নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ চেতনার দ্বারে V for Vendetta

আহমাদ ইবনে আরিফ

নিভৃতচারী নই, পড়ি-লিখি-গান গাই উল্লাসে। ক্ষ্যাপা একটা ভাব আছে পণ্য- ভোক্তা আর অর্থনৈতিক চালবাজির প্রতি। পিশাচ এবং পৈশাচিক যা কিছু আছে সেগুলো ছাড়া সবকিছুকেই বেশ ভালবাসি। সঙ্গীত আমার জ্বালানী, লাল-সবুজ হৃদয়ের রঙ। কিঞ্চিৎ লিখালিখি করি, পেশাদারী- নেশাদারী নয়- কেবল শখের বশেই। কিছু কর্ণিয়া না হয় জানল এই সত্য!

আহমাদ ইবনে আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেপথ্যের কিংবদন্তী- স্টর্ম থর্গারসন

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৪২


ভারতীয় সঙ্গীত-শাস্ত্র আর এদেশীয় লোকসঙ্গীতের পাশাপাশি পশ্চিমা সঙ্গীতের শ্রোতা হিসেবেও আমরা নেহাত কম যাই না। পশ্চিমা সঙ্গীতের শিকড় বলতে চ্যান্ট আর সিম্ফনিগুলো থাকলেও শোনার খাতিরে আমরা পশ্চিমা সঙ্গীত এর কয়েকটা নির্দিষ্ট শাখাকে সবসময় বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। ব্লুস, জ্যাজ, রক, পপ, রিগে আরও কত কী! তবে তরুণদের কাছে যেন ‘রক মিউজিক’ এর আবেদনই আলাদা। লেড জেপলিন, ব্ল্যাক সাব্বাথ থেকে শুরু করে পিংক ফ্লয়েড, স্করপিয়নস; ড্রীম থিয়েটার থেকে পাইন্যাপেল থিফ; অডিওস্ল্যাভ থেকে মেগাডেথ কোনটাই ছাড়িনি আমরা। রক হয়ে গেছে পাঙ্ক রক, অল্টারনেটিভ রক, সাইক্যাডেলিক রক, অ্যাম্বিয়েন্ট রক, স্পেস রক, আরও নিত্যনতুন কত কি। এই রকই ঘুরে ফিরে ভোল পাল্টিয়ে হয়েছে মেটাল। সৃষ্টি করেছে নতুন অসংখ্য শ্রোতা। মেটালেরও আবার কতশত ভাগ! হেভী মেটাল, থ্রাশ মেটাল, ডেথ মেটাল, ব্ল্যাক মেটাল, পাওয়ার মেটাল, স্পীড মেটাল, টেকনিক্যাল মেটাল সদর্পে জায়গা করে নিয়েছে আমাদের মেমোরি কার্ডে, হার্ড ডিস্কে। আমরা ব্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ব্যান্ড তারকাদেরও কম ভক্ত নই। নিরভানার কার্ট কোবেইনের আত্মহত্যায় আমরা ভয়ঙ্কর ব্যাথিত হয়েছিলাম,প্যান্টেরার ডাইমব্যাক ড্যারেল এর মৃত্যু হতভম্ব করে দিয়েছিল আমাদের, পিংক ফ্লয়েড এর রিচার্ড রাইটের মৃত্যুতে অনুধাবন করেছিলাম একজন সত্যিকারের কিংবদন্তীকে চিরতরে হারানোর ব্যাথা।

এ বছরেরই ১৮ এপ্রিল একজন মহান শিল্পীকে হারিয়েছি আমরা। দেখা যাক তাঁকে আমরা কতটুকু চিনি।
উপরোল্লিখিত সব ব্যান্ডের সাথেই তিনি কাজ করেছেন। তিনি কাজ করেছেন পিংক ফ্লয়েডের হয়ে, লেড জেপলিনের হয়ে, ড্রিম থিয়েটারের হয়ে। ব্ল্যাক সাবাথ, স্করপিয়নস, মেগাডেথ কেউই বাদ যায়নি তাঁর সান্নিধ্য থেকে।
স্টর্ম থর্গারসন (২৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৪- ১৮ এপ্রিল, ২০১৩) একজন ব্রিটিশ গ্রাফিক্স ডিজাইনার। পিংক ফ্লয়েড বললেই একটা প্রিসম এর ছবি ভাসে আমাদের চোখে। পিংক ফ্লয়েডীয় দর্শনকে একটা প্রিসম দিয়ে বুঝিয়েছিলেন স্টর্ম। ১৯৭৩ এ পিংক ফ্লয়েডের ‘ দ্যা ডার্ক সাইড অফ দ্যা মুন’ অ্যালবাম এর প্রচ্ছদ-চিত্রে এই প্রিসম সবার দৃষ্টিগোচর হয়। শুধু এই প্রিসম নয়, ফ্লয়েডীয় যত আর্টওয়ার্কস এর সাথে আমরা পরিচিত সবগুলোর আলেখক এই স্টর্ম থর্গারসনই। এক একটা ব্যান্ড-অ্যালবামের প্রচ্ছদচিত্রে তাঁর বিমূর্ত চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে যে দর্শন, যে বার্তা তিনি এক একটা স্থিরচিত্রে ফুটিয়ে তুলতেন পুরো অ্যালবাম এর সব গানমিলিয়ে খুঁজে পাওয়া যেত সেই স্থিরচিত্রেরই একটা নিখুঁত ভাবসম্প্রসারণ।
সাইক্যাডেলিক মিউজিককে অস্ত্র বানিয়ে পিংক ফ্লয়েড যখন ‘অ্যাটম হার্ট মাদার’, ‘ডিভিসন বেল’, ‘ওয়িশ ইউ ওয়্যার হেয়ার’ এর মত অ্যালবাম নিয়ে ঢুকে যেতে লাগল শ্রোতা-মস্তিষ্কের প্রতিটি রন্ধ্রে, অ্যালবাম এর গান, সুর ও কথাতে যখন ফুটে উঠল নিগূড় দর্শন, তখন অ্যালবাম এর জন্য এমন প্রচ্ছদই প্রয়োজন ছিল যা পুরো অ্যালবামের দর্শনকে ফ্রেমবন্দী করবে একটা নির্দিষ্ট স্থিরচিত্রে এবং তাঁরা জানতেন এ কাজ শুধুমাত্র একজন লোককে দিয়েই সম্ভব। যথারীতি দায়িত্ব বর্তাল রজার ওয়াটার্স এর স্কুলজীবনের বন্ধু স্টর্ম থর্গারসনের ঘাড়ে। পিংক ফ্লয়েডের অ্যালবামের অদ্ভুত সুন্দর বিমূর্ত প্রচ্ছদচিত্রগুলো দেখে চমকিত হলেন লেড জেপলিনের জিমি পেইজ। স্টর্ম থর্গারসনের কাঁধে পড়ল লেড জেপলিনের অ্যালবামচিত্রের কাজ। তারপর থেকে স্টর্মের কাজ আর থেমে থাকেনি। কিংবদন্তী এই স্থিরচিত্রের স্থপতির খোঁজ পেয়ে প্রচ্ছদচিত্রের জন্য তাঁর কাছে ছুটে এসেছে ব্ল্যাক সাব্বাথ, স্করপিয়নস থেকে শুরু করে আজকের ড্রিম থিয়েটার, মেগাডেথ। সত্তরের দশক থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী অবধি বিভিন্ন ব্যান্ড অ্যালবামের প্রচ্ছদচিত্র করে গেছেন স্টর্ম থর্গারসন। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো দেখে নিই নিচের লিস্টেঃ (বর্ণানুক্রমিকভাবে তালিকাভুক্ত)

Audioslave- Audioslave (2002)
Black sabbath- Technical ecstasy (1976)
Dream theater- A change of seasons (1995)
Falling into infinity (1997)
Europe- Secret society (2006)
Led zepplin- Houses of the holy (1973)
Presence (1976)
In through the out door (1979)
Megadeth- Rude awakening DVD (2002)
Pink Floyd- Atom heart mother (1970)
Dark side of the moon (1973)
Wish you were here (1975)
A momentary lapse of reason (1987)
The division bell (1994)
Pulse (1995)
Rainbow- Difficult to cure (1981)
Bent out of shape (1983)
scorpions- Lovedrive (1979)
Animal magnetism (1980)











তালিকায় পিংক ফ্লয়েডের শুধুমাত্র ছয়টি অ্যালবামের নাম দেয়া থাকলেও এগুলো ব্যাতিত আরও প্রায় দশটি অ্যালবামের প্রচ্ছদচিত্র স্টর্ম থর্গারসনেরই করা। অন্য সব শ্রোতা বাদ দিলেও অন্তত যারা পিংক ফ্লয়েড ভক্ত আছেন তাদের কাছে তাই স্টর্ম থর্গারসন একজন মূর্তিমান কিংবদন্তী হয়ে থাকবেন সারাজীবন।

আমরা পিংক ফ্লয়েড, লেড জেপলিনের অ্যালবাম শুনেছি, মুগ্ধ হয়েছি অ্যালবামের প্রচ্ছদ দেখে। অথচ স্টর্ম থর্গারসন থেকে গেছেন আড়ালেই। একটা মহান কিছু যখন ঘটে যায়, আমরা সবসময় তার কেন্দ্রবিন্দুটাই খুঁজি। ভুলে যাই ঐ কেন্দ্রের আশেপাশেই নেপথ্যে থেকে যাওয়া মানুষগুলোকে। স্টর্ম থর্গারসন একজন এমনই নেপথ্যের মানুষ যিনি একটি ছবিতে ফুটিয়ে তুলতেন পুরো একটি অ্যালবাম। এ বছরের ১৮ এপ্রিল আমরা এই নেপথ্যের কিংবদন্তীকে হারিয়েছি। তাঁর এই প্রস্থান থেকে ঠিকড়ে বেরুনো আবেগই হয়ত আমাদেরকে ভবিষ্যতে এসব নেপথ্যের মানুষগুলোকে চিনতে শেখাবে, কোন এক দিন হয়ত আক্ষরিক অর্থেই সম্মানিত হবেন নিভৃতে থাকা সব কিংবদন্তী।





মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:




কিছু প্রচ্ছদের ডিজাইন এর ছবি দেখা যাচ্ছে না। এডিট করে আবার আপ করে দিতে পারেন।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪৯

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার কথামত দিয়ে দেখলাম। তবুও কিছু ছবি আসছেনা দেখছি। পরে আবার চেষ্টা করব। ভাল থাকুন

২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০০

শাহ আজিজ বলেছেন: যারা পশ্চিমা সঙ্গীতে যন্ত্র বাদন বা যন্ত্র সংগত করেন তাদের নিয়ে আলাদা সিরিজ লেখা শুরু করুন । সাথে অডিও ক্লিপ বা ভিডিও ক্লিপ জুড়ে দিন । ভালো পরিচ্ছন্ন একটি বিষয় হবে, বিশেষ করে এই সময়ের তারুন্য যারা প্রায় কিছুই জানে না এ সম্পর্কে।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫৩

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: আপনার মন্তব্যটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সিরিজ লিখাটা অনেক কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ কাজ হবে। তবুও, চেষ্টার ত্রুটি থাকবেনা।
আবারো ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্যটির জন্যে।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫৫

দীপংকর চন্দ বলেছেন: একটা মহান কিছু যখন ঘটে যায়, আমরা সবসময় তার কেন্দ্রবিন্দুটাই খুঁজি। ভুলে যাই ঐ কেন্দ্রের আশেপাশেই নেপথ্যে থেকে যাওয়া মানুষগুলোকে

অনেক ভালো লাগলো ভাই।

শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫০

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: পাঠকের ভাল লাগাটা লেখকের কাম্য,
পাঠকের এ ধরনের মন্তব্য লেখকের পুরস্কার।
ধন্যবাদ আপনাকে।।

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
বাংলা ব্লগে স্টর্ম থর্গারসন কে নিয়ে লেখা পেলুম। বেশ !
আরিফের কাছে নিয়মিত লিখা চাই।

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৭

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। ত্রুটি থাকবেনা চেষ্টার।

৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

আলাপচারী বলেছেন: দারুণ!

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:২৮

ডি মুন বলেছেন: আমরা পিংক ফ্লয়েড, লেড জেপলিনের অ্যালবাম শুনেছি, মুগ্ধ হয়েছি অ্যালবামের প্রচ্ছদ দেখে। অথচ স্টর্ম থর্গারসন থেকে গেছেন আড়ালেই।

ঠিকই বলেছেন।

অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার এই পোস্টটি থেকে।
কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন।

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৫৫

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: সুন্দর কমেন্ট পড়তে গেলে একটা সুখনাচন অনুভূত হয় ভিতরে। খালি ওই প্রতিউত্তর করতে গেলেই যত হিমশিম খাওয়া আরকি!!
যাই হোক, ভাল থাকবেন। মঙ্গল কামনা করছি।

৭| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৪

ডি মুন বলেছেন: হা হা হা , ভালোই বলেছেন।

আপনারও মঙ্গল হোক।

শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.