নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ চেতনার দ্বারে V for Vendetta

আহমাদ ইবনে আরিফ

নিভৃতচারী নই, পড়ি-লিখি-গান গাই উল্লাসে। ক্ষ্যাপা একটা ভাব আছে পণ্য- ভোক্তা আর অর্থনৈতিক চালবাজির প্রতি। পিশাচ এবং পৈশাচিক যা কিছু আছে সেগুলো ছাড়া সবকিছুকেই বেশ ভালবাসি। সঙ্গীত আমার জ্বালানী, লাল-সবুজ হৃদয়ের রঙ। কিঞ্চিৎ লিখালিখি করি, পেশাদারী- নেশাদারী নয়- কেবল শখের বশেই। কিছু কর্ণিয়া না হয় জানল এই সত্য!

আহমাদ ইবনে আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শবপ্রাঙ্গন থেকে সিধুলীর গোরস্থান- একটা ফটো অ্যালবাম

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩

সেদিন খবরে দেখি শোকের গ্রাম সিধুলীতে এক কবরস্থানে ১৪ জনের দাফন। গোরস্থানের ছবিটা সুপার-গ্লু সহযোগে আটকে গেল আমার মাথার বাজে ছবির অ্যালবামটায়।

এই অ্যালবামে আর কি কি আছে জানেন ভাই?
অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ, মাঠে সারি করে ফেলে রাখা সব লাশ। ঐসব লাশের থেঁতলে যাওয়া শরীরের এখান ওখান থেকে গলে-পচে বেরুনো উৎকট গন্ধ। আর অপেক্ষায় বসে থাকা অদ্ভুত চেহারার কিছু মানুষ, হাতে সবার একটা একটা ছবি- কারও বাবার, কারও ভাইয়ের, কারও বোনের, কারও মায়ের। একটু পর পর পিক-আপ নিয়ে আসছে আরও লাশ, নতুন নতুন লাশ।
নতুন লাশ আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষগুলা। হাতে ছবি সবার, গভীর মনোযোগে খুঁটিনাটি মিলায়ে দেখে লাশের চেহারার সাথে। দুই এক মুহূর্ত কেমন জানি গুমোট বেঁধে আটকে যায় সময়, তারপর হঠাৎ কারও আকাশ ফাটানো মাতমে ধাক্কা খেয়ে চলা শুরু করে ঘড়ির কাঁটা।
হঠাৎ জানতে চায় মন, "মহামতি রানা কেমন আছেন?"
উত্তর আসেনা, ঠোঁটে একটা সিগারেট জ্বলে উঠে হতাশায়।

এই অ্যালবামে আরও আছে একবাস স্কুল-শিশুর একসাথে হারিয়ে যাওয়ার ছবি, হাসিমুখে মহাকালের কালো চাদরটা জড়িয়ে একসাথে ঘুমিয়ে পড়ার গল্প।

এই অ্যালবামে রেল লাইনের পাশে পড়ে থাকা একটা মানুষের ছবি আছে, যার প্রিয় মস্তিষ্কটা করোটি ভেঙ্গে বের হয়ে পড়ে ছিল তার থেক ফিট দশেক দূরে। আমি হেঁটে গেলাম, থকথকে মস্তিষ্ক ধরতে সায় দিলনা মন। করোটির ছড়ানো ছিটানো কয়েকটা অংশ খালি নিয়ে রেখে আসলাম মানুষটার মাথার পাশে। মরা মানুষটা মুচকি একটা কৃতজ্ঞতার হাসি ছুঁড়ে দিল আমার দিকে। আমার পক্ষে তখন আর দাঁড়ানো সম্ভব না সেখানে, উলটা ঘুরে হাঁটা দিলাম নতুন একটা বাজে ছবি মাথায় নিয়ে।

২০০৭ এ মনে আছে বাড্ডায় একটা বাচ্চাকে দেখেছিলাম ব্যস্ত রাস্তায় শুয়ে আছে, দশ-বার বছর হবে বয়স। কৌতূহলী মন ব্যস্ত রাস্তায় শুয়ে থাকার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখে ওটা শুধু একটা ধড়, মাথাটা শুয়ে আছে তার থেকে একটু দূরে। এদিকে অ্যালবামে জমা হয়ে যায় একটা রক্তাক্ত বিশ্রামের চিত্র। একই মানুষের ধড় আর মস্তক-কে এরূপ স্বতন্ত্র বিশ্রাম নিতে আগে দেখেনি এ চোখ।

যতগুলা এরকম ছবি জমা হতে থাকে অ্যালবামে, ততগুলা দরিদ্র মানুষ ট্যাগ হয়ে যায়। এই গরীবগুলা অশিক্ষিত, এই গরীবগুলা মূর্খ, লোভী ওরা। ঠিকমত রাস্তা পার হতে পারেনা, লঞ্চে ঠেলাঠেলি করে উঠে, মূর্খের মত রেললাইনে বসে থাকে ঝিম মেরে। ঝুঁকি জেনেও কাজে যায় রানা প্লাজার মত মৃত্যুকূপে।
হ্যাঁ, আমরা জানি! সবাই জানি, জানি ওরা অশিক্ষিত-মূর্খ। কিন্তু, ওরাও এদেশের মানুষ, সুবিধাবঞ্চিত অভাবী মানুষ। যারা পাঁচশো টাকা দিলেই ভোট দিয়ে দেয় অনায়াসে। বলেন, ঐ পাঁচশো টাকা ক্যামনেই বা মিলে আর! আমরা যারা সারাক্ষন ওদের মূর্খ-মুর্খ করি তারা গিয়ে তো কখনও ওদের হাতে একটা পাঁচশো টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে আসিনা! পাঁচ বছর পরপর যারা শপথ নিয়ে দেশ চালাতে আসে তাদের ঐ দেশ এসব মূর্খ মানুষ দিয়েই ভরা। এদেশ চালাতে গেলে তাই সুশীল চেতনার ধার ধারলে চলবেনা। লঞ্চে বেশি উঠতে চাইলে ধমক দিতে হবে। হাত ধরে টেনে নামাতে হবে লঞ্চ থেকে। ব্যস্ত রাস্তা পার হতে চাইলে কান ধরে সরিয়ে দিতে হবে। রেললাইনে বসে ঝিমালে এক বালতি পানি এনে মারতে হবে মুখে। তবু, মরতে দেওয়া যাবেনা এভাবে। এধরনের মৃত্যু আমাদের সবার ব্যর্থতা- নিজেদের, সরকারের। কীভাবে এত ছোট একটা দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০৩৭ জন মানুষ শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়? বাকিগুলা বাদ-ই দিলাম নাহয়.......

যাই হোক আমি আসল কথা থেকে সরে গেলাম,
এতসব উচ্চ-পর্যায়ের প্যাঁচাল পেড়ে লাভ হবেনা, কখনও হয়না। আমি শুধু নিজের এই ইনভেন্টরিটাকে শিফট+ডিলিট মারতে চাই মাথা থেকে। স্বীয় চেষ্টা তো জারি থাকবেই; সাথে ইয়ে বলতে চাইছিলাম আরকি, কেউ আমার জন্যে দু'মুঠো শুভকামনা তুলে রাখতে দ্বিধা-কার্পণ্য যেন না করেন!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১১

সকাল হাসান বলেছেন: ছবি গুলো পোষ্টে অ্যাড করে দিলে ভাল হত!

দেখার ইচ্ছা ছিল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.