্ড একটা চাপ অনুভব হওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। হাইপ্রেশারের কারণে মাঝে মাঝে এমনটা হতে পারে! কিন্তু চাপটা বাড়তে থাকে, একদম মানুষের হাতের মত দু'টা হাত যেন খুনে মতলব এঁটে চেপে ধরেছে ঘাড়। আনিস সাহেবের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। অন্ধকার রুম, ঠিক ঘাড়ের পিছন দিয়ে তিনি শুনতে পান একটি মেয়ে কাঁদছে, কিশোরী গলা। তিনি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন, "দে না! একটু পানি দে!" আনিস সাহেব ঘামছেন, তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন কপাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা ঘাম নামতে গিয়ে ভুরুতে এসে আটকে যাচ্ছে। তার মানে তিনি নিশ্চয়ই বেঁচে আছেন, কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা কেন? হঠাৎ অশরীরী আওয়াজ থেমে গেল, শহরের পুরানো যান্ত্রিক আওয়াজ কানে আসছে।



শাহানাজ খানম বাংলাদেশ রেলওয়ের বেশ পুরাতন কর্মচারী, থাকেন কমলাপুর স্টেশনের পাশেই রেলওয়ের সরকারি কলোনীতে। ছেলে তন্ময় এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছে। সেই ছোটবেলার মত এখনও তিনি রাতে ছেলে ঘুমানোর পর এসে কয়েকবার দেখে যান ঠিকমত ঘুমাতে পারছে কিনা। ইদানীং এদিকে লোডশেডিং খুব একটা হয়না, সেদিন রাতে লোডশেডিং হল হঠাৎ। পুরা বাড়িজুড়ে নিরেট অন্ধকার। পাশের ঘরে তন্ময় ঘুম। শাহানাজ খানম উঠে একটা মোমবাতি জ্বালালেন, রাত প্রায় তিনটা। তন্ময়ের ঘর থেকে আবছা একটা গুঞ্জনের মত শব্দ আসছে। তিনি একটু মাথা ঝাঁকিয়ে ভালমত শুনার চেষ্টা করলেন। আসলেই তো! মনে হচ্ছে অনেক মানুষ একসাথে ফিসফিস করে কথা বলছে! তন্ময়ের কোন সাড়াশব্দ নেই। "ইয়া আল্লাহ" বলে তিনি মোমবাতিটি হাতে নিয়ে "কুল হুয়াল্লা" পড়তে পড়তে দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়লেন তন্ময়ের ঘরে। তখনই বাইরে কোথায় ধ্রিম করে বিকট আওয়াজে কিছু একটা পড়ল। সাথে সাথে কোত্থেকে ভেসে এল একঝাঁক গরম হাওয়া, মোমবাতি নিভে গেল। নিভার আগে যা দেখলেন তাতেই জ্ঞান হারালেন শাহানাজ খানম। ঘরভর্তি মানুষ, বিভিন্ন বয়সের, দেয়ালের আশেপাশের যে জায়গাগুলো একটু বেশি অন্ধকার সেখানে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সবাই পোড়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া, চোখ, কান ঝুলছে বাতাসে। গরম বাতাসে পোড়া শরীরের বিশ্রী গন্ধ! মৃদু আওয়াজে তারা কোরাস করে বলছে, " নিভা! নিভা! আগুন! যন্ত্রণা! যন্ত্রণা!"





-কিযে কস মামা! হাহাহাহা! এইটা কোন জোক হইল।

- জোক না, বিঃশ্বাস হইলনা জহির? হালায় আসলেই রিমি ভাইবা রিমির বড় বইনরে লাভ ইউ কইয়া ফালাইসে। রিমির বড় বইন ফির‍্যা কয়, "লাভ ইউ টু।"

-রাত বাজে দুইটা, এত হাসাইস নারে রায়হান, মইরা যামু কইলাম। হাহাহাহাহাহা!!

রাস্তার এদিকটায় ল্যাম্পপোস্টের আলো আছে। তখনই যেদিকটা অন্ধকার সেদিক দিয়ে দিয়ে একটা মিছিলের মত যেতে দেখল ওরা।

- কীরে, খেয়াল করছস?

- হ! মিছিল নাকি? স্লোগান কই? এত মানুষ এত রাইতে, কাহিনী কী?

- মৌন মিছিল নাকি? লোক তো পাঁচ-ছয়শো'র কম না। চল তো দেহি ঘটনা কি!

- চল।

মিছিল এগুচ্ছে! কিন্তু গতি খুব মন্থর। জহিররা বেশ কাছে চলে আসল, আর একশ ফুটও হবেনা। না, মিছিলটা পুরাপুরি মৌন মিছিল না, ওরাও কি যেন বলছে। আরও কাছে চলে এল জহিররা। এখান থেকে স্লোগান যথেষ্ট পরিস্কার শুনা যাচ্ছে, " সরা! পাথর সরা! সরা! পাথর সরা!" জহিররা অবাক হতে হতে বেশিই কাছে চলে এসেছে এবার। এখান থেকে মিছিলকারীদের দেখা যাচ্ছে ভালমত। রক্তাক্ত একেকটা দেহ! কারও মাথা থেঁতলানো, কারও বুক থেঁতলানো, কারও নাড়িভুঁড়ি সব ঝুলছে। দুইজনেরই পা পাথর-অনড় হয়ে গেছে, সাঁড়াশির মত কিছু একটা দিয়ে কেউ যেন ওখানেই আটকে ধরেছে ওদের। হঠাৎ রায়হান বলে উঠল,

- উলটা ঘুইরা দৌড় দে মামা, সব জ্বীনের কারসাজী, উলটা ঘুইরা দৌড় মার।

কথা ঠিকমত শেষ হওয়ার আগেই দুইজন উলটা ঘুরে দৌড়! দৌড়ের মধ্যে কে যে কোনদিকে গেছে খেয়াল নাই। আজান হল, ফজরের নামাজে বের হওয়া এক মুসল্লী জহিরকে খুঁজে পেল মসজিদের পাশে- বেহুঁশ অবস্থায়! রায়হান নিখোঁজ!



২০১৫তে প্রথম ঘটা ঘটনা তিন'টা হল এই। এরপর আর গুনে রাখা সম্ভব হয়নি। এত বেশি অশরীরী, ভৌতিক ঘটনা ঘটা শুরু হল কারও আর গুনার তালে বসে থাকার অবস্থা ছিলনা। ঢাকা ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে পুরা দেশ ছেয়ে গেল ভূত আর ভূতে, ঘোর অমানিশা বঙ্গবুকে।



ভূত- আত্মা- পিশাচের সাথে বন্দুকযুদ্ধে গিয়ে তো লাভ নাই, তার উপর পুলিশ-আর্মি সব অশরীরী উৎপাতে আগে থেকেই ভয়ে কাবু। তখন, দেশের তাবৎ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গের উপর দায়িত্ব বর্তাল কিছু করার।

দু'আ তন্ত্র মন্ত্র কিছুতে কাজ হলনা, পুরা দেশে ছেয়ে গেল গাঢ় অন্ধকার। এখন আর দিন-রাতে কোন ফারাক নাই, ফারাক নাই আঁধার আর আলোতে, যখন-তখন যেখানে-সেখানে সাধারণ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে অশরীরীর দল। আধ্যাত্মিক নেতাদের লিডার সুফী সাধক ' জালাল খৈয়াম আজমীরী' নতুন পদ্ধতি বাতলালেন। তুফানের আগে যেমন উপকূলবর্তী মানুষজনকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে ফেলা হয়, তেমনভাবে সব মানুষ সরিয়ে খালি করে ফেলা হল আগারগাঁও আর তার আশপাশের এলাকা। চীনা-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের ধূলা ঝাড়া হল। যত্রতত্র মাকড়সার জাল যে ভৌতিক আবহের সৃষ্টি করছিল সিটি কর্পোরেশনের দুর্দান্ত সাফাইয়ে তার থেকে মুক্তি মিলল কিছুটা। গোপনীয় কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে ওখানে। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে, সব বিদেহী আত্মা এবং অশরীরী অস্তিত্বকে আহবান জানানো হবে সামনে আসার, যোগাযোগ করার চেষ্টা হবে বিভিন্ন মাধ্যমে, অনেকটা প্ল্যানচেট টাইপের ব্যাপার।



তাবৎ আত্মাদের সাথে নেগোসিয়েশনের একটা আশা যখন দেখছিল সবাই, তারপরদিনই হঠাৎ ঢিলেঢালা হয়ে গেল সবকিছু। উৎপাত চালু আছে, থামানোর চেষ্টাতেই যত ঢিল। আজমীরী সাহেবও আগের মত আর কর্মঠ নেই।

সে রাতে সম্মেলন কেন্দ্রে কী হয়েছিল কেউ জানেনা। তবে অনেকে বলে ভূত- পিশাচ না, সব আত্মারা নাকি এসেছিল সে রাতে। প্রথম ঘটনায় আনিস সাহেবের ঘাড় মটকে দিতে চাওয়া আত্মা, শাহানাজ খানমের ছেলে তন্ময়ের ঘরের ঐ পোড়া আত্মার দল, তৃতীয় ঘটনার মিছিলকারী আত্মা সবগুলোই নাকি এসেছিল।

জালাল আজমীরী বজ্রকন্ঠে চিৎকার করে প্রথম আত্মাকে জিজ্ঞেস করলেন' "কে তুই?"

হিসহিস করতে করতে উত্তর এল," আমি ফেলানী",

পোড়া আত্মারা বলল " আমরা তাজরীন ফ্যাশনের শ্রমিক",

মুখ থেঁতলানো মিছিলকারী আত্মারা বলল, "রানা প্লাজায় আমাদের সবাইকে মেরে হারামজাদা রানাকে দুধভাত খাওয়াচ্ছিস শয়তানের দল?"

ফুঁসে উঠল বাকি সব আত্মারা, বিশ্বজিতের রক্তাক্ত আত্মা, সাগর-রুনীর আত্মা, গুম হয়ে যাওয়া শত শত আগন্তুক আত্মা ফুঁসতে থাকল। ওদের আক্রোশ তখনই ভস্ম করে দিত আশপাশ, ফেলানীর নিষেধে নিবৃত্ত হল ক্রোধ। বাজখাঁই গলায় চিৎকার করে উঠল কিশোরী, "সবগুলার বিচার চাই, সব পিশাচের বিচার চাই। যতদিন করবিনা ততদিন আমরাই পিশাচ হয়ে জাপটে ধরব তোদের, কাউকে বাঁচাতেতো পারলিনা! বিচারটাও করতে পারলিনা কাপুরুষের দল? বিচার কর, বিচার! যতদিন হবেনা এই মানচিত্রের গায়ে অভিশাপের মত ভর করে থাকব আমরা, ষোল কোটি কাপুরুষ নিয়ে দেশ গড়া যায়না। আমরা পিশাচরাই নাহয় গড়লাম দ্বিতীয় বাংলাদেশ! হাহাহাহাহাহাহ!"

অশরীরী সব আত্মা একসাথে হাসতে লাগল। ঐ হাসিতে নাকি ঢলে ঢলে পড়ছিল উপহাস আর বিদ্রুপ। আর? আর, ঘৃণা।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০২

মাহমুদুল করিম লিংকন বলেছেন: finising ta eto josh hoibo vabte o pari nai dost... Lekhte thak... Noyto access pabi na... Acces paile eigula repost maris..

২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ বন্ধু!

২| ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:১৮

নিঝঝুম নিরিবিলি বলেছেন: ভাল লেখা, বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গী এবং কল্পনায় স্বকীয়তা আছে। যখন সহসা কোন সমাধান দুর দৃষ্টিতেও ঠেকে না, তখন কল্পনায় কিছু থেকে সমাধান খুঁজে নিয়েছেন। চালিয়ে জান ...

৩| ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:২৯

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
"Because while the truncheon may be used in lieu of conversation, words will always retain their power."
- অ্যালান মুওর

৪| ০৩ রা জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

ইভার নীল বলেছেন: হু, ধন্যবাদ বৈচিত্রময় গল্প ও লেখনির জন্য।

১১ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: লিখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ, মন্তব্য করার জন্যে ধন্য-আরো-বাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.