নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ চেতনার দ্বারে V for Vendetta

আহমাদ ইবনে আরিফ

নিভৃতচারী নই, পড়ি-লিখি-গান গাই উল্লাসে। ক্ষ্যাপা একটা ভাব আছে পণ্য- ভোক্তা আর অর্থনৈতিক চালবাজির প্রতি। পিশাচ এবং পৈশাচিক যা কিছু আছে সেগুলো ছাড়া সবকিছুকেই বেশ ভালবাসি। সঙ্গীত আমার জ্বালানী, লাল-সবুজ হৃদয়ের রঙ। কিঞ্চিৎ লিখালিখি করি, পেশাদারী- নেশাদারী নয়- কেবল শখের বশেই। কিছু কর্ণিয়া না হয় জানল এই সত্য!

আহমাদ ইবনে আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যালার্ম -ঘড়ি

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৭





১.

১২/এ রোডটা কি আসলে নেই? যদি থেকেই থাকে তবে অন্তত এটা নিশ্চিত এই এলাকার ম্যাপ প্রচণ্ড অগোছালো। হঠাৎ মনে হল ট্যাক্সি ড্রাইভার , সিএনজি ড্রাইভার অথবা কোন রিকশাওয়ালা এর থেকে ভাল ম্যাপ বানাতে পারবে।

প্রচণ্ড হতাশ মনে হচ্ছে নিজেকে। বেলা বাজে তিনটা। প্রচণ্ড গরমে মাথার চুল পুড়ে ধূসর হবার উপক্রম হয়েছে। এক নম্বর থেকে একুশ নম্বর এই নিয়ে দশবার হাঁটলাম। না, ১২/এ কোথাও নেই।

তবে এই মুহূর্তে রোড খুঁজে না পাওয়াটা আমার কাছে খুব একটা সমস্যা মনে হচ্ছেনা। সমস্যা আসলে অন্য জায়গায়। আমার একটা সিগারেট দরকার। অথচ দূরদূরান্তে কোন দোকান দেখা যাচ্ছেনা।



রঞ্জন আমাকে এই এলাকার এই অদ্ভুত ব্যাপারগুলো কেন জানালনা বুঝলাম না। বললে আমি বুঝেশুনে প্রস্তুতি নিয়েই আসতাম। মতির দোকানের ক্যাপ্স্টেইন সিগারেট বেশ ভাল। বিক্রি হয় না দেখে পড়ে থাকতে থাকতে একটা কেমন জানি অন্যস্বাদ হয়ে যায়। পড়ে থাকলে সব সিগারেট বিস্বাদ হয় না। একেকটা একেক স্বাদ হয়ে যায়। মতির বাবা বেশ জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। সকল ধরনের মানুষকে সে নিমেষেই নিজের চাওয়াটা বুঝাতে পারত। আমরা বেশির ভাগ মানুষই এটা পারিনা। মানুষের চিন্তাভাবনার ফ্রিকোয়েন্সি বুঝতে হলে মাথায় অনেক ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পারার মত রিসিভার দরকার। মতিন মিয়ার সেটা ছিল। টং দোকানের মালিক না হয়ে তার উচিৎ ছিল সাইকোলজিস্ট হওয়া। একদিন গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। এক সপ্তাহ টানা বন্ধ থাকার পর পিচ্চি মতিকে দেখলাম দোকান চালাতে।



২.

বেলা বাজে প্রায় তিনটা। আমি এখনও ১২/এ রোড খুঁজে পাচ্ছিনা। একটা দোকান খুঁজে পাচ্ছিনা। প্রচন্ড ক্লান্ত তবে ক্ষুধা নেই একবিন্দুও। ১২/এ রোডের নীল বাসাটাতে যাওয়া লাগবেই। রঞ্জন বলেছিল এই বাসাতেই তিনি থাকেন। আমার তার কাছে যাওয়া লাগবেই। আমার একটা বিশাল অ্যালার্ম ঘড়ি দরকার। অ্যালার্ম সময় পাল্টে দেয়, ঘুম রূপ নেয় কর্মব্যস্ততায়। তিনি সকল ধরনের অ্যালার্ম ঘড়ি বানাতে পারেন, পাল্টে দিতে পারেন সময়। মেকানিক না বলে তাই তাকে বিজ্ঞানী বলে সবাই- ঘড়ি বিজ্ঞানী।

কিন্তু কোথায় কি? হাঁটতে হাঁটতে আমার পায়ের তলায় ঠোসা পড়ে যাচ্ছে, গরমে পাগল হওয়ার অবস্থা। আর এদিকে অগ্রগতি শুন্যই বলা যায়। দুএকটা কুকুর ছাড়া রাস্তায় কিছুই নেই।



বেলা বাজে প্রায় তিনটা। প্রাইমারী স্কুলের দিনগুলোতে মা এই সময়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিত। সেই হিসাবে এই মুহূর্তে স্কুলের বাচ্চারা ঘুমানোর কথা। অথচ এখানে ব্যাপারটা আরও মারাত্মক। এদিকে আমার বেহাল অবস্থা রোড খুঁজতে খুঁজতে। আমার হিসাবে ঘন্টা তিনেক ধরেই ঘুরছি এখানে। কোন একটা ব্যাপার বেশ গণ্ডগোল মনে হচ্ছে। কিন্তু ধরতে পারছিনা ঝামেলাটা আসলে কি।



হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই ঝামেলাটা বুঝে গেলাম। আমার ঘড়িতে তিনটা বেজে আছে।

এই নিয়ে চারবার ঘড়ি দেখলাম। প্রত্যেকবারই একই সময় দেখেছি। আমার বাবার পুরাতন সীকো ফাইভ ঘড়িতে ভুল সময় দেখানোটা নিশ্চয়ই প্রচণ্ড অবাক করা কিছু নয়। তবে অবাক হয়েছি অন্য কারনে, সেকেন্ডের কাঁটাটা কিন্তু ঠিকমতই ঘুরছে।



৩.

রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি। রঞ্জনকে ফোন দিয়েছিলাম প্রায় তিনটায়। তার গলা শুনে মনে হয় সেও ঘুমাতে পারেনা। ইনসোমনিয়া এখন অনেকের। একদিকের প্রচণ্ড ঘুম অন্যদিকের নির্ঘুম ব্যাপারটাকে প্রভাব ফেলছে। প্রকৃতি এভাবেই হয়ত ভারসাম্য বজায় রাখে।

এতক্ষণ হয়ে গেলেও হাঁটা একবারও থামাইনি এখনো। তবে ম্যাপ নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটে গেছে। রোড নম্বর সবই ঠিক আছে। ১২/এ রোডটাই শুধু নেই। ১১/এ'র পরেই ১৩/এ এখানে। ১২/এ উধাও।

এদিকে আমার অবস্থা প্রচন্ড বিভ্রান্ত বলা যায়। এখানে আছি তিন ঘন্টার কম কিছুতেই নয়। অথচ,আমার ঘড়িতে এখনও তিনটা বেজে আছে। সেকেন্ডের কাঁটাটাও থেমে নেই। মাথার উপরের সূর্যের অবস্থান অনড় বলা যায়। বিকাল তিনটা থেকে তিন ঘন্টা হিসেবে এতক্ষনে সূর্য পশ্চিমে হেলে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাও হয়নি।

ঘড়ি আর সূর্যের এই অদ্ভুত আচরন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়া যাচ্ছেনা এই মুহূর্তে। মূল দুশ্চিন্তা এখন ১২/এ । ঘড়ি বিজ্ঞানীকে খুঁজে না পেলে সবকিছু ভেস্তে যাবে। আমি আর রঞ্জন মিলে দেশের সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি খুঁজে বের করলাম। জায়গাটাতে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ প্রবাহের ব্যবস্থা করলাম। সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি থেকে অ্যালার্মটা বাজানো লাগবে। নয়ত পুরো দেশের সব কোণের সব মানুষগুলোকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব না। সময়ও নেই হাতে। দেশভর্তি ঘুমন্ত মানুষ, আর জেগে থাকা সুযোগসন্ধানী নিশাচরের পাশাপাশি আমরা কিছু ক্লান্ত ইনসোমনিয়াক। কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছিনা এখন আর। জাগাতে হবে সবাইকে।



কিন্তু কোথায় কি! ঘড়ি বিজ্ঞানীতো দূরের কথা ১২/এ রোডই তো গায়েব। প্রচন্ড তাপদাহে ঘামে-ক্লান্তিতে মুষড়ে পড়ছি প্রতিটা মুহূর্তে। একটা ক্যাপ্স্টেইনও নেই কোথাও। শরীর হাল ছেড়ে দিতে চাইছে বারবার। কোথাও কোন মানুষ নেই। এই ঘুমের রাজ্যে কোন সহায়তার আশা করাও ভুল। সামনে একটা স্কুল দেখতে পাচ্ছি।



৪.

স্কুলের একটা ব্যাপার বেশ খটকা লাগলো। বাংলাদেশের পতাকাটা অধঃনমিত। কোথাও কেউ নেই। রশি ধরে টেনে পতাকাটা তুলে দিলাম। বাতাসে পতাকা উড়তে লাগলো। আহা! পতাকা উড়ার আওয়াজটা এত সুন্দর আগে খেয়াল করিনি। হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে চমকে উঠলাম। তিনটা বেজে পাঁচ। তাহলে পতাকাটা কোন ট্রিগার ছিল? এটাই কি সক্রিয় করে দিয়েছে এই এলাকার সময়কে? এত কিছু ভাবার সময় নেই। কেন জানি মনে হচ্ছে এখন গেলে ১২/এ রোডটা খুঁজে পাব। সোজা হাঁটা দিলাম। অনেক কাজ, ঘড়িটা আবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোন মুহূর্তে।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.